নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার সেনাবাহিনী, আমার দেশের গৌরব

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১:৫৯

এইচ.এস.সি পরীক্ষা শেষে মাত্রই ঢাকায় থাকতে শুরু করেছি। আমার বোন কয়েক মাস আগে থেকেই ঢাকায় থাকে।
মিরপুরে মেজো চাচার বাসায় চাচাতো ভাই বোনদের আড্ডায় আমি জানালাম ডিসেম্বরে সিলেট ক্যান্টনমেন্টে সেনাবাহিনীতে যোগ দেবার একটা পরীক্ষা দিতে আবার সিলেট যাচ্ছি।
আবির ভাইয়া বলল, "তুমিতো অ্যামেরিকা চলে যাচ্ছ, আর্মিতে পরীক্ষা দিয়ে কী করবা?"
তখন আমাদের অ্যামেরিকা যাবার প্রস্তুতি চলছে। যেকোন সময়ে অ্যামেরিকান এম্বেসী ডাক দিয়ে ভিসা ধরিয়ে দিবে এবং আমরাও উড়াল দেব।
আমি তখন বললাম, "আর্মিতে সুযোগ পেলে আমি অ্যামেরিকা ফেমিরিকা যাব না। বাংলাদেশের ক্যান্টনমেন্টেই জীবন কাটিয়ে দেব।"
তানভির ভাইয়া আমার কথাকে উড়িয়ে দিল।
"কী যে বল। আর্মির জীবনের জন্য কেউ কী অ্যামেরিকান জীবন ছাড়তে পারে?"
মিলিটারীর জীবন, কষ্টের জীবন। আমার নিকটাত্মীয়ের অনেকেই সেনাবাহিনীতে ছিলেন, এখনও আছেন। তাঁদের কাছেই আমি বিএমএর ট্রেনিংয়ের "ভয়াবহতা" সম্পর্কে শুনতাম।
"মাইলের পর মাইল ভারী জিনিস নিয়ে দৌড়াতে হয়, এক ফোঁটাও পানি খাওয়ার নিয়ম নেই। পারবে?"
"শীতের রাতে ঠান্ডা পানির ড্রামে ডুবে থাকতে হয়। পারবে?"
"পেশাব পায়খানায় ভর্তি খাল সাতরে পার হতে হয়। পারবে?"
প্রতিটা প্রশ্নের জবাব দিতাম "হ্যা পারবো।"
তানভির ভাইয়ার প্রশ্নেরও তাই একই জবাব দিলাম, "তুমি দেখে নিও, আমি পারবো।"
এমন না যে শুধু কথার কথা বলেছি। আমি আসলেই সেনাবাহিনীতে যোগ দেবার জন্য উন্মাদ ছিলাম। উন্মাদেরা সব পারে।
"গড ব্লেস আমেরিকা" থেকেও ভাটিয়ারীর পাহাড়ের উপর লেখা "উন্নত মম শির" বাণীটা আমার কাছে বেশি প্রিয় ছিল।
সেনা অফিসারদের সরকারী বাড়ি, গাড়ি, ক্ষমতা, সুন্দরী স্ত্রী অথবা গল্ফ ক্লাবের ফ্রী মেম্বারশিপ ইত্যাদি থেকেও আমাকে আকর্ষণ করতো তাঁদের ইউনিফর্ম।
একজন খেলোয়ারকে যেমন জাতীয় দলের জার্সি আকর্ষণ করে, একজন অভিনেতাকে মঞ্চ, ঠিক সেরকম সেনাবাহিনীর পোশাক আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকতো।
একটি পোশাক যা দৃপ্ত কন্ঠে ঘোষণা দেয়, "দেশের সেবায় নিয়োজিত।"
একজন খেলোয়ার, একজন শিল্পী অথবা একজন নেতার চেয়েও একজন বাংলাদেশী সৈনিক আমার চোখে ছিল আসল হিরো! এখনও তাই আছেন।
ছোটবেলা থেকেই আমি আমার হিরোদের মতন হতে চেয়েছি। বড় বেলাতেও হিরো হতে চেয়েছি। কিন্তু আমার হাঁটুর কারনে হতে পারিনি। আমি জন্মগতভাবেই সেনাবাহিনীর জন্য "আনফিট!"
তারমানে উপরওয়ালা চাননা আমি সেনাবাহিনীতে যাই। মেনে নিতেই হবে।
কিন্তু আমিওতো মানুষ! তাই সেনাবাহিনীর কোন গর্বিত সদস্যকে দেখলে এখনও মনে মনে হিংসে হয়। মনে মনে আফসোস করে বলি, "আহা! কী সৌভাগ্য তাঁদের!"
২০০৯ এর পঁচিশে ফেব্রুয়ারী যখন শুনেছিলাম ঢাকায় যুদ্ধ চলছে, ডালাসে বসে তখনও এর ভয়াবহতা বুঝতে পারিনি।
খবরে জানলাম, বিডিআরের কিছু সিপাহী সেনাবাহিনীর সিনিয়র অফিসারদের জিম্মি করে দাবী আদায়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছে।
