নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

“পাপী হলেই কাউকে "ঘৃণা" করতে বলা হয়েছে” - হাদিস নিয়ে কিছু কথা

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:০৮

ইসলাম ধর্মে তিনটা পাপকে সবচেয়ে জঘন্য হিসেবে ধরা হয়।

১. শির্ক। মানে হচ্ছে আল্লাহর সাথে কাউকে ইবাদতে শরিক করা। আরও ভেঙ্গে বললে, আমাদের যেমন শুধুই নিরাকার আল্লাহর কাছে মাথা নত করার কথা, তাঁর কাছেই কিছু চাওয়ার কথা, সেটা না করে অন্যের কাছে মাথা নত করা এবং চাওয়া, ইবাদত করা।

উদাহরণ (অবশ্যই মুসলিম উদাহরণ দিচ্ছি) হতে পারে, পীর ফকিরের তাবিজ নেয়া, মাজারে সিজদাহ করা, ঝারফুক করা, জ্যোতিষীর কাছে ভাগ্য গণনা করা, ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য হাতে আংটি পড়া ইত্যাদি। এমনকি "বদ নজর" থেকে বাঁচতে আমাদের সমাজে বাচ্চাদের কপালে যে কাজলের বড় একটা দাগ আঁকা হয়, সেটাও কিন্তু "শির্ক!" আপনার বাচ্চাকে যাবতীয় প্রটেকশন দেয়ার মালিক আল্লাহ। আপনি তার কপালে একটা কালো বিন্দু এঁকে ভাবছেন এই বিন্দু তাকে প্রটেক্ট করবে - কোন লজিক হলো?

মুরুব্বিদের এমনকি মা বাবার পা ছুঁয়ে সালাম করাটাও কিন্তু অনেক বড় গুনাহ! কারণ এতে আপনার মাথা নত হয়ে যাচ্ছে। আপনি তাঁদেরকে নরমালিই সালাম দিন, ‘আসসালামু আলাইকুম’ বলুন, যার মানে হচ্ছে "আপনার উপর শান্তি বর্ষিত হোক" অসুবিধা কোথায়? এইটা কী খুব খারাপ কিছু হয়ে যাচ্ছে যে একেবারে পা ছুঁয়ে পায়ের ধুলি মাথায় মাখতে হবে? অতিরিক্ত কোনকিছুই ভাল না। নরমাল থাকতে শিখুন। আমরা এই সহজ কাজটাই পারিনা। প্যাচ আনতেই হবে।

একবার আমার ছাত্রকে পরীক্ষা করার জন্য আমি ৩ X ২ = ? লিখে মার্কস দিলাম ১০. এবং একটা মোটামুটি জটিল অংকে মার্কস দিলাম ৫. ছেলে প্রথম প্রশ্নে অনেক অনেক সময় নষ্ট করলো এই ভেবেই যে এত সহজ প্রশ্নে আমি কোন লজিকে ১০ মার্কস দিচ্ছি। নিশ্চই কোন 'হিডেন' প্যাচ আছে যা সে ধরতে পারছে না। ফলাফল হলো দ্বিতীয় প্রশ্নে সে ভুল করে বসলো।

শির্ক এমন এক পাপ যা সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, তিনি সব গুনাহ ইচ্ছা হলেই মাফ করে দিবেন, কিন্তু শির্ক গুনাহ মাফ করবেন না। এরজন্য তওবা করতে হবে।

২. দ্বিতীয় বৃহত্তম গুনাহ হচ্ছে মার্ডার। একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করার চেয়ে বড় পাপ এই পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি নেই। আল্লাহ নিজেই বলেছেন, "কেউ যদি একজন নিরপরাধ ব্যক্তিকে (খেয়াল করে দেখুন, আল্লাহ কিন্তু মুসলিম/অমুসলিম বলেননি, তিনি স্পষ্ট বলেছেন মানুষের কথা) হত্যা করলো, সে যেন পুরো মানবজাতিকে হত্যার মত জঘন্য পাপ করলো। আবার কেউ যদি একজন মানুষকে বাঁচালো, সে যেন পুরো মানব জাতিকে বাঁচানোর পুণ্য করলো।"

