নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গলার চেইন কী আপনার সন্তানের চেয়েও দামি?

২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৩৫

কম্পিউটারে কিছু একটা করছিলাম। খুব সম্ভব গল্পের বই পঠন। বাংলা গল্পের বই পড়ার এখন সেটাই একমাত্র মাধ্যম।
হঠাৎ শুনি তিন্নি হাউকাউ জুড়ে দিয়েছে। যারা জানেন না তাঁদের অবগতির জন্য, কয়েক বছর আগে আমি একটা মেয়েকে বিয়ে করেছি, যার ডাকনাম তিন্নি।
এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো, আমাকেই হয়তো বকাবকি করা হচ্ছে। আমিও গলা চড়িয়ে বললাম, "কী বলছো কিছুই শুনতে পাচ্ছি না। কাছে এসে বলো।"
আমি আমাদের মাস্টার বেডরুমে। তিন্নি ঘরের অন্য প্রান্তে রান্না ঘর থেকে কথা বলছে। কিছুই স্পষ্ট শোনা যাচ্ছেনা।
সে আমার কথার জবাবে কিছু একটা বলল। এবারও কিছু স্পষ্ট না। তবে গলার রুক্ষতা স্পষ্ট টের পেলাম।
"এবারও শুনতে পাইনি। কিছু বলার থাকলে সামনে এসে বলো, নাহলে অফ যাও।"
তিন্নি অফ গেল না। সমানে চাপা গলায় হাউকাউ চালিয়ে গেল।
আমি খুবই বিরক্ত হয়ে "কী হয়েছে?" বলতে বলতে উঠে গেলাম।
কাছে গিয়ে দেখি সে ফোনে কথা বলছে। আমাকে সামনে দেখে আমার চেয়েও বিরক্ত স্বরে বলল, "তোমাকে বলছি নাকি? তুমি উঠে এলে কেন?"
ও তার বোনের সাথে কথা বলছে। এতক্ষণ যা চিৎকার চ্যাচামেচি করছে, সব ফোনের অপর পাশেরজনের সাথে।
পারিবারিক ঝগড়া ভেবে আমি সরে পড়লাম।
পরে শুনি ও আসলে বোনকে নির্দেশ দিচ্ছে কাউকে পুলিশে ধরিয়ে দিতে। খুন করে ফেলতে।
আমি নড়েচরে বসলাম। ঘটনা কী?
ফোন রাখার পর রুমে এলে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, "কী হয়েছে?"
সে খুবই বিরক্ত স্বরে বলল, "জেনে তুমি কী করবে?"
সে বাতি নিভিয়ে শুয়ে পড়লো।
"ল্যাপটপ বন্ধ করো, চোখে লাগছে।"
বললাম, "গল্পের বই পড়ছি। নাহলে ঘুম আসবেনা।"
"কালকে পড়, অথবা অন্যরুমে গিয়ে পড়। এখন জ্বালিও নাতো, মেজাজ খুব খারাপ।"
'টেনিদা সমগ্র' পড়ছি। মাঝেপথে ছাড়া যায়?
আমি আর তার মেজাজ খারাপ বাড়ালাম না। পাশের ঘরে চলে এলাম।
মাঝরাতে সেই উঠে এলো। বলল, "মন খুব খারাপ। মন ভাল করে দাও।"
ল্যাপটপ থেকে চোখ সরিয়ে বললাম, "কী হয়েছে সেটা আগে বলো।"
তিন্নি বলল, "আপু জানালো যে আমাদের পাশের বাসার ছয় বছরের একটা বাচ্চা মেয়ে রেপড হয়েছে। তাদেরই বাড়ির দারোয়ান কাজটা করেছে। ভাবি (বাচ্চার মা) এতদিন কথাটা কাউকে বলেনি, বাচ্চার বদনাম হবার ভয়ে। আজকে আপুকে বলল।"
আমার প্রথম প্রশ্নটাই ছিল, "দারোয়ানের কী হয়েছে?"
"আছে, এখনও সেই বাড়ির দারোয়ানি করে। কেউতো জানেনা তার আসল রূপ। বদমাইশটাকে আমরা মামা ডাকি! দেখলে মনে হয় ভাজা মাছটা উল্টে খেতে জানেনা। হারামজাদা যে ভিতরে ভিতরে এত বদ, বললে কেউই বিশ্বাস করবে না।"
তিন্নি এসেছে আমি যেন তার মন ভাল করে দেই। এখন দেখছি সেই আমার মন খারাপ করে দিল।
তিন্নি গজগজ করতে করতে বলল, "বদমাইশটার নিজেরই ঐ বয়সী একটা মেয়ে আছে, তার বউ আছে; তারপরেও এমন একটা কাজ সে করলো কিভাবে?"
আমি কী উত্তর দিব এই প্রশ্নের?
শিশু যৌন নির্যাতন আমাদের দেশের নাকি খুবই কমন ঘটনা। সেটা সরাসরি রেপ হতে পারে, অথবা চোখের দৃষ্টিও হতে পারে। আমি একটা মেয়েকে চিনতাম, যে একবার বলেছিল তাঁর বাবার বন্ধু তাঁর সাথে কথা বলার সময়ে তাঁর বুকের দিকে তাকিয়ে থাকে।
বাবার বন্ধু!
গৃহশিক্ষক পড়াবার সময়ে টেবলের নিচে দিয়ে ছাত্রীর পায়ে ঠোকাঠুকি করেন, এটাতো খুবই কমন ঘটনা। এমনকি স্কুল কলেজেও টিচারদের দেখেছি বিভিন্ন বাহানায় মেয়েদের পিঠে হাত দিতে। হাত কেবল নিচেই যায়। এবং একটি বিশেষ স্থানে গিয়ে একটু বেশি সময়ের জন্য থেমে থাকে।