টিভিতে দেখানো হলো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সাথে দেনদরবার করতে ওদের কয়েকজন নেতা বেরিয়ে আসছে। এবং সবচেয়ে অবাক হলাম এই দেখে যে উৎসুক জনতা ওদের পিঠ চাপড়ে, স্লোগান দিয়ে বাহবা জানাচ্ছে। বাঙ্গালি জনতার মুখেই শুনতে হলো সেনাবাহিনীর নামে দুয়োঃধ্বনি!
কিছু না জেনে আগ বাড়িয়ে লাফালাফি করা লোকেদের এই কারনেই আমার সবসময়েই অপছন্দ। আফসোস, অনেক বাঙালির মাঝে এই স্বভাব আছে।
পিলখানার গেট দিয়ে মুখোশ পড়ে বেরিয়ে আসা এইসব খুনিরাই কিছুক্ষণ আগে দেশের এক ঝাক রত্নকে নির্মমভাবে ব্রাশ ফায়ার করেছে! তাঁদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে তাঁদের পরিবারের মেয়েদের উপর অত্যাচার করেছে! এই খুনিরাই এখন এসেছে আম্বালা স্যুইটসে মিষ্টি খেতে খেতে মন্ত্রী মহোদয়ার সাথে শান্তিপূর্ণ সমাধানের আলোচনা করতে!
আমার এক বন্ধু ক্ষোভে ফেটে গিয়ে বলেছিল, "আমার বাপ রিটায়ার্ড কর্ণেল হয়ে দূরে বসে টেলিফোনে প্রতি মিনিটের খবর আপডেট পেয়েছেন, মিটিংয়ের বহু আগেই জেনে ফেলেছেন অফিসারদের মেরে ফেলা হয়েছে, তাঁদের স্ত্রীদের রেপ করা হয়েছে এবং বাড়ি লুট হয়েছে - আর মাননীয়া মন্ত্রী বলতে চান ভিতরে কী হয়েছে তিনি কিছুই জানতেন না?"
এরপরের দিনই দেখতে হলো দেশের ইতিহাসের জঘন্যতম, কলংকিত অধ্যায়টিকে।
একেকজন সেনা অফিসার, একেকজন আসল হিরো, নিজ দেশেরই বেইমান সিপাহিদের গুলিতে শহীদ হয়ে পড়ে আছেন।
তাঁদের স্ত্রীরা, যারা এই জেনেই তাঁদের স্বামীদের বিয়ে করেছিলেন যে তাঁদেরও আগে তাঁদের স্বামীদের উপর দেশের অধিকার, সেনাবাহিনীর অধিকার, তাঁদেরও ছাড় দেয়া হয়নি।
বর্বরতার শিকার হয়েছেন তাঁদের সন্তানেরাও, যারা গর্ব করে বলতো "আমাদের বাবারা জেগে থাকেন বলেই তোমরা বাড়িতে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারো।"
বিষাদে মুখ তিক্ত হয়ে উঠেছিল, অভিমানে মন ভারী।
সেই সাথে একবার মনে হলো, কে জানে, হয়তো সেনাবাহিনীতে সুযোগ পেলে ঘটনাচক্রে আমিও এমন বর্বরতার শিকার হতে পারতাম!
কথা হচ্ছে, বাংলাদেশের মতন দেশে গণমৃত্যু কোন নতুন ঘটনা না। প্রতিবছরই একাধিক লঞ্চ ডুবে, নৌমন্ত্রীকে দেখায় যায় কাজকর্ম ফেলে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকতে।
লঞ্চ না ডুবলে ভবনে আগুন লাগে, আর নাহলে আস্ত ভবনই ধসে পড়ে। তবু হাজারখানেক মানুষ মরবেই। এই মন্ত্রীও বলেন, বিএনপির লোকেরাই ঝাকাঝাকি করে ভবন ধ্বসিয়ে দিয়েছেন।
এছাড়া প্রতিদিনের সড়ক দুর্ঘটনা এবং রাজনৈতিক সহিংতার মৃত্যুতো আছেই। এই দল বলে ওরা মেরেছে, ঐ দল বলে এদের কান্ড। মানুষ মরাটা কিন্তু থামেনা।
বাংলাদেশে এখন অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার সৌভাগ্যে সেই মৃত ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানাতে ইচ্ছে করে। সবার ভাগ্য এমন সুপ্রসন্ন হয়না কিনা।
এবং যেসব মৃত্যু একটি দেশের সবাইকে শোকাহত করে দেয়, সহকর্মী আত্মীয় স্বজন থেকে শুরু করে দূর প্রবাসে বসে থাকা বাংলাদেশিদের চোখে পর্যন্ত অশ্রু এনে দেয়, সেই মৃত্যুর চেয়ে গর্বের আর কী হতে পারে?
এবং তখনই আরও একবার, ইউনিফর্ম পরিহিত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গর্বিত শহীদ অফিসারদের প্রতি হিংসায় মন জ্বলে উঠে! মনে মনে আফসোস করে বলি, "আহা! কী সৌভাগ্য তাঁদের!"

