নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ফকিরনীর পুত!

০৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ৯:২৮

সেই ব্রিটিশ আমলের কথা।

আমার দাদা তখন চাকরির সুবাদে মৌলভীবাজারে। শ্রীমঙ্গলে এক চায়ের বাগানের ম্যানেজার তখন এক ইংরেজ সাহেব।

এক বিকেলে দাদা গিয়েছেন আড্ডা দিতে। আড্ডার এক ফাঁকে সাহেবের এক কর্মচারী এসে তাঁকে কাগজে কিছু একটা দেখালো।

সাহেব কর্মচারীকে একজনের নাম ধরে বললেন তাকে ডেকে নিয়ে আসতে।

এক আধঘন্টার মধ্যেই লোকটাকে তাঁর সামনে হাজির করা হলো। চা বাগানের একজন কুলী। সাহেবের সামনে হাত জোড় করে দাঁড়িয়ে আছে। বুঝতে পারছেনা হঠাৎ সাহেব কেন তাকে জরুরী তলব করে ডেকে পাঠালেন।

সাহেব তাঁর কর্মচারীকে ইংরেজিতে নির্দেশ দিলেন কুলীকে পেটাতে।

কেউ কিছু বুঝে উঠার আগেই কুলী বেচারা মার খাওয়া শুরু করলো। আর মার মানে সে যে কী মার! দাদা ভয় পেয়ে গেলেন, হয়তোবা মারের চোটে বেচারা কুলী মরেই যাবে!

সাহেব নির্বিকার।

একটা সময়ে তিনি মার বন্ধ করতে বললেন। কুলীর অবস্থা ততক্ষণে আধমরা।

সাহেব তখন কুলীর হাতে একটি কাগজের টুকরা তুলে দিলেন। দাদা অবাক হয়ে দেখলেন যে সেই আধমরা কুলী হঠাৎ করেই একদম তরতাজা হয়ে গেল! হোহো করে উন্মাদের মত হাসতে লাগলো। যেই কর্মচারী সাহেবের নির্দেশে এই একটু আগেও তাকে মারছিল, তাকেই সে জড়িয়ে ধরলো। সাহেবের পা চেপে জুতায় চুমু খেল।

সাহেব অভিব্যক্তিহীন কন্ঠে বললেন, "হয়েছে। তুমি এখন যাও।"

দাদা দেখলো কুলী হোহো করে হাসতে হাসতে বেরিয়ে যাচ্ছে।

দাদা অবাক হয়ে সাহেবকে জিজ্ঞেস করলেন, "ঘটনা কী কিছুইতো বুঝতে পারলাম না।"

সাহেব পাইপ ধরিয়ে ধোঁয়া ছাড়তে ছাড়তে বললেন, "তেমন কিছুনা। সে লটারীতে প্রাইজ জিতেছে। ফার্স্ট প্রাইজ।"

ফার্স্ট প্রাইজ! সেতো অনেক টাকা!

"কিন্তু তুমি তাকে মারলে কেন?"

সাহেব এবার বাঁকা হেসে বললেন, "যে কয়েক পুরুষ ধরে কুলীর কাজ করে, তার হাতে হঠাৎ করে এত টাকা ধরিয়ে দিলে সে হয় হার্ট ফেল করতো, আর নাহলে মাথা নষ্ট হয়ে উন্মাদ হয়ে যেত। কাজেই সুসংবাদটা দেয়ার আগে তাকে একটু পিটিয়ে মনটাকে দূর্বল করে দিলাম। যাতে এই মানসিক 'শক' সে গ্রহণ করতে পারে।"



এবারে আসা যাক দ্বিতীয় গল্পে। খুবই কমন গল্প। সবাই জানেন। ফুটবলের জাদুকর মেসির জীবনের গল্প।

মেসির ছোটবেলায় হরমোনাল সমস্যা দেখা দিয়েছিল। একটা সময়ে এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছিল যে ডাক্তাররা জানিয়ে দিয়েছিলেন যে মেসির হয়তোবা ফুটবলার হওয়া হবেনা। তাঁর গরীব বাবা মায়ের পক্ষে সম্ভব ছিল না প্রতিমাসে নয়শো ডলার খরচ করে সন্তানের চিকিৎসা করাবেন। আর্জেন্টিনার সরকারও কোন পদক্ষেপ নিল না।

এই সময়ে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিল সম্পূর্ন ভিন্ন একটি দেশ। স্পেন। ক্লাব বার্সেলোনা নিজেদের কাঁধে তুলে নিল মেসির চিকিৎসার দায়িত্ব। মেসির শৈশব থেকে এখন পর্যন্ত বেড়ে ওঠা স্পেনের সেই কাতালান নগরেই। বহু আগে থেকেই সে স্পেনের নাগরিক।

