নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

পৃথিবীতে সুখ-দুঃখের আসলে আলাদা কোন অস্তিত্ব নেই

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:০১

ওয়ালমার্টে আমার সাথে এক মধ্যবয়ষ্কা অ্যামেরিকান মহিলা কাজ করতেন। তাঁর বয়সের তুলনায় অসাধারণ রূপসী বলতে যা বুঝায়, তিনি ছিলেন তাই। মহিলার বয়স চল্লিশ পেরিয়েছে কয়েক বছর আগেই। তাঁর মেয়ের বয়সই যেখানে একুশ। তারপরেও যেকোন বয়সী পুরুষ নিজের হৃদয় তাঁর পায়ে ফেলে দিতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে করবে। এতটুকুও বাড়িয়ে বলছি না।
বড় বড় টানা টানা চোখ, ছুরির ফলার মতন ধারালো নাক, তীক্ষ্ণ চোয়াল, পাতলা ঠোঁট, লম্বা চুল....হলিউডের নায়িকারা মেকাপ নেয়ার পরে এইরকম সুন্দরী হয়।
কিন্তু মহিলাকে বেশিরভাগ মানুষই পছন্দ করতো না। কথা বলতে গেলেই তিনি এর নামে ওর নামে অভিযোগ করতেন। যখন কারও নামে কোন অভিযোগ থাকতো না, তখন ক্যাশ রেজিস্টার, ম্যানেজমেন্ট, ওয়ালমার্টের অপারেটিং সিস্টেম ইত্যাদি নিয়ে শালিশি বসিয়ে দিতেন।
এই মহিলা একদিন আমাকে বলেন তিনি প্লাস্টিক সার্জারী করাবেন, এই জন্যে তিনি তাঁর গাড়ি (মার্সিডিজ বেঞ্জ) বিক্রি করে দিয়েছেন।
এখন অনেকেই বলতে পারেন ওয়ালমার্টের একজন ক্যাশিয়ার কী করে মার্সিডিজ বেঞ্জের মালিক হন?
মহিলার স্বামী ছিলেন ডাক্তার। অ্যামেরিকান ডাক্তাররা সাধারণত ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার, পি.এইচ.ডি অথবা সি.পি.এ দেরই (সর্টিফায়েড পাবলিক একাউন্টেন্ট) বিয়ে করেন। টাকা পয়সা ছাড়াও মেন্টালিটি ম্যাচেরও একটা ব্যপার আছে।
তাহলেই বুঝুন, মহিলা কতখানি সুন্দরী হলে একটা সুপারস্টোরের ক্যাশিয়ার হয়েও একজন ডাক্তার স্বামী পেয়ে গেছেন!
মহিলার কথায় আমি অবাক হয়ে বললাম, "তুমি প্লাস্টিক সার্জারী করাবে কেন? তোমার রূপে কিসের অভাব?"
মহিলা হেসে বললেন, "আমার একটা nose job লাগবে। দেখো না, আমার নাকটা সামনের দিকে কেমন একটু ভোতা হয়ে থাকে। এইটাকে আরেকটু উঁচু করতে হবে। তাহলে একদম নিকল কিডম্যানের মতন হয়ে যাবে! ইয়ে!"
মহিলা খুব উৎফুল্ল!
আমি আবার তাকালাম তাঁর নাকের দিকে। আগেই বলেছি, ছুরির ফলার মতন ধারালো নাক। এইরকম নাক পেলে আমার দেশের যেকোন বঙ্গ ললনা ধন্য হয়ে যেত। বোচা নাকের চীনা মেয়েদের কথা নাই বা বললাম।
এইখানেও সে খুঁত বের করে ফেলল!
তখনই উপলব্ধি করলাম, মানুষের অতি বিচিত্র একটি স্বভাব হচ্ছে সে কিছুতেই সুখী হতে পারেনা। বিশ্বের সবচেয়ে সুন্দরী নারীও হয়তো বা আয়নায় নিজের চেহারার দিকে তাকিয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলে ভাবেন, "আমার গালের লালিমা আরেকটু বেশি হলে বুঝিবা আমাকে আরেকটু বেশি সুন্দর লাগতো!"
ছেলেদের ক্ষেত্রেও তাই।
"আমার চেহারাতো ভাল, হেয়ার স্টাইল ঐ রকম হলে আরও ভাল হতো।"
হেয়ার স্টাইল বদলের পরে সিক্স প্যাক না হলে চলবে না।
সিক্সপ্যাক বানাবার পরে অন্য কিছু।
এইটা ঠিক মানুষের এই স্বভাব ছিল বলেই সে গুহা মানব থেকে এই অবস্থায় আসতে পেরেছে।
আবার এইটাও ঠিক, এই স্বভাবেরই অতিরিক্ততার কারনে তাঁর জীবন অনেক সময়ে তছনছ হয়ে যায়।
বিয়ের কিছুদিন পরেই বউকে পুরনো মনে হয়। তখন এদিকে ওদিকে চোখ যায়। মেয়েদের ক্ষেত্রেও কথাটা খাটে।
ঋত্বিক রোশনের বউও (সুজান নিজেও ভীষণ সুন্দরী) তাঁকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যায়। কিছু একটা অতৃপ্তিতো অবশ্যই আছে।
একজন লোক যখন সাধারণ আটটা পাঁচটা অফিস করতো তখন তাঁর সংসার ছিল মধ্যবিত্তের। স্ত্রী সাধারণ বাজার থেকে শাক সব্জি, এবং সাধারণ দোকান থেকে জামা কাপড় কিনতে গিয়ে কোমর বেঁধে দামদর করতেন। অধিকাংশ সময়েই দামে পোষাতো না। তিনি মন খারাপ করে শূন্যহাতে বাড়ি ফিরতেন।
