নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
যেকোন ব্যবসায় সফলতার পেছনে মূল শর্ত হচ্ছে বেশি বেশি কাস্টমার। কাস্টমার সংখ্যা যত বড়, বিজনেসও তত বড়। বিবিএ এমবিএ পোস্ট গ্র্যাড যেখানেই আপনি ব্যবসা নিয়ে পড়াশোনা করেন না কেন, ঘুরিয়ে ফিরিয়ে আপনাকে এই তত্বটিই শেখানো হবে।
কাজেই এই থিওরি অনুযায়ী বাংলাদেশ হচ্ছে ব্যবসায়ের জন্য অত্যন্ত আদর্শ স্থান!
সস্তা শ্রমিকের জন্যই শুধু নয়, বিরাট জনসংখ্যাও এর অন্যতম কারণ।
একটা উদাহরণ দিলে আরেকটু স্পষ্ট হবে।
অ্যামেরিকার এমন অনেক শহর আছে যেখানে লোকসংখ্যা দশ হাজারও নয়। ওদের চাহিদার জন্য একই শহরে টার্গেট, ওয়ালমার্ট, টম থাম্ব, ক্রোগার ইত্যাদি রিটেইলাররা কামড়াকামড়ি করে মরে। সেই সাথে "মামা-পাপা" স্টোরস তো আছেই। তাহলে কাস্টমার সংখ্যা কততে নেমে যাচ্ছে?
বাংলাদেশে সেই টেনশন নেই। আমাদের ঢাকা শহরের একেকটা গলিতেই দশ হাজারের বেশি মানুষের বাস। যেমন ২১ সিদ্ধেশ্বরী লেনের "ইস্টার্ন প্যালেস এপার্টমেন্টসে" মোট একশো আটটি ফ্ল্যাট, মানে একশো আটটা পরিবার থাকে। একটি বাড়িতেই এই অবস্থা। ওখানে এইরকম আরও বেশ কয়েকটা টাওয়ার আছে। নিজেই হিসেবটা করে বুঝে নিন।
তাহলে বুঝতেই পারছেন, বাংলাদেশে আর কিছুর অভাব থাকুক না থাকুক, কাস্টমারের কোনই অভাব নেই। তারপরেও ব্যবসা দাঁড়াতে পারেনা। কারনটা ব্যাখ্যা করছি।
আমার এক বন্ধু দেশে ব্যবসা করতে চায়, এবং যেহেতু আমার পড়াশোনা ও অভিজ্ঞতা বিদেশে, কাজেই সে একটু আলোচনা করতে চেয়েছিল।
দুজনে মিলে বসলাম।
"বন্ধু, আমি চাই অল্প পুঁজি, বেশি রুজি।"
"তুমি সঠিক পথেই আছো বন্ধু।"
"আমি কোন কাজকেই ছোট বড় করে দেখতে চাই না। নিজের কাজকেই যদি শ্রদ্ধা না করলাম, তাহলে সফল হবো কী করে?"
"সহিহ বাত!"
"চিন্তা করেছি শুরু করবো চালের আড়ৎ দিয়ে। রাইস হোল সেলার। বাঙ্গালি জীবনেও ভাত খাওয়া ছাড়তে পারবেনা, কাজেই আমার ব্যবসাও মার খাবে না। এই ব্যবসার লাভ দিয়েই অন্যান্য ব্যবসা চালায় যাব।"
"বিচক্ষণ!"
"হিসাব করে দেখলাম, এক বস্তা চালের মধ্যে এক-দুই কেজি কংকর আরামসে মিশায় দিতে পারবো, তাহলে প্রতি বস্তায় আমার এক্সট্রা লাভ থাকবে তিরিশ-পঞ্চাশ টাকা। প্রতিদিন এক-দেড়শ বস্তায় তাহলে কতখানি লাভ হবে বুঝতে পারছিস?"
এইবারে হতভম্ব হয়ে গেলাম। বন্ধুর চোরাই বুদ্ধিতে নয়, সে চুরিকেই ব্যবসায়ের স্বাভাবিক অংশ হিসেবে ধরে নিচ্ছে - এই মনোভাবে।
এইটাই কারন যে আমাদের দেশে ওয়ালমার্ট-টার্গেট গড়ে উঠতে পারছে না। কাস্টমার ঠকিয়ে বেশিদূর আগানো যায়না। নতুন নতুন হাজার হাজার কাস্টমার আসছে সত্য, কিন্তু তারচেয়ে বড় ব্যপার, হাজার হাজার পুরনো কাস্টমার অন্য দোকানে চলে যাচ্ছে।
দেশের অবস্থা এখন কোথায় গেছে যে আমরা স্বাভাবিকভাবে কিছুই চিন্তা করতে পারিনা!
