নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাজা

১১ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১০:৪৬

একটি পরিচিত দৃশ্য।

নদীর পাড়ে লাইন ধরে দাঁড় করিয়ে দেয়া হলো একদল মানুষকে। সবার গায়ে লুঙ্গি, খালি গা। সবাই থর থর করে কাঁপছে। কারণ তাঁদের সামনে যমদূত দাঁড়িয়ে আছে। পাকিস্তানি মিলিটারী। সবার রাইফেল উঁচু করে তাঁদের দিকেই তাক করা। যেকোন সময়ে গুলি ছুটে আসবে।

গুলি এখনও ছুটছে না কারন ক্যাপ্টেন সাহেব অনুমতি দেন নি। তিনি চেয়ারে বসে আছেন। ঘনঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছেন। তাঁর চোখে ক্রুদ্ধ দৃষ্টি। তাঁর রাগের যথেষ্টই কারণ আছে।

গতরাতে তাঁর ঘাঁটিতে গেরিলা হামলা হয়েছে। গেরিলা হামলা মানে দুই চারটা পটকা ফুটিয়ে একদল কাপুরুষ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের হামলা করেছিল। মেশিন গান গর্জে উঠতেই তারা লেজ গুটিয়ে পালিয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে তাঁর দলের তিনজন সিপাহী নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে একজন হচ্ছেন সুবেদার জামিল। ক্যাপ্টেন সাহেব তাঁকে জামিল চাচা বলে ডাকতো। সদা হাস্যময়ী একজন পুরুষ। এখন আর নেই!

তার রক্তের প্রতিশোধ নিতে তিনি এই গ্রামবাসীদের ধরে নিয়ে এসেছেন। তিনি জানেন, এই কুত্তারা এই হামলার সাথে জড়িত। এমনিতে হাত জোর করে মাথা নিচু করে 'পাকিস্তান জিন্দাবাদ' স্লোগান দেয়। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের দেখা পেলে পারলে খাসি জবাই করে পোলাও রেঁধে খাওয়ায়। সব ক'টা গাদ্দার! হিন্দুস্তানের পা চাটা গোলাম!

"মুক্তি কিধার হ্যায়?"

ক্যাপ্টেন সাহেব চিবিয়ে চিবিয়ে বললেন।

একজন মধ্যবয়ষ্ক বাঙ্গালি হাত জোড় করে কেঁদে উঠলো, "আমরা কিছু জানিনা হুযুর! আমরা পোলাপানওয়ালা চাষা ভূষা মানুষ। শেখের লগে আমাগো কোন সম্পর্ক নাই। মুক্তির লগে আমাগো কোন সম্পর্ক নাই!"

"খামোশ!"

গর্জে উঠলেন ক্যাপ্টেন।

"তুম সাব গাদ্দার হো! তুম পাকিস্তান নেহি চাহতে! তুম বাংলাদেশ চাহতে হো! তুমহারে লিয়ে একহি সাজা হ্যায়!"

তারপর তিনি আরও জোরে বললেন, "ফায়ার!"

সিপাহীরা শুধু এই নির্দেশেরই অপেক্ষা করছিল।

ঠাশ! ঠাশ!! ঠাশ!!!

পৃথিবী গোল, তাই একই দৃশ্য এখন ঘুরে বিশ্বের অন্য জায়গায় দৃশ্যায়িত হচ্ছে। পাকিস্তানি ক্যাপ্টেনের চরিত্রে এখন অভিনয় করছে ইজরায়েলি কোন এক যুবক। এবং বাংলার নিরপরাধ গ্রামবাসীর জায়গায় অসহায় দাঁড়িয়ে আছে ফিলিস্তিনি জনগণ। মোরাল অফ দ্য স্টোরি একই, 'মানবতা পদদলিত।'

নবীজি তাঁর বিদায় হজ্জ ভাষণে বলেছিলেন, একের অপরাধে অন্যকে শাস্তি না দিতে। কারও সন্তান যদি পাপ করে থাকে, তবে তার পিতাকে কখনই দায়ী করে শাস্তি দেয়া যাবেনা।

একজন মুসলমানকে (নাম দেখে তাই মনে হলো) ফেসবুকে বলতে দেখলাম, "ফিলিস্তিনি (খুব বাজে একটি গালি দিলেন) ....রা ইজরায়েলের তিনটি শিশুকে কিডন্যাপ করে হত্যা করেছে। তাই এখন এর শাস্তি ভোগ করছে! ঠিকই হয়েছে! মরুক শালারা!"

বুঝলাম ভাইসাহেবের হয়তো আরবদের সাথে ব্যক্তিগত কোন দ্বন্দ আছে। অথবা তিনি তথাকথিত 'প্রগতিশীল।' আল্লাহ, নবীজি এবং তাঁদের বিশ্বাসীরা মধ্যযুগীয় বর্বর!

