নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

বাঙালির জাজমেন্টাল মেন্টালিটি

১২ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:২৩

পহেলা বৈশাখে ঢাবির দুর্ঘটনা নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল। এক আপা ইনিয়ে বিনিয়ে বারবার বুঝানোর চেষ্টা করছিলেন যে বেপর্দা মেয়েদের পোশাকের জন্যই ছেলেরা আকৃষ্ট হয়ে অসভ্যতা শুরু করে দেয়। তাঁর জোরালো দাবি, বোরখা পরিহিতা কোন নারীকে প্রায় কখনই এমন পরিস্থিতিতে পড়তে হয়না।
কথায় কথায় অন্য এক আপু একটি আর্টিকেল শেয়ার করলেন। যেখানে বলা হয়েছে হজ্বের মৌসুমেও মহা পবিত্র মক্কার কাবা ঘরেও মেয়েদের এমন হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে। ব্যপারটা পোশাক বা ধর্মের সাথে জড়িত নয়, পুরোটাই বিকৃত মানসিকতার ব্যপার।
তা সেই আপা কিছুতেই মানতে রাজি নন হজ্বের সময়ে এমনটা ঘটে। তিনি জোরালো গলায় বললেন, "একটি মানুষ জীবনের একটা বড় সঞ্চয় ব্যয় করে কেবলমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আশায় বহুদূর দেশ থেকে হজ্বে যায়। সেখানে গিয়ে এমন ঘৃণ্য আচরণ করার প্রশ্নই উঠে না।"
আপাকে যখন আমি বললাম, মক্কা থেকে বা তায়েফ থেকে বা আশেপাশের শহর থেকে যারা হজ্বে আসেন, যেখানে কাবা ঘরে আসা যেমন আমাদের ঢাকা থেকে সভার যাওয়া, তাঁদের জন্যতো "বহুদূর দেশ থেকে হজ্বে আসা" কন্ডিশন অ্যাপ্লাইড হচ্ছে না। আপনি শুধু নিজের দেশের প্রেক্ষাপটে দেখলে হবে কী করে?
তিনি মানতে নারাজ। তাঁর মতে হাজী মানেই পবিত্র, গুনাহমুক্ত। কারন আল্লাহ বলেছেন, যে হজ্ব করলো, সে যেন নবজাতকের মতন পবিত্র হয়ে গেল।
আপার এই কথা থেকেই বুঝা যায় তিনি কতখানি জাজমেন্টাল। অর্থাৎ, মানুষকে বিচার করতে তিনি বিন্দুমাত্র সময় ব্যয় করেননা। এমন মানুষের সাথে খুব বেশিদিন সম্পর্ক টেকা মুশকিল। টিকেওনি। যেহেতু আমার দাড়ি নেই, পাজামা পাঞ্জাবি পড়িনা, আমার বউ পর্দা করেনা, কাজেই ইসলাম নিয়ে পড়াশোনা বা আলোচনা করার আমার কোনই অধিকার নেই।
বিপরীত অভিজ্ঞতাও হয়। যখনই আমি ইসলাম নিয়ে কিছু লিখি, তখনই একদল ঘেউ ঘেউ করা শুরু করে "মৌলবাদী" "ছাগু" ইত্যাদি বলে।
জাজমেন্টাল স্বভাবটা বাঙালির কোনদিনই যাবেনা।
প্রসঙ্গক্রমে একটি ঘটনা বলে ফেলি।
হুদায়বিয়ার সন্ধির ঘটনা কম বেশি অনেকেই জানি। নবীজির(সঃ) নেতৃত্বে মুসলিমদের এক বিরাট দল উমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। কুরাইশদের সাথে যুদ্ধ এড়াতেই তাঁরা মানুষের চলাচলের অনুপযোগী, অত্যন্ত বন্ধুর ও কন্টকময় পথ পেরিয়ে হুদায়বিয়া নামের একটি স্থানে এসে বিশ্রাম নেন। তখন নবীজি (সঃ) বলেন, "আল্লাহ তোমাদের সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, কেবল লাল উটের মালিক বাদে।"
হজ্ব বা উমরাহ পালনের মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে পাপমোচন। সেই অর্থে তাঁদের কষ্ট সার্থক! কিন্তু সাহাবীরা হায় হায় করে উঠলেন। কে সেই দুর্ভাগা ভাই যে ক্ষমা পেল না?
ঠিক তখনই শোনা গেল দলের পেছনের দিকের এক লোক তার উট খুঁজে পাচ্ছেন না। উটের রং লাল। বলে রাখা ভাল, লাল উট তখনকার যুগের সবচেয়ে প্রেস্টিজিয়াস ভিহিকেল ছিল। বর্তমানের রোলস রয়েস, মার্সিডিজ এস ক্লাস বা বিএমডব্লিউ সেভেন সিরিজ ধরনের।
সাহাবীরা ছুটে গিয়ে বললেন, "তুমি এখুনি গিয়ে রাসুলাল্লাহর (সঃ) কাছে অনুরোধ করো, তিনি যেন তোমার ক্ষমার জন্য আল্লাহর দরবারে দোয়া করেন।"
সেই উটের মালিক বেদুইন আরব সাহাবীদের বললেন, "এইসব ফালতু কাজের সময় আমার নাই। তোমাদের সঙ্গীকে বলে দাও, আল্লাহর ক্ষমার চাইতেও আমার কাছে আমার উট খুঁজে পাওয়া বেশি জরুরী।"
মানে হচ্ছে, নিয়ত যদি পরিষ্কার না থাকে, নবীর সাথে হজ্ব করেও লাভ নেই।
আরেকটা ঘটনাও বলে ফেলা যাক।
