নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

গর্বে যদি বুক ফুলে, ফুলতে দিন

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:১৪

গল্পটা আমি প্রায়ই বলি, লিখেছিও আগে বেশ কয়েকবার। আবারও বলতে ইচ্ছে করছে, গর্বের কথা বারবার বলতে ভাল লাগে। তবে একটা ব্যাকগ্রাউন্ড দিয়েই শুরু করা যাক।
ট্রেনে করে কেউ সিলেটে গিয়েছেন? তাহলে কুলাউড়া জংশনের সাথে সবার পরিচয় থাকার কথা।
সিলেট থেকে কুলাউড়া জংশনের দূরত্ব ট্রেনে মাত্র এক থেকে দেড় ঘন্টা।
একবার ঢাকা যাবার সময়ে এক ভদ্রলোক পাশের সীটে বসা ছিলেন। তিনি জীবনেও নিজের গ্রাম থেকে খুব একটা দূরে বেরোননি। এখন "লন্ডন" যাবার ভিসা নিতে ঢাকা যাচ্ছেন।
ট্রেন কুলাউড়া পর্যন্ত আসতে না আসতে তিনি অবাক হয়ে বলেন, "আল্লাহর দুনিয়া এত বড়! জানা ছিল না!"
নিঃসন্দেহে আল্লাহর দুনিয়া আরও বিশাল। কিন্তু নিজ গ্রামেই পুরো জীবন কাটিয়ে দেয়া চাচার হয়তো ধারনা ছিল গ্রামের থেকে একটু দূরে গেলেই সিলেট, এবং সিলেট পেরোলেই লন্ডন। মাঝখানে কিছু জমি আছে, যেখানে "বেঙ্গলিরা" থাকে। ব্যস, দুনিয়া এখানেই শেষ।
সাধারণ অ্যামেরিকানদের ভৌগলিক জ্ঞানও সেই চাচার চেয়ে খুব একটা বেশি না।
এখানে টানা চোখের অধিকারী মানেই এশিয়ান। ওরা যে চাইনিজ, জাপানিজ, কোরিয়ান, ইন্দোনেশিয়ান ইত্যাদি নানান দেশের অধিবাসী হতে পারেন, তাঁদের কোনই ধারনা নেই।
"ব্রাউন পিপল" মানেই ইন্ডিয়ান। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলংকা, নেপাল - এদের মাথায় ঢুকে না। তারচেয়ে বড় কথা, কেউ কেউ জানেই না ইন্ডিয়া আসলে কোন মহাদেশে অবস্থিত।
আমাকে আগের অফিসের এক ট্রেনার জিজ্ঞেস করেছিল, "তুমিতো আফ্রিকান, তাইনা?"
আমি সাথে সাথে বুঝে গেলাম, ফেয়ার অ্যান্ড হ্যান্ডসাম ব্যবহার করার সময় হয়তো এসে গেছে। সেই সাথে রোদে ঘুরাঘুরিও কমিয়ে দিতে হবে।
"কেন? তোমার কেন মনে হচ্ছে আমি আফ্রিকান?"
"তুমি যেহেতু ইন্ডিয়ান, এবং ইন্ডিয়া যেহেতু আফ্রিকায়, সেহেতু বললাম আর কি....."
আমি অবাক হয়ে বললাম "ইন্ডিয়াতো এশিয়ায়।"
ছেলেটা ততটাই অবাক হয়ে রিকনফার্মড হলো, "ইন্ডিয়া এশিয়ায়? আমিতো জানতাম চায়না এশিয়ায়।"
সাধারণ অ্যামেরিকানদের কাছে অ্যামেরিকার বাইরে হাতে গোণা কিছু দেশ আছে। দক্ষিণে মেক্সিকো, যেখান থেকে আমাদের "মেইন্টেনেনস পিপল" (চিপ লেবার - যেমন ঘরের কাজ যারা করে, বাথরুম যারা পরিষ্কার করে, কনস্ট্রাকশন ওয়ার্কারস ইত্যাদি) আসে; উত্তরে ক্যানাডা, যারা কেবল আইস হকি খেলে।
এর বাইরে আছে ইউরোপ, সাদা চামড়ার মানুষের দেশ। কারও কারও ধারণা অস্ট্রেলিয়াও ইউরোপে, গাত্রবর্ণ এক কিনা।
হলুদ চামড়ার লোক মানেই এশিয়ান - স্পেসিফিকালি চায়না, যেখানে আমাদের ঘরের সুই সূতা থেকে শুরু করে দামী ইলেকট্রনিক্স পর্যন্ত সব তৈরী হয়, অলিম্পিকেও এরা সবচেয়ে বেশি সোনার মেডেল জিতে; ও হ্যা জাপানকেও সবাই চেনে, টয়োটা-হোন্ডা ও "সুশির" দেশ বলে কথা!
ব্রাউন পিপল মানেই ইন্ডিয়া - অনেকেই জানেনা ইন্ডিয়াও এশিয়ায় অবস্থিত। এই অঞ্চলের লোকেরা ছোটখাটো ও নিরীহ কিসিমের হয়ে থাকে, এবং বিচিত্র একসেন্টে ইংরেজি বলে।
