নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
একটা সময়ে ডাইরিয়া ছিল মরণব্যাধি। খুব বেশিদিন আগের কথা না, এই কয়েক দশক আগেই আমাদের দেশে এই রোগে হাজার হাজার মানুষ মারা যেতেন। টেলিভিশনে বড় বড় তারকারা খাবার স্যালাইন বানাবার ফর্মূলা প্রচার করে বেড়াতেন।
"আধা সের ঠান্ডা পানিতে এক মুঠ গুর এবং তিন আঙ্গুলের এক চিমটি লবন দিয়ে দিলাম ঘুটা......"
সুজা খন্দকার অমর হয়ে আছেন তাঁর এই বিজ্ঞাপনের জন্য।
আমরা ডাইরিয়াকে জয় করতে পেরেছি। এখন আমাদের দেশে খুব কম মানুষ এই রোগে মারা যান। যারা মরেন, তাঁরা শুধুই নিজেদের গাফিলতির জন্যই মরেন। তাঁদের মৃত্যুতে এই বিশ্রী রোগটিকে খুব বেশি কৃতিত্ব দেয়ার কিছু নেই।
দেশে যক্ষায় মৃত্যুর সংখ্যাও কমে গেছে। কলেরা, জন্ডিস, টাইফয়েড ইত্যাদি প্রাণঘাতী রোগকে এখন কেউ খুব একটা ভয় পায় না। বসন্ত রোগের কুখ্যাত ওলা বিবি? সেতো কবেই দেশ ছেড়ে পালিয়েছে।
এখন ক্যানসার এবং এইডস নিয়ে গবেষণা চলছে।
সুস্থ্য জীবন যাপন করলে এইডস প্রতিরোধ সম্ভব, কিন্তু ক্যানসার বড়ই বেয়ারা একটি রোগ। মদ, সিগারেট, তামাক না খেয়েও মানুষ এই রোগে আক্রান্ত হয়ে পৃথিবী ছাড়তে বাধ্য হন। বিজ্ঞানীরা দিন রাত গবেষণা করে যাচ্ছেন এই রোগের ওষুধ বের করতে। অনেকদূর এগিয়েও গিয়েছেন। বোঝা যাচ্ছে, খুব বেশিদিন বাকি নেই, ক্যানসারও মানুষের পায়ের নিচে নত মস্তকে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হবে।
তখন মানুষের মৃত্যুর কারন হবে বার্ধক্য। জরা।
সেটাকেও জয় করার চেষ্টা চলছে খুব। আপাতত ইদুরের উপর দিয়ে চলছে গবেষণা। জানা গেছে ইদুরদের বার্ধক্য ঠেকিয়ে রাখা সম্ভব হচ্ছে। তার মানে মানুষেরও জরা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। মানে মানুষ কয়েকশো বছরের জন্য নিজের যৌবন ধরে রাখতে পারবে!
বাহ! কে বলেছে মানুষ কখনই অমর হতে পারবে না? অবশ্যই অমর হওয়া সম্ভব! টাকা থাকলেই ভবিষ্যত পৃথিবীর মানুষ অমর হতে পারবে!
কেমন হবে সেই মৃত্যুহীন জীবন?
আজকে সকালে ঘুম ভাঙ্গলো একটি চরম দুঃসংবাদ শুনে। বউর মামাতো ভাই নাকি অ্যাক্সিডেণ্টে মারা গেছেন। এই ভাইটিকে আমার শাশুড়ি নিজের ছেলের মত আদর করতেন। স্বাভাবিকভাবেই তিনি খুবই ভেঙ্গে পড়েছেন।
বউ সারা সকাল বিরবির করছিল, "এতটুকু এতটুকু সব ছেলেমেয়ে, তাদের কি হবে!"