৩. ব্যভিচার, সহজ ভাষায় adultery. বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপন। ব্যাখ্যার প্রয়োজন বোধ করছি না। লেখাটা অশ্লীল হয়ে যেতে পারে।

যাই হোক, এছাড়াও ইসলামে আরও অনেক রকম পাপ আছে।

মিথ্যা হচ্ছে সকল পাপের মাতা। যে মিথ্যা বলে, সে যেকোন পাপ করতে পারে। এই মিথ্যা অনেক ধরণের হতে পারে। ছোটখাটো মিথ্যা থেকে শুরু করে একজন মানুষ, বিশেষ করে নির্দোষ নারীর বিরুদ্ধে না জেনে শুনে আজাইরা কমেন্ট করাও "মিথ্যা" রটনার সামিল। গায়িকা ন্যান্সির উদাহরণ নিতে পারি। কিছুদিন আগে পত্রিকায় শিরোনাম হয়েছিল, তিনি মৃত্যুর আগে তারেক জিয়ার সাথে একবার দেখা করতে চান। অনেকের কাছে হাস্যকর ঠেকলেও এইটা একান্তই তাঁর নিজের ব্যক্তিগত ব্যপার। কিন্তু এই নিয়ে মানুষ যেভাবে ফেসবুকে তাঁকে তুলোধুনো করলো, তাঁর চরিত্র নিয়ে কথা তুলতেও ছাড়েনি, এইটাই "মিথ্যা" এবং এইটাও জঘন্য গুনাহ।

ফিৎনা, ফ্যাসাদ বা সহজ ভাষায় "কূটনামি" আরেক জঘন্য অপরাধ। একের ঘরের খবর আরেক ঘরে রটিয়ে শুধু শুধু সমাজ ও পরিবারে অশান্তির সৃষ্টি করা! গীবতও তার মধ্যে একটি। মানে হচ্ছে একের পিছনে বা সামনে তাঁর নামে কুৎসা রটানো। কত সংসার যে ভাঙ্গে এদের কারণে! এই সমস্ত মানুষদের ধরে বেঁধে দ্বীপ চালান করে দেয়া উচিৎ! ইসলামে বলা হয়, "কেউ যদি গীবত করলো সে যেন নিজের মৃত ভাইয়ের মাংস ভক্ষণ করলো!"

চুরি করা, নেশা করা, ঘুষ খাওয়া, সুদ খাওয়া.....সুদের অপরাধ লেভেল বুঝাতে নবীজি স্পষ্ট বলেছেন, "তোমরা নিজের মায়ের সাথে অপকর্ম করো, তবুও সুদ খেওনা।"

কী জঘন্য!

এইরকম হাজারো অপরাধ আছে ইসলামে যাকে "পাপ" হিসেবে ধরা হয়। এখন কথা হচ্ছে, আমরা কয়জন সকল পাপের ঊর্ধে? কেউ নই। প্রত্যেকেই কিছু না কিছু পাপ করছিই, এবং এটাই স্বাভাবিক। মানুষকে আল্লাহ ভুল করার ক্ষমতা দিয়েই সৃষ্টি করেছেন। নাহলে আমরা সবাই ফেরেস্তা হতাম।

আল্লাহ বলেছেন, তোমরা যতবার আমার কাছে ক্ষমা চাইতে আসবে, আমি ততবার তোমাদের ক্ষমা করতে থাকবো।

এখন কথা হচ্ছে - কেউ পাপ করলেই কি দলে দলে তাঁকে সমাজচ্যুত করে দেয়ার হুকুম ইসলামে আছে? ইসলাম মানে আমি প্রকৃত ইসলামের কথা বলছি, আল্লাহর বাণী এবং নবীজির(সঃ) হাদিস।

প্রথমেই দেখা যাক, সবচেয়ে জঘন্য অপরাধ শির্ক বিষয়ে আল্লাহ কী বলেন, "রাসূলের দায়িত্ব শুধু (বাণী) পৌছে দেয়া, আল্লাহ জানেন যা তোমরা প্রকাশ্যে কর এবং যা কিছু গোপনে কর।"(৫:৯৯)

