নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বুলিদের কেউ মনে রাখেনা। তাদের পাত্তা দেয়ারও কিছু নেই।

০১ লা জুন, ২০১৫ রাত ৮:৫৬

মাইকেল মধুসূদন দত্ত ব্রিটিশদের উচ্চারণে ইংরেজিতে কথা বলতে পারতেন। ইংরেজি ছিল তাঁর কাছে মাতৃভাষার মতই সহজ। তিনি হতে চেয়েছিলেন পরবর্তী "মিল্টন।" প্রথম জীবনে তাই ইংরেজিতেই কবিতা লিখতে শুরু করেন।
তাঁর এই ইংরেজিতে কথা বলার পেছনের কারন কী?
তিনি ছিলেন যশোরের মানুষ। মানে একজন খাঁটি বাঙাল। এবং পড়াশোনা করেছিলেন কলকাতার মতন ঘটিদের এলাকায়।
তাঁর ক্লাসের ছেলেরা তাঁর বাংলা উচ্চারণ নিয়ে তাই তাঁকে খুব খ্যাপাতো।
"এই, তুই একটু কথা বলতো! আমরা একটু হাসি! হিহিহি।"
বালক মধু তখন খেপে গিয়ে বলতো, "আমাকে এইভাবে খ্যাপাস নে, ধরি মাইর দিবানে।"
"হাহাহাহা। "ধরি মাইর দিবানে।" হাহাহা। ভারী মজা লাগেগো!"
স্কুলের এইসব বুলিদের শায়েস্তা করতে মধু তখন এক ফন্দি বের করলেন। তিনি ইংরেজিতে কথা বলা শুরু করলেন। তাঁর ইংরেজি ছিল পশ্চিমাদের মতই ঝরঝরে, এবং তাঁর মত করে কেউ সাহেবদের ভাষায় এইভাবে কথা বলতে পারতো না। এইবার আর কেউ তাঁকে খ্যাপাতে পারেনা। কারন মধুর কাছে "বাংলা" যেমন কঠিন, ওদের কাছে ইংরেজিও তাই।
লাভের লাভ এই হলো যে তিনি "বাদামী চামড়ার ইংরেজ" হয়ে উঠলেন। এবং জন্ম হলো নতুন বুলির।
স্কুল ছাড়ার বহুদিন পর, বন্ধুদের এক আড্ডায় সাহিত্য নিয়ে প্রসঙ্গ উঠলে এক সময়ে আড্ডা মহাকাব্যে মোড় নিল। বিভিন্ন আলোচনা, যার বেশির ভাগই ছিল সমালোচনা, - এর পর পন্ডিতেরা সবাই একমত হলেন যে বাংলা সাহিত্যে মহাকাব্য রচনা একদমই সম্ভব নয়। কারন মহাকাব্যের ভাবগাম্ভীর্য্য তুলে ধরতে যে শব্দভান্ডারের প্রয়োজন হয়, সেই শব্দভান্ডার বাংলা ভাষায় অনুপস্থিত।
এখানে উল্লেখ্য, কোন এক বিষয়ে সমস্ত বাঙালি ঐকমত্তে পৌছেছে, এমন ঘটনা কিন্তু ইতিহাসে বিরল। কাজেই বুঝে নেয়া যায়, তাঁদের যুক্তি ছিল কতটা কঠিন!
বেয়ারা, অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী ও ভয়াবহ জেদী মাইকেল সিগারেট ফুঁকতে ফুঁকতে বললেন, "আমিই বাংলা ভাষায় একটি মহাকাব্য সৃষ্টি করতে পারবো।"
ঘোষণা শুনে উপস্থিত সবাই এক মুহূর্ত থমকে গেলেন। তারপর দুর্দান্ত রসিকতা হয়েছে ভেবে হাসিতে হল কাপিয়ে দিলেন। যে লোক বাংলায় ঠিক মতন কথাই বলতে পারেন না, ইংরেজিতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করেন, তিনি কিনা লিখবেন মহাকাব্য!
এর কয়েক বছর পর "মেঘনাদ বধ" কাব্য বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস পাল্টে দিল।
এই মহাকাব্য সম্পর্কে মজার একটি তথ্য দেই। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কিন্তু তরুণ বয়সে মেঘনাদ বধ কাব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে লিখেছেন, "এটি কোন মহাকাব্যই নয়।"
এবং পরবর্তিতে যখন তাঁর বয়স বাড়ে, ও সাহিত্যের বোধ আরও পরিপক্ক হয়, তিনি নিজের ভুল বুঝতে পারেন ও তাঁর সেই সমালোচনায় লজ্জিত ও দুঃখিত হন।
এইবার আসা যাক নজরুলের জীবনীতে।
শৈশবেই পিতৃহারা হয়ে যাওয়ায় বৃত্তি পাওয়া ছাত্র হওয়া সত্বেও নজরুলের পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়, ও রুটির দোকানের পাশাপাশি লেটো গানের দলে যোগ দেন। সেখানে তিনি গান লিখে টাকা আয় করতেন।
কেউ কেউ ভাবতে পারেন, লেটো গান আবার কেমন ধারার গান! হুমায়ূন স্যারের "ঘেটুপুত্র কমলা" ছবিটি কেউ দেখেছেন? লেটো গানের দল অনেকটা ঘেটু গানের দলের মতনই ছিল।
মধুসূদনের "বুলি" ছিল তাঁর স্কুলের সহপাঠীরা। নজরুলের বুলি ছিল তাঁর দারিদ্র্য। এই দারিদ্র্য তাঁকে দিয়ে কী করায়নি! তাঁর মতন প্রেমিককে সৈনিক হিসেবে যুদ্ধ লড়িয়েছে। কলম থেকে ছুটিয়েছে বুলেট, বানিয়েছে বিদ্রোহী। এবং এই এক কবিতাই তাঁকে এনে দিয়েছে দেশব্যাপী মহাতারকার পরিচিতি।
দারিদ্র্য তখন মোটামুটি দূরে সরে গেলেও ততদিনে নতুন বুলির আবির্ভাব ঘটে গেছে।
'শনিবারের চিঠি' নামের এক ফাজিল পত্রিকা শুরু করে তাঁকে নিয়ে প্যারডি রচনা। যার মূল কারিগর ছিলেন, সজনীকান্ত দাস নামের এক কবি(!?)।
বুলিদের আক্রমনে আহত নজরুল শুরু করেন প্রেমের কবিতা লেখা। বিরহের কবিতা লেখা। এক সময়ে মন দেন গান রচনায়। বিশেষ করে গজল। বাংলা সাহিত্যের রত্নভান্ডার ভারী হতে থাকে অমূল্য কিছু রত্নে। এবং মাত্রই এক যুগের কিছু বেশি সময় ধরে রচিত তাঁর গানের সংখ্যা ছাড়িয়ে যায় স্বয়ং রবি ঠাকুরের গানের সংখ্যাকেও। বাংলা সাহিত্যের রবি যদি হন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, তবে পূর্নিমার চাঁদ নিশ্চই কাজী নজরুল ইসলাম।
শেষ করা যাক লালন শাহের ঘটনা দিয়ে।
হিন্দু পরিবারে জন্মে লালনের মন ছিল বাউলিয়ানা। ছিলেন সিরাজ সাঁইয়ের ভাবশিষ্য।
একদিন তীর্থ যাত্রাকালে তাঁর শরীরে গুটি বসন্ত বসত গড়ে। তাঁর সহযাত্রীরা তাঁকে ভেলায় তুলে গঙ্গায় ভাসিয়ে দেয়। এবং ভাগ্যও তাঁকে ভাসাতে ভাসাতে এক মুসলিম নারীর ঘাটে এনে ফেলে।
ভদ্রমহিলা যুবক লালনের মুখে অন্ন তুলে দেন। সেবা যত্নের মাধ্যমে তাঁকে সাড়িয়ে তুলেন। এবং তাঁকে শারীরিক ভাবে বাঁচিয়ে তুললেও মনের অজান্তেই তাঁর "জাতকে" গলা টিপে হত্যা করেন।
লালনের বুলি ছিল তাঁর সমাজ।
যারা তাঁকে মরবার জন্য ভেলায় ভাসিয়ে দিয়েছিল। যখন তিনি বেঁচে ফিরে এলেন, তখন এই তারাই তাঁকে সমাজচ্যুত ঘোষণা করে!
লালন এই বুলিদের কিভাবে সামলালেন? সৃষ্টি করলেন লালন গীতির।
"ব্রাহ্মণ চন্ডাল চামার মুচি
এক জলেই সব হয় গো সুচি
দেখে শুনে হয় না রুচি
যমে তো কাউকে ছাড়বে না..... "
কথা হচ্ছে, সব সমাজেই সব কালেই সব অবস্থাতেই বুলির অভাব কখনই হবেনা। আপনি কিভাবে সেইসব বুলিদের সামলাচ্ছেন, সেটাই বড় কথা।
বালক মধুর ক্লাসের বন্ধুদের ইতিহাস হারিয়ে ফেলেছে।
স্বজনিকান্তের নাম কয়জন মনে রেখেছে?
লালনের সমাজের মাথারা এখন কোথায়?
বুলিদের কেউ মনে রাখেনি। তাদের কেউ মনে রাখেনা। তাদের পাত্তা দেয়ারও কিছু নেই।