কারও জন্যই পৃথিবী থেমে থাকেনা। এই পৃথিবীর যিনি মূল সূত্রধর, তিনি একটি চরিত্রকে সরিয়ে নেয়ার আগেই বাকিদের সব ব্যবস্থা করে রাখেন।
শোকের দিনে ফিলোসফি চলে না। কাজেই তাকে কিছু না বলে অফিসে চলে এলাম।
পত্রিকায় দেখলাম বাংলাদেশে ট্রেনের ধাক্কায় এগারোজন মারা গেছেন। পানিতে ডুবে তিনটি শিশুও নিহত হয়েছে। এ ছাড়াও এখানে ওখানে নানান দুর্ঘটনায় মানুষের মৃত্যুর সংবাদে পত্রিকা ঠাসা। এটা কেবল বাংলাদেশের।
সেই সাথে 'বাসি' খবর হিসেবে ইসরায়েলের আগ্রাসনে ফিলিস্তিনিদের নিহত হবার ঘটনাতো আছেই। নিহতের সংখ্যা এরই মধ্যে দেড় হাজার ছাড়িয়ে গেছে। এবং তা শুধু বাড়ছেই।
স্কুল ফ্রেন্ড নিলয় পোস্ট করলো, একটি এম্বুলেন্সে রোগী ওঠাবার সময় কিভাবে বোমা বিষ্ফোরণে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেল একটার পর একটা মানব দেহ! কি বিভৎস! আমার কলিজা ভীষণ শক্ত বলেই জানতাম। সহজে মর্মাহত হইনা। কিন্তু আমার পক্ষে এই দৃশ্য পুরোটা দেখা সম্ভব হলোনা।
গতকাল দেখলাম এক মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলছেন, "আমাদের সাহায্য করো! আমরা সিভিলিয়ান। কারও কোন অভিযোগ যদি থাকে, সেটা সরকারকে কর। গালি দিলে সরকারকে দাও। কিন্তু দয়া করে আমাদের মারা বন্ধ কর। আমরা ঘুমাতে পারিনা, জানিনা কবে কখন মারা যাই!"
আহারে! কতটা অনিশ্চিত এখন তাঁদের জীবন! বুড়ো হয়ে নিজের বাড়ির বিছানায় রোগগ্রস্ত হয়ে মরার সুখের জন্য তাঁরা কতটা লালায়িত!
পুরো পৃথিবী নিরবে বসে আছে। সবার কথা, আমার বাড়িতেতো আগুন লাগেনি, আমি কেন নেভাতে যাব?
কেউ বুঝতে পারছেনা, যারা এখন একবাড়িতে আগুন লাগিয়েছে, তারাই একদিন অন্য বাড়িতেও আগুন লাগাবে। তখন তাদের শক্তিও কয়েকগুন বেশি থাকবে। তাদের নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা সবার থাকবেতো?
এখন নিজেদের থাকার জন্য জায়গা দরকার বলে ফিলিস্তিনিদের উচ্ছেদ করার জন্য উঠে পরে লেগেছে ইজরায়েল। তারপর যখন তাদের জনসংখ্যা আরও বাড়বে, তখন? জর্ডান, এবং ইজিপ্টের দিকে হাত বাড়াবে। তারপর আরও কোন দেশে। কেউ কিছুই বলবে না। কারন, "আমার বাড়িতেতো আগুন লাগেনি, আমি কেন শুধু শুধু নেভাতে গিয়ে নিজের হাত পোড়াবো?"
অন্যদিকে ইরাকে আরেক দল ফাজলামি শুরু করেছে। "এ শিয়া, আমি সুন্নি, ঐ বদটা কুর্দি - ওদের মেরে ফেলো! আল্লাহু আকবার!"
সিরিয়াতেও নাকি একই অবস্থা। আফ্রিকার বেশ কিছু দেশেও চলছে খুনাখুনি।
আধুনিক পৃথিবীতে রোগের চেয়েও মানুষের হাতেই মানুষ মরে বেশি। আমরা বিংশ শতাব্দীর আধুনিক মানবজাতি বলে কথা!
