নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইসলামি তরিকায় শিক্ষককে শাস্তি

১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:২২

আমি উইকেন্ডে ইন্টারনেট ব্যবহার করিনা। ফেসবুক, দেশীয় পত্রিকা, ইউটিউব-নেটফ্লিক্স - কিচ্ছু না। ঐ সময়টা আমার পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত। আমার ছেলে আমার কোলে খেলে - এই আমার জন্য যথেষ্ট বিনোদন। পৃথিবীতে আমার আর কিছুর দরকার নেই।
মাঝে মাঝে ইনবক্সের কিছু ম্যাসেজ দেখি - তাও খুব বেশি জরুরী না হলে উত্তর পর্যন্ত দেইনা। সোমবার পর্যন্ত অপেক্ষা করি।
তা উইকেন্ডে আমার এক ছোট ভাই আমাকে ইনবক্সে একটা খবর জানালো।
খবরটা পড়েই মনটা তিতা হয়ে গেল। এখনও তিতকুটে ভাব যায়নি।
নারায়নগঞ্জে সাংসদের উপস্থিতিতে শিক্ষককে কানে ধরে উঠবস করানো হয়েছে। অভিযোগ, একজন "হিন্দু" হয়ে ধর্মকে নিয়ে কটুক্তি করেছে। যদিও শ্রদ্ধেয় শিক্ষক বরাবরই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। এবং আমি শিক্ষককে বিশ্বাস করি। কারন ব্যপারটা খুবই স্বাভাবিক। এইটা ফ্যাক্ট যে আবহমান কাল থেকেই আমাদের বঙ্গভূমিতে একদল আহাম্মকের বাস। এই কারনেই "পন্ডশ্রম" বা "কান নিয়েছে চিলে" কবিতাটি বঙ্গদেশেরই একজন কবির রচনা। এই দেশের লোকেদের একটা ভাল কাজের জন্য ডাকুন, কারও নড়নচরন টের পাবেন না। অথচ আজাইরা মিথ্যা একটা গুজব ছড়িয়ে দিন, তাহলেই দেখবেন বীর বাঙালি কিভাবে ঝাপিয়ে পরে। এবং গুজবটি যদি ধর্ম অবমাননার হয়, তাহলেতো কথাই নেই।
পিচগলা গরমে পাঁচ টাকা ভাড়া বেশি চাওয়ায় রিক্সাওয়ালাকে বেদম প্রহার করা "মানবতার পুজারী" ব্লগে ধর্মের গুষ্ঠী উদ্ধারে ঝাপিয়ে পরেন।
আবার একই সাথে শুক্রবারের জুম্মা, এবং রমযান মাসের তারাবির প্রথম আট রাকাত ছাড়া নামাজেই না দাঁড়ানো বাঙালি ধর্ম রক্ষার কাজে অন্যের সম্পত্তি ভাংচুর করে, অন্যের ঘাড়ে কোপাকুপি করে, সবই "অন্যের" উপর দিয়েই চালিয়ে যায়।
এখানেও "হয়তো" শ্রদ্ধেয় শিক্ষকের সাথে কোন এক জানোয়ারের ব্যক্তিগত আক্রোশ ছিল, তারই শোধ নিতে একটি গুজব ছড়িয়ে সে এই কান্ড ঘটিয়েছে।
শিক্ষক যেহেতু "হিন্দু" কাজেই পেট্রল আগে থেকেই তৈরীই ছিল - কেবল দেয়াশলাই জ্বালাতে হয়েছে আরকি।
এতক্ষণ আমি বেনিফিট অফ ডাউট দিলাম শিক্ষককে। তাঁকে নির্দোষ ধরেই সবকিছু বললাম। কিন্তু যদি তিনি দোষী হন? যদি তিনি আসলেই ধর্মকে অবমাননা করে থাকেন - তাহলে?
তারপরেও তাঁকে কানে ধরে উঠবসের অনুমতি আপনাকে দেয়া হয়নি। রেফারেন্স লাগবে? আবারও নবীজির (সঃ) জীবনী।
ইসলামের একদম শুরুতে মুসলিম সাহাবীরা নানান ধরনের অত্যাচারের শিকার হয়েছিলেন। ফিজিকাল অত্যাচার যেমন ছিল, তেমনি ছিল মানসিক অত্যাচার।
"সন্তান ইসলাম ত্যাগ করে পৌত্তলিকতায় ফেরত না আসা পর্যন্ত মা কিছু মুখে তুলবেন না" - এমন ধর্মসংকটেও এক সাহাবীকে পরতে হয়েছিল।
সেই সাহাবী পরম বিরক্ত হয়ে মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার করলেন। নবীজি (সঃ) সেই কথা শোনার পর কী বললেন?