এক যুদ্ধে এক সাহাবী শত্রুর তলোয়ারে নিহত হলেন। সাহাবীরা এই খবর নবীজিকে (সঃ) শোনালে তিনি আফসোস করে বললেন, "সে জাহান্নামে যাচ্ছে।"
আমরা জানি শহীদের স্থান জান্নাতে। সাহাবীরাও তাই জানতেন।
তাঁরা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলে নবীজি (সঃ) বলেন, "সে যুদ্ধ করছিল শত্রুপক্ষের সম্পদ লাভের লোভে। আল্লাহ বা তাঁর রাসুলের জন্য নয়।"
এবং দেখা গেল লড়াই শেষে তাকে যখন কবর দেয়ার জন্য তার বর্ম খোলা হলো, বর্মের ভিতরে এখানে ওখানে শত্রুদের টুকটাক সম্পত্তি (যেমন অঙ্গটি, অলংকার, ছোট খাট অস্ত্র ইত্যাদি) ভরে রাখা ছিল।
এখন ঐ আপা হলে এই সাহাবীকে বলতেন "শহীদ" এবং বেদুইন আরব লোকটিকে পারলে পূজা করে বসতেন। নবীর সাথে উমরাহ পালনকারী ব্যক্তি, সহজ কথা?
আমরা অতি দ্রুত মানুষের পোশাক আশাক, কথাবার্তা, লাইফস্টাইল ইত্যাদি থেকে জাজ করে বসি।
"ও সরকারী কর্মকর্তা? ওতো ঘুষ খায়।"
"ও পর্দা করেনা? নিশ্চই নাস্তিক।"
"ও যে এত কথা বলছে, ওর দাড়ি কই?"
"ওতো একটা ছাগু! দাড়ি দেখনি?"
"আপনি ছাত্রলীগকে সন্ত্রাসী বললেন? আপনি যুদ্ধাপরাধী!"
"আপনি ছাত্রদলের রাজনীতি পছন্দ করেননা? আপনি ভারতীয় দালাল!"
"আপনি জামাত শিবিরের সমর্থক নন? দেশে নাস্তিকের সংখ্যা শুধু বাড়ছেই!"
দেশের যেকোন পতিতালয়ের পাশ দিয়ে যান। দেখবেন সবকটা পতিতা বোরখা পড়ে হয় ঢুকছে, নয় বেরুচ্ছে। আমি পতিতাদের গালি দিতে বা হেয় দেখাতে এই উদাহরণ টানিনি। কে জীবনের কোন প্যাচে পড়ে এই পেশায় জড়িয়ে গেছে আমরা জানিনা। তাঁদের জীবন সহজ হোক, যারা মুক্তি খুঁজছেন, তাঁদের মুক্তি ঘটুক।
আবার দেখা যায় বেপর্দা বিদেশী নারী নিজের সুখ আয়েশের জীবন ফেলে বাংলাদেশের বস্তিতে বস্তিতে চ্যারিটি ওয়ার্ক করে বেড়াচ্ছেন।
এখন যেই মহিলা আপাদ মস্তক বোরখায় ঢেকে এর ওর নামে কুৎসা রটিয়ে বেড়ায়, সে ভাল? নাকি ভদ্রস্থ পোশাক পড়া মহিলা, যিনি শুধুমাত্র মানুষকে অশান্তিতে না ফেলার উদ্দেশ্যেই এর ওর কথা চেপে যান, তিনি ভাল?
এক হাত লম্বা দাড়িওয়ালা ব্যবসায়ী, যে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তে পড়তে কপালে দাগ ফেলে দিয়েছে, অথচ তার স্বভাব হচ্ছে লোকবল খাটিয়ে অন্যের জমি দখল করা, সে ভাল? নাকি সাধারন একটা দারোয়ান, যিনি সারারাত জেগে চোর পাহারা দেন, এবং কারও হারিয়ে যাওয়া মানিব্যাগ খুঁজে পেলে ফিরিয়ে দেন, তিনি ভাল?
সচিবালয়ে ফাইল নাড়ানো যায় না ঘুষ ছাড়া। মন্ত্রনালয়ে ফাইল আটকালেতো কথাই নেই। এই সমস্ত আমলা-মন্ত্রীদের তুলনায় আমাদের দেশের সেই রিকশাওয়ালা কী ভাল নয় যে নিজের গতর খাটিয়ে দুই বেলার অন্ন যোগার করে, একদম হালাল উপায়ে?
বস্তির মানুষও বউ পেটায়, আবার আইভি লীগ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হওয়া উচ্চশিক্ষিত বুদ্ধিজীবীও বউ পেটায়। তাহলে পার্থক্য কী থাকলো?
আমরা বারবার ভুলে যাই, কারও হৃদয় দেখার ক্ষমতা আমাদের দেয়া হয়নি। যার বাইরের আভরণ দেখে আমরা তার বিচার করে ফেলছি, আমরা হয়ত জানিই না তার হৃদয়টা সোনায় তৈরী এবং আমার নিজেরটা কয়লার। আমরা জানিনা যেই লোকটার নিন্দা করছি, হয়তো তাঁর হাজারটা কাজ মানুষের উপকারে আসে, সেদিক দিয়ে আমি নিজেই মানব সভ্যতার জন্য একটি বোঝা।
আরেকটি ঘটনা দিয়ে শেষ করি। উসামা ইবনে যাইদের(রাঃ) হাতে এক যুদ্ধে এক কাফির নিহত হলে তিনি বলেন, "আমি তলোয়ার চালানোর ঠিক আগে আগে সে কলিমা পাঠ করেছিল।"
নবীজি (সঃ) সাথে সাথে বললেন, "তাহলে তুমি কেন তাঁকে মারতে গেলে?"
উসামা বলেন, "সেটা সে নিজের প্রাণ বাঁচানোর উদ্দেশ্যেই করেছিল।"
নবীজি (সঃ) বললেন, "তুমি কী তাঁর অন্তর দেখতে পেরেছিল? তাহলে এত নিশ্চিত হলে কিভাবে?"
এখন আপনারাই একটু চিন্তা ভাবনা করে দেখুন এই জাজমেন্টাল মেন্টালিটি আপনাকে কী লাভটা দিচ্ছে।