সব মেয়েই এই ধরনের 'স্পর্শের' সাথে পরিচিত। কেউ কিছু বলেনা। বললে, যদি তার বদনাম হয়!
যদি বলছি কেন? তার বদনাম হবেই।
লেজেন্ডারি মানিকের কথা কয়জনের মনে আছে? যার আরেকটা পরিচয় ছিল সেঞ্চুরি মানিক। সে এখন কোথায়? কী হয়েছে তার? সেঞ্চুরি নিশ্চই এখন ডবল ত্রিপল কোয়াড্রপল হয়ে গেছে! কত স্কোরে সে এখনও নট আউট আছে জানতে খুব ইচ্ছে করে।
জাহাঙ্গীর নগর পড়ুয়া এক ছেলের সাথে কথোপকথনে সেই ছেলে আমাকে বলেছিল, "আসলে মেয়েদেরও দোষ ছিল। ওরাই মানিক ভাইয়ের সাথে লদকা লদকি করতো।"
এমন এক পৃথিবীতে আমরা থাকি, যেখানে ধর্ষকের নয়, ধর্ষিতাকে শাস্তি পেতে হয়।
অনেক বছর আগে বাংলার এক গেঁও বাউল লিখে গিয়েছিলেন,
"গোপনে যে বেশ্যার ভাত খায়
তাতে ধর্মের কি ক্ষতি হয়
লালন বলে জাত কারে কয়
সে ঘোরও তো গেল না…"
দেড়শো বছর কেটে গেল, সে ঘোর আজও কাটলো না।
মেয়েদের এক অদ্ভূত সাইকোলজি আমি বুঝিনা। নিজের গলার সামান্য সোনার চেইন যেখানে অতি আপন জনেরও হাতে দিতে চাননা, সেখানে নিজের ছেলে-মেয়েকে অন্যের হাতে তুলে নিশ্চিন্তে থাকেন কোন লজিকে? নিজের সন্তান কি এতই সস্তা?
একবার চিটাগংয়ে বেড়াতে গিয়ে বিজয় মেলায় গিয়েছিলাম। আমি, আমার ছোট ভাই, আমার মামাতো ভাই ছাড়াও ছিলেন আমার বড় মামী, আমাদের তিনিই মেলায় নিয়ে গিয়েছিলেন।
আমরা মেলা দেখবো কী, মামীর চারপাশে ব্যারিকেড দিতেই ব্যস্ত! আমাদের দেশের পুরুষেরা এতই চরিত্রবান কিনা! কারও মা বোনকেই ছাড়েনা, সেখানে মেয়ে কি ছাড়?
আমার বোনকে নিয়ে একদিক দিয়ে বলতে গেলে এই ঝামেলা হতো না। সে সবসময়ে হাতে শক্ত কিছু একটা রাখতো। কেউ অসভ্যতা করলে সে ভিড়ের তোয়াক্কা না করেই ধামাধাম পিটুনি দিত। সবাইতো আমার বোনের মত না! আফসোস!
তিন্নি বলল, "মেয়েটার চেহারা আমার চোখে বারবার ভেসে উঠছে। ইশ! কী যে হাসিখুশি মেয়ে ছিল! এখন একদম চুপচাপ হয়ে গেছে। আমরা কারন বুঝতে পারতাম না। এখন বুঝতে পারছি।"
মা বাবারা, বিশেষ করে যাদের মেয়ে আছে, আমি অনুরোধ করবো, কাউকে বিশ্বাস করবেন না। যদি কখনও আপনার মেয়ে কারও কাছে যেতে কমফোর্ট ফিল না করে, তাকে জোর করে বলবেন না যেতে। দুর্ঘটনা কাউকে নোটিস দিয়ে আসেনা।
নিটল মোটর্সের মটো কিন্তু সবসময়ের জন্য ধ্রুব সত্য, "একটি দূর্ঘটনা, সারা জীবনের কান্না।"

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ রাত ২:৫৫

সচেতনহ্যাপী বলেছেন: শিক্ষকদের বিরুদ্ধে হলে শুধু বদনাম না ফেলটুসের মার্কাটিও কপালে এটে যাবে।।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৪

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :(

২| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সকাল ৭:৪৬

দুখাই রাজ বলেছেন: চমৎকার একটা লেখা । সবারই সচেতন হওয়া উচিৎ । শুভ সকাল ।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঠিক ধরেছেন

৩| ২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:০৪

কলমের কালি শেষ বলেছেন: এইসকল ঘটনা অহরহই ঘটে । কারও টা রটে কারওটা রটে না । এ নিরব অপরাধগুলো নির্মূল করাটা অনেক কঠিন কারন এগুলো ইথিকাল অপরাধ । খুবই দুঃখজনক ব্যপার এই অপরাধগুলো ।

ভাল বলেছেন ।

১২ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১১:১৪

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :(

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.