নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

তরুণ! মোগজধোলাইর শিকার হবার আগে একটু পড়ে নাও।

২৯ শে জুলাই, ২০১৬ রাত ২:৩৭

ইয়ামেন থেকে এক যুবক মদিনায় এসে রাসূলুল্লাহর (সঃ) সামনে এসে দাঁড়িয়ে বেশ বিনয়ী স্বরে বলল, "ইয়া আল্লাহর দূত! আপনি আমাকে আপনার খেদমত করার সুযোগ দিন। আমি আপনার সেবায় জীবন কাটাতে চাই। আপনি যদি বলেন জিহাদে প্রাণ দিতে, আমি প্রাণ দিতেও প্রস্তুত। আমার মা বাবা আমাকে এখানে আসতে দিচ্ছিলেন না, খুব কাঁদছিলেন, কিন্তু আমি তাঁদের কোন বাঁধা মানিনি। আমি আল্লাহর রাস্তায়, রাসূলের রাস্তায় প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত!"
জ্বি, ঘটনা সেই চৌদ্দশো বছর আগে ঘটলেও এখনও একই দৃশ্য দৃশ্যায়িত হয়। বিস্ময়কর তাই না? জ্বি না, মোটেও না। আল্লাহ জানেন এই দৃশ্য আজ থেকে চৌদ্দ হাজার বছর পরেও (যদি পৃথিবী টিকে) দৃশ্যায়িত হবে। একারনেই কুরআন হাদিস অপরিবর্তনশীল। কারন তখনতো আর নবীজি থাকবেন না সরাসরি জবাব দিতে।
তা যাই হোক - আমরা মূল ঘটনায় ফেরত যাই।
আল্লাহর নবীর তখনও লোকবলের অভাব। যুদ্ধক্ষেত্রে একেকটা সিপাহী একেকটা কোহিনূর হীরা। তারপরেও নবীজির কী জবাব ছিল জানেন?
"হে তরুণ! তুমি সত্যিই আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে চাও? তবে ফিরে যাও তোমার পিতামাতার কাছে। এবং তাঁদের মুখে সেভাবেই হাসি ফুটাও যেভাবে তুমি তাঁদের কাঁদিয়ে এসেছো। মনে রেখো - পিতামাতার সন্তুষ্টিতেই আল্লাহর সন্তুষ্টি। এবং পিতামাতার অসন্তুষ্টিতেই আল্লাহর অসন্তুষ্টি।"
মুসলিম শরীফের হাদিস। সহীহ, কোন সন্দেহ নেই। কেন বললাম নিশ্চই বুঝতে পারছেন। তারপরেও ব্যাখ্যা করি খানিকটা।
জিহাদি জোশে যোশিত হয়ে একদল তরুণ বিপথে ছুটে যাচ্ছে। পঙ্গপালের মতন আগুনে ঝাঁপিয়ে পড়ছে। অথচ এদের কারোর হবার কথা ছিল পরবর্তী সাকিব আল হাসান, কারোর খোলার কথা ছিল সালমান খানের (বলিউড নায়ক সাল্লু মিয়া না, আমাদের বাংলার গর্ব সালমান খান) মতন খান একাডেমি, কেউ বা হতো জাওয়াদ করিমের মতন ইউটিউবের জনক। আর যারা কিছুই হতে পারতো না, তাঁরা হতো আমাদের মতন সাধারণ মানুষ। স্ত্রী পুত্র কন্যা বন্ধু বান্ধব ও আত্মীয় স্বজন নিয়ে একটি সুখের জীবন।
ভয়ঙ্কর সত্য হচ্ছে, এইসব ছেলেদের যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, "উপরে উল্লেখ করা হাদিস সম্পর্কে তোমার কী মত?"
সে প্রশ্নকর্তাকে উল্টা "কাফির" "মুনাফেক" ইত্যাদি গালি দিয়ে ব্রাশ ফায়ার করে বুকটা ঝাঁঝরা করে দিয়ে বলবে, "আমাকে জিহাদ শিখাতে আসছিল!"
যারা গুলশানে পুলিশের গুলিতে মরেছে - আমার কোন সহানুভূতি নেই তাদের প্রতি। জাহাজবাড়িতেও পুলিশের গুলিতে যেসব কীট মরেছে - তাদের নিয়েও কোন মাথাব্যথা নেই। শরীরে ফোড়া উঠলে চিকিৎসা করে সারানো যায়। সেটা টিউমার হয়ে গেলে অবশ্যই কেটে ফেলে দিতে হয়। নাহলে ক্যান্সার হয়ে উল্টা নিজেরই মৃত্যুর কারন হবে।
যারা ইনিয়ে বিনিয়ে নানান কথা বলছেন, তাদের জিজ্ঞাসা - কী হতো যদি গুলশান ট্রাজেডির মতন আরেকটা ট্রাজেডি হতো? উত্তর হচ্ছে, এই আপনারাই তখন উল্টো পুলিশ এবং সরকারের দোষ ধরে ইনাতেন এবং বিনাতেন।