মন্তব্য ৯ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৯) মন্তব্য লিখুন

১| ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ রাত ২:২৯

সৃজনশীলপ্রয়াস বলেছেন: Islami bishoye ৩ ti bishoyer somonnoi na thakle tar kotha from kora jaina. ১) Iman er bapre bistarito Jana ২) quran- hadith er gan thanks ৩) gan onujai amol thaka

২| ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ ভোর ৪:০৪

আমি শঙ্খচিল বলেছেন: এই মনমানসিকতা বাঙালির জাতিগত সমস্যা , যার কোন সমাধান নেই ।

৩| ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৭:৪৪

নিষ্‌কর্মা বলেছেন: ইসলামি ধরণের লেখা কিন্তু পুরুষের মানসিকতার সমালোচনা করা হয়েছে, এইটা প্রথম পড়লাম। ধন্যবাদ।

৪| ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ সকাল ৮:৫৫

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: বাঙ্গালী নিজেরা কিছু করতে পারে না বলেই জাজমেন্টাল প্রকৃতির হয়...!

৫| ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:০০

বিবর্ন সভ্যতা বলেছেন: কাউকে খারাপ উপাধি দিতে আমাদের মাথা খরচ করতে হয় না, খরচ করতে হয় কাউকে ভাল বলে স্বীকৃতি দিতে। এটাই বাঙ্গালী, এটাই আমরা।

৬| ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ দুপুর ১:০১

যুগল শব্দ বলেছেন:
ভালো লিখেছেন মহাশয় ! ++

৭| ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৩:০৮

শতদ্রু একটি নদী... বলেছেন: পোস্টের সাথে অনেকটাই সহমত। তবে এই মেন্টালিটি বাঙ্গালী একা ধারন করেনা। পুরা মানবজাতির বেশিরভাগ সদস্যই কম বেশি ধারন করে। প্রেক্ষাপট ভিন্ন হয় কেবল।

৮| ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:০০

ধূসরছায়া বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন জনাব। :)

৯| ১২ ই আগস্ট, ২০১৫ বিকাল ৪:৫৫

ট্রোল বলেছেন: দেশে থাকতে আর ভাল লাগে না। যে কোন এক্টা অজুহাত পাইলেই পগার পার

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.