মন্তব্য ১৩ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৩) মন্তব্য লিখুন

১| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৩৪

বাড্ডা ঢাকা বলেছেন: লেখাতা দারুন হয়েছে

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:৪১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! হৃদয় নিংড়ানো লেখা বলেই হয়তো ভাল হয়েছে। :(

২| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৩৬

চাঁদগাজী বলেছেন:


আমাদের দরকার নেই মিলিটারীর; ৩০ হাজার রেগুলার পার্সোনেল রেখে, বাকী দরকার ন্যাশনাল রিজার্ভ বা পিপলস আর্মি গঠন করা।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:৪১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: দাঁত থাকতে কেউ দাঁতের গুরুত্ব বুঝে না, চুল থাকতে চুলের।

৩| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ২:৪১

গাঁও গেরামের মানুষ বলেছেন: ভাই,

খুব কাছ থেকে দেখা দুই স্কুল/কলেজের দুই সিনিয়র ভাইকে খুন হতে দেখেছি ঐ ঘটনায়। আমি জানি, তারা এমন কোন অপরাধ করতে পারেনা যেকারণে তাদেরকে এমন নির্মম হত্যাকান্ডের শিকার হতে হয়েছে। এর জন্য দায়ী কারা তা' সময়েই বলে দিবে।

সত্য কখনো চাপা থাকেনা। সেই সময়ের অপেক্ষায় আছি। খুনির মুখে, না হলে তার কবরে গিয়ে হলেও মুখভরা থুথু আর বুক ভরা ঘৃণা উগরে দিয়ে আসবো।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৩:৪৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: খুনীরা অপরাধ দেখে হত্যা করেনি। অবশ্যই তাদের বিচার হবে। এই জন্মে না হলে পরজন্মে আল্লাহ যেন তাদের পাপের ভয়াবহ শাস্তি দেন।

৪| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১০:০৪

হাসান কালবৈশাখী বলেছেন:
আমার ৩ বছর আগের দুটি লেখা পড়ুন, অনেক প্রশ্নের জবাব পাবেন।

কি ঘটেছিল সেদিন দরবার হলে.?

উদ্ধার পর্ব, যে কারনে সেনা অভিযান সম্ভব হয়নি।

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

৫| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ সকাল ১১:৩১

আজকের বাকের ভাই বলেছেন: "বাংলাদেশের মতন দেশে গণমৃত্যু কোন নতুন ঘটনা না। প্রতিবছরই একাধিক লঞ্চ ডুবে, নৌমন্ত্রীকে দেখায় যায় কাজকর্ম ফেলে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘেরাও কর্মসূচিতে ব্যস্ত থাকতে।
লঞ্চ না ডুবলে ভবনে আগুন লাগে, আর নাহলে আস্ত ভবনই ধসে পড়ে। তবু হাজারখানেক মানুষ মরবেই। এই মন্ত্রীও বলেন, বিএনপির লোকেরাই ঝাকাঝাকি করে ভবন ধ্বসিয়ে দিয়েছেন।
এছাড়া প্রতিদিনের সড়ক দুর্ঘটনা এবং রাজনৈতিক সহিংতার মৃত্যুতো আছেই। এই দল বলে ওরা মেরেছে, ঐ দল বলে এদের কান্ড। মানুষ মরাটা কিন্তু থামেনা।
বাংলাদেশে এখন অসুস্থ হয়ে মারা যাওয়ার সৌভাগ্যে সেই মৃত ব্যক্তিকে অভিনন্দন জানাতে ইচ্ছে করে। সবার ভাগ্য এমন সুপ্রসন্ন হয়না কিনা"
ভালো লাগল।
সেনা বাহিনীর পোশাক আমাকেও অনেক বেশী টানে....

২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ৯:০৫

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :)

৬| ২৫ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১১:২৫

সুপ্ত আহমেদ বলেছেন: লেখা ভালো লেগেছে। কিন্তু একটা জায়গায় অমিল আছে। কথায় আছে এক হাতে তালি বাজে না কখনো । আশা করি বুঝতে পেরেছেন :)

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ রাত ১২:৪৮

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: তালি দুই হাতে বাজালেও নৃশংসতা কোন অবস্থাতেই জাস্টিফায়েড না, আশা করি বুঝতে পেরেছেন। :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.