নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
নতুন স্কুলে আমার প্রথম দিনের ক্লাস। ধবধবে সাদা শার্ট স্কুলের ইউনিফর্ম।
ছোট ক্লাসরুম গিজগিজ করছে ছাত্র ছাত্রীতে। এ ওর গায়ের সাথে লেগে বসে ক্লাস করছে। এর ঘাম ওর শরীরে লাগছে, ওর কনুইয়ের গুতো তার বুকে লাগছে।
সবচেয়ে ভয়াবহ ব্যপার হচ্ছে সবার হাতেই ঢাকনামুক্ত কলম ধরা। কলমের খোঁচা একবার শার্টে লাগতেই সেই দাগ স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে। ধবধবে সাদা শার্টে কুচকুচে কালো কালির দাগ দগ দগ করে চোখে লাগছে।
প্রথম দিনেই শিক্ষা পেলাম, ছোট বাচ্চাদের স্কুলের ইউনিফর্ম হিসেবে সাদা শার্ট মোটেও বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত নয়।
একটা ছেলেকে দেখলাম তার শার্টে যতখানি দাগ লেগেছে সে একদম নিখুঁতভাবে সেটার মেপে নিল। তারপর যে দিয়েছে তার শার্টে একদম মাপ মতন একটা দাগ এঁকে দিল। যে অনিচ্ছাকৃতভাবে দাগ দিয়েছিল, সেও দেখি চুপচাপ কোন প্রতিবাদ ছাড়াই এই কর্ম মেনে নিল।
খুনের বদলে খুন। Eye for an eye, tooth for a tooth!
বুঝে নিলাম এইটাই এখানে আইন।
এর কয়েকদিন পরে আমাদের সামনের বেঞ্চের এক পালোয়ান গোছের ছেলে নিজের পিঠে কলমের কালী আবিষ্কার করলো। স্বাভাবিকভাবেই সে আমাদের বেঞ্চের সব কটা ছেলেকেই দোষী সন্দেহ করলো।
আমরা কেউই দোষ স্বীকার করলাম না। জানিই না কে করেছে, স্বীকার করবো কী? পালোয়ান তখন গণহারে আমাদের সবার শার্টে নিজের কলম দিয়ে দাগ দিয়ে দিল।
আরেকদিন একটা ছেলে আরেকটা ছেলেকে মাপমত দাগ দিতে গিয়ে আধা ইঞ্চি বেশি দাগ এঁকে ফেলল। এইবার দ্বিতীয় ছেলে বলল, "তুই বড় দাগ দিলি ক্যান?" বলেই সে আরেকটা দাগ কাটলো। তারও ভাগ্য খারাপ, এই দাগটাও একটু বড় হয়ে গেল। এবার সেও শার্ট পেতে দিল। দাগা দাগী চলতে থাকলো।
অনেক পরে ঢাকায় ক্রিকেট খেলতে গিয়ে বারান্দায় নিজের প্রেয়সীকে দেখে অতি উৎসাহী হয়ে ব্যাটসম্যান বেচারা একটু জোরেই শট মেরে দিয়েছিল। বল গিয়ে একটা টয়োটা করোলার পেছনের ইন্ডিকেটর সিগনালের কভার ভেঙ্গে ফেলে। গাড়ির মালিককে আমরা চিনি। তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। ব্যাটসম্যান আন্তরিকভাবেই দুঃখ প্রকাশ করে। সিদ্ধান্ত নেয়া হয় ক্ষতিপূরন হিসেবে আরেকটা কভার কিনে এনে লাগিয়ে দেয়া হবে। আমরা খেলা সেদিনের মত সেখানেই থামিয়ে দেই।
পরের দিন দেখা যায় প্রতিটা খেলোয়াড়ের বাবাদের গাড়ির পেছনের সিগনাল লাইট কভার ভাঙ্গা। ঘটনা কে কতটুকু বুঝতে পেরেছিল জানিনা, তবে সুখের কথা, জল এরচেয়ে বেশি গড়ায় নি।
এখানেও Eye for an eye! খুনের বদলে খুন।
কারও অনিচ্ছাকৃত ভুলে একজনের ক্ষতি হয়ে গেলে দোষী ব্যক্তির ক্ষতি করলেই কী আগেরজনের ক্ষতিপূরণ হয়ে যায়?
আর অন্য কারও অপরাধে বদলা নিতে গিয়ে যে অসংখ্য নির্দোষের ক্ষতি হয়ে যায়, সেই হিসাব কে রাখে?
আজকে নর্থ ক্যারোলাইনায় একটি বাড়িতে একটা উন্মাদ পিস্তল হাতে ঢুকে গিয়ে তিনজন মানুষকে গুলি করে হত্যা করেছে। সদ্য বিবাহিত নিহত পুরুষের বয়স তেইশ, তাঁর নিহত স্ত্রীর বয়স একুশ এবং নিহত শ্যালিকার বয়স ঊনিশ। এই বয়সে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস করতে যেতাম। ক্যাফেটেরিয়ায় বসে বন্ধুবান্ধবের সাথে আজাইরা হাহাহিহি আড্ডা দিতাম। এই বয়সেই কিনা তাঁরা অন্ধকার কবরে! তাঁদের "দোষ" তাঁরা মুসলিম!
