নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একজন খুনি যদি বুঝতে পারতো কোপ মারা object টাও আসলে তার মতই একজন মানুষ!

০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:২৯

আমাদের দেশে বৃষ্টি বাদলার দিনে আমি শেষ কবে ছাতা ব্যবহার করেছিলাম মনে করতে পারছিনা। এমনকি বাড়ি ফেরার পথে যখন ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি আসতো, আমি তখন রিক্সার হুড ফেলে দিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করতাম।
আমার বাবা টেনশনে ব্লাড প্রেসার বাড়িয়ে ফেলতেন।
"বৃষ্টিতে ভিজলে মাথা ব্যথা করবে। জ্বর আসবে। নিউমোনিয়া হবে। মাথা মুছ! ভাল করে মাথা মুছ!"
সেই বয়সে আমার নিজেকে ওয়াটার রেজিস্ট্যান্ট মনে হতো। বাংলার জেলে-মাঝিদের মতন বৃষ্টি বাদলায় আমার শরীরে কোন রোগ বালাই বাসা বাঁধতে পারতো না। তবু পিতার মন রক্ষা করতেই অনিচ্ছা সত্বেও মাথায় তোয়ালে ঘসতাম। এবং তারপরেও তাঁর আতংকের সমাপ্তি ঘটতো না।
"কী দরকার শুধু শুধু বৃষ্টিতে ভেজার? শহরের বৃষ্টি মানে জানো? এসিড রেইন! চামড়ায় পড়লে চামড়া ঝলসে যায়।"
আমার মায়ের আতংক ছিল আরেকটু বেশি।
"খবরদার! বৃষ্টিতে বাইরে হাঁটাহাঁটি করবেনা। মাথায় বাজ পরলেই কিন্তু সব শেষ!"
মাকে কয়েকবার বলেছিলাম যে সাধারনত উঁচু স্থানে বাজ পরে, এবং রাস্তায় আমার আশেপাশে যেহেতু অনেক উঁচু উঁচু বাড়িঘর, ল্যাম্প পোস্ট এবং গাছপালা থাকে, সেহেতু আমার মাথায় বাজ পরার সম্ভাবনা কম।
তবু মায়ের আতংক দূর হয়না।
এখন নিজে বাবা হয়েছি, নিজে বুঝি সন্তান অসুস্থ হলে কেমন লাগে।
আমার ছেলেটা গত কয়েকদিন ধরে অসুস্থ। সর্দি হয়েছে, সেই সাথে কাশি। নিয়ে গেলাম ডাক্তারের কাছে, মহিলা নানান পরীক্ষা করে বললেন, "আতংকিত হবার কিছু নেই। এইসব অতি সাধারণ ব্যপার। তাঁর লাংস পরিষ্কার আছে, এই সর্দি আপনাতেই সেরে যাবে। যদি জ্বর আসে, বা শ্বাসকষ্ট হয়, তখন আমাদের কাছে এসো।"
অ্যামেরিকায় থাকার একটা যন্ত্রণা হচ্ছে, এখানে একবার ঠান্ডা লেগে গেলে কয়েক সপ্তাহেও সারে না। ওষুধ খেতে হয়। এত ছোট বাচ্চার জন্য কোন ওষুধ নেই। ডাক্তার বলেছেন, "সময় লাগবে, কিন্তু আপনাতেই সারবে। চিন্তার কিছু নেই।"
কিন্তু পিতার মন কী এত সহজে মানে?
মাঝরাতে বাবুর একটু উহ আহ শব্দেই লাফ দিয়ে উঠি। ঘুমন্ত মুখে চুমু খাই। পৃথিবীতে সব যন্ত্রণা সহ্য করা যায়, সন্তানের কষ্ট নয়। এখন বুঝি কেন আমার বাবা প্রতিদিন আল্লাহর কাছে এই দোয়া করতেন যে, "আমার ছেলেমেয়েকে যে রোগ দিবে, সেটা তুমি আগে আমাকে দিও।"
আমি জানি আমার বাবা একজন অসাধারন বাবা ছিলেন। আমি এও জানি, পৃথিবীতে সব বাবাই অসাধারন হয়ে থাকেন।
কাজেই, একটা বাবা যখন তাঁর সন্তানকে ফোন করে পান না, এবং তাঁর সন্ধানে তাঁর অফিসে গিয়ে দেখেন অফিস তালাবন্ধ, এবং তারপর মহা আতংকিত মন নিয়ে লোকজনের সাহায্যে অফিসের দরজা ভেঙ্গে ছেলের রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার করেন - হয়তো তখন সেই পিতা মনে মনে বলেন, "হে ঈশ্বর! যদি এটি দুঃস্বপ্ন হয়ে থাকে তবে তুমি আমার উপর করুনা কর! আমার ঘুম ভাঙ্গাও!"
তাঁর ঘুম ভাঙ্গেনা। দুঃস্বপ্ন দীর্ঘায়িত হয়। তাঁকে ফোনে বলতে হয়, "কারা যেন আমার ছেলেকে মেরে ফেলেছে। পুলিশ লাশ নিয়ে গেছে।"
তাঁকে এও বলতে হয়, "আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই না। তাঁর খুনিদের শুভবুদ্ধির উদয় ঘটুক, তাতেই চলবে।"
একজন খুনি যদি বুঝতে পারতো কোপ মারা object টাও আসলে তার মতই একজন মানুষ! তারও বাড়ি ফেরার প্রতিক্ষায় কেউ একজন না খেয়ে বসে থাকে। তারও সামান্য সর্দি কাশি হলে তার বাবা মায়ের রাতের ঘুম হারাম হয়। এবং তারও কাঁধে পৃথিবীর লালনকর্তা এক বা একাধিক শিশুকে পালন করে মানুষের মতন মানুষ করার দায়িত্ব দিয়েছেন! একজন মানুষকে মেরে ফেলা মানে একই সাথে তাঁর বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদেরও হত্যা করা - একজন মানুষের হত্যা মানে মহা পরিকল্পনাকারীর পরিকল্পনায় সরাসরি হস্তক্ষেপ! ওরা যদি কেবল একবার বুঝতে পারত!
নিজের কেউ না মরলে কেউ বুঝে না কাছের মানুষ হারানোর যন্ত্রণা কেমন হতে পারে!