কিন্তু যখন সময় এলো জাতীয় দলে খেলার, মেসি বেছে নিল তাঁর জন্মভূমি আর্জেন্টিনাকেই। ইচ্ছা করলেই সে স্পেনের হয়ে খেলতে পারতো। খেললে গত বিশ্বকাপেই সে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হবার স্বাদ গ্রহণ করতে পারতো। কিন্তু সে ঝুলে রইলো আর্জেন্টিনার সাথেই। হাল ধরলো দলের। এবং এখন পর্যন্ত তাঁর কাঁধে ভর করেই নড়বড়ে আর্জেন্টিনা এতদূর এসেছে। নেইমারের অনুপস্থিতিতে মাঠ এখন ফাঁকা। কে জানে! হয়তোবা এই আসরে তারা চ্যাম্পিয়ন হয়েও যেতে পারে! সেটা পরের ব্যপার, মূল কথা হচ্ছে কমিটমেন্টের। যা জন্মভূমির প্রতি মেসির ছিল, আছে এবং প্রতিটা গ্রেট প্লেয়ারেরই থাকে।

নেইমারকেই ধরা যাক। মেরুদন্ডের হাড্ডিতে ফাঁটল হয়েছে। তারপরও হুইল চেয়ারে বসে সে বিশ্ববাসীকে শোনায় আশার বাণী!

"আমি ফিরে আসবো। আপনারা যখন ভাবছেন, তারচেয়েও আগে......আমাদের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হতেই হবে।"

ব্রাজিল জাতীয় দলে খেলে নেইমার যত না বেতন পায়, বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হলে যত না টাকা পাবে, তার চেয়ে ঢের বেশি টাকা সে বার্সেলোনায় পায়। তারপরেও জাতীয় দলে ফিরে আসার জন্য তাঁর কি আঁকুতি! আহা! আল্লাহ তাঁকে তাড়াতাড়ি ফিরিয়ে আনুক!

পেলের কথা কে না জানে? ফুটবলের রাজাকে "ব্রাজিলের সম্পদ" বলে ইউরোপিয়ান ক্লাবে খেলতে দেয়া হয়নি। তিনিও যাননি। কোটিকোটি টাকার সম্পদ গড়ার পরিবর্তে দেশের জন্য খেলা তাঁর কাছে ছিল মূখ্য। ব্রাজিল তিন তিনবার বিশ্ব চ্যাম্পিয়নতো আর এমনি এমনি হয়নি।

ইতিমধ্যে নিশ্চয়ই আপনারা বুঝে গেছেন আমি কোন ফকিরনীর কথা বলার জন্য এত ভূমিকা টানলাম? জ্বী, আমাদের দেশের সেই মহান ক্রিকেটার, যে ক্যারিবিয়ান টি টোয়েন্টি লীগে খেলার জন্য জাতীয় দলের কোচকে হুমকি দেয়, "প্রয়োজনে জাতীয় দলের হয়ে খেলা ছেড়ে দিব!"

বাংলাদেশ ক্রিকেটের আজকে যে অবস্থান, তা এই সমস্ত ক্রিকেটারের জন্যই। এই হচ্ছে তাদের (ইচ্ছে করেই চন্দ্রবিন্দু দেইনি কিন্তু, খেয়াল করবেন) দেশের প্রতি কমিটমেন্ট!

মাস শেষে এদের হাতে কোটি কোটি টাকার চেক তুলে দেয়ার দায়িত্ব আমার দাদার সেই ব্রিটিশ ম্যানেজার বন্ধুর মত লোকদের হাতে তুলে দেয়া উচিৎ।

বাকি পাঠক নিজের মত করে যা খুশি বুঝে নিক।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:০৪

নীলতিমি বলেছেন: অসাধারন।



২| ০৬ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:০৭

নীলতিমি বলেছেন: তবে সাকিবের ব্যাপারটা নিয়ে কিছু্টা কনফিউশন আছে। দেখা যাক সাকিব কি বলে! ;)

৩| ০৭ ই জুলাই, ২০১৪ ভোর ৬:১৭

জাহাঙ্গীর জান বলেছেন: সাকিব আইপিএল খেলায় বারো কোটি টাকা পেয়েছে তাই ওর মধ্যে টাকার অহংকার বেশি হয়ে গেছে । তারপরও বিসিবির পরিচালনায় যোগ্য লোকের অভাব না হলে সাকিব যেই কোনো সিদ্ধান্ত নিতে একশো বার চিন্তা করত ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.