নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
সেই ছোটবেলার এক বিকেলে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে দেখি নূরু ভাই স্ল্যাব দিয়ে ঢাকা ড্রেনের এক মুখে খরকুটোয় আগুন ধরাচ্ছে। তার পাশে অন্যান্য খেলোয়াড়রা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে। ড্রেনের অপর প্রান্তে আরও বেশি ভিড়। ওখানেও সবার হাতে লাঠি।
ঘটনা কী?
নূরু ভাই জানালো ড্রেনের ভিতরে দুইটা শেয়াল ঢুকে পড়েছে। ওগুলোকে মারার প্রস্তুতি চলছে।
নূরু ভাইদের বাড়িতে হাস মুরগি গরু ছাগল ইত্যাদি যাবতীয় গবাদি পশু পালা হয়। শিয়ালের সাথে তাই তাঁদের বহুদিনের শত্রুতা।
আমি জীবনেও জংলি শেয়াল দেখিনি। তাই মনের ভিতর একটু আগ্রহ জাগলো।
আবার একই সাথে ইচ্ছে হলো শেয়ালগুলো যেন গর্ত থেকে না বেরোয়। বেরুলেইতো খেল খতম! শুধু শুধু দুইটা প্রাণীকে পিটিয়ে মারা হবে! হোক না সেটা বুনো শেয়াল, তবু প্রাণী তো!
ছোটদের গল্পে পড়তাম শেয়াল নাকি খুব চতুর প্রাণী। দেখা গেল বাস্তবেও তাই।
তারা বেরুলো না। আগুন, ধোঁয়া, লাঠির শব্দ ইত্যাদি কোন কিছুর পরোয়া না করে তারা সেই ড্রেনেই লুকিয়ে রইলো। তারাও হয়তো জানে মানুষের ধৈর্য্যের বড় অভাব। কিছুক্ষণ কষ্ট করে সহ্য করে গেলেই দেখা যাবে তারা হাল ছেড়ে দিয়েছে। তখন এক ফাঁকে বেরিয়ে এলেই হয়।
প্রায় আধাঘন্টা দাপাদাপির পরেও যখন শেয়াল বেরুলো না, তখন হাল ছেড়ে দিয়ে নূরু ভাই শিয়ালদের "কুত্তার বাচ্চা" গালি দিয়ে দলবল নিয়ে ক্রিকেট খেলতে গেলেন।
আমরা সবসময়েই ক্ষমতার ডিজঅ্যাডভান্টেজ নেই। নিজের চেয়ে কম ক্ষমতাবান কাউকে পেলেই তাকে 'বুলি' করি। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে "rag" দেয়ার নামে একটা ফাজলামি প্রথার প্রচলন আছে। কেউ বাধা দিতে গেলে বলি, "আমরা কী একটু মজাও করতে পারবো না?"
নিম্নশ্রেণীর প্রাণী পেলেতো কথাই নাই। তখন আমাদের চেয়ে বেশি নিষ্ঠুর এ জাহানে আর কে থাকে?
প্রেমিক প্রেমিকার সাথে কথা বলছে। হয়তো টেবিলের উপর একটা ছোট পিপড়া হেঁটে যাচ্ছে। কোন কারন ছাড়াই আঙ্গুলের টিপে সেই পিপড়াকে মেরে ফেলা হয়। পিপড়ার দোষ কী? সে কেন মানুষের চোখে পড়লো!
একটা বিড়াল ঘুমিয়ে আছে। এমনিতেই মাছির ভনভনানিতে তার ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে। হঠাৎ কেউ একজন এসে ধুম করে লাথি মেরে দিল। মিউ মিউ করে তার দৌড় দেখে খুব মজা পেল জনতা!
রাস্তার একটা কুকুর হয়তো খাবারের জন্য কোন রেস্টুরেন্টের পাশে ঘুরঘুর করছে। বলা নেই কওয়া নেই, রেস্টুরেন্টের ভিতর থেকে এক গামলা গরম মাড় এনে কুকুরের গায়ে ঢেলে দিল। ছাল ঝলসে গিয়ে কুকুরের সে কী যন্ত্রণা! প্রত্যক্ষদর্শী মানুষেরা তখন বলেন, "খুব ভাল হইছে! একদম উচিৎ শিক্ষা হইছে!"
বেচারা অবুঝ কুকুরটা! যেদেশে মানুষেরই খাবারের গ্যারান্টি নাই, সেদেশে সে আশা করেছিল কেউ তাকে খাবার দিবে!