চাল-ডাল ব্যবসায়ী কংকর মিশ্রণকে বিজনেস প্ল্যানের ভিতরে রাখেন।
ফল-সবজি-মাছ ব্যবসায়ী ফিক্সড কস্টের হিসেবে ফরমালিনকেও ধরেন।
হাসপাতাল-মেডিক্যাল ব্যবসায়ীরা ডেডবডিকে লাইফ সাপোর্টে রাখাকে প্রফিটের অবিচ্ছেদ্য অংশ মনে করেন।
একটা দেশের সাধারণ মানুষেরাই যখন এইভাবে চিন্তা ভাবনা করেন, সেই দেশের সরকারী কর্মকর্তারাই বা কিভাবে সৎ হবেন? ওরাতো আসমান থেকে আসনেনি। ওদের জন্মও আপনাদেরই মতন সাধারণ বাঙালি পরিবারে।
আমার এক চাচা কাস্টমসে চাকরি পেয়েছিলেন। খুবই ইসলামী চেতনার পরিবার থেকে এসেছিলেন বলে তিনি কোন অসৎ আয়ের কথা চিন্তাও করেননি।
প্রথম মাসের বেতনের টাকায় খুব শখ করে একটি ফুলদানি কিনে ড্রয়িংরুমে সাজিয়েছিলেন। তাঁদের ঘরে সাজাবার মতন তেমন কিছুই কখনও ছিল না। এই ফুলদানিই তাঁদের কাছে এন্টিক!
এক আত্মীয় বেড়াতে এসে সেই ফুলদানি দেখে তাঁর দিকে একটা বাঁকা হাসি ছুড়ে দিলেন। মুখে কিছু না বললেও চোখের চাহনী দিয়ে বুঝিয়ে দিলেন, "প্রথম মাসেই চালু করে দিয়েছো? সাবাস! চালিয়ে যাও!"
আমাদের চৌধুরী বাড়ির ছেলেদের আবার মাথা গরম হতে চৈত্র বৈশাখ মাস পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হয়না।
চাচা পরেরদিনই চাকরি ছেড়ে দিলেন। যে চাকরিতে সৎভাবে আয় করলেও আত্মীয়রা বাঁকা হাসি দেয়, সেই চাকরিরই দরকার নেই।
পরে অবশ্য তিনি কলেজের প্রোফেসর হিসেবে জীবন কাটিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু সবাইতো আর সেই চাচার মতন নন। অনেকে সরকারী চাকরি শুরুই করেন উপরি ইনকামের আশায়।
এখন কথা হচ্ছে, দূর্নীতির খেলাতে বাংলাদেশ ফুটবলের ব্রাজিল, অথবা ক্রিকেটের অস্ট্রেলিয়ার সাফল্যকেও অনেক দূরে ঠেলে দিয়েছে। পরপর পাঁচবার অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন এর আগে কোন দেশ হতে পেরেছিল? নাহ!
ষষ্ঠবারও আমরা জোরদার চেষ্টা চালিয়েছিলাম, কিন্তু আফ্রিকার দেশগুলো আমাদের চেয়ে একটু বেশিই ভাল করে ফেলায় আমরা শিরোপা ধরে রাখতে পারিনি।
আমার দেশের সরকারী কলেজের পিয়ন থেকে শুরু করে মন্ত্রী পরিষদের সদস্যরা পর্যন্ত সবাই ঘুষ খান। ঘুষ খান প্রাইভেট কোম্পানির কর্মকর্তারাও। আপনার অফিসেরই পিয়নকে বিশটাকা দিয়ে বলুন একটা সিঙ্গারা নিয়ে আসতে। সে ফিরে এসে এক টাকাও ফেরত দিবে না। সে ধরেই নিয়েছে এইটা তার প্রাপ্য বখশিশ। কিন্তু ওকে অফিস এই কারনেই বেতন দেয় যাতে ও আপনাকে সিঙ্গারা এনে দেয়!
বড় বড় অফিসাররা ফিল্ড ট্রিপে গেলে যেভাবে বিল বানান, সেটার একটা নমুনা দেই।
আমার বাবা ছিলেন হোয়েকস্ট মেরিওন রুসেলের (বর্তমান এভেন্টিস) সিলেট বিভাগের ফিল্ড ম্যানেজার। এক রিপ্রেজেন্টিটিভ আঙ্কেল বড়লেখা ট্রিপের জন্য ট্রেনের ফার্স্ট ক্লাস টিকিটের বিল পাঠালেন।
আব্বু আঙ্কেলকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলেন, "সিলেট থেকে বড়লেখা ট্রেনে "ফার্স্টক্লাস" পেলেন কোথায়?"
আঙ্কেল মুখ কাঁচুমাচু করে বললেন, "বস, সবাইতো ফার্স্টক্লাসেরই বিল করে।"
আব্বু বিলটা এডিট করে হেডকোয়ার্টারে পাঠালেন। হেডকোয়ার্টারে থেকে পাল্টা এডিট করে ফার্স্টক্লাসের টাকা ইস্যু করে নোট পাঠানো হলো, "হোয়েকস্ট কখনও তার কর্মচারীদের সেকেন্ডক্লাসের টিকিট দেয় না।"
হোয়েকস্ট ছিল জার্মান কোম্পানি। তাদের ঠাট বাট ছিল অন্যরকম। কিন্তু দেশীয় কয়টা কোম্পানি এই কাজ করবে? আমি এমন কিছু কোম্পানির নাম জানি যারা উল্টো কর্মচারীদের কয়েক মাসের বেতন আটকে রাখে। এইটাও কি মালিক পক্ষ্যের দুর্নীতি না?