নেকাব পরিহিতা অথবা দাড়িওয়ালা লম্বা, ফর্সা, ও প্রচুর টাকা পয়সাওয়ালা "নন ইউরোপিয়ান" সাদা চামড়ার লোক মানেই আরব। যারা অ্যামেরিকানদের দুইচোখে দেখতে পারেনা। এবং সুযোগ পেলেই বোমা বিষ্ফোরন ঘটায়। ওরা এক মতবাদে বিশ্বাসী, "বোমায় নিজে উড়ুন, অন্যকেও উড়তে সাহায্য করুন।"
এবং সবশেষে, যদি দেখা যায় কোন কৃষাঙ্গ ভদ্রলোকের প্যান্ট কোমর থেকে কয়েক হাত নিচে, আন্ডারওয়ার ছাড়িয়ে, প্রাণপনে দুই হাঁটু জাপটে ধরে ইজ্জত বাঁচানোর চেষ্টায় ঝোলাঝুলি করছে না, বরং যথেষ্ট ভদ্রোচিত পোশাক আশাক, তবে সে নির্ঘাত আফ্রিকা থেকে এসেছে। অ্যামেরিকান খানদানি কালো হলে অতি অবশ্যই তার বিচিত্র বরণ আন্ডারওয়ার মুক্ত হওয়ায় বুক ভরে নিঃশ্বাস নিত।
অ্যামেরিকান জীবনের প্রথম দিকে ওয়ালমার্টে ক্যাশিয়ার হিসেবে কাজ করতাম। প্রতিদিন কোন না কোন অ্যামেরিকান আমাকে জিজ্ঞেস করতো, "তুমি কোন দেশ থেকে এসেছো?"
আমাদের দেশের লোকেদেরও একই স্বভাব আছে। আমরা পরিচয়ের প্রথমেই জানতে চাই দেশের বাড়ি কই। সেটার উপর নির্ভর করেই আমরা তাকে Judge করি। সিলেটি মানে রেসিস্ট, নোয়াখাইল্যা মানেই "কিন্তু" আছে ইত্যাদি।
"বাংলাদেশ।"
"কোথায় সেটা?"
"ইন্ডিয়ার পাশের একটা দেশ। তোমার গায়ের জামার ট্যাগ চেক করো, সুযোগ আছে ওটা Made in Bangladesh হবার।"
দেখা যেত সত্তুর আশিভাগ ক্ষেত্রে কথা ফলে যেত। তারা ভীষণ উৎফুল্ল হতো। যে দেশ তাঁদের কাপড় বানায়, সেই দেশের একজনের সাক্ষাৎ পেয়ে তাঁরা ভীষণ পুলকিত!
কিন্তু প্রতিদিন একই ঘটনা আর কতই বা ভাল লাগে? একঘেয়েমি চলে এসেছিল।
একদিন এক বুড়ো অ্যামেরিকান ভদ্রলোক আমাকে "দেশ কই" জানতে চাইলে একঘেয়ে সুরে বললাম, "বাংলাদেশ। ইন্ডিয়ার পাশের ছোট একটা দেশ। তোমার জামার ট্যাগ চেক করো, সুযোগ আছে ওটা Made in Bangladesh হবার।"
ভদ্রলোক আমাকে বললেন, "আমি জানি বাংলাদেশ কোথায় অবস্থিত। মাইক্রোক্রেডিটের জন্ম এই দেশেই হয়েছে।"
আনন্দে ইচ্ছে হলো লোকটার পুরো ট্রানজেকসনের উপর নিজের এমপ্লোয়ী ডিসকাউন্ট কার্ড ঘষে দেই, খুশি হয়ে তাকে টেন পার্সেন্ট বখশিশ দেয়া!
তিনি তাঁর স্ত্রীকে ডেকে এনে আমার সাথে আলাদা পরিচয় করিয়ে বললেন, "এ বাংলাদেশের ছেলে।"
মহিলা হেসে বললেন, "আহা! প্রফেসর ইউনুসের দেশের লোক!"
আমি যদি তখন বুড়ো দম্পতিকে জড়িয়ে ধরতাম, আমাকে কী কেউ দোষ দিতে পারতো?
উল্টো ঘটনাও ঘটে। এক শ্বেত চামড়ার দম্পতি আমার কাছে দেশের খোঁজ নিলে উত্তরে বলি, "বাংলাদেশ।"
তারা অতি দুঃখিত (Genuine! Fake না) স্বরে বললেন, "আহা! আমরা চিনি দেশটাকে। খুব গরিব একটা দেশ, ন্যাচারাল ক্যালামিটি ঘটে নিয়মিত। লেটেস্ট সাইক্লোনেতো (সিডর) দশহাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে তাই না?"
সত্যি কথা বুকে শেলের মতন বিঁধে। আমি রাগ করিনি, অযথা রাগ করা মূর্খামি। তবে খুব দুঃখিত হয়েছিলাম।
জিজ্ঞেস করলাম, "তোমাদের দেশ কোথায়?"
"সাউথ আফ্রিকা।"
