নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

মীরা টিচার

২৫ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:১৬

ক্লাস নাইন এ সেকশনের অ্যাসেম্ব্লিতে আজ ছাত্র সংখ্যা কম। বৃষ্টি নেই, রোদ ঝলমলে সুন্দর সকাল। হঠাৎ করে একসাথে এত বেশি ছাত্রছাত্রী অনুপস্থিত থাকার কোনই যৌক্তিক কারন নেই।

প্রিন্সিপাল টিচার মাইকে জিজ্ঞেস করলেন, "কীরে, আজকে কেউ আসেনি কেন?"

কেউ কোন জবাব দেয়না।

"মীরা টিচারের পড়া ছিল?"

সবার চেহারা থমথমে হয়ে গেল। প্রিন্সিপাল টিচারের পাশেই মীরা টিচার দাঁড়িয়ে। যথারীতি তাঁর মাথা উঁচু, চোয়াল শক্ত!

কেউ একজন আমতা আমতা করে জবাব দিল, "জ্বী টিচার।"

প্রিন্সিপাল টিচার হেসে দিলেন। মীরা টিচারও হেসে দিলেন। তিনিই স্কুলের একমাত্র টিচার, যাঁর পড়া না শিখলে ছাত্রছাত্রীরা পারলে সেদিন স্কুলেই আসতো না।

টিচার কি কখনও কারও গায়ে হাত তুলেছিলেন? আমার মনে পড়েনা। মনে আছে মালেকা টিচার গাল লাল টকটকে না হওয়া পর্যন্ত বিরামহীন থাপ্পড় মারতে থাকতেন। ব্রজেন স্যার কানের পাশের জুলফির চুল গোড়ায় ধরে জোড়ে টান মারতেন! তুলি টিচার চিকন বেত দিয়ে পিটিয়ে শরীরে দাগ ফেলে দিতেন। আর কানন স্যার? তিনি যেন ক্লাসরুমে আসতেন না। যেন ক্ষেতে হালচাষ করছেন এমনভাবে ক্লাস করাতেন। ইয়া মোটা একটা বেত নিয়ে ক্লাসে টহল দিতেন। কারনে অকারণে ছাত্রদের পিঠে সপাং সপাং করে বেত মেরে বলতেন, "ক্লাসে মনোযোগ দে!"

সেই ছাত্র হয়তো আসলেই মনোযোগ দিয়ে অংক করছিল।

কানন স্যারের এই অকারণ মারের বিরুদ্ধে আমরা আমাদের ক্লাস টিচার লিলি টিচারের কাছে পর্যন্ত অভিযোগ করেছিলাম।

কিন্তু মীরা টিচার কখনই আমাদের গায়ে হাত তোলেননি। তাঁকে ভয় পাবার কারন ছিল, তাঁর শাস্তিগুলো ছিল মানসিক।

ক্লাসে ঢুকেই তিনি হীম শীতল গলায় বলতেন, "কারা কারা পড়া শিখে আসোনি, দাঁড়িয়ে যাও।"

পড়া না পারলে তিনি অবশ্যই বেঞ্চির উপর দাঁড়া করিয়ে দিতেন। দেখা যেত তাঁর ঘোষণার সাথে সাথেই একদল ছেলেমেয়ে কানে ধরে বেঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে গেছে।

তিনি একবার সবার দিকে চোখ বুলিয়ে আবার ঘোষণা দিতেন, "যারা যারা বসে আছো, তারা সবাই কি পড়া পারো? আমি কিন্তু এখন পড়া ধরা শুরু করবো। না পারলে কিন্তু কঠিন শাস্তি!"

এইবার দ্বিতীয় দফায় সবার দাঁড়ানোর পালা। যারা পড়া শিখে এসেছে, কিন্তু টিচারকে দেখে ভুলে গিয়েছে, তারাও দাঁড়িয়ে যায়।

অনেকেই হয়তো ভাববেন, ক্লাসে বেঞ্চের উপর দাঁড়ানো কি এমন শাস্তি!

আসলে আমাদের সময়ে বেশির ভাগ ছাত্রই ক্লাসের কোন একটি সুন্দরীকে মন দিয়ে ফেলতো। সেই সম্ভাব্য প্রেয়সীর সামনে ছাগলের মত বেঞ্চে দাঁড়িয়ে থেকে ইজ্জত পাংচার করতে কারই বা ভাল লাগতো?

দ্বিতীয় দফায় সবার দাঁড়ানোর পর টিচার আবারও ক্লাসের সবার দিকে (যারা বসে আছে, তাদের দিকে) একটা খুনে দৃষ্টি দিয়ে দুয়েকজনকে পড়া জিজ্ঞেস করতেন। যারা পারতো, তারাতো পারতোই। যারা পারতো না, তাদের শাস্তি ছিল অতি ভয়ংকর!

তাদেরকে লাইন ধরে ক্লাসের বাইরে দাঁড় করিয়ে কাগজের বিশেষ টুপি পড়ানো হতো। টিচার এর নাম দিয়েছিলেন, "গাধার টুপি।"

গলায় আবার কাগজে লিখে সাইন বোর্ডের মতন ঝোলানোও থাকতো, "আমি গাধা, আমি পড়া শিখিনা।"

তারপর তাদের লাইন ধরে স্কুলের একটা চক্কর লাগিয়ে দাঁড় করিয়ে দিতেন ক্লাস থ্রীর সামনে। (ব্লু বার্ড সিনিয়র শাখায় সেটাই ছিল সবচেয়ে জুনিয়র ক্লাস।)

ক্লাস থ্রীর বাচ্চাগুলিও ছিল মহা ফাজিল! স্কুলের সবচেয়ে সিনিয়র ক্লাসের "বড় ভাইয়েরা" গাধার টুপি মাথায় দাঁড়িয়ে আছে, তাদের যেন আজকে আনন্দের শেষ নেই! কেউ হাসি আটকাতে পারছে না, দাঁত বেরিয়ে আসছে। শাস্তিপ্রাপ্তদের মধ্যে কারও যদি ভাইবোন জুনিয়র ক্লাসে পড়ে তাহলেতো আর কোন কথাই নেই!