"....তাদের পূর্ববর্তীরা এমনই (পাপ নিয়ে নিজেদের মতন ব্যাখ্যা দাঁড়া করানো) করেছে। রাসূলের দায়িত্ব তো শুধুমাত্র সুস্পষ্ট বাণী পৌছিয়ে দেয়া।" (১৬:৩৫)

"দ্বীনের ব্যাপারে কোন জবরদস্তি বা বাধ্য-বাধকতা নেই। নিঃসন্দেহে হেদায়াত গোমরাহী থেকে পৃথক হয়ে গেছে।" (২:২৫৬)

এবং একটি সম্পূর্ণ সুরাহ (অধ্যায়) যা আবার অতি বিখ্যাত, "বলুন, হে কাফেরকূল, আমি ইবাদত করিনা, তোমরা যার ইবাদত কর। এবং তোমরাও ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি। এবং আমি ইবাদত নই, যার ইবাদত তোমরা কর। তোমরা ইবাদতকারী নও, যার ইবাদত আমি করি। তোমাদের কর্ম ও কর্মফল তোমাদের জন্যে এবং আমার কর্ম ও কর্মফল আমার জন্যে।" (সুরাহ কাফিরুন)

সহজ ভাষায় আল্লাহ বলেছেন কারও ধর্ম ভিন্ন হলে আমাদের "upset" না হতে। তিনি সেটা নিজে take care করবেন। আমরা কেবল নিজেদের বাণী পৌছে দিতে পারি। চলিত ভাষায় ‘religious টলারেন্স’ শিক্ষা দিয়েছেন।

এবারে দেখা যাক, নবীজি (সঃ) কি করেছেন।

তিনি প্রথমে নিজের পরিবার এবং আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে ইসলাম প্রচার শুরু করেন। নিজের পরিবার থেকেই অনেকে ইসলাম গ্রহণ করেননি। আবু তালিব তাঁদের একজন। তাঁর আপন চাচা। অথচ তিনি কিন্তু বলেননি, "তুমি কাফির! তাই তোমাকে "ঘৃণা" করা আমার জন্য ফরয!"

বরং তিনি যখন মৃত্যুশয্যায়, তখনও নবীজি (সঃ) বলে গেছেন, "একবারের জন্য শুধু স্বীকার করে নিন আল্লাহ ছাড়া আর কেউ উপাস্য নাই, এবং আমি তাঁর প্রেরিত পুরুষ! তাহলে আমি আপনাকে কেয়ামতের দিন আল্লাহর ক্ষমা পাইয়ে দিতে পারবো!"

হযরত উমার (রাঃ) ইসলাম গ্রহণের আগে কোন পর্যায়ের "কাফির" ছিলেন সেটা সবাই আশা করি জানেন। নবীজি (সঃ) কিন্তু তাঁকে "ঘৃণা" করেননি। ফলাফল, আমরা দুর্দান্ত একজন খলিফা পেলাম! আমরা (মুসলিমরা) কী কখনও তাঁর ঋণ শোধ করতে পারবো?

ইসলামের আকাশের জ্বলজ্বলে নক্ষত্র হযরত আবু সুফিয়ান (রাঃ) ছিলেন বিখ্যাত কুরাইশ নেতা। তাঁর চাতুরিতেই অহুদের যুদ্ধে মুসলিমরা ভয়াবহ মার খায়। হযরত হামযাহসহ (রাঃ) আরও অনেকেই শহীদ হন। কিন্তু একটা সময়ে এই আবু সুফিয়ানই (রাঃ) ইসলাম গ্রহণ করেন। কিভাবে? মুসলিমরা যদি "ঘৃণা" করে তাঁর সাথে না মিশতো, তাহলে তিনি কিভাবে ইসলাম সম্পর্কে জানতে পারতেন? নিজের ভুল বুঝতে পারতেন?