আমার অত্যন্ত প্রিয় ক্রিকেট দল। জ্যক ক্যালিস আমার সবচেয়ে প্রিয় ক্রিকেটার, অ্যালান ডোনাল্ড আমার প্রিয় বোলার। অতি বিতর্কিত ও নিন্দিত হ্যান্সি ক্রনিয়ে আমার সবচেয়ে প্রিয় অধিনায়ক। তবু আহ্লাদীপনা করলাম না।
বললাম, "হ্যা, কিছুদিন আগেই তোমাদের দেশকে আমার দেশ ওয়ার্ল্ডকাপ ক্রিকেটে হারিয়েছে! আমি সেই দেশের লোক!"
বিদেশীরা আমাদের ফকির মিসকিনের দেশ হিসেবেই চেনে। আমাদের নেতা কর্মীরা এই পরিচয়ই তাঁদের কাছে তুলে ধরেন। মিডিয়াতে যত বেশি অভুক্ত মানুষের ছবি প্রচার পাবে, ত্রাণের পরিমাণ ততই বৃদ্ধি পাবে।
মিডিয়াতে আরও কিছু ছবিও প্রচার পায়।
তাজরীন গার্মেন্টস যখন শয়ে শয়ে গার্মেন্টস কর্মীর প্রাণ কেড়ে নিচ্ছিল, এক অ্যামেরিকান বুড়ি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, "কেন তোমার দেশের গার্মেন্টস মালিকেরা আগুন লাগার পরেও লেবারদের বের করে আনেনি? ওরা কেন বুঝেনা ওরাও মানুষ, ইঁদুর নয়।"
আবেগে বুড়ির গলা কেঁপে উঠেছিল, আর কেঁপেছিল আমার হৃদয়।
এর কিছুদিন পরেই ধ্বসে পড়লো রানা প্লাজা।
ইশ! আমরা কিছুদিন পরপরই বিদেশী পত্রিকার হেডলাইন হচ্ছি। কিছুদিন পরপরই দেশের ইজ্জতের বারোটা বাজছে!
কিন্তু কিছুদিন আগে আমরা আবারও পত্রিকায় এলাম। সেভাবে ঢালাওভাবে ওরা প্রচার করেনি, সে দায়িত্ব আমাদের। আমরা সেটা করবোই।
সাকিব আল হাসান তিন ফরম্যাটের ক্রিকেটেই এখন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হয়েছেন।
এইটা একদিন হতোই। কিছুদিন পরে ইন শা আল্লাহ সর্বকালের সর্বসেরা অলরাউন্ডার হিসেবেই সাকিবের নাম শোভা পাবে। অন্তত সে সেদিকেই যাচ্ছে।
মজার কথা হচ্ছে, আমাদের বাঘিনী কন্যা সালমা খাতুনও এখন মেয়েদের টি টোয়েন্টিতে বিশ্বসেরা বোলার ও অলরাউন্ডার হয়েছেন।
ছেলে মেয়ে দুই ধরণের ক্রিকেটের rankingয়েই এখন শীর্ষস্থানে দুই বাংলাদেশী ক্রিকেটার!
তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব সুষ্টুভাবে সম্পন্ন করেছেন। এখন বাকি ক্রিকেটাররাও যদি দয়া করে একটু আধটু পারফর্ম করা শুরু করেন, অন্তত তাঁদের যোগ্য সহায়তা করেন, তাহলে দল হিসেবে বিশ্বসেরা হতে কতদিন?
এখন যদি কোন সাউথ আফ্রিকান দম্পতি বলেন, "তোমার দেশকেতো আমি চিনি। বন্যা মহামারীর দেশ!"
আমরা তখন পাল্টা জবাব দিব, "জ্বী, আমরা সাকিব আল হাসানের দেশ! আমরা সালমা খাতুনের দেশ! তোমাদের দেশই শুধু জ্যক ক্যালিস জন্ম দেয়না, আমাদের দেশও সাকিব-সালমাদের জন্ম দেয়!"
গর্বে যদি বুক আধ হাত ফুলে যায়, যেতে দিন।
ফোলা বুকের কারণে যদি গায়ের শার্টের দুয়েকটা বোতামও ছিড়ে যায়, যেতে দিন।
এই সুযোগ প্রতিদিন আসে না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৫৭

নিরব বাংলাদেশী বলেছেন: তারা তাদের কাজ করেছে, আমরা আমাদের কাজটুকু করলেই হয়। হাসিনা খালেদার পিছনে বোকার মত আর কত ছোটাছুটি করবো

১৫ ই জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৫:০৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সত্য বচন। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.