নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

"আমাকে শরাব খেতে দে মসজিদে বসে...."

১৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:২০

"মুসলমানরা রোজা রাখে কেন?"
অতি সহজ একটি প্রশ্নের অতি সরল উত্তর হচ্ছে, "যাতে আমরা ক্ষুধার্থ ও তৃষ্ণার্তের যন্ত্রণা বুঝতে পারি। যাতে আমরা ওদের কষ্টে সাহায্য করতে পারি।"
উত্তর এতই সহজ, কিন্তু শিক্ষাটা এত সহজ হলে কোন কথাই ছিল না। আমরা ইফতারের নামে কত খাবার যে অপচয় করি! জিলাপিতে এক কামর দিয়ে ভাল লাগলো না, ফেলে দিলাম। পিয়াজু একটু ঠান্ডা হয়ে গেছে, ফেলে দিলাম। ছোলাটা মন মতন হয়নি, সেটাও ফেলে দিলাম। আর পানি? রমজান মাসে সবচেয়ে বেশি অপচয় ঘটে বুঝিবা পানির। এক চুমুক দিয়ে বোতল যেখানে সেখানে রেখে দিলাম। তারপর আবার যখন প্রয়োজন হলো, আরেকটা বোতল খুলে আরেক চুমুক দিলাম।
বাহরে বাহ সংযম!
কথা যখন উঠেছেই, তখন কিছু কথা বলে ফেলা যাক।
রোজা রাখার মূল ব্যপারটি কী? খাদ্য-পানীয় গ্রহণ থেকে নিজেকে বিরত রাখা।
শুধু কী তাই? না। সাথে এও বলা হয়েছে, যেকোন পাপকর্ম থেকেও নিজেকে বিরত রাখতে হবে।
এখন পাপ বলতে আমরা কী বুঝে থাকি? মিথ্যা বলা, চুরি করা, খুন করা, ব্যভিচার ইত্যাদি। কিন্তু যেখানে সেখানে, বিশেষ করে রাস্তায়, যেখানে মানুষ হাঁটাচলা করে, সেখানে থুথু ফেলাও যে পাপ, আমরা কী তা মানি?
রেফারেন্স লাগবে? মদিনার সংবিধান গঠনের সময়ে নবীজির (সঃ) স্পষ্ট হাদিস আছে, "সেই ব্যক্তি জাহান্নামী যে অন্যের চলার পথে অথবা বিশ্রামের স্থানে মল-মুত্র ত্যাগ করে।"
আমাদের দেশের ফুটপাথের পাশেই মল-মুত্র দেখা যায়, এবং তারচেয়ে বড় কথা, রমজান মাসে মানুষের কাশ-কফ-স্যাপ ইত্যাদিতে পা না দিয়ে ঢাকা শহরে হাঁটা যায় না। কফ আর মলের মধ্যে মিল হচ্ছে দুইটাতেই জীবানু থাকে। এবং পার্থক্য হচ্ছে একটা মুখ দিয়ে বেরোয়, আরেকটা.....জানেনই তো। বলার দরকার কী?
বাঙালির সবচেয়ে বড় দুর্বলতা এরা খুব সহজেই জাজ করে বসে।
"ও দাড়ি রাখেনা, ও কাফের।"
"ও পর্দা করে না, ও কাফের।"
কেউ হয়তো শারীরিক অসুস্থতার জন্য রোজা রাখতে পারছে না। রোজা রাখলে সে অসুস্থ হয়ে যায়। ঈদের পরে তাই কাফফারা দিতে হয়। এইসব না শুনেই সিদ্ধান্তে চলে আসা, "ও কাফের!"
অথচ যে নারী আপাদ মস্তক বোরখায় ঢেকে লোকের নামে কুৎসা রটিয়ে অন্যের সংসারে আগুন লাগিয়ে বেড়ায়, তার কোন দোষ নেই। কারণ সে পর্দানশীল।
কিংবা এক হাত লম্বা দাড়িওয়ালা লোক, নামাজ পড়তে পড়তে যার কপালে পার্মানেন্ট দাগ বসে গেছে, তিনি যখন একবস্তা চালের মধ্যে এক কেজি কংকর মিশিয়ে দেন, তবুও তিনি ভাল, কারন তিনি নামাজি।
ভাই। জাজ করার অভ্যাস ত্যাগ করেন। জাজ করাটাও ইসলামী দৃষ্টিতে পাপ। বুঝার চেষ্টা করেন কোন মানুষ "কী" করছে। বেশ্যা নারীর পিপড়াকে পানি খাওয়ানোর ঘটনার কথা মনে আছে? তাহলে আপনি মানুষকে দেখেই "কাফের" ফতোয়া দেয়ার কে?
"আল্লাহ জ্বিন ও মানুষকে তাঁর ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছেন।"