আমাদের দেশে শিক্ষা দেয়া হয়, একজন কাফির মানেই ইসলামের শত্রু। ইহুদি, খ্রিষ্টানরা ইসলামের শত্রু। এদের সাথে মেলামেশা বন্ধ করে দিতে হবে।

কিন্তু ভাই, আপনি যদি না মিশেন, তাহলে তাঁদের আমাদের সম্পর্কে যে মিসকনসেপশন আছে, তা কিভাবে দূর হবে? আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল(সঃ) দুইজনই হুকুম করেছেন তাঁদের বাণী সবার কাছে পৌছে দিতে। আপনি "ঘৃণা" করে তাঁদের সাথে যদি মেলামেশা বন্ধ করে দেন, তাহলে চলবে কিভাবে?

তায়েফের লোকজন নবীজিকে (সঃ) পাথর মারতে মারতে অজ্ঞান করে ফেলেছিল। তারপর তারা বিরতি নিয়ে অপেক্ষা করেছিল কখন তাঁর জ্ঞান ফিরে আসে। অজ্ঞান অবস্থায় মারধর করলেতো তিনি টের পাবেন না! সেই জাতির লোকজনের জন্য তাঁর কি রিএকশন ছিল মনে আছে? "এদের জ্ঞান দাও প্রভু! এদের ক্ষমা করো!"

আর আমরা একজন কেউ আমাদের ধর্ম বিশ্বাসের সাথে সহমত না হলেই কথা বলা বন্ধ করে দেই! কারণ ইসলাম বলেছে "ঘৃণা" করতে!

ইসলাম শিক্ষা দেয় পাপকে ঘৃণা করতে, পাপীকে নয়।

ইসলাম শিক্ষা দেয় ধৈর্য্য ধরে সরল পথে চলতে এবং অন্যকে সরলপথে আনতে। যতক্ষণ না পর্যন্ত কেউ আমার জীবনের হুমকি হয়ে গেছে, ততক্ষণ আমি তাঁকে ত্যাগ করতে পারবো না। তবে হ্যা, ওকে জোরও করতে পারবো না। কারণ তাঁকে সরল পথে আনা না আনা সেটা পুরোপুরিই আল্লাহর ব্যপার। আমার না।

তারচেয়েও বড় কথা, ইসলাম বলেছে নিজের আত্মার সাথে প্রতিনিয়ত জিহাদ করতে। আমাদের নিজেদের খাতায় কী কম পাপ আছে? প্রতিনিয়ত ইচ্ছা করছে আরও বেশি পাপ করতে।

রিটেইল শপে গেছি, নব্বই ইঞ্চি LED টেলিভিশন দেখে ইচ্ছে হলো যদি পয়সা না দিয়ে বের হয়ে যেতে পারতাম! রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি, একটা পার্ক করা ফেরারী দেখে মনে ইচ্ছে জাগলো যদি গাড়িটা নিয়ে পালিয়ে যেতে পারতাম!

কিংবা স্বল্প বসনা এক সুন্দরী ললনাকে দেখে মনে সাধ জাগলো.....থাক। ওটা বলার দরকার নেই। বুঝতেই পারছেন, পুরুষের মন! মোট কথা, যদি পাপীকে ঘৃণা করতেই বলা হতো, তবে সবার আগেতো আমার নিজেকেই নিজের ঘৃণা করে নিজের সাথেই সব সম্পর্ক চুকিয়ে বুকিয়ে দেবার কথা। এইটাই ইসলামে সবচেয়ে বেশি লজিক্যাল।

এখানে "স্যাক্সি"(উচ্চারণ আপত্তিকর শোনালেও বানান আসলে Sachse) নামের একটা গেঁও টেক্সান শহরে আমি এক ফাস্টফুডে কাজ করতে যেতাম। আমার ম্যানেজার ছিলেন এক সাদা টেক্সান বুড়ি। মহিলার জন্ম ক্যাথোলিক পরিবারে হলেও নানান ঘটনা দূর্ঘটনায় তিনি এখন নাস্তিক।

কাজের ফাঁকে ফাঁকে মহিলা আমার সাথে নানান বিষয়ে কথা বলতেন। তাঁর প্রধাণ আগ্রহই ছিল ইসলাম সম্পর্কে জানা। কারণ এই প্রথম কোন "মুসলিম" যে নিজের ধর্ম সম্পর্কে মোটামুটি জানে, তাঁর সাথে কথা বলছে।

"ম্যানঝুর (অ্যামেরিকানরা কোনভাবেই সঠিকভাবে বিদেশী নাম উচ্চারণ করতে পারেনা) এইটা কি সত্যি যে তোমাদের কুরআনে অমুসলিমদের হত্যা করার নির্দেশ দেয়া আছে?"