যে মাথা মোটা উন্মাদ প্রতিবেশী এই হত্যাকান্ড ঘটালো, সে একজন নাস্তিক, এবং অতি অবশ্যই ইসলাম বিদ্বেষী। তার ইসলাম বিদ্বেষের কারন হচ্ছে আই.এস.আই.এস, আল কায়েদা, তালেবান, বোকো হারাম জাতীয় আরেকদল উন্মাদ জঙ্গী গোষ্ঠী, যারা নিজেদের "মুসলিম" বলে দাবী করে।
Eye for an eye, খুনের বদলে খুন!
ঐসব মাথা মোটা জঙ্গি ফাজিলগুলি নিরীহ মানুষ হত্যা করছে, কাজেই এই ফাজিলটাও নিরীহ মুসলিম মেরে ফেলেছে!
নিহত ছেলেটার আঠাশ জানুয়ারির ফেসবুক স্ট্যাটাস ছিল "It's so freaking sad to hear people saying we should "kill Jews" or "Kill Palestinians". As if that's going to solve anything SMH"
এই একটা স্ট্যাটাস থেকেই বুঝা যায় ছেলেটা ছিল শান্তিকামী। ধর্মের নামে মানুষ হত্যার মতন বর্বরতাকে সে কখনই সমর্থন করেনি। ছেলেটি শুধুই যে ফেসবুক স্ট্যাটাস লিখে চুপ থাকতো তাই না। সে নাকি মুসলিম সমাজেও অনেক সক্রিয় ছিল। কে জানে, তাঁর সাথে কথা বলেই হয়তো অনেক সম্ভাব্য জঙ্গি ভাল হয়ে গিয়েছিল। অথচ তাঁকেই কিনা এইভাবে মরতে হলো!
আমরা সাধারণ মানুষ, তাই আমরা অন্য সাধারন মানুষের হত্যার প্রতিবাদ জানাই।
নিরীহ মানুষকে জিম্মি করে যারা জবাই করে, আগুনে পুড়িয়ে মারে, তারা ধ্বংস হোক!
দেশের সাধারন মানুষকে পেট্রোল দিয়ে ঝলসিয়ে যারা হত্যা করে, তারা ধ্বংস হোক!
ধর্ম বা অধর্মের নামে মানুষের বাড়িতে ঢুকে ঢুকে যারা গুলি করে খুন করে, তারাও ধ্বংস হোক!
একটা হত্যা করতে যে পরিশ্রম করা লাগে, তার তুলনায় কিছু না করেই একটা বই পড়া যায়।
একটা হত্যা আপনার এবং নিহতের পরিবারকে চিরতরে পঙ্গু করে দিতে যথেষ্ট, একটা ভাল বই আপনার মনুষত্ব জাগিয়ে তুলতে পারে।
কিন্তু আমরা কষ্ট করে হলেও খারাপ কাজটাই বারবার করি। একটুও বুঝতে চেষ্টা করিনা আমার ছোড়া একটি পেট্রোল বোমায় কেবল একজন মানুষেরই প্রাণ যায়না, একই সাথে তাঁর পরিবারটিও ধ্বংস হয়ে যায়!
আমি যখন ট্রিগার টেনে ধরি, বন্দুকের নল থেকে ছুটে যাওয়া বুলেট কেবল একজন মানুষকেই হত্যা করেনা, তাঁর আশেপাশের আরও অসংখ্য মানুষকে শেষ করে দেয়!
ভাল হতে পয়সা লাগেনা, তবু বারবার পয়সা খরচ করে আমরা খারাপ হই।
মহাত্মা গান্ধী বলে গিয়েছিলেন, "An eye for an eye will make the world blind."
আফসোস, আমরা খুব শীঘ্রই অন্ধ হতে চলেছি।
১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ ভোর ৪:২১
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আজকের
২| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ১:২০
আরণ্যক রাখাল বলেছেন: আমি শুনিনি কোন নাস্তিক কাউকে ধর্মের কারণে খুন করেছে| একটা দুটা করলেই আপনারা মেতে ওঠেন| কিছু বুঝি না| তবে এটা ঠিক প্রতিশোধ পরায়ণতা চলতে থাকলে আমরা একদিন অন্ধ হবোই
১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:০৪
মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: একজন নাস্তিক কেন কাউকে ধর্মের কারনে মারবে? তার নিজেরইতো কোন ধর্ম নেই। তবে কেউ অন্য ধর্ম পালন করলে সে মারতে পারে, যেমন সে এইবার মেরেছে। কেবল "মুসলিম" হবার অপরাধে সে তিনজনকে হত্যা করলো।
৩| ১৩ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:৫৬
প্রোফেসর শঙ্কু বলেছেন: নিশ্চিত অন্ধত্বের দিকে চোখ মেলে থাকি---কি ভয়ানক!
৪| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৪০
সানফ্লাওয়ার বলেছেন: অসাধারণ ! অসাধারণ!
©somewhere in net ltd.
১| ১২ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:২৯
চাঁদগাজী বলেছেন:
কোন সালের কথা?