অ্যামেরিকানদের আবার কুকুর-বিড়ালের প্রতি প্রেম সাংঘাতিক। কুকুর বিড়ালদের নিজের সন্তানের মতন লালন পালন করেন। কেউ কেউ কুকুরের আনুষ্ঠানিক বিয়ে দেন। কেউবা কুকুরের মৃত্যুতে প্রপার ফিউনারেলও করেন। কুকুরের নামে উইল করে যাওয়া অগাধ সম্পত্তির ঘটনাও এদেশেই ঘটে।
কিন্তু মানুষ হয়ে জন্মেছে, নিষ্ঠুর না হলে কী চলে? অন্যান্য প্রাণীর প্রতি ঠিকই নিষ্ঠুরতা দেখানো হয়।
যেমন কাঠ-বিড়ালি।
কাঠবিড়ালিকে নিয়ে আমাদের জাতীয় কবি দারুণ একটি কবিতা লিখেছিলেন। সেই কবিতা জীবনে একবারও কেউ শুনেনি এমন বাঙ্গালি পাওয়া খুব কঠিন।
এদেশে কেউ তাদের নিয়ে কবিতা লিখেছেন কিনা জানিনা। অ্যামেরিকার গাছে গাছে কাঠবিড়ালিকে খেলতে দেখা যায়। অতি 'কমন' বস্তুকে নিয়ে কেই বা কবিতা লিখে সময় নষ্ট করতে চান? আমাদের দেশেও যেমন গরু-ছাগল নিয়ে তেমন বিখ্যাত কোন কবিতা আমার মনে পড়ে না।
যাই হোক, কাঠবিড়ালির প্রতি অনেক অ্যামেরিকানই নিষ্ঠুর। বিশেষ করে শিশুরা।
এদেশে প্রায় প্রতিটা ঘরে ঘরেই লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র থাকে। আগ্নেয়াস্ত্র মানে রাইফেল, বন্দুক, পিস্তলের কথাই বলছি। সংবিধান অনুসারে এখানে আত্মরক্ষার জন্য আগ্নেয়াস্ত্র বহন করার অধিকার নাগরিকদের আছে।
আত্মরক্ষা ছাড়াও শিকারের কাজেও এসব অস্ত্র ব্যবহার করা হয়ে থাকে। শিকারে যাওয়াটাও অ্যামেরিকানদের এক ধরনের 'সৌখিনি।'
বাবাকে শিকারে যেতে দেখে ছেলে মেয়েরও মন চায় শিকার করতে। তাদের তখন ছোট বিবি গান কিনে দেয়া হয়। তারা তখন ব্যাকইয়ার্ডে খেলতে আসা কাঠবিড়ালি অথবা খরগোশ শিকার করে। অ্যামেরিকায় কাঠবিড়ালির মতন খরগোশও যত্রতত্র দেখা যায়।
ঈদের পরে এক দুপুরের দাওয়াতে ক্যানভাসের বিখ্যাত কবি Ranya Rahim'র বাসায় গেলাম। তাঁর মা, সেলিনা 'রোজি' পারভীনও ক্যানভাসের একজন বিশিষ্ট পাঠিকা। আমাকে দাওয়াতের ব্যপারে Ranya থেকেও তাঁর মায়েরই বেশি আগ্রহ ছিল। আন্টিকে আবারও ধন্যবাদ!
তিনি বললেন, তাঁর বাড়ির বাগানে খরগোশ অন্যান্য বাড়ির তুলনায় বেশি বেশি আসে। এখন ওরা পোষা খরগোশের মতন হয়ে গেছে। তিনি তাদের মাঝে মাঝে খাবারও দেন। তাদের তিনি নামও দিয়েছেন। একজনের নাম যেমন 'খরু।'
আমি বললাম, 'আপনারা যে মারেননা, এইজন্য ওরাও বুঝে গেছে যে আপনাদের বাগানে ওদের কোন ভয় নেই।'
জীব-জন্তুদের নিজস্ব ভাষা না থাকলেও ওরা মানুষের ভালবাসার ভাষা বুঝতে পারে। ইহা পরীক্ষিত সত্য।
তিনি বললেন, "খরু আমাদের বাগানেই তার বাচ্চা দিয়েছিল। কী সুন্দর ফুটফুটে একেকটা বাচ্চা! আমরা কোন ঝামেলা করিনি। ওদের প্রাইভেসি দিয়েছিলাম। একদিন আমাদের পাশের বাড়ির এক হুলো (বড় / বিশালাকৃতির মোটাসোটা বিড়াল) এসে সেই বাচ্চাগুলোকে খেয়ে ফেলল। বিশ্বাস করো, খরুর যে তখন কী মন খারাপ হয়েছিল! সে প্রায়ই এসে তার বাচ্চাগুলো যেখানে থাকতো, সেখানে এসে একা একা বসে থাকতো। দূর থেকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতো। পশু হলেওতো সে একজন মা। তারও অন্তরে মায়া মমতা আছে।"
আমরা প্রায়ই কারও নিষ্টুরতা বুঝাতে তাকেই প্রশ্ন করি, "তুই মানুষ নাকি জানোয়ার?"