আমি তখন তাঁকে সুরাহ তওবার পঞ্চম আয়াতটি ব্যাখ্যা করলাম। সেই সাথে নানা উদাহরণ দিয়ে বুঝালাম আমাদের ধর্মে বীনা কারণে একটা পিপড়া মারার শাস্তিও হতে পারে জাহান্নাম! মানুষ হত্যাতো বহুদূর!

"তোমাদের ধর্মে নাকি আল্লাহ বউ পেটাতে নির্দেশ দিয়েছে?"

আমি সুরাহ নিসার চৌত্রিশ নম্বর আয়াতটি ব্যাখ্যা করলাম।

এইরকম প্রতিদিন সে আমার কাছে নিয়ম করে "ইসলাম শিক্ষা" ক্লাস করতো।

একদিন সে খুব রাগান্বিত চেহারায় এসে উপস্থিত। জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, "আজকে আমার কিছু আত্মীয়দের সাথে আমার সব সম্পর্ক শেষ করে এসেছি।"

"কেন?"

"ওরা একটা সিক্রেট গ্রুপে আমাকে মেম্বার হতে বলেছিল। 'We hate Muslims.' ওরা, মানে আমার আপন বোন, দুই খালা এবং ভাই আমাকে বুঝাচ্ছিল যে মুসলমানরা আমাদের ঘৃণা করে, এবং আমাদের শত্রু! আমি স্পষ্ট বলে দিয়েছি, মুসলিমরা মোটেও আমাদের ঘৃণা করেনা। কারণ আমি তিনজন মুসলমানের সাথে একই স্টোরে কাজ করি, এবং তিনজনই আমাদের পুরো স্টোরের সব কর্মচারীদের মধ্যে শ্রেষ্ঠ!"

গর্বে আমার বুক আধা হাত ফুলে গিয়েছিল। নিজের স্টুডেন্ট যখন পরীক্ষায় ফার্স্ট হয়, তখন বুক ফুলাটাই স্বাভাবিক!

আমি তাঁকে বুঝালাম ইসলামে আত্মীয় স্বজনের সাথে কিভাবে আচরণ করতে হয়। মহিলা গিয়ে আবার সব ঠিকঠাক করে এসেছে। এবং নিজের বাড়িতেই নিজ উদ্যোগে ইসলাম শিক্ষা ক্লাস চালু করেছিল।

এইবারে আসি, আসল পাঞ্চে, মহিলা লেসবিয়ান ছিল। সমকামী! সেই শুরুর দিন থেকেই আমি জানতাম। আমাকে যখন সে জিজ্ঞেস করে সমকামীতা নিয়ে ইসলামের পয়েন্ট অফ ভিউ কী? তখন আমি স্পষ্টই বলেছি, এটি আর অন্যান্য যেকোন ধর্মের মতই ইসলামেও স্পষ্টই পাপ। কোরআনে বর্ণিত আছে, তিনি সামূদ সম্প্রদায়কে সমকামীতার অপরাধেই ধ্বংশ করে দিয়েছিলেন। কারণ এর ফলে মানব সৃষ্টির যে অন্যতম মূখ্য উদ্দেশ্য, সন্তান উৎপাদনের মাধ্যমে বংশধারা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া - এইটি চরমভাবে ব্যাহত হয়। এরবেশি আমার জ্ঞান নেই। এরবেশি আল্লাহ জানেন।

কারণ মহিলার দ্বিতীয় প্রশ্ন ছিল, "যারা জন্মগতভাবেই সমকামী, অথবা যাঁরা হিজড়া, তাঁদের সম্পর্কে ইসলামে কী মত?"

