নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
আমার ছোট চাচা সেই এইচএসসি পাশ করেই অ্যামেরিকা চলে এসেছিলেন।
আমার আব্বু এমবিএ করার জন্য ক্যালিফোর্নিয়ার এক ইউনিভার্সিটিতে সুযোগ পেয়েছিলেন।
আমার দাদা পড়ালেখা খুব পছন্দ করতেন। চাইতেন তাঁর প্রতিটা ছেলেমেয়ে উচ্চশিক্ষিত হোক। কিন্তু আব্বুর অ্যামেরিকা পড়তে যাবার খবর শুনে দাদা শুধু বলেছিলেন, "আমরা কার কাছে থাকবো?"
আসলেইতো, আব্বু যদি বিদেশে চলে যান, এবং তার কিছুদিনের মধ্যেই আম্মুকেও সাথে নিয়ে আসেন, তাহলে আমার দাদা দাদী কার কাছে থাকবে? দাদার বয়স তখন আশি পেরিয়ে গেছে। দাদীও সত্তুর ছুঁই ছুঁই।
আব্বু সাথে সাথে সিদ্ধান্ত বদলালেন। থেকে গেলেন দেশে। আমার তখনও জন্ম হয়নি। বড় বোনের জন্ম হয়েছে কিনা জানিনা।
এর অনেক পরে দাদা অসুস্থ হলেন। ক্যানসার ধরা পড়লো শরীরে। ক্যানসারের কোন আনসার তখনও যেমন ছিল না, এখনও নেই।
চিটাগং মেডিক্যালের বিছানায় শুয়ে দাদা অপেক্ষা করতে লাগলেন মৃত্যুর।
একটা সময়ে অবস্থা খুব খারাপ হলো। পেশাব পায়খানা বিছানাতেই করতেন।
আব্বু তখন নিজ হাতে সেসব পরিষ্কার করতেন। দাদা চুপচাপ দেখতেন।
একদিন তিনি বলেছিলেন, "তুমি আমার যে সেবা করেছো, আমি সেজন্য সন্তুষ্ট। আল্লাহর কাছে দোয়া করা ছাড়া আমার কাছে কিছু দেবার নেই। বল, তোমার জন্য আমি কি দোয়া করবো?"
আব্বু বলেছিলেন, "আপনি শুধু দোয়া করবেন, আমি যেন পৃথিবীতে কোন কাজে অসফল না হই।"
আজকে ফেসবুকে এক বন্ধু এক বৃদ্ধার ছবি শেয়ার করে বলেছে, "এই মহিলাটিকে তাঁর সন্তান রাস্তায় ছেড়ে দিয়ে গেছে। মহিলাটির চোখ প্রায়ান্ধ। মহিলাকে সাহায্য করতে কেউ এগিয়ে আসুন।"
নিচে সে কিভাবে সাহায্য করা যায় সে উপায়ও বলে দিয়েছে।
মহিলাটিকে বৃদ্ধাশ্রমে রেখে আসা। তার আগে তাঁকে বুঝানো যে রাস্তা থেকে বৃদ্ধাশ্রম অনেক ভাল স্থান।
মহিলার চোখের চিকিৎসার জন্য কোন দাতব্য চিকিৎসালয়ের সাথে যোগাযোগ করা।
যাকাতের টাকা দিয়ে এই মহিলার ব্যয় বহন করা। ইত্যাদি।
মনটা এমনিতেও বিক্ষিপ্ত ছিল। ফিলিস্তিনি ভূখন্ডে ইজরায়েলের অন্যায় আক্রমণে নিহত শিশুদের ছবি দেখে কারই বা মন স্থির থাকতে পারে? তারপর যখন এই কাহিনী পড়তে হয় তখন কেমন লাগে?
নবীজি বলেছিলেন, "মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেস্ত।"
হুমায়ূন আহমেদের উপন্যাসে পড়েছিলাম, "মায়ের কোন দোষ থাকতে পারেনা।"
আমার উপলব্ধি, যে মহিলা আমাকে জন্ম দিয়েছেন, শুধুমাত্র সেই কারনেই যদি সারাজীবন তাঁর পা ধুয়ে যাই,তারপরেও ঋণ শোধ হবেনা। জন্মের পর থেকে আমাকে পেলে বড় করার কথাতো বাদই দিলাম।
অনেক নিঃসন্তান দম্পতি আফসোস করে তাঁদের কোন সন্তান নেই। তাঁরা কি এই ঘটনা দেখার পর সান্তনা পাবেন না যে এইরকম কুসন্তান থাকার চেয়ে নিঃসন্তান থাকা অনেক ভাল?
