নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বিজয় না হওয়া পযন্ত সংগ্রাম করো

মানুষ আজিজ১

মানুষ আজিজ১ › বিস্তারিত পোস্টঃ

জীবনের গল্প

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৬

আমাদের পাড়ার রুবিদির সাথে আমারা প্রায়ই বাজিতে হেরে যেতাম। দুপুরবেলায় তার সাথে এক ধরনের বাজির খেলায় মাততাম যেমন-কে বেশিক্ষন পলকহীন বেলপাতার দিগে চেয়ে থাকতে পারবে। আমরা কেউ পারতাম না-রুবিদিকে দেখতাম সে পলকহীন চেয়ে থেকে বাজিতে জিতে যেতো! আরেকটি খেলা খেলতাম সেটা হলো তালতলার পুকুরের জলে ঢুব দিয়ে কে বেশিক্ষন থাকতে পারবে! রুবিদিকে দেখতাম ১০ মিনিট জলের ভেতর টিকে যেতো আর আমরা বরাবরই রুবিদির কাছে হেরে যেতাম ।

ঐ সময়টিতে বাবা-কাকদের কাজের অনেক ব্যস্ততা ছিল!তারা প্রভাতে চলে যেতে-রাতে ফিরে আসতো । কোনদিন তাদের দিনের আলোতে দেখতে পেতাম না কারন প্রভাতে উঠতে দেরি হতো আর রাতে আগে-ভাগেই ঘুমিয়ে যেতুম।শুধু শক্রবারটায় তাদের দেখতুম মৃত মানুষের মত সারাক্ষন ঘুমুচ্ছে ।

আমার ছেলেবেলার এক বন্ধু ছিল ওর নাম ‘বাদুর’ ।ও কিছু ঈদুর পালতো ,পোষা ঈদুর ওগুলো নিয়ে মাঝে মাঝে দুপুর বেলায় খেলতুম। আমাদের মারা টাংগুলি খেলতে বারন করতো ওগুলো খেললে নাকি চোক কানা হয়ে যাবে ।

আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি আমার এক বদ বন্ধু ছিল মামুন করে ,ও ক্লাসের এক মেয়েকে পছন্দ করতো ।মেয়েকে প্রেমের প্রস্তাবের সাহস না দেখিয়ে –এক ফকিরের আশ্রয় নিয়েছিল ! ঔ ফকিরের নাম আমরা জানি না –ওনাকে আমরা আয়নালের বাবা বলেই জানতাম। অনেক –ধরনের তাবিজ-কবজ করে নাকি মানুষকে বশ করেছে।সাংসারের অনেক অসুখি দম্পত্তিদের তার কাছে যেতে দেখিছি! যাইহোক –আমার বদ বন্ধুটি তাবিজ কিনে এনে বললো-দেখ কি কিনে নিয়ে এসেছি এখন দেখবি ও এমনিই রাজি হয়ে যাবে কিন্তু কোনদিন তাবিজের ক্ষমতা দেখলাম না ।

আমাদের পাড়ার রেনু আংটি আর পাশের পাড়ার আলম কাকাদের প্রায়ই দেখতাম তারা বাশঁ-ঝাড়ের ফাকে দাড়িয়ে দাড়িয়ে প্রেম করতো । আমরা একটু দুষ্টুই ছিলাম-যখনি দেখতাম তারা প্রেম করছে-কোথাও গল্প করছে, দৌড়ে এসে রেনু আংটির মায়ের কাছে বলেদিতাম আর তখনি তার মা ঝাড়ু নিয়ে ছুটতো –আলম কাকাকে পেটাতে ! তার মেয়ের অভিযোগ ছিল তার কচি মেয়েটিকে আলম-পটিয়ে-টটিয়ে ফান্দেঁ ফেলেছে ! পরে অবশ্য তাদের বিয়ে হয়েছে এবং তাদের সন্তানও হয়েছে । তাদের বড় মেয়ের নাম-ঝর্ণা ,এবার ক্লাস এইটে পড়ে ।