আজকে রাফায়েলও একই প্রশ্ন করলো। ইসলামিক স্কলাররা বলেন, অন্তত যাঁদের কাছ থেকে আমি শিক্ষা নেই এবং যাঁরা আসলেই ইসলামী জগতের hall of fame এ থাকার যোগ্য, তাঁরা বলেন, "যাঁরা সমকামী, তাঁরা ইচ্ছা করেই সমকামী হন। তাঁদের চেষ্টাই থাকেনা straight হবার।"

কথা হচ্ছে, তাঁরা নিজেরাও আমার মতই straight, কাজেই একজন সমকামী কিভাবে চিন্তা করবেন, সেটা আমাদের দ্বারা বোঝা সম্ভব নয়। আল্লাহ সব জানেন এবং তিনিই ন্যায় বিচারক। কাজেই ব্যপারটা তাঁর উপরেই ছেড়ে দেয়া ভাল না? আমাদের অতি নগণ্য বুদ্ধি দিয়ে ধৈর্য্য ধরা ছাড়া আমরা কিই বা করতে পারবো?

তবে মুফতি ইসমাইল মেঙ্ক (আমার গুরু) একবার এক লেকচারে বলেছিলেন, "এখন যদি আমরা দেখি বাইরে একটি দূর্ঘটনা ঘটেছে, আমি নিজে আমার লেকচার বন্ধ করে দৌড়ে যাব ভিকটিমকে সাহায্য করতে। সে মুসলিম না অমুসলিম সেটা দেখার বিষয় আমার না। যদি দেখি, তাহলে আমারই সমস্যা আছে। এখন যদি আমি গিয়ে জিজ্ঞেস করি, 'ভাই আপনি কী গে? যদি গে না হোন, তাহলে আমি আপনাকে সাহায্য করবো, আর যদি হন, তাহলে আমি ফেরত গেলাম!' এইটা কী যৌক্তিক শোনাবে? না! একজন মানুষ, সে যেই হোক না কেন, বিপদে পড়লে তাঁকে সাহায্য করা একজন "মুসলিম" হিসেবে আমার দায়িত্ব। এমনকি একটি পশুকে সাহায্য করাও আমার জন্য ফরয!"

এক ভাইয়ের বয়ানকৃত “পাপী হলেই কাউকে "ঘৃণা" করতে বলা হয়েছে” হাদিসটা কেন জানি এখানে ফিট করছে না। আমি নিশ্চিত এখানেও "কুরআনে বউ পিটানোর নির্দেশ দেয়া আয়াতের" মতন একটা বিরাট মিসকনসেপশন আছে। আরবি বিদেশী ভাষা, এবং অতি কঠিন ভাষা। ভিন্ন ভাষায় এর আক্ষরিক তর্জমা করা নিতান্তই অসম্ভব একটি ব্যপার, এবং সেজন্যই আমাদের নবীজির (সঃ) জীবনী থেকেই বারবার শিক্ষা নিতে বলা হয়েছে।

কিন্তু আমি যদি ক্রিস্টালকে (আমার ম্যানেজার) সমকামীতার জন্য "ঘৃণা" করে তাঁর সাথে না মিশতাম, তাহলে ইসলাম সম্পর্কে সে এতকিছু জানতো কী করে? তার কিসের ঠ্যাকা পড়েছে অনলাইন ঘাটাঘাটি করে একটা ভিন্ন ধর্ম সম্পর্কে জানবার, যারা তাঁদের ঘৃণা করে? We hate muslims নামের একটা গোপন গ্রুপের আরেকজন সদস্য যে বৃদ্ধি পেত এইটা নিশ্চিত।

রাসূল (সঃ) যেখানে বলেছেন "মৃত্যুর আগে পর্যন্ত যদি কেউ আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, তাহলেও তিনি তাঁকে ক্ষমা করে জান্নাত দেবার ক্ষমতা রাখেন।" তাহলে আমরা কেন নিজেদের মধ্যে ঘৃণার সম্পর্ক স্থাপন করছি?

