নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কসাই ডাক্তারদের গালাগালি বন্ধ করার সময় এসেছে

১৮ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:০২

একটি শার্ট যখন বাজারে ছাড়া হয়, তখন নানান খরচের কথা মাথায় রেখেই তার দাম নির্ধারণ করা হয়। কাপড়ের দাম, সুতার দাম, বোতামের দাম, মজুরি - এইসবতো আছেই, সেই সাথে থাকে ব্র্যান্ড ভ্যালু, অ্যাডভার্টাইজমেন্ট ইত্যাদি নানান কিছু। Dolce & Gabbana'র শার্ট এবং টেইলর ইব্রাহিম অ্যান্ডগ্র্যান্ড সন্সের বানানো শার্টে এই কারনেই কিছুটা পার্থক্য থাকে। আমার Dolce & Gabbana'র শার্ট পড়ার শখ আছে, আমার Robert Graham'র শার্ট পড়ার ইচ্ছে আছে, আমার Versace'র শার্ট পড়তেও মন চায় - কিন্তু আমার সামর্থ্য আছে বড়জোর ইব্রাহিম টেইলরের শার্ট কেনার, তাহলে কি চলবে?

শরীর ঢাকাটাই যদি মেজর প্রায়োরিটি হয়ে থাকে, তবে আমার দেশীয় টেইলরের উপরই আস্থা রাখা উচিৎ। মন খচখচ করলেও কিছু করার নেই। আমার পকেট যে বড় ছোট!

তাছাড়া, টেইলর ইব্রাহিম অ্যান্ড গ্র্যান্ডসন্স খুব একটা খারাপ শার্ট বানাবার কথা না। তিনপুরুষের ব্যবসা বলে কথা।

তেমনি, জীবাণু ও দুর্গন্ধমুক্ত ঝকঝকে মেঝে, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশ, দামী দামী ও আধুনিক সব যন্ত্রপাতি, বড় বড় ডিগ্রী ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন ডাক্তার, গুলশান-ধানমন্ডি এলাকায় অবস্থান - এইসব জিনিস চোখে পড়লে আপনাতেই মাথায় আসার কথা এইসবেরও নিশ্চই আলাদা খরচ আছে। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং ইউনাইটেড হাসপাতালে নিশ্চই একটা 'বড়সর' পার্থক্য আছে। দুই হাসপাতালেই চিকিৎসা শেষে ধরানো বিলে কিছুটা তারতম্য চোখে পড়বেই।

বাবার যখন বুকে ব্যথা উঠে, তখন কারোরই মাথার ঠিক থাকেনা। সন্তান তখন অবশ্যই চাইবে দেশের শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠানে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করাতে। হাসপাতালের পরিবেশ, চিকিৎসা খরচ, কিছুই তখন তার চোখে পড়েনা। পিতৃপ্রেমের আবেগ তখন মানুষকে অন্ধ করে দেয়। বাবাকে বাঁচিয়ে তোলাটাই তখন মূখ্য উদ্দেশ্য।

প্রাথমিক ধাক্কা কেটে যাবার পর রোগীর অবস্থা যখন stable, তখন হাসপাতালের পরিবেশ চোখে পড়ার কথা। 'বিল' কত হতে পারে, সেটাও ধারনা করতে মাথা খাটানোর প্রয়োজন হবার কথা না। নিজের পকেটের গভীরতাও তখনই মেপে ফেলার কথা। এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে তাঁকে অন্য কোন হাসপাতালে স্থানান্তরের চেষ্টা নেয়াটাই তখন বুদ্ধিমানের কাজ।

আমরা খুবই ইমোশনাল জাতি। আমরা আবেগ দিয়ে চিন্তা করি। কিন্তু জগৎ সংসার আবেগে চলেনা। লজিকে চলে। লজিক বলে, আমার যদি সামর্থ্য না থাকে, তাহলে আমার উচিৎ না ইউনাইটেড হাসপাতালে খুব বেশিদিন চিকিৎসা নেয়া। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ এখনও বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ ডাক্তার উৎপাদনের কারখানা। অন্যান্য আরও কিছু হাসপাতাল আছে, যেখানে ভাল ডাক্তার আছেন, যাঁরা সুচিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করেন।