"যদি তোমাদের মা বাবা ইসলামের বিরুদ্ধে কিছু করতে বলেন সেটা করো না - তবে কোন অবস্থাতেই মা বাবার সাথে দুর্ব্যবহার করো না।"
আল্লাহ সেটা কুরআনে রিকনফার্ম করলেন, "তাঁদের প্রতি 'উফ' শব্দটি পর্যন্ত উচ্চারন করোনা।"
মানে মা বাবার প্রতি ভুরু কুঁচকে সামান্য বিরক্তি প্রকাশ করার পর্যন্ত অধিকার নেই। মা বাপকে গালাগালি, বেয়াদবি কিংবা বৃদ্ধাশ্রমে ফেলে আসাতো বহু দূর কি বাত!
"ইয়া রাসুলাল্লাহ (সঃ)! যদি আমাদের মা বাবা আপনার এবং আল্লাহর নামে কটুক্তি করে, তারপরেও?"
নবীজি (সঃ) বললেন, "যদি তোমাদের মা বাবা আমার এবং আল্লাহর নামে কটুক্তি করে, তারপরেও।"
আমরা জানি পিতা মাতার পরেই শিক্ষকের স্থান। কিছুদিন আগে আমরা এক শিক্ষককে কুপিয়ে হত্যা করেছি - এখন আরেক শিক্ষককে কানে ধরে উঠবোস করিয়েছি। যিনি কিনা আবার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক! ওয়াহরে ওয়াহ বাঙালি! আমাদের দিয়েই হপে!
"শিক্ষার গুরুত্ব" নিয়ে আরেকটি ঘটনা।
বদর যুদ্ধের সময়ে যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে দুইজন মুশরিককে পাওয়া গিয়েছিল যারা লিখতে ও পড়তে জানতেন। নবীজি (সঃ) তাঁদের বললেন, "তোমরা একেকজন আমাদের দশটি করে শিশুকে লেখাপড়া শিখিয়ে দাও, কোন মুক্তিপণ ছাড়াই তোমাদের মুক্তি দেয়া হবে।"
উল্লেখ্য, প্রতিটা যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিপণ ছিল তখনকার দিনেই কয়েক হাজার রৌপ্য মুদ্রা, বর্তমান বাজারে মিলিয়ন ডলারের বেশি। মাত্র দশটি শিশুর অ, আ, ক, খ পড়তে ও লিখতে পারার মূল্য নবীজির (সঃ) কাছে সেই মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এবং তারচেয়েও বড় কথা, সেইসব শিশুদের "শিক্ষকদের" সম্মানের সহিত মুক্তি দান - যদিও এরাই মাত্র কয়েকদিন আগে তলোয়ার হাতে তাঁর বিরুদ্ধেই লড়েছিলেন।
আমরা কী করি? সাংসদের উপস্থিতিতে শিক্ষককে কানে ধরে উঠবোস করাই। মোবাইল ফোনে ভিডিও রেকর্ড করি। মাঝে মাঝে "জয় বাংলা" স্লোগান দেই!
আজকাল "জয় বাংলা" বললেই সব হালাল হয়ে যায়। সেই সাথে "ধর্মের নামে কটুক্তি করেছে" বললেতো কথাই নেই।
আমরা বারবার ভুলে যাই, আমাদের প্রতিটা কর্মের দ্বারাই আমাদের নবীজি (সঃ) এবং আল্লাহর সাথে মানুষ পরিচিত হয়।
একটি ধবধবে সাদা কাপড় কেউ লক্ষ্য করেনা, কিন্তু সেই কাপড়ে ছোট একটা কালো দাগ সবার নজরে পরে।
কাউকে এমনটা বলতে শুনবেন না "ওরা নিজের সম্পত্তির আড়াই ভাগ দান করে দেয়? ওরা ক্ষুধার্তের মুখে খাবার তুলে দেয়া নিশ্চিত করে? ওরা কারও উপকার করে প্রতিদান আশা করেনা? কারা ওরা? মুসলিম? বাহ চমৎকার!"
বরং এইটা খুবই কমন, "ওরা শিক্ষককে হত্যা করে? কিংবা কানে ধরিয়ে উঠবোস করায়? তাঁদের নেতা কে? কার নির্দেশ তাঁরা মেনে চলে? মোহাম্মদ? আল্লাহ? ও আচ্ছা! তাহলেতো অবাক হবার কিছু নেই!"
- এই হচ্ছে বর্তমান দৃশ্যপট।
তারপরেও বেকুব আহাম্মকের দল একই ভুল বারবার করতে থাকে। বারবার।
এবং "ভুল" যদি একাধিকবার করা হয়, সেটা আর ভুল থাকেনা, "অপরাধ" হয়ে যায়।