আমার নিজের দাদু তাবলিগ জামাত করে। তার পাশে বসলেই শুধু ধম্মের বানী শুনায় । সব নাকি তার খুশিতে হয়। দাদুকে বলেছিলাম-তখন সবই যদি তার খুশিতে হয় তাহলে তো আর প্রার্থনা করারই প্রয়োজন নেই! যে প্রার্থনা না করে –সেটাও তো তার খুশিতে ? এমন উত্তরে দাদু একটু নড়ে বসে-একটু কেশেঁ ভিন্ন উত্তর দিতে চায় । দাদুকে বলি দাদু সবই তো বলেন এবার বিয়ে –রিলেশনশিপ নিয়ে কিছু বলেন? দাদুর সেগুলো বলতে চায় না –ঐ জায়গায় দাদু গৌতম বুদ্ধের ভূমিকা পালন করে ! নারী মানেই নাকি মায়া আর ভ্রার্ন্তি । তারপর সাহস করে বলেই ফেললুম- আপনার সাত ছেলে কি এমনি এমনি হলো?সবই যদি ভ্রার্ন্তি থাকে??!!

আমাদের এলাকায় এক বৃদ্ধ লোক ছিল তার নাম জাগন আলী । সে শুধু মানুষের ঝগড়া-দ্বন্ধ টুকিয়ে বেড়াতো সারাদিন এ-বাড়ি, ও বাড়ি যেয়ে যেয়ে ইনিয়ে বিনিয়ে ঝগড়া লাগিয়ে দিত । এক –সময় তার প্রতি মানুষ অসন্তুষ হয়ে যায় ! তাকে দেখলে মানুষ ঘরে খিল দিত-তাকে বলা হতো সমাজের অভিশাপ।

তেলিপুকুর নামে এক পুকুর ছিল আমাদের ওখানে । ঐ পুকুরের একটি ঘাটের নাম ছিল রাক্ষুসের ঘাটঁ । ঘাটঁ নিয়ে অনেক রহস্য লুকানো আছে অনেক মিথ আছে । রাতে কারো বাসার বাচ্ছারা যখন খেতে চেত না-তখন রাক্ষুসে ঘাটের গল্প বললেই সবাই ভয়ে খেয়ে ফেলতো ।

বড়দিঘি নামক একটা দিঘি এখনো আছে ওটার জল অনেক ঘোলা । ওখানে নাকি এক সময় ডেক উঠতো –কারো বাসায় রান্নার প্রয়োজন হলে সই ডেক মানুষ নিয়ে আসতো । কিন্তু কেউ দেখেনি সব শুনা কথা ।

আমাদের ইস্কুলের এক পন্ডিত মশায় টিউশনির কথা বলে –এক স্কুল মেয়েকে অশ্লীলতা হানির চেষ্টা করেছিল ! মেয়ে এসে স্কুলে-এলাকায় নালিশ দেয় । ঐ পন্ডিত মশায় অনেক শক্তলোক ছিল –ক্লাসে সবাই তাকে ভয় পেত! হোমওয়ার্ক না করে নিয়ে আসলে-বেন্চের নিচে মাথা দিয়ে ছাত্রদের পিটিয়েছিল ।আমিও কয়েকবার ওরকম শাস্তি খেয়েছিলাম । সালিশে ঐ পন্ডিম মশাইয়ের এক-হাজার টাকা জরিমানা করা হলো আর ছ’মানের জন্য সাসপেন্ড । তবে আমরা ঐ পন্ডিত মশায়কে জ্বালিয়ে মারতুম এরপর থেকে ! দোকানে বা কোথাও পন্ডিত মশায় বের হলে –আমরা বলতুম,জনাব এটা আপনি একটা কাজ করেছেন ?ছিহ! আপনাকে কত মানতুম এরপর ঐ বেটায় এলাকা থেকেই ভেগেছে ।

আমাদের এলাকায় কিছু বৃদ্ধ দাদু –নানারা ছিল তারা ছিল প্রচুর দুষ্ট প্রকৃতির । ভাদ্র মাসের কাচাঁ ধান নিয়ে যেত বাজারে বিক্রি করার জন্য-সকালে যেত রাতে খালি হাতে ফেরত আসতো ! কোন বাজার সদাই কিছুই নেই হাতে! যদি তাদের বেগম –জিগ্গাসা করতো :ঐ লোক হয়তো বলতো বাজার ছিনতাই কারী ছিনিয়ে নিয়েছে সাথে টাকাও ।সব –সময় এক গল্প তাদের কাছে বিরক্ত লাগতো না। আসলে তাদের ছিল প্রচুর আলুর দুষ,ধান বিক্রি করেই তারা সিনেমা দেখতো আর ঐ-সব পাড়াতে যেয়ে টাকা ছিটিয়ে শূর্ন্য হাতে বাড়ি ফিরতো ।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.