মন্তব্য ৫ টি রেটিং +৫/-০

মন্তব্য (৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:০১

মাঘের নীল আকাশ বলেছেন: আবার সেই বাবাকেই যদি রাষ্ট্রের কাছ থেকে শুনতে হয়, "হ্ত্যাকারীরা তাঁর মতাদর্শের লোক, তাই তিনি বিচার চান না..."

আমি ধ্বংস চাই, ধ্বংস! এমন বাংলাদশের ধ্বংস চাই!!

২| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:১২

কলাবাগান১ বলেছেন: @মাঘের নীল আকাশ,

আপনারা একজনের মুখের কথা নিয়ে ই পড়ে আছেন...... কিন্তু একজন মানুষ কে চাপাতি দিয়ে নৃশংস ভাবে খুন করা হল, সেটা কে বড় করে না দেখে কোন বেকুব কি বলল সেটা কে নিয়েই তোলপাড় করছেন...

অবশ্য আপনাদের উদ্দেশ্য কি সেটা কয়েকবার ই বলেছি... ঘোলা জলে মাছ শিকার

৩| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সকাল ৯:৫২

আহলান বলেছেন: আমার মনে হয় এই হত্যার রিফ্লেক্টটা নতুন ও ব্যতিক্রম নয়। তবে এটা মিডিয়াতে আসাতে লোক জনের চোখে পড়ছে বেশী। আশে পাশে অনেক ধরনের অন্যায়ের স্বিকার হতে দেখেছি অনেককেই। কিন্তু তারা প্রকৃত পক্ষে অন্যায়ের বিচার দাবী করেন না। কারণ বিচার দাবী করলে আরো ঝামেলা বাড়বে ছাড়া কমবে না ... দুষ্টের দমন আর শিষ্টের পালন বলতে যা বুঝায়, তার উদাহরণ সমাজ থেকে দিন দিন উঠে যাচ্ছে ....

৪| ০৩ রা নভেম্বর, ২০১৫ সন্ধ্যা ৬:৩১

গিয়াস উদ্দিন লিটন বলেছেন: একজন মানুষকে মেরে ফেলা মানে একই সাথে তাঁর বাবা-মা, ভাই-বোন, স্ত্রী-সন্তানদেরও হত্যা করা - একজন মানুষের হত্যা মানে মহা পরিকল্পনাকারীর পরিকল্পনায় সরাসরি হস্তক্ষেপ!

চমৎকার দর্শন !!

৫| ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১২:০৯

আমিনুর রহমান বলেছেন:



স্যারের মতো বলা ছাড়া আসলে আর কি করারও নেই আমাদের আসলে কোন সাধারণ মানুষেরই নেই। বিচার চেয়েই কি হবে অহেতুক হয়রানি ছাড়া আর কিছুই হবে না, এক সন্তানের বিচার চাইতে গিয়ে দেখা যাবে অন্য সন্তানদের বা কাছের মানুষদের বিপদে ফেলা আরো। তাই "শুভ বুদ্ধির উদয় ঘটুক" বলা ছাড়া আর কিই করতে পারি আমরা।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.