চিকিৎসাটাই যেখানে মূখ্য, সেখানে দুর্গন্ধমুক্ত পরিবেশ, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘর, রোগীর বিছানা, দেয়ালে ঝুলানো পেইন্টিং, এলসিডি টিভি ইত্যাদি আলগা সুবিধার কথা চিন্তা না করাটাই ভাল।

একটা সহজ সত্য স্বীকার করে নিতেই হবে, ইউনাইটেড-ল্যাব এইড, কিংবা স্কয়ার-এপোলো হাসপাতালগুলো কোন চ্যারিটি প্রতিষ্ঠান নয়। তারা এখানে ব্যবসা করতেই এসেছে। রোগীরাই তাদের একমাত্র কাস্টমার।

এখানেই বিদেশী ব্র্যান্ড ফেলে আমাদের দেশীয় দর্জি বেছে নিতে হবে।

সেদিন খুবই ভয়ংকর একটা তথ্য শুনলাম।

বাংলাদেশে নামকরা কোন এক প্রাইভেট হাসপাতালে নাকি রোগী মারা গেলে তার আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সাথে জানানো হয় না। লাইফ সাপোর্টে কয়েকদিন রেখে বিল মোটাতাজাকরন হয়। অবশেষে রোগীর সাথে ক্যাশ লেনদেনের বিনিময়ে লাশ হস্তান্তরের আলোচনায় বসা হয়।

আমরা হচ্ছি খাদ্যদ্রব্যে ফরমালিন মেশানো ব্যবসায়ী জাতি। লাশ নিয়ে ব্যবসা করা আমাদের দ্বারা খুবই সম্ভব!

এখন বলি মেডিক্যাল নিয়ে নিজের অভিজ্ঞতার কথা।

বিয়ের আগে আগে আমার বউর গা কাঁপুনি দিয়ে জ্বর এলো। কিছুতেই জ্বর নামতে চায়না। টাইফয়েডের লক্ষণ স্পষ্ট। আমার শ্বশুর শাশুড়ি ভয় পেয়ে তাকে ভর্তি করিয়ে দিলেন স্কয়ারে।

এই টেস্ট, ঐ টেস্ট নানান টেস্ট করে ডাক্তাররাও নিশ্চিত হলেন টাইফয়েড। চিকিৎসা হলো রোগের।

অবশেষে সুস্থ হয়ে যখন রোগী বাড়ি ফিরে যাবে, তখন বিল ধরিয়ে দেয়া হলো, পঁচাত্তর হাজার টাকা!

আজ থেকে প্রায় ছয় সাত বছর আগের কথা বলছি। এখন ঘটনা ঘটলে লাখ খানেক টাকার নিচে বিল হতো না নিশ্চিত।

আমার শাশুড়ি বললেন, "পাড়ার ক্লিনিকে যদি চিকিৎসা করাতাম, টাইফয়েডেরই চিকিৎসা হতো, বিলও আসতো বড়জোর দুই হাজার।"

ছয় সাত বছর আগের কথা। এখনও চিকিৎসা করলে বিল আসতো সেই বড়জোর দুইহাজার।

এরপরের ঘটনাটি ঘটলো অ্যামেরিকায়।

বেচারী আসতে না আসতেই অসুস্থ হয়ে গেল। জ্বর আর নামেইনা। বমি টমি করে একেবারে কাহিল অবস্থা।

নিয়ে গেলাম ডালাসের বিখ্যাত পার্কল্যান্ড হসপিটালে। ইমার্জেন্সিতে ভর্তি করিয়ে দিলাম। পার্কল্যান্ড হচ্ছে এখানকার ঢাকা মেডিক্যাল। খরচের দিক দিয়ে নয়, এখানকার ডাক্তাররাও ডিএমসির মতন শ্রেষ্ঠদের কাতারে পড়েন।