মোট কথা, ইসলাম কখনও বলে না তলোয়ারের মাধ্যমে ধর্ম প্রচার করতে। কখনই না। উপমহাদেশে ইসলাম প্রচার হয়েছে আরব ব্যবসায়ী এবং ধর্ম প্রচারকদের মাধ্যমে। মুঘলরা বা অন্যান্য মুসলিম রাজা বাদশাহরা রাজ সিংহাসনে বসলেও ধর্ম প্রচারে কোন কাজই করেননি।

মানুষ যখন দেখেছে মুসলিমরা মেয়েদের বিয়েতে যৌতুক নিচ্ছেনা, উল্টো মোহর দিচ্ছে, মায়ের পায়ের নিচে বেহেস্তের সন্ধান করছে, স্ত্রীদের প্রতি ফেইথফুল থাকছে, ব্যবসায়ে দূর্নীতি করছে না, মিথ্যা বলছে না, ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজের পকেট ভরছে না, যাকাতের নামে গরীব দুঃখীদের সাহায্যে এগিয়ে আসছে এবং ইত্যাদি ইত্যাদি - তখন তাঁরা আপনাতেই এই ধর্ম গ্রহণ করেছে। এখন অবশ্য ইসলামের সেই দিন নেই। এখন আমরা মুসলিমরাই ইবলিসের সাথে প্রতিযোগীতা করি। কে কত বড় ‘শয়তান!’

একটা লোক, যে নিজে লক্ষ লক্ষ টাকা ঘুষ খাচ্ছে, এর ওর হক মেরে খাচ্ছে, সে কিনা তার সন্তানকে শিক্ষা দিচ্ছে বিধর্মী মানেই খারাপ, ইহুদি-খ্রিষ্টান মানেই আমাদের জন্মশত্রু! আর সমকামী হলে অবশ্য পরিত্যাজ্য!

কে সমাজের জন্য বেশি ক্ষতিকর?

যে দূর্নীতি করে হাজার হাজার মানুষের বারোটা বাজায়? যে টাকা ও ক্ষমতার জোরে মানুষ খুন করতেও পিছু হটে না? যে চালাকি করে শেয়ার বাজার থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষকে পথে বসিয়ে দিয়ে নিজের ব্যাংক ব্যালেন্স বাড়ায়? নাকি যে আরেকজন সমলিঙ্গের মানুষের সাথে বিছানায় যায়?

ইতিহাস সাক্ষী! আমরা ছোট ছোট পাপ নিয়ে এত বেশি হইচই করি যে বড় পাপকে পাত্তা দেয়ারও সময় পাই না। সব ধরণের পাপ নিয়েই আমাদের দুশ্চিন্তা করতে হবে। কোন বিশেষ ধরনের নির্দিষ্ট পাপ নয়।

এইটাই হয়তো কারণ, যেখানে ইউরোপ অ্যামেরিকায় দলে দলে মানুষ মুসলিম হচ্ছে, সেখানে আমাদের দেশে দলে দলে মানুষ "মুরতাদ" (ধর্মত্যাগী মুসলিম) হচ্ছে।

আবারও বলছি, ইসলাম শিক্ষা দেয়, কেউ যদি ভুল করে, তবে তাকে সঠিক রাস্তা দেখানো। মারধর করে নয়, যুক্তি দিয়ে, উদাহরণ (অবশ্যই নবী রাসূল এবং কুরআনের উদাহরণ) দিয়ে তাঁকে বুঝাতে হবে। "ঘৃণা" করলেতো সে দূরেই সরে যাবে। তাঁকে সঠিক পথে আনবেন কিভাবে? নবীজির (সঃ) কাছে ব্যাভিচারের অনুমতি চাইতে আসা সেই সাহাবীর ঘটনা কেন আমরা বারবার ভুলে যাই? নবীজি (সঃ) কি ধৈর্য্যের সাথেই না তাঁকে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়েছিলেন। আমাদের হুজুরদের কাছে কেউ এমন প্রস্তাব আনলে দেখা যাবে প্রথমে "লা হাওলা" বলে গালাগালি শুরু করে দিবেন। লোকটা কিন্তু তখন ব্যাভিচার করবেই। এবং সবচেয়ে বড় কথা, ইসলাম থেকেই দূরে সরে যাবে। লাভটা কী হলো?

