নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

সুখ

১৯ শে জুন, ২০১৪ রাত ১০:২৬

"জামিল ভাবি আজকে গলায় যে নেকলেসটা পড়ে এসেছেন, দেখেছো?"

"খেয়াল করিনি।"

"খুব সুন্দর নেকলেস।"

"তাঁরা বড়লোক মানুষ, দামী নেকলেস কিনতেই পারেন!"

"ইশ.....আমাদেরও যদি তাদের মতন টাকা পয়সা থাকতো!"

"কেন? তোমার কি টাকা পয়সা কম আছে নাকি?"

"তুমি কি একে খুব বেশি বলছো?"

"হ্যা, কম কি? তুমি নিজের বাড়িতে থাকছো। নিজের গাড়ি চালাচ্ছো। সপ্তাহে দুইদিন বাইরে ডিনার করতে পারছ। বছরে একবার বিদেশে ভ্যাকেশনে যাচ্ছ। তোমার কিছু কি কম আছে?"

"দাঁড়াও দাঁড়াও, ফট করে বলে দিলেইতো আর হলো না। ছোট একটা বাড়িতে থাকছি...."

"চার বেডরুমের বাড়িকে তুমি ছোট বাড়ি বলছো?"

"এই সাইজের বাড়ি সবারই থাকে। আমার ফ্রেন্ড সার্কেলে সবচেয়ে ছোট বাড়ি আমাদেরটাই। এই সেদিন দেশ থেকে এসেছে সুমনা, তারাও কিনা পাঁচ বেডরুমের বাড়ি কিনে ফেলেছে! আর গাড়ির কথা বলছো? ওদের বিএমডব্লিউ মার্সিডিজের সামনে টয়োটা চালিয়ে যাই, প্রেস্টিজের কি বারোটা বাজে can you imagine?"

"কেন? টয়োটা খারাপ কি? জানো, কত কম তেল খরচ হয়? গাড়ি নষ্ট হলে কত কম খরচে সারানো যায়? আর কত লম্বা সময় ধরে সার্ভিস দেয়?""

উফ! তোমার কাছে এইগুলাই সব? প্রেস্টিজ, মান সম্মান, সামাজিক স্ট্যাটাস - এইসবের কোন ভ্যালুই নেই? হায় আল্লাহ! আমার ভাগ্যেই কিনা এত কিপ্টা জামাই পড়লো!"

"কি আর করবা বলো? এই জামাইকে নিয়েও কি তোমার ফ্রেন্ড সার্কেলের সামনে যেতে লজ্জা হয়? প্রেস্টিজ পাংচার হয়ে যায়?"

"দেখো, ঝগড়া বাঁধাবার চেষ্টা করবে না। আমি ঝগড়ার মুডে নেই। কাজেই তোমাকেও সাবধান করে দিচ্ছি, ভাল হবেনা!"

"আচ্ছা, আচ্ছা ঠিক আছে। আমি চুপ করলাম।"

"গুড! শোন, রমযান মাস আসছে, ইফতারির দাওয়াত যে দিতে হবে, সেটা খেয়াল আছে?"

"হু, রমজান আসতেতো এখনও দুইমাস বাকি আছে। এখন থেকেই লাফালাফির কি আছে?"

"উফ! তোমার সাথে আলোচনা করাটাই ভুল। শোন, এখানেতো কাজের লোকজন নেই, এবং তুমিও আমাকে কোন কাজে সাহায্য করোনা। কাজেই অনেক আগে থেকেই প্ল্যানিং শুরু করতে হবে, যাতে শেষ মুহূর্তে কোন গন্ডগোল না বাঁধে।"

"এখন থেকেই রান্না শুরু করবে নাকি?"

"না, তবে সব ইন্গ্রীডিয়েন্ট কেনা শুরু করবো। সব আনকমন ডিশ রান্না করবো। যা কোন বাঙ্গালি বাড়িতে করেনা। এবারে খেয়েই সবাই কাৎ হয়ে যাবে!"

"তাই? দুয়েকটা আইটেমের নাম বলতো।"

"চিন্তা ভাবনা করতে হবে। তবে আমার খুব শখ আমার দাওয়াতে লবস্টার থাকবে।"

"লবস্টার!!! সেতো অনেক দাম!"

"উফ! তুমি কি আর রোজ রোজ সবাইকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াচ্ছো নাকি? শিরিন ভাবীর বাসায় যেদিন সুশি খাওয়ালো মনে আছে? এখনও সবাই বাহ্ বাহ্ করে! আমিও চাই আমার লবস্টারের কথা মানুষের মুখে মুখে ফিরুক।"

"হুম..."

"এত ডিপ্রেসডভাবে হুম বললা যে?"

"না ভাবছি রমজান মাসের আসল উদ্দেশ্যই নষ্ট করে দিচ্ছো তোমরা।"

"মানে? আল্লাহ নিজেইতো বলেছেন ইফতারে যাই খাও না কেন, কোন হিসেব নেয়া হবেনা। বলেননি?"