তাহলে, দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশের সব সেক্টরেই মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। কিন্তু সবার রোষ গিয়ে পড়ে একটিমাত্র সম্প্রদায়ের উপর, পুলিশ!
ছোটবেলায় বলিউডি সিনেমা দেখে ইন্সপায়ারড হয়ে একবার ঠিক করেছিলাম, বড় হয়ে এস.পি হবো। আমার এক চাচাতো ভাই শুনেই হেসে বলেছিলেন, "ভাল। ঘুষে প্রচুর ইনকাম আছে!"
মানুষ ধরেই নিয়েছে পুলিশ মানেই ঘুষখোর। পুলিশ মানেই দুর্নীতিবাজ!
কথা শতাংশে নব্বই ভাগ হয়তো সত্যিও।
কিন্তু পুলিশকে দুর্নীতিবাজ বানালো কারা সেটা কেউ ভাবেনা?
একটা কুকাম করবেন আপনি, ধরা পড়ে জেলেও যেতে চাইবেন না। তখন পুলিশের হাতে টাকার বান্ডিল গুঁজে দেয় কে? আপনি যদি ভাল থাকতেন, যদি আপনার আশেপাশের প্রতিটা মানুষ ভাল থাকতো, তাহলে পুলিশ খারাপ হতে পারতো? না। কখনই না।
একটা প্রতিবেদনে পড়েছিলাম, ব্রিটিশরা যখন দেশ শাসন করতো, তখন তারা নিজেদের স্বার্থে পুলিশকে "শিকারী কুকুরের" মতন ট্রিট করতো। ওদের বেতন ভাতা কমিয়ে রেখে সবসময়েই ওদের অর্ধভুক্ত রাখা হতো, যাতে ওরা শাসকের ইশারায় যেকোন কুকর্মে ঝাপিয়ে পড়ে। এখন ব্রিটিশরা নিজেরা শুধরে গেছে, কিন্তু আমরা (সাথে ভারত ও পাকিস্তান) এখনও সেই কূটনীতি ধরে রেখেছি। শাসকেরা এখনও পুলিশকে চাকরের মতই ব্যবহার করে। যেকারনে কেউ সৎ হলে তাঁকে বেশিদিন ভাল থানায় রাখা হয়না।
পুলিশ কেবলই একটি বুলেট, তাকে যেদিকে তাক করে ট্রিগার টানা হয়, সে সেদিকেই ছুটে যায়।
আমরা বেকুবেরা কারও মৃত্যুর জন্য কেবল বুলেটকেই দায়ী করি। "একটি বুলেট কেড়ে নিল একটি সম্ভাবনাময় প্রাণ!"
ট্রিগার যে টেনে ধরলো তাকে দোষ দেয় কয়জনা?
অবরোধে একজন পুলিশ অফিসারের মৃত্যুতে একদল লোককে দেখলাম আনন্দে আত্মহারা হতে। কেউ বলছেন, "আলহামদুলিল্লাহ!" কেউ বলছেন, "সব কয়্টারে মারিলাউ!" একজন আবার নিহত পুলিশ কর্মকর্তার অবিবাহিত মেয়েকেও টেনে আনলেন!
কেউ কী বুঝতে পারছে না যে, নিহত পুলিশ অফিসারও একজন মানুষ?
পুলিশকে দুর্নীতিবাজ বলি, তাঁর অপরাধে গালাগালি করি, তাঁর প্রতি ক্রোধ পুষে রাখি - সব জায়েজ আছে। কিন্তু তাঁর আগুনে ঝলসে নিহত হবার ঘটনায় কেন আমি উল্লসিত হবো? আমিতো মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব! কোন গবাদি পশু নই যে স্বজাতিকে কোরবান হতে দেখেও পাশের মাঠে দাঁড়িয়ে দিব্বি ঘাস চাবাবো।
গান্ধীজি প্রথম অসহযোগ আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলেন কেন জানেন? কারন দেশের স্বাধীনতাকামী জনতা একটি থানা ঘেরাও করে কয়েকজন পুলিশকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছিলেন।
বুড়ো ভদ্রলোক খুব আহত মনে বলেছিলেন, "আমাদের দেশ এখনও আজাদীর জন্য প্রস্তুত নয়।"
আমাদের দেশ সাতচল্লিশ সালেও আজাদীর জন্য প্রস্তুত ছিল না, দুই হাজার পনেরোতেও নয়।
আমরা এখনও মানুষকে মানুষ হিসেবেই গন্য করতে শিখিনি, আমাদের আবার কিসের স্বাধীনতা?
©somewhere in net ltd.