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০১ লা জুন, ২০১৫ রাত ৯:৪৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: ঠিক বলেছেন। পোস্টে ভালো লাগা রইলো।

০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ২:৩০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

২| ০১ লা জুন, ২০১৫ রাত ১০:০০

চাঁদগাজী বলেছেন:

ভালো

০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ২:৩০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ আপনাকে!

৩| ০১ লা জুন, ২০১৫ রাত ১০:১৫

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: ভালো একটা পোস্ট পড়লাম। ++++

০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ২:৩০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ!

৪| ০১ লা জুন, ২০১৫ রাত ১০:২০

প্রামানিক বলেছেন: চমৎকার লেখা। ধন্যবাদ

০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ২:৩১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ!

৫| ০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ৯:১০

আমি ময়ূরাক্ষী বলেছেন: অসাধারণ এবং প্রিয়তে।

১১ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

৬| ০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ১০:৩১

মিশু মিলন বলেছেন: ভাল লিখেছেন।

শুভেচ্ছা..........

১১ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

৭| ০২ রা জুন, ২০১৫ রাত ১০:৫৬

ইমরান আশফাক বলেছেন: খুবই চমৎকার পোস্ট, অনেক কিছুই জানলাম। সত্যিই তো, বুলিদের মনে রেখেছে কে?

১১ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! :)

৮| ০৩ রা জুন, ২০১৫ রাত ১২:২৪

মুদ্‌দাকির বলেছেন:
দারুন !!

১১ ই জুন, ২০১৫ রাত ১১:৩৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: :) ধন্যবাদ!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.