নারে ভাই। নিষ্ঠুরতায় মানুষের ধারে কাছেও ঘেষবার ক্ষমতা তাদের নেই।
আর তাদেরও অন্তরে মায়া-ভালবাসা আছে।
প্রথম দেখাতেই যদি তাদের প্রতি আপনি নিষ্ঠুর আচরণ শুরু করে দেন, অথবা মেরেই ফেলেন, তখন তাদের এই গুণের কথা আপনি জানবেন কী করে?
রাস্তার একটা ক্ষুধার্ত কুকুরের গায়ে গরম মাড় না ঢেলে একটা বিস্কিট দিয়ে দেখুন, মনে কেমন শান্তি লাগে।
শেষ করি নবীজির (সঃ) একটি ঘটনা দিয়ে।
তিনি পৃথিবীর সব প্রাণীকেই ভালবাসতেন। বিড়াল তাঁর অত্যন্ত প্রিয় একটি প্রাণী ছিল। একদিন নামাজের সময়ে তিনি দেখেন তাঁর পোশাকের উপর একটি বিড়াল নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে। এদিকে নামাজের জন্য দেরী হয়ে যাচ্ছে।
তখন তিনি বিড়ালের ঘুম না ভাঙিয়ে, পোশাকের যে অংশে সে ঘুমাচ্ছিল সেটুকু অংশ কেটে বাদ দিয়ে নামাজ পড়তে চলে গেলেন।
ঘুমন্ত বিড়ালকে লাথি মেরে মজা নেয়া নেক মুসলমান ভাইদের উদ্দেশ্যে এই গল্প উৎসর্গ করলাম।
https://www.facebook.com/groups/canvasbd/
৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৪৮
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন:
২| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১২:০৭
ভরকেন্দ্র বলেছেন: +++
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১:৫৮
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন:
৩| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৩:২২
আমিনুর রহমান বলেছেন:
দারুন লিখেছেন +
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৩:২৮
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
৪| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:১৭
কামরুল ইসলাম রুবেল বলেছেন: ভালো লেগেছে
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:২৩
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!
৫| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১০:৫৫
সালমান মাহফুজ বলেছেন: "আমরা সবসময়েই ক্ষমতার ডিজঅ্যাডভান্টেজ নেই। নিজের চেয়ে কম ক্ষমতাবান কাউকে পেলেই তাকে 'বুলি' করি। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে "rag" দেয়ার নামে একটা ফাজলামি প্রথার প্রচলন আছে। কেউ বাধা দিতে গেলে বলি, "আমরা কী একটু মজাও করতে পারবো না?"
নিম্নশ্রেণীর প্রাণী পেলেতো কথাই নাই। তখন আমাদের চেয়ে বেশি নিষ্ঠুর এ জাহানে আর কে থাকে? " -- সত্য কথন ।
৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ৮:২৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন:
৬| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ সকাল ১১:২৯
শাশ্বত স্বপন বলেছেন: খুব ভাল লিখেছেন । কিন্তু নবীজির বিড়াল পোষা নিয়ে অাগে শুনি নাই।
৭| ৩১ শে অক্টোবর, ২০১৪ দুপুর ১২:২৩
জামান শেখ বলেছেন: নবীজি বিড়াল পুশতেন সত্য। কুকুর পুশতেন না।
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে অক্টোবর, ২০১৪ রাত ১১:৪৪
অন্ধবিন্দু বলেছেন:
এ-এ-ই আমরিকান আছি কইলাম। সাবধান ! হাহ হাহ হা। মানুষেরই লাথি মাইরে হাত-পা ভাঙি। আর ঘুমন্ত বিড়াল .... আহ্।
আল্লাহ আমাদের সহায় হোন। ধন্যবাদ, মঞ্জুর।