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:৪০

আমি রাজপথের সৈনিক বলেছেন: আসলে ঘটনা কতটুকু সত্য তা জানি না। তবে শিক্ষকের এহেন শাস্তি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না।

২| ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ৯:৪৬

চিত্রনাট্য বলেছেন: আমার কাছে তো পুরোটাই অন্যরকম লেগেছে।
একজন লিখলো, মাইকে প্রচারের পর জনসাধারণ মারছিলো। তখন জনসাধারণের রোষ কমানোর জন্য সাংসদ এই কাজ করছে।
শিক্ষা আর শিক্ষকের আদৌ কোন মূল্য আছে। পদাধিকার বলে অশিক্ষিত চেয়ারম্যান ও স্যার হয়ে যায়, সব ফার্স্ট ক্লাসের অধিকারীরাও স্যার স্যার বলতে থাকে। সেখানে আর কিইবা করার আছে। এর মধ্যে আরো কত কিছু হয়ে গেলো। একজন শিক্ষক কর্তৃক আরেকজন শিক্ষিকা ধর্ষিতা হইছে। তখন তো কেউ কিছু বললো না।

৩| ১৬ ই মে, ২০১৬ রাত ১০:২৯

সোজোন বাদিয়া বলেছেন: সাংসদ নিশ্চয়ই জনপ্রিয়তার জন্যই এই কাজ করেছেন। সেক্ষেত্রে আমাদের জনগণের অর্থাৎ সাধারণ মুসলিমদের মনমানসিকতাও দায় এড়াতে পারে না। দেড় হাজার বছর ধরে শিক্ষা দিয়েও ইসলামের উপরোক্ত বাণীর ছিটেফোটাও কেন মুসলিম সমাজের বৈশিষ্ট্য হতে পারলো না? সমস্যাটা কোথায়?

৪| ১৭ ই মে, ২০১৬ বিকাল ৩:২৮

শামছুল ইসলাম বলেছেন: শিক্ষার গুরুত্ব নষ্ট হয়ে যাচ্ছেঃ

"শিক্ষার গুরুত্ব" নিয়ে আরেকটি ঘটনা।
বদর যুদ্ধের সময়ে যুদ্ধবন্দিদের মধ্যে দুইজন মুশরিককে পাওয়া গিয়েছিল যারা লিখতে ও পড়তে জানতেন। নবীজি (সঃ) তাঁদের বললেন, "তোমরা একেকজন আমাদের দশটি করে শিশুকে লেখাপড়া শিখিয়ে দাও, কোন মুক্তিপণ ছাড়াই তোমাদের মুক্তি দেয়া হবে।"
উল্লেখ্য, প্রতিটা যুদ্ধবন্দীদের মুক্তিপণ ছিল তখনকার দিনেই কয়েক হাজার রৌপ্য মুদ্রা, বর্তমান বাজারে মিলিয়ন ডলারের বেশি। মাত্র দশটি শিশুর অ, আ, ক, খ পড়তে ও লিখতে পারার মূল্য নবীজির (সঃ) কাছে সেই মিলিয়ন ডলারেরও বেশি। এবং তারচেয়েও বড় কথা, সেইসব শিশুদের "শিক্ষকদের" সম্মানের সহিত মুক্তি দান - যদিও এরাই মাত্র কয়েকদিন আগে তলোয়ার হাতে তাঁর বিরুদ্ধেই লড়েছিলেন।