অতি সহজ সরল আয়াত, যা সবচেয়ে বেশি অপব্যাখ্যার শিকার হয়েছে।
আল্লাহর ইবাদত মানে কী শুধুই মসজিদে বসে জিকির আসগার করা? জ্বিনা। মানুষের সেবা করাও আল্লাহর ইবাদত। পশুপাখির যত্ন নেয়াও আল্লাহর ইবাদত। বৃক্ষরোপনও আল্লাহর ইবাদত। মোট কথা, যেকোন সৎ কাজ করাই আল্লাহর ইবাদত। এবং তারচেয়ে বড় কথা, যেকোন অসৎ কাজ থেকে দূরে সরে থাকাটাও আল্লাহর ইবাদত। নবীজির (সঃ) হাদিসটি মনে নেই? "নিজের মনের ইবলিসের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় জিহাদ।"
সামান্য কিছু টাকার বিনিময়ে যে দুর্নীতিগ্রস্থ ফাইলটা রিলিজ করে দেয়া যায়, সেই ফাইলটা যদি কেউ জেদ ধরে আটকে রাখে এবং ফাইল না শোধরানো পর্যন্ত রিজেক্ট করতেই থাকে, সেই লোকটি হয়তো জানেই না তিনি কিভাবে আল্লাহর ইবাদত করে চলেছেন।
রাস্তায় ক্ষুধার্থ একটি কুকুরকে দুইটা বিস্কিট ও এক বাটি পানি এগিয়ে দেয়া লোকটিও জানেনা সে শুধু এই কাজের বিনিময়েই আল্লাহর কতখানি কাছাকাছি চলে গেছে।
অসহায় এতিমের মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে দেয়ার চেয়ে বড় ইবাদত পৃথিবীতে খুব বেশি একটা কী আছে?
একবার একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজে জিডি করতে সিলেট কোতয়ালী থানায় যেতে হয়েছিল। কর্তব্যরত পুলিশ জোর করে পাঁচশ টাকা আদায় করে নিলেন। ঈদের বাজার!
ট্রেনে করে সিলেট থেকে ঢাকা আসবো। ঈদ আসতে তখনও অনেক দেরী। মা বোন্ সাথে যাচ্ছে বলে আস্ত স্লিপিং বার্থ রিজার্ভ করলাম। সাতশ টাকার মত লেগেছিল। এক হাজার টাকা দিলাম। টিকেট মাস্টার পুরোটাই রেখে দিলেন। ঈদের বাজার।
"ঈদের বাজারে" এমন হামেশাই ঘটছে।
অন্যের গলা কেটে উৎসব উদযাপন। এই ঈদের কোন মূল্য আছে?
সবচেয়ে বিভৎস ঘটনার সাক্ষীতো এই কিছুদিন আগেই হলাম। সেহরী খেয়ে, সারাদিন রোজা রেখে একটি শিশুকে, একটি বুদ্ধি প্রতিবন্ধী নারীকে পিটিয়ে হত্যা করে ইফতার খেতে বসে মোনাজাত করা, "ইয়া আল্লাহ! আমার রোজা কবুল কর!"
এদেরকে সৌদি স্টাইলে ধরে ধরে শিরচ্ছেদ করা উচিৎ। কোন কথা নাই।
আরে ভাই, রোজা রেখেও যদি পাপ থেকে নিজেকে দূরে রাখতে না পারো, হত্যা থেকে শুরু করে পরনিন্দা, পরচর্চা, গিবত থেকে নিজেকে সামলে রাখতে না পারো, অন্যের ক্ষতি করা থেকে নিজেকে আটকাতে না পারো, তাহলে তুমি শুধু শুধুই সারাটা মাস না খেয়ে থাকলে।
তোমার আত্মার পরিশুদ্ধির জন্যই আল্লাহ তোমাকে রোজা রাখতে বলেছিলেন। তোমার খাওয়া না খাওয়ায় তাঁর কিছুই আসে যায় না।
রমজান চলে গেলেও পুরানো বদভ্যাস যেন ফিরে না আসে। পাপ, সে যে মাসেই করেন না কেন, পাপ হয়ে থাকে।
এই কথাটিকে খুব সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করা হয়েছিল একটি উর্দু গানে। যার তর্জমা হচ্ছে, "আমাকে শরাব খেতে দে মসজিদে বসে,
আমাকে শরাব খেতে দে মসজিদে বসে,
নাহলে এমন কোন স্থান দেখিয়ে দে যেখানে খোদা না আছে।"
সবাইকে আগাম ঈদের শুভেচ্ছা।
ঈদ মুবারক!

মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ৩:৫৫

বাংলার জামিনদার বলেছেন: দারুন লিখছেন। রোজার মাসে সবচেয়ে বেশী খারাপ কাজ করে মানুষ। অথচ এই মাসে নাকি শয়তান বন্দী থাকে?? সামনে ঈদ, বাড়তি খরচ, অতএব যেভাবে পারো কামাও, বাজারে সব্জির দোকানদার থেকে শুরু করে এক্কেরে মাথা পর্যন্ত। সবচেয়ে ভোগ, অপচয়, বিলাসিতা এই মাসে। এই নাকি শিক্ষা। কি জানি বাপু।

১৭ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৪:২৭

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: স্যাড বাট ট্রু :(

২| ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ ভোর ৫:১৪

প্লাবন২০০৩ বলেছেন: "আমাকে শরাব খেতে দে মসজিদে বসে,
আমাকে শরাব খেতে দে মসজিদে বসে,
নাহলে এমন কোন স্থান দেখিয়ে দে যেখানে খোদা না আছে।"
-আসলেও তাই । শুভ কামনা রইল ভালো একটা লেখা উপহার দেবার জন্য ।
ঈদ মোবারক ।

১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:০২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ! আপনাকেও শুভ কামনা

৩| ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ সকাল ৮:০০

মন্জুরুল আলম বলেছেন: সুন্দরভাবে কিছু জিনিস তুলে ধরেছেন যা আসলেই আমাদের মধ্যে বহুল প্রচলিত......

১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:০২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ!

৪| ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৪

রােশদ সুলতান তপু বলেছেন: খুবই ভালো লাগলো। ভাল থাকবেন।

১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:০৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: আপনিও ভাল থাকবেন

৫| ১৭ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ১০:২২

শাশ্বত স্বপন বলেছেন: ১০০ তে ১০০। কিন্তু ভয়ে কিচু লিখলাম না।

১৮ ই জুলাই, ২০১৫ রাত ২:০৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ভয়ের কিছু নেই। :)

৬| ১৯ শে জুলাই, ২০১৫ রাত ৯:৩৬

আমি সাজিদ বলেছেন: খুব ভালো লেখা ভাই।

ঈদ মোবারক।

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৩০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই। ঈদ মোবারক।

৭| ২০ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:২৬

স্বপ্নস্বাধীন বলেছেন: ঈদ মোবারক !

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৩০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ঈদ মোবারক।

৮| ২০ শে জুলাই, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩৫

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: ভালো লিখছেন ভাই। ++

০৬ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:৩০

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.