আমার ভায়রা ভাই অ্যামেরিকায় এসে খুবই বিরক্ত হয়েছেন। তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট কর্ণেল। কিছুদিন আগে লাইবেরিয়া ঘুরে এসেছেন। সেখানে দেখেছেন কিভাবে অ্যামেরিকা গরীব দেশের সম্পদ নাম মাত্র মূল্যে কিনে এনে কোটি টাকার পাহাড় বানায়।
আমার অ্যাপার্টমেন্টে একটা খালি ময়দান দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন, "ওটা কি?"
তিন্নি জবাব দিল, "ওটা ডগ পার্ক।"
"ডগ পার্ক মানে?"
"মানে ওটা কুকুরদের খেলার স্থান। ওখানে কুকুরদের হাঁটানো হয়। কুকুর ওখানেই পেশাব পায়খানা করে, যেখানে সেখানে যেন পায়খানা না করে সেজন্য এই ব্যবস্থা।"
তিনি তারপর অবাক হয়ে দেখলেন কুকুরদের জন্য অ্যামেরিকানদের প্রেম কোন পর্যায়ের হতে পারে। কুকুরের আলাদা টুথব্রাশ, কুকুরের বিছানা, বালিশ, কম্বল থেকে শুরু করে উচ্চ ফাইবার যুক্ত খাবার.....একদম বিলাসী জীবন যাপন করতে যা প্রয়োজন সব আছে। তিনি মুখ তিতা করে বললেন, "অন্যদেশের সম্পদ লুটে এনে তারা এখানে কুত্তা পালে!"
তারপর তিনি একটা গালি দিলেন। আর্মি অফিসাররা যেমন গালি দেন সেরকম আর কি।
অ্যামেরিকানদের কুকুরপ্রীতির আরেকটা কারনও আছে।
এখানে ছেলেমেয়েরা ষোল সতের বছর বয়স হতেই মা বাবার ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়ে নিজের মত থাকা শুরু করে। পজেটিভ দিক হচ্ছে, এতে সে নিজের পায়ে দাঁড়ানো শিখে। ভবিষ্যত পৃথিবীর উত্তাল ঝড় সামাল দিতে আগেভাগেই সে প্রস্তুত থাকে।
আর নেগেটিভ দিক হলো, মা বাবার সাথে দূরত্ব সৃষ্টি। এই যে বেরিয়ে যায়, তারপর মা বাবার খোঁজ নেয়ার আর প্রয়োজন পড়ে না। মাদার্স ডে, ফাদার্স ডে এইদেশে এইকারণেই এত ধুমধামে পালিত হয়।
সেই দিক দিয়ে কুকুর তাঁদের সাথে অনেক বিশ্বস্ত থাকে। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁদের সাথে থাকে। ছেলে মেয়েদের থেকেও তাই কুকুর তাঁদের বেশি আপন।
আমাদের দেশেও এই অবস্থা দাঁড়াচ্ছে। আধুনিক সন্তানেরা গৃহপালিত কুকুর থেকেও খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আজকাল দেশে পাল্লা দিয়ে বৃদ্ধাশ্রমের সংখ্যা বাড়ছে!
অ্যামেরিকানরা কুকুরকে যতটুকু ভালবাসে, ততটুকু যদি বাইরের দেশের মানুষদের বাসতো, তাহলে হয়তো ফিলিস্তিনের বাচ্চারা আজকে নির্ভয়ে স্কুলে যেতে পারতো।
আহারে! যে শিশুর চোখে স্বপ্ন থাকার কথা ছিল বড় হয়ে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হবার, সেই শিশু জানেনা আর ঠিক কয় সেকেন্ড পরে তার চোখ চিরতরে বন্ধ হবে!
মসজিদে আকসায় রমযান মাসে নামাজ পড়তে গিয়ে মানুষ হামলার শিকার হয়। শেষ রাতে সেহরী খাবার সময়ে মানুষ হামলার শিকার হয়। ইফতার করার সময়ে মানুষ হামলার শিকার হয়!
কুকুরের জন্য তাঁদের যে মমতা, ফিলিস্তিনিরা কি তার দশভাগের একভাগও পেতে পারেনা?
মেরে ফেলুক! সবাইকে মেরে ফেলুক! তাতেও যদি তাদের তৃষ্ণা মেটে!
©somewhere in net ltd.
১| ১০ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:২৯
পিচ্চি হুজুর বলেছেন: এরা ত তাও নিজের দেশের মানুষরে ভালবাসে। নিজের দেশের মানুষরে ভালবাসার জন্য এরা অন্য দেশের পুটু মারে। আর আপনি আমি এমন এক দেশে জন্ম নেয়া যারা কিনা নিজের দেশ নিজের দেশের লোকদের ভালবাসি না। আমরা ত এদের চেয়েও খারাপ। নিজের দেশের পুটু মারার জন্য এমন কিছু নাই যেইটা আমরা করা বাদ রাখি নাই। অন্যের দিকে আঙ্গুল তোলা খুব সহজ।