কিন্তু তারপরেও মানবতার খাতিরে তিনি এইধরনের কথা কিভাবে বলতে পারেন আমার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না।

ঘটনা কতটুকু সত্য-মিথ্যা এইসব আমি জানিনা। মিডিয়া লাইনে কি পরিমান এডিটিং হতে পারে আমার জানা আছে। আমাকে যদি স্বয়ং ইবলিস এসে কিছু বলে, তাও হয়তোবা বিশ্বাস করা যাবে, কিন্তু মিডিয়ার কথা যাচাই বাছাই না করে কখনই নয়।

তবে এটি সত্য যে গাজায় ইজরায়েলিরা উন্মাদের মত ঝাপিয়ে পড়েছে। প্রতি মুহূর্তে সেখানে কেউ না কেউ মারা যাচ্ছে।

আজকে আমার বন্ধু সাজিদ মাহমুদ সুন্দর একটি তথ্য পোস্ট করেছে, যেখানে জানা যায় বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা হচ্ছে গাজা, যেখানে প্রতি বর্গ কিলিমিটারে প্রায় তের হাজার মানুষ বাস করেন। তারচেয়ে বড় কথা, তাঁদের অন্যকোথাও যাবার কোন জায়গাও নেই। একদিকে সমুদ্র, যেখানে ইজরায়েলি নৌবাহিনীর যুদ্ধ-জাহাজ আছে। একদিকে জায়োনিস্ট দখলকৃত ভূমি ইজরায়েল। আর বাকি দুইদিকে উঁচু সীমানা প্রাচীর, যেখানে কড়া ইজরায়েলি পাহারা! তাহলেই বোঝা যায়, একটি জাতির অবরুদ্ধ অঞ্চলের উপর বিমান হামলার পরিণতি কী ভয়াবহ হতে পারে! বন্দুক থেকে ছুটে আসা বুলেট নারী-পুরুষ-শিশুর পার্থক্য করে না। সে শুধু প্রাণ নিতে জানে।

যদি ইজরায়েলের তিনটি শিশুর হত্যা হয়েই থাকে, তবুও এর শাস্তি আরও অগণিত শিশুর হত্যা কোনভাবেই হতে পারেনা।

কিছু জঙ্গি যদি হামলা করেই থাকে, তবুও এর শাস্তি হিসেবে অগণিত নিষ্পাপ সিভিলিয়ানের প্রাণ সংহার হতে পারেনা।

ইহুদি-মুসলিম বিরোধের উর্ধ্বে গিয়ে আগে বিবেচনা করা উচিৎ, এরা মানুষ।

অকারণে একটি পিপড়া হত্যা করলেও যেখানে আমাদের হৃদয় কেঁপে উঠার কথা, সেখানে মানুষ মরছে মশামাছির মত, আমরা নির্বিকার বসে থাকি। কেউ কেউ অত্যুৎসাহী আবার হাতে তালি বাজিয়ে বলি, "মর শালা আরব! তোদের মরাই উচিৎ!"

মজার ব্যপার হচ্ছে মুসলমানরা হাতে তালি বাজালেও ইহুদিরা কিন্তু ঠিকই এগিয়ে এসেছেন। প্রতিবাদ করছেন এই গণহত্যার। "জায়োনিস্ট"দের যে সাধারণ ইহুদিরা সমর্থন করেনা, সেটাই তাঁরা বারবার প্রচার করছেন।

এদিকে ফেসবুকে দেখছি মুসলমান বন্ধুরাও ইহুদি-বিরোধী পোস্টে ভরিয়ে ফেলছে। তাঁদের উদ্দেশ্যেই বলছি, নবীজির হাদিসটি আবার পড়ুন। ইজরায়েলিরা সাধারণ মানুষ মারছে বলে আপনি বিশ্বের সব ইহুদিদের ঘৃণা করে তাঁদের মারা শুরু করে দিবেন? তাহলে আপনাদের আর তাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায় থাকলো? ঘৃণা করতে হয় জায়োনিস্টদের ঘৃণা করুন। যাঁরা এর প্রতিবাদ করছেন, তাঁদের ঘৃণা করছেন কেন?

ধন্যবাদ সেসব ইহুদিদের, যাঁরা মানবতার খাতিরে কন্ঠে আওয়াজ তুলেছেন! তাঁরা ইহুদি হয়েও আমাদের চেয়ে বড় 'মুসলমান!'

আর মুসলমান ভাইয়েরা, রমযান মাসে ইফতার এবং সেহরির সময়ে দয়া করে একবারের জন্য হলেও ফিলিস্তিনি নির্যাতিত মানুষদের জন্য দোয়া করবেন। গোটা বিশ্ব যিনি পরিচালনা করেন, যিনি আসল 'স্ক্রিপ্ট রাইটার,' তাঁর নিশ্চয় কোন উদ্দেশ্য আছে বলেই এমনটা ঘটছে। তিনি যেন আরও বেশি সদয় হন এইসব মানুষের প্রতি। তিনি পরম করুণাময়। একটু যেন করুণা করেন তাঁদের প্রতি।

হয় তিনি সবাইকে একসাথেই মেরে ফেলুন। আর নাহলে মুক্তি দিন। এইভাবে প্রতিমুহূর্তে মৃত্যুর মত ভয়াবহ শাস্তি থেকে তিনি যেন তাঁদের মুক্তি দেন।

মন্তব্য ১ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুলাই, ২০১৪ রাত ১১:১০

পরিবেশ বন্ধু বলেছেন: হে আল্লাহ দাও ফিলিস্থিনিদের মুক্তি দিশা
ভেঙ্গে দাও শয়তানের গর্দান
দাও ধরয সাহস ইমানি ভরসা
ধুকে ধুকে আর কত মার খাবে নিরীহ মুসলমান ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.