ভাল থাকুন। সবসময়্

৫| ১৭ ই মে, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৯

মায়াবী রূপকথা বলেছেন: পুরোপুরি সহমত। অনেক খারাপ লেগেছে এসব জেনে

৬| ১৮ ই মে, ২০১৬ দুপুর ১২:৪৪

বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: আপনার লেখার পয়েন্ট অব ভিউ পুরোটাই সঠিক।

কিন্তু আপনি কি জানেন শিক্ষকরা তাদের সেই সম্মানীথ স্থান থেকে নিজ দায়িত্ব কতনীচে নেমে গেছে????

লৌভ, টিউশনি, নিজের ব্যাচে পড়া, বাদ দিলেও সহিষ্ণুতা. ধৈর্য মানবিকতা প্রায় শূণ্যের কোঠায়! যেই উন্নত দেশের উপমা উদাহরন আমরা দেই.. সেখানে একজন পিতা-মাতাও সন্তানকে মারেন না! আর এখানে শিক্ষক শুধূ মারেনই না . জান্তব রোষে পেটান.. এই তথ্যের জণ্য ইউকি ঘাটতে হবেনা- পত্রিকার পাতাই যথেষ্ট!

আমি কি তার অপমানের খুশি? সাফাই গাইছি না?

বলছি প্রত্যেকেই নিজ দায়িত্বে পূর্ন থাকলে সমস্যাই হয় না। ধর্ম কটুক্তি ইস্যু হিসাবে হট! বাদ দিলেও আমি ভরা ক্লাশে একটা ধর্মের অনুসারীকে বাজে বলার মধ্যে কি বাহাদুরি বা জ্ঞান আচৈ বলতে পারেন। প্রতিক্রিয়ার প্রতিক্রিয়ায় আমরা অনেক কিছূই বলছি। ক্রিয়াটা যেন না ঘটে তার জন্যে সচেতনতাটাও কি সামাজিক জ্ঞানেই কাম্য নয়?

ধর্মের কারণেই এটা নিয়ে খেলা জমেচে কথাটা বলতে হতো না যদি বুয়েঠে জয়বাংলার হাতে প্রহৃত শিক্ষকের জন্য একই সম্মানবোধ উথলে উঠত। অথচ তা অগোচরেই রয়ে গেছে! শুধূ বুয়েটইবা কেন কত শত প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের সোনা'র ছেলেদের হাতে শিক্ষ প্রহৃত তার লিখতে গেলে আরেক ইউকি হয়ে যাবে! অথচ সব ক্ষেত্রেই লক্ষনীয় নিরবতাই এই ইস্যুতে সরব হোয়াকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। করে নাকি?

শিক্ষকের মর্যাদা কবিতা পড়ে বড় হওয়া.. বাদশাহ আলমগীরের ছেলেকে শিক্ষকের পা ধূইয়ে না দেয়ায় ভৎর্সনা করা এখন হারিয়ে গেছে। বোধের পরিবর্তন, ক্ষমতার অপচর্চা, সংস্কৃতির অসুস্থতা চেতনাকে বদলে দিচ্ছে! সাথে রাজনীতিতর স্বার্থের হাওয়া তাকে আরও কলুষিত করছে। শিক্ষকরাও ন্যায় আর সত্য বাদ দিয়ে ক্ষমতা আর অর্থের পূজা করতে গিয়ে মৌলিক চেতনাকে বিসর্জন দিয়ে লাল, ণীল গ্রুপে ভাগ হয়ে নিজেদেরই ছোট করেছেন! যার মাশুল আজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রাইমারী স্কুল পর্যন্ত দিতে হচ্ছে।
জাতিগত ভাবে পুরো ক্ষতিটাই আমাদেরই হচ্ছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.