নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
আমি তখন ক্লাস সিক্সে পড়ি।
এক বিকেলে ক্রিকেট খেলতে গিয়ে দেখি কাইয়ুম আসেনি। কাইয়ুম হচ্ছে রাশুদের কাজের ছেলে।
রাশু তখন ক্লাস টুর ছাত্র। কাইয়ুমের বয়স আমার চেয়ে বড় হলেও হতে পারে। কাজের ছেলে বলেই আর "কাইয়ুম ভাই" ডাকা হতো না।
সে খুব ভাল বোলিং করতে পারতো। 'খুব ভাল' মানে পাড়ার মাঠের হিসেবে বলছি, ম্যাকগ্রা-ওয়াসিমের সাথে তুলনা করে বসবেন না যেন।
আমাদের পাড়ার মাঠে সেই ছিল ওয়াকার ইউনুস। এমনিতে মার খেত, কিন্তু হঠাৎ হঠাৎই টপাটপ একটানা কয়েকটা উইকেট নিয়ে খেলা ঘুরিয়ে দিত।
পাড়ার মাঠে এমনিতেই ভাল খেলোয়াড়ের অভাব থাকে, কাজেই কাইয়ুম না আসলে খোঁজ নিতেই হয় কেন আসেনি।
রাশু জানালো কাইয়ুম অসুস্থ।
আরাফাত রসিকতা করে বলল, "কাজের ছেলের আবার অসুস্থতা কী? ওরে বল এসে বোলিং করে চলে যেতে।"
কয়েকদিনের মধ্যে অন্য পাড়ার সাথে আমাদের একটা ম্যাচ হতে যাচ্ছে। আমাদের তারকা ফাস্ট বোলার শাহ আলমকে ইদানিং খুব বেশি পাওয়া যাচ্ছে না। তবে ও বলেছে ম্যাচের দিন উপস্থিত থাকবে। সেটাই স্বস্তির।
কিন্তু প্র্যাকটিসে ভাল বোলার না থাকলে ব্যাটিং প্র্যাকটিস হবে কিভাবে? শুনেছি ওরা খুবই ভাল দল। ব্যাটিং বোলিং সবক্ষেত্রেই 'উরাধুরা!'
রাশু জানালো, "আব্বা ওকে মেরেছে। তাই আজকে খেলতে পারবে না।"
ঐ বয়সটাতে কাজের লোকেদের মারধর করা আমার কাছে অদ্ভূত ঠেকতো না। ভুল করলে কাজের লোক মার খাবে, এটাইতো স্বাভাবিক।
নাসিম জিজ্ঞেস করলো, "তাই নাকি? কেন মেরেছেন?"
"আব্বার বুট পালিশ করে রাখার কথা ছিল, রাখেনি।"
ও আচ্ছা। বিরাট অন্যায় করে ফেলেছে।
আমরা তেমন কিছু মনে করলাম না। আমরা খেলায় মন দিলাম। টুটা ফুটা বোলিং চললো, হালকা পাতলা ব্যাটিং। অনেকক্ষণ ধরে ক্যাচিং প্র্যাকটিস হলো। ফিল্ডিংটা যেহেতু সবাইকেই করতে হবে, কাজেই ফিল্ডিংয়েই বেশি জোর দেয়া।
পরের দিনও কাইয়ুম এলোনা। এর পরের দিনও না।
ম্যাচের দিন ঘনিয়ে আসছে। এইবার চিন্তিত হতেই হলো।
"কী হলো রাশু? তোমার আব্বা কী কাইয়ুমের মার্ডার করে ফেলেছেন নাকি যে এতদিনেও সুস্থ্য হচ্ছে না?"
রাশু হেসে বলল, "আরেনা, মার্ডার করবেন কেন? একটু মেরেছেন আর কি। ঠিক হলেই খেলতে আসবে।"
কাইয়ুমের সাথে পরের দিন দেখা। বাবুলের দোকানে। বাবুল হচ্ছে আমাদের পাড়ার মুদির দোকানদার। তখনকার দিনে গোটা পাড়ায় তারই একা দোকান ছিল। এখন অনেক হয়ে গেছে।
"কিরে কাইয়ুম? খেলতে আসিস না কেন? ম্যাচে খেলতে হবে না?"
কাইয়ুম একটা মলিন হাসি হেসে বলল, "রাজীব ভাই! এইবার খেলা হইবো না।"
"কেন? কি হয়েছে?"
সে তার ডান হাতের আঙ্গুল দেখালো। ফুলে ঢোল হয়ে আছে। সেই সাথে রক্ত জমাট বেঁধে কোথাও কোথাও নীল, কোথাও কোথাও কালো হয়ে আছে।
আমি চোখ বড় বড় করে বললাম, "সর্বনাশ! কিভাবে হলো?"
সে অতি স্বাভাবিকভাবে বলল, "স্যারে মারছে।"
মনে পড়লো, কেন মেরেছিলেন।
"বুট পালিশ করতে পারিস নাই বলে?"
সে উপর নিচ মাথা নাড়ে।
"পালিশ করিস নাই কেন?"
"রাইতেই পালিশ কইরা রাখোনের কথা। সকালে য্যান অপিস যাইতে দেরী না হয়। আমার জ্বর জ্বর লাগতাছিল। তাই ঘুমায়া পড়ছিলাম। সকালে উইঠা স্যারে মারছেন।"
আমার তখন একটা ঘটনা মনে পড়ে গেল।
রাশুর বাবা বিরাট সরকারী কর্মকর্তা। ছোট শহর বলে তাঁর বিরাট হম্বিতম্বি।
আমি তখন রাশুরই স্কুলে পড়তাম। একদিন শুনি প্রিন্সিপাল টিচারের ঘরে বিরাট হইচই।
রাশুর বাবার কন্ঠস্বর শুনে আমি এগিয়ে গিয়েছিলাম কী হচ্ছে দেখতে। খুব বেশি কিছু দেখা হয়নি। স্পোর্টস টিচার আমাদের তাড়িয়ে দিয়েছিলেন।
তবে আঙ্কেলকে, যিনি কিনা পিটিয়ে একটা কাজের ছেলের আঙ্গুল ভেঙ্গে দিয়েছেন, তাকেই তখন অগ্নিশর্মা হয়ে প্রিন্সিপাল টিচারকে বলতে শুনেছিলাম, "শিশুরা একটু আধটু দুষ্টামি করবেই, তাই বলে তাদের মারধর করতে হবে কেন? তারা মানুষ না? তাদের ব্যথা লাগে না? বুঝিয়ে বললেই হয়! আরেকবার যদি আমার ছেলের গায়ে কোন টিচার হাত তোলেন, তাহলে আমি বলে দিচ্ছি, আমি আমার ছেলেকে এই স্কুলে পড়াবো না।"
আমি আবার কাইয়ুমের ডান হাতের আঙ্গুলের দিকে তাকাই। ফুলে ঢোল হয়ে আছে। বেচারা ঠিক মতন নাড়াতেও পারছে না। রক্ত জমাট বেঁধে কোথাও কোথাও নীল, কোথাও কোথাও কালো হয়ে আছে।
আজকে নাকি বিশ্ব শিশু দিবস!
সব শিশুদের শুভেচ্ছা।
তাঁদের সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করছি!
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৪ রাত ১২:০৬
অন্ধ জনা বলেছেন: প্রথম ভাল লাগা।