আমরা একটা সময়ে জরাকে জয় করবো। হাসতে হাসতে ক্যানসারকে মোকাবেলা করবো। প্যারাসিটামল খেয়ে জ্বর সারানোর মত সহজেই হয়তো অর্গান ট্রান্সপ্লান্ট করে সুস্থ হবো। কিন্তু আমাদের কখনই অমর হওয়া হবেনা। আমরা যানবাহনের নিচে চাপা পরে মরবো। আমরা গোলাগুলি করে মরবো। আমরা একজন আরেকজনকে মারতে গিয়ে মরবো।
তখনকার মানুষেরা হয়তো কাঁদতে কাঁদতে বলবে, এরচেয়ে ক্যান্সারই ভাল ছিল। অন্তত টুকরা টুকরা হয়ে রাস্তার পাশে পড়ে থাকতে হতো না।
আহারে ভবিষ্যত প্রজন্ম! তোমাদের জন্য এখনই খুব মায়া লাগছে।
০২ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৩:৩৬
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: কথা ঠিক। কিন্তু তারাই বুঝেন, যাদের কিছুই করার থাকেনা। যারা বুঝলে কাজ হতো, তারা বুঝতে চান না।
২| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ ভোর ৬:১১
সচেতনহ্যাপী বলেছেন: ভাল লেগেছে।। আরো ভাল লেগেছে " এই পৃথিবীর যিনি মূল সূত্রধর, তিনি একটি চরিত্রকে সরিয়ে নেয়ার আগেই বাকিদের সব ব্যবস্থা করে রাখেন। " এটা।।ধন্যবাদরএবং ঈদ মুবারক মঞ্জুর।। ভাল থকবেন সততঃ।।
১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:২৫
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন:
৩| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:০২
ইলি বিডি বলেছেন: শোকের দিনে ফিলোসফি চলে না।
৪| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ৯:২৮
জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: স্বাভাবিক মৃত্যু হবে না। দেখা গেল যে ২০০ বছর ধরে বেঁচে আছে, মাতলামি করতে গিয়ে গাড়ি চাপা নয়তো পড়ে গিয়ে মাথা ফেটে মারা গেল। বুড়ো হয়ে সব কিছু থেকে অবসর নিয়ে মরা হবে না তাহলে।
৫| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ সকাল ১০:১৯
জে.এস. সাব্বির বলেছেন: পৃথিবীর যিনি মূল সূত্রধর,
তিনি একটি চরিত্রকে সরিয়ে নেয়ার আগেই বাকিদের সব
ব্যবস্থা করে রাখেন।
তিনি বাকিদের সরিয়ে নেওয়ার ব্যবস্থাও করে রাখেন ।কলেরা ,বসন্ত ,ক্যান্সার ,এইডস এসব রোগকে মানুষ জয় করবে ঠিকই ।কিন্তু মৃত্যুকে জয় করতে পারবে না কোনদিন ।এর কারণ হিসেবে সড়ক দুর্ঘটনা ,যুদ্ধ ,হামলা ইত্যাদির সাথে যোগ করা যেতে পারে আত্মহত্যাকেও । "আহারে !অমরত্ব !!"
৬| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:২১
মুদ্দাকির বলেছেন: আসাধারন লেখা +++
৭| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:৩৩
মিজভী বাপ্পা বলেছেন: অসাধারণ লেখনি ++++++++++++++
৮| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ বিকাল ৩:২৯
সুমন কর বলেছেন: ভালো বলেছেন। গুড পোস্ট।
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা আগস্ট, ২০১৪ রাত ৩:৩৪
রাজিব বলেছেন: সুন্দর পোস্ট। বিশ্বের ৪-৫ টা দেশে যদি যুদ্ধ বন্ধ হতো তাহলে মানুষের মধ্যে অনেক বেশী শান্তি আসতো। আমাদের দেশে যদি মানুষে মানুষে হানাহানি বন্ধ হতো তাহলে আমাদের অর্থনীতি বোধহয় ১০% হারে এগিয়ে গিয়ে ১০ বছরে কোন গরীব লোক থাকতো না।