বলতেই হবে, সুচিকিৎসা হলো।

তিনদিন হসপিটালে থাকার পর সুস্থ্য হয়ে রোগী বাড়ি ফিরে এলো। কয়েকদিনের মাথায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বাড়িতে বিল পাঠিয়ে দিল। উনত্রিশ হাজার ডলার। আমার তখন নতুন চাকরি, মেডিক্যাল ইন্সুরেন্স নেইনি। কাজেই পুরো টাকাটাই আমাকে নিজের পকেট থেকেই পে করতে হবে।

উল্লেখ করা যেতে পারে, একজন ছাত্রের চার বছরের ব্যাচেলর ডিগ্রী নিতে হলে তাকে এখানে বিশ হাজার ডলারের মত খরচ করলেও চলে। সেখানে তিনদিন হসপিটালের বিল আসে উনত্রিশ হাজার ডলার!

চিকিৎসা খরচ অ্যামেরিকায় একটি বড়সর যন্ত্রণার নাম। এখানে ঢাকা মেডিক্যালের মত কোন প্রতিষ্ঠান নেই যেখানে সস্তায় চিকিৎসা করানো সম্ভব। পার্কল্যান্ডে না গিয়ে অন্য কোথাও গেলেও বিল পনেরো বিশ হাজারের নিচে আসতো না। আবেগে আমারও মাথা আউলে গিয়েছিল, আমিও সেরা প্রতিষ্ঠানেই রোগী ভর্তি করিয়ে দিয়েছি।

হসপিটালের বিছানায় শুয়ে শুয়ে তিন্নি জানতে চাচ্ছিল, "বিল কত আসতে পারে?"

আমি বললাম, "একলাখ আসলেও অবাক হবো না।"

ওর মুখ শুকিয়ে গিয়েছিল।

সেই তুলনায় উনত্রিশ হাজার ডলারতো সামান্যই। আমি তাকে আশ্বস্ত করে বললাম, "সমুদ্রে পেতেছি শয্যা, শিশিরে কি ভয়?"

এর কয়েকমাস পর সে আবারও ভর্তি হলো একই হসপিটালে। এইবারও বিল এলো বত্রিশ হাজার ডলার।

অ্যামেরিকান হসপিটালের ইমার্জেন্সিতে গিয়ে আপনি একটা হাঁচি দিলেও আপনাকে সাত আটশো ডলারের বিল ধরিয়ে দেয়া হবে। নাইন ওয়ান ওয়ান কল করে যদি অ্যাম্বুলেন্স সেবা নেন, তাহলেতো কথাই নেই।

কাজেই বাংলাদেশের ভ্রাতাগণ ও ভগিনীগণ! আপনারা বুঝতেই পারছেন না যে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, পি জি হাসপাতাল, হৃদরোগ ইন্সটিটিউটগুলো আপনাদের জন্য কত বড় বড় আশীর্বাদ।

বিদেশের সবকিছুই ভাল নয়। বাংলাদেশের নাগরিকেরা গরিব হলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে বিদেশীদের চেয়েও ভাগ্যবান, বলতেই হয়।

একতরফাভাবে ডাক্তারদের গালাগালি না করে রোগীরা কেন সেসব প্রতিষ্ঠানের ফায়দা তুলেননা সেটা নিয়েও বোধয় কিছু বলার সময় এসে গেছে।

আর ব্যবসায়ীরাও যাতে একতরফাভাবে ক্রেতাদের গলায় ছুরি চালিয়ে যেতে না পারে - সেব্যাপারটিও নিশ্চিত করতে সরকারের হস্তক্ষেপ করার সময় হয়েছে বলে মনে করি।

যিনি মারা গেছেন, তাঁর রুহের মাগফেরাত কামনা করি। স্বজনদের প্রতি পূর্ণ সহানুভূতি।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই আগস্ট, ২০১৪ রাত ১০:৫৮

গাজী আলআমিন বলেছেন: B:-) B:-) B:-) B:-) B:-)

২| ১৯ শে আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭

মুদ্‌দাকির বলেছেন: ভালো লিখেছেন, অনেকেই বুঝবেনা!!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.