আমাদের দেশে একটা ফালতু কথা হাদিসের নামে চালু আছে। "শিক্ষকের বেতের আঘাত শরীরের যেখানে পরে, সেই স্থান আগে আগে বেহেস্তে যায়।" এমন হাস্যকর ভূয়া কথাকে যদি কেউ হাদিস হিসেবে প্রমাণ দিতে পারে, তবে তাঁকে আমি পঞ্চাশ ডলার পুরষ্কার দিব। পঞ্চাশ কেন, পুরষ্কারের পরিমাণ পঞ্চাশ হাজার ডলার হলেও এটি কেউ প্রমাণ করতে পারবে না। কারণ এমন ফালতু কথা ইসলামে নাই।

এমন যদি হতো, তাহলে নবীজি পিটিয়ে পিটিয়ে সাহাবীদের মুসলিম বানাতেন, এবং সাহাবীরাও হাসিমুখেই নবীজির বেতের বাড়ি খেতেন। তাঁর চেয়ে বড় শিক্ষক পৃথিবীতে আর কে আছেন?

জনতার উদ্দেশ্যে আরেকটি বিখ্যাত ঘটনা বয়ান করেই উপসংহার টানছি।

এক যুদ্ধে হযরত আলী (রাঃ) এক কাফিরের গলায় তলোয়ার চালানোর ঠিক আগে আগে লোকটি হযরত আলীর (রাঃ) মুখে থুথু ছিটিয়ে দেয়। হযরত আলী (রাঃ) সাথে সাথে তলোয়ার ফেলে দিয়ে বলেন, "তুমি চলে যাও।"

কাফির অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেন, "তুমি আমাকে কেন ছেড়ে দিচ্ছো?"

হযরত আলী (রাঃ) তখন বলেন, "তোমার সাথে আমার লড়াই ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে। তুমি আল্লাহর শত্রু হিসেবে আমাকে মারতে এসেছিলে, তাই তোমার সাথে আমি লড়ছিলাম। আমাদের মাঝে ব্যক্তিগত কোন আক্রোশ ছিল না। কিন্তু যেই মুহূর্তে তুমি আমার মুখে থুথু ছিটালে, তখনই তোমার উপর আমার রাগ উঠে গেল। সেটা ব্যক্তিগত ব্যপার হয়ে গেল। তখন যদি তোমাকে আমি হত্যা করতাম, তাহলে সেটা 'খুন' হতো! আমার ধর্মে 'খুন' জঘন্যতম অপরাধ!"

হযরত আলী(রাঃ) ব্যক্তিগত আক্রোশ বা ঘৃণাকে ধর্মের উপরে স্থান দেন নাই। আমরা হযরত আলীর (রাঃ) চেয়ে বেশি ধর্ম বুঝে বসে আছি। এইখানেই আমাদের সমস্যা।

আরও লেখা পড়তে: https://www.facebook.com/groups/shottyanweshi/

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৫:১৭

খেলাঘর বলেছেন:

অপ্রয়োজনীয় বিষয়।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: হয়তো আপনার জন্য না, হয়তো অন্যের জন্যে ঠিকই প্রয়োজনীয়।

২| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ ভোর ৬:৪৫

নির্বাক রাজপূত্র বলেছেন: হ্যা ভাই ঠিকই বলেছেন আমাদের সমাজে অনেক ব্যাক্তি রয়েছেন যারা অল্প কিছু ইসলাম সম্পর্ক জেনে অনেক কিছু মনে করেন। এইখানেই আমাদের সমস্যা।আমরা একটু কিছু সম্পর্ক জানতে পারলেই নিজেকে জানলেওয়ালা মনে করি।সাথে জ্ঞানিও বটে।

কিন্তু অল্প বিদ্যা যে ভায়ংকর তা আমরা ভূলে যাই।

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:২৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

৩| ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:০৫

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: ভালো লিখেছেন। +++++++

শুভকামনা :)

১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:০১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.