তাঁর ছেলে মেয়েদেরও অভাবের সাথে লড়তে হতো। একই জুতা, একই জামা পড়ে প্রতিটা পার্টিতে যেতে তাদের ভাল লাগতোনা। চাঁদার অভাবে স্কুলের পিকনিকে হয়তো যেতে পারতোনা। বন্ধু বান্ধবের জন্মদিনে ছোটছোট গিফটের প্যাকেট নিয়ে যেতে তাদের লজ্জা করতো।
একদিন ভদ্রলোক নিজেকে দুঃখী মনে করলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন ব্যবসা করে ধনী হবেন।
তিনি ব্যবসা শুরু করলেন।
একটা সময়ে ব্যবসা দাঁড়িয়েও গেল। বানের জলের মতন হাতে টাকা আসতে লাগলো, শুধু এর বিনিময়ে তাঁকে দিনরাত লাগাতার পরিশ্রম করতে হতো আর কি।
তাঁর স্ত্রীকে এখন সব্জি কিনতে যেতে হয়না। কাপড় পছন্দ হলে দামদর করতে হয়না। কিন্তু তাঁর স্বামীকে তিনি আর আগের মতন কাছে পাননা। মহিলা যদি পরকিয়ার দিকে ঝুঁকেন, তাঁকে কতখানি দোষ দিতে পারবেন?
তাঁর ছেলে মেয়েদেরও টাকার কারণে মাথা হেট হয়না। কিন্তু এখন আর তারা সময়ে অসময়ে তাদের সবচেয়ে প্রিয় ব্যক্তিত্ব, তাদের বাবাকে কাছে পায় না। এরা যদি বাবা মায়ের অবাধ্য হয়, তাদের দোষ কতটুকু?
গৃহকর্তাও সুখে নেই। মাঝে মাঝেই গভীর রাতে স্ট্রেস রিলিফের উদ্দেশ্যে ক্রিস্টালের তৈরী মদের পেয়ালা হাতে তাঁকে ভাবতে হয়, "এই জীবন কী আমি চেয়েছিলাম?"
একটি সুখী পরিবারের চেয়ে বড় blessing পৃথিবীতে আর কী আছে?
নিঃসঙ্গ ধনী ব্যক্তিটিকে জিজ্ঞেস করে দেখুন, তিনি পারিবারিক সুখের জন্য মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ করতে রাজি আছেন। কিন্তু তিনি বুঝতে পারছেন না, সুখটা কোথায় কেনা যাবে!
সুখ আসলে পুরোপুরিই আমাদের মনের মাঝে বাস করে। কোন এক গল্পে আমি লিখেছিলাম, সুখ অসুখ আসলে আমাদের দুই পায়ের মতন। এক পা সুখের হলে অন্য পা দুঃখের। দুই পা মিলে আমাদের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যায়।
জীবনে কোন একটা ব্যপার নিয়ে আমি যদি অসুখী হই, তখন আমি নিজেই যদি সেই ব্যপারটির প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে ফেলি, তাহলে দেখা যাবে আমি আসলে ভীষণ সুখী একজন মানুষ!
যেমন ধরা যাক, আমার চাকরি নিয়ে আমার সন্তুষ্টি নেই। এত কম বেতনের চাকরি করতে ভাল লাগে না।
কিন্তু যখনই আমি দেখবো আরও হাজার হাজার যোগ্য মানুষ আমার চেয়েও কম বেতনের চাকরি করছে, তখনই নিজেকে এই একই চাকরির জন্য খুব সৌভাগ্যবান মনে হবে।
যদি আমার সংসারে টাকার অভাব আমার মর্ম পীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়ায়, তখন যদি আমি ভাবি আমার স্ত্রী কেবল আমাকেই ভালবাসে, তাঁর অন্তরে অন্য কোন পুরুষ নেই এবং আমার সন্তানেরা আমাকে শ্রদ্ধা করে আমার একান্ত বাধ্যগত থাকে - তখনই মনে হবে আমার চেয়ে সুখী পৃথিবীতে আর কে আছে?
পৃথিবীতে সুখ-দুঃখের আসলে আলাদা কোন অস্তিত্ব নেই, পুরোটাই আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি। Point of view.
কথাটা কী ঠিক বললাম, না বেঠিক?

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:০৯

ঢাকাবাসী বলেছেন: প্রায় ঠিকই বলেছেন।

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনিও প্রায় ঠিকই ধরতে পেরেছেন। ;)

২| ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২৭

মূর্খ রুমেল বলেছেন: লেখাটা খুব ভাল লাগলো। আসলে সৃষ্টিকর্তা আমাদের রিদয়ে এমন গভীরতা দিয়েছেন যে কোন কিছু দিয়েই সেই শূন্যতা পূরন করা যায় না। আপনার মত ভাবতে পারলে জীবণ নিয়ে আর হতাশা থাকবে না আর তখনই মানুষ বলতে পারবে Life is beautiful

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! আসলেই, সুখী হওয়া কঠিন কিছু না। ভাবতে পারলেই সুখী হওয়া সম্ভব।

৩| ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:২৭

জ্যোতিপূর্ণ বলেছেন: valo laglo.

২৭ শে জানুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১২:১৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.