"দ্যাখ দ্যাখ! জুনায়েদের(কাল্পনিক নাম) ভাইও দাঁড়িয়ে আছে! হিহিহি।"

জুনায়েদের অবস্থা তখন শুধু কল্পনা করুন!

একটা কথা কিন্তু সর্বজন স্বীকৃত সত্য। ব্লু বার্ড স্কুলের গরু গাধা ছাত্রও এসএসসিতে কেমিস্ট্রিতে লেটার পেত। এখন পায় A+. কারন মীরা টিচার সে ক্লাস নিতেন। নিয়মিত পড়া শিখলে A+ না পেয়ে উপায় আছে?

টিচারের যেবার মেয়ে হলো, এবং তিনি কয়েকদিন ক্লাস নিতে আসতে পারলেন না, তখন আমাদের ক্লাসের এক ছেলে দুহাত আকাশে তুলে দোয়া করেছিল, "ইয়া আল্লাহ! যে মেয়েটির জন্য টিচার কয়েকদিনের ছুটি নিয়েছেন এবং আমাদের নিষ্কৃতি প্রদাণ করেছেন, তুমি সেই মেয়েটাকে সুখে শান্তিতে রেখো মাবুদ!"

ছেলেটার দোয়া পরম করুনাময় কবুল করেননি বোধহয়। নাহলে এত কম বয়সে কেন মেয়েটি মাতৃহারা হবে?

আজকে আমাদের সবার 'যমদূত' মীরা টিচার ওপারের ভূবনে চলে গেছেন।

সকালে স্কুল সহপাঠিনি এক বান্ধবী যখন ফেসবুকে ম্যাসেজ পাঠালো, তখনও আমি ঠিক বিশ্বাস করতে পারিনি। কি করে সম্ভব!

পরে আমার বোনও ফোন করে জানালো যে মীরা টিচার আর আমাদের মাঝে নেই।

হার্ট অ্যাটাকে টিচার মারা গেছেন। তাঁর নাকি কিডনিও কাজ করছিল না। লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। কি কষ্ট! কি কষ্ট!!

এত খারাপ লাগলো! আজকেই আম্মু দেশে চলে যাচ্ছে। সারাদিন গেল আম্মুর শেষ মুহূর্তের প্যাকিং এবং এয়ারপোর্টে নিয়ে যাবার ব্যস্ততায়। সারাদিন আমার মনটা খুব খারাপ ছিল। হয়তো মায়ের থেকে সাময়িক বিচ্ছেদের কারনে। হয়তো আরেক মায়ের কাছ থেকে চির বিচ্ছেদের কারনে।

বারবার মনে পড়তে লাগলো টিচারের একটি কথা। টিচারকে বহুবার বলতে শুনেছি, "মীরা টিচারকে ভয় পায়না এমন কোন ছাত্র ব্লু বার্ড স্কুলে নেই। কলেজে গিয়ে অস্ত্রও ধরেছে, কিন্তু এখনও টিচারকে রাস্তায় দেখলে ঠিকই ঝুকে এসে সালাম করে!"

তখন মনে হতো টিচারের ধারনা সত্য। স্কুল ছাড়ার পর বুঝলাম, টিচার ভুল ছিলেন।

যে ছেলে অস্ত্র নিয়ে ঘোরা ফেরা করে, সে পৃথিবীর কাউকে ভয় পায়না। সে যখন কারও সামনে মাথা ঝুকিয়ে সালাম করে, সেটা শুধুই শ্রদ্ধার কারনেই করে।

টিচার! আপনি শুধু আপনার ছাত্রছাত্রীদের চোখে আপনার প্রতি ভয়ই দেখেছিলেন। কী প্রচন্ডভাবে যে সবাই আপনাকে ভালবাসতো সেটা আপনি বুঝেননি।

স্কুল ছাড়ার তের বছর পরেও আপনার এক ছাত্র আপনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে বারবার কেঁদে উঠছে - একে ভালবাসা না বললে আপনি কি বলবেন?

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:২৮

কম্পমান বলেছেন: That’s true. Teacher er math a NOKOL lekha ta ajo mone porche.

২৬ শে জুন, ২০১৪ রাত ২:০২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :(

২| ২৫ শে জুন, ২০১৪ রাত ৮:৩৪

নেহাজাহান বলেছেন: আসলেই ঠিক বলেছেন ! আমিও আপনার সাথে একমত ভাইয়া ! বেশ ভাল লাগল লিখাটি ! তবে এরকমও তো হতে পারে যে টিচাররা আমাদের ভালোবাসা বুঝেও , না বুঝার বাহানা করেন !তাই না ?......ভাল থাকবেন।

৩| ২৫ শে জুন, ২০১৪ রাত ৯:৫২

শুঁটকি মাছ বলেছেন: মীরা টিচার যেখানেই থাকুন ভালো থাকুন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.