"তা বলেছেন। কিন্তু একই সাথে তিনি বলেছেন আলগা ফুটানি না করতে। তোমার বান্ধবীদের ইফতারের দাওয়াতে আলগা ফুটানিই বেশি থাকে, সোয়াব কামানোর কোন উপকরণ থাকেনা।"

"খ্যাতের মত কথা বলবে না। "আলগা ফুটানি"....what kind of disgusting word it is!"

"শোন, আজকেই একটা আর্টিকেল পড়ছিলাম, দেখ, তুমিও পড়ে দেখ।"

"আমার এত সময় নেই, যা বলতে চাও, তুমি স্পষ্ট করে সংক্ষেপে বল।"

"একটা সোমালিয়ান ছেলে একজন মৌলভীর কাছে ফতোয়া জানতে চেয়েছে, "আমাদের যদি রোজা ভাঙ্গার জন্য ইফতারে কোন খাবার না থাকে, এবং তারপরেও তিনচারদিন পর্যন্ত আমরা অভুক্ত থাকি, তাহলে কি আমাদের রোজা কবুল হবে?".....কি হঠাৎ এত গম্ভীর হয়ে গেলে যে? বুঝতে পারছো কিছু মানুষের অবস্থা? তুমি ইফতারে লবস্টার খাওয়ানোর জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়েছো, এইদিকে কিছু মানুষের ইফতার করারই সামর্থ্য নেই। চার বেডরুমের বাসাকেও তোমার ছোট মনে হয়, হাজার হাজার মানুষ এমন আছে যাদের মাথার উপর ছাদ নেই। টয়োটা গাড়ি চালাতে তোমার প্রেস্টিজ নষ্ট হয়ে যায়, অথচ কিছু মানুষের বাসে চড়ারও সামর্থ্য নেই। তোমার যা নেই, তা নিয়ে আফসোস না করে বরং আল্লাহকে ধন্যবাদ দাও যা তোমাকে দিয়েছেন তার জন্য। একবার দেখো তোমার চেয়ে নিচে যারা আছে তাদের দিকে। তাহলেই বুঝতে পারবে তুমি জীবনে কতটা সুখী!"

"তাহলে সোসাইটিতে চলবো কি করে?"

"তোমার কি ধারণা, তোমার পাঁচ বেডরুমের বাড়ি না থাকলে, দাওয়াতে লবস্টার না খাওয়ালে তোমার বান্ধবীরা তোমার সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দিবে? যদি তাই হয়, তাহলে এমন বান্ধবী থাকার খুব কী প্রয়োজন আছে?"

"তাহলে আমি মিশবো কার সাথে?"

"অন্যের সাথে মিশে অসুখী হবার চেয়ে একা থেকে সুখী হওয়াটাই কি বেশি ভাল নয়?"

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৯ শে জুন, ২০১৪ রাত ১১:৩২

মৃদুল শ্রাবন বলেছেন: একটা বাস্তবচিত্র চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন।

২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:০৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! :)

২| ২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ২:৫২

স্বপ্নের ফেরিওয়ালা নিলয় বলেছেন: :)

৩| ২০ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৮:২১

সুফিয়া বলেছেন: সুন্দর হয়েছে।

এটাই আমাদের সমাজের বাস্তবতা। যার আছে, তার আরও চাই। তানাহলে স্ট্যাটাস বজায় থাকেনা। আর কিছু মানুষ খোলা আকাশের নিচে খেয়ে না খেয়ে দিনাতিপাত করছে এবং তারা সুখেও আছে।

২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:৪২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক

৪| ২০ শে জুন, ২০১৪ সকাল ৯:৩৬

কিশোর অবাক বলেছেন: আহ্!!! আমার তিন বেলা খাবারের নিশ্চয়তা নেই :|| :||

৫| ২০ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৪০

আমি দিহান বলেছেন: আপনার লিখাটা পড়ার আগেও অসুখী ছিলাম। কিন্তু আপনার এই লিখাটা আমাকে সুখী বানিয়ে দিলো।

ধন্যবাদ অনেকগুলো। ভালো থাকবেন।

২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:৪৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ দিহান! :)

৬| ২০ শে জুন, ২০১৪ সকাল ১১:৫৮

আমি ইহতিব বলেছেন: কার সুখ যে কিসে সেটা বোঝাই কঠিন বিষয়। ভালো লিখেছেন।

২০ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:৪৪

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: নিজের যা নেই তা নিয়ে না ভেবে যা আছে তা নিয়ে ভাবলেই দেখবেন আপনি অনেক সুখী!

৭| ২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:২২

ওয়্যারউলফ বলেছেন: ছোট্র কথায় অনেক কিছু। অনেক ধন্যবাদ।

২১ শে জুন, ২০১৪ রাত ৩:২৪

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: পড়া ও মন্তব্যের জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ!

৮| ২২ শে জুন, ২০১৪ রাত ১২:৪২

নীড় খুঁজি বলেছেন: সহয,সাবলীল ভাবে বাস্তবতা তুলে ধরেছেন।ভাল লেগেছে

২৩ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:৫৮

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.