হে তরুণ - তোমরা যারা নির্বোধের মতন এইসব জঙ্গি কর্মকান্ডকে সমর্থন করছো - দেখে নাও, ওদের লাশ নিতে ওদের মা বাবা পর্যন্ত অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। এরচেয়ে বড় অভিশাপ আর কী হতে পারে?
তোমার যদি আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতেই আগ্রহ থাকে, তবে দয়া করে কুরআন শরীফ, যেটা সেলফে সাজিয়ে রাখ, সেটা একটু খুলে সূরা ইসরাহ বের করে একটু পড়।
কুরআন নিয়ে এই এক অদ্ভুত কান্ড আমরা করে থাকি। বাইরে বিপদের আশংকা থাকলে আমরা কুরআন চুমু খেয়ে বাইরে বেরুই। ব্রো - সুদীর্ঘ তেইশ বছর ধাপে ধাপে কুরআন এই কারনে নাজিল হয় নাই যাতে তুমি মলাট বন্ধ অবস্থায় তাঁকে চুমা দিয়েই দায় সারতে পারো। এর ভিতরের ব্যাপারটাই মুখ্য - তোমার চুমা না পেলেও তাঁর চলবে।
তো যা বলছিলাম, সূরা ইসরাহ বা বনি ইসরাইলের তেইশ নম্বর আয়াতটা পড়।
"তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং পিতা-মাতার সাথে সদ্ব-ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদেরকে ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদেরকে ধমক দিও না এবং বল তাদেরকে শিষ্ঠাচারপূর্ণ কথা।"
কী মনে হচ্ছে? খুবই সাধারণ একটা নির্দেশনামা। আল্লাহ ছাড়া কারোর ইবাদত করোনা - বাবা মায়ের সেবা করো। ইত্যাদি।
এইবার একটু গভীরে চিন্তা করে দেখো - পুরো কুরআন শরীফে কোথাও কী আল্লাহ নিজের ইবাদতের সাথে সমান গুরুত্ব দিয়ে আর কোন কিছুর তুলনা করেছেন? আমি জানি তোমার পুরো কুরআন পড়ার সময় নেই। আইসিসির ভিডিও দেখেই তোমার সময় বের করা কঠিন। তা উত্তর হচ্ছে, "না।" আল্লাহ নিজের সাথে আর কারো নাম জড়ানো পছন্দ করেননা। স্বয়ং রাসূলুল্লাহকে (সঃ) পর্যন্ত তিনি বলেছেন, তিনি তাঁর দাস ও দূত।
কিন্তু এই আয়াতে আল্লাহ নিজের ইবাদতের সাথে "এবং" এর সাহায্যে মা বাবার সেবাকে যুক্ত করে দিয়েছেন। ব্যাপারটা কতখানি গুরুত্বপূর্ণ সেটা বুঝতে পারছো? আল্লাহ এবং রাসূলের পরেই যে পিতামাতার স্থান - এইটা সরাসরি কুরআন দ্বারা প্রতিষ্ঠিত। আর তোমরা সেই মা বাবাদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে, পালিয়ে গিয়ে সাধারণ মানুষ হত্যা করে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের চেষ্টা করছো? নিজেকে কতটুকু বুদ্ধিহীন প্রমান করছো - সেটা বুঝতে পারছো?
আরেকটা তথ্য - যা তোমাদের ব্রেনওয়াশার গুরুরা জানাবে না - তারা নিজেরাও জানে কিনা সন্দেহ - তা হচ্ছে, সূরা ইসরাহ সেই আদি মাক্কী সূরা, মানে যখন নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত ইত্যাদি কোন নিয়মই নাজেল হয়নাই, তখনই আল্লাহ বলে দিয়েছেন পিতামাতার সেবা করো - এবং তাঁদের প্রতি বিরক্তিসূচক "উঃ" শব্দটিও উচ্চারণ করো না। সেখানে তোমরা তাঁদের মনে কষ্ট দিয়ে জিহাদ করে আল্লাহর সন্তুষ্টির আশা করো?
আবারও বলছি - একটা সন্তানকে মা বাবা নানান কষ্টের মধ্য দিয়ে বড় করে থাকেন। তাঁরাই জানেন প্রতিদিন কত রকমের ত্যাগের মধ্য দিয়ে তাঁদের যেতে হয়। বিনিময়ে তোমার দায়িত্ব তাঁদের প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে তাঁদের পাশে থাকা।
আমার তের মাস বয়সী ছেলে সূর্য ওঠার আগে চুমু দিয়ে (সে নতুন চুমু দেয়া শিখেছে) আমার ঘুম ভাঙ্গায়। পৃথিবীতে এরচেয়ে বড় সুখানুভূতি এইমুহূর্তে আমার জানা নেই। আমি নিশ্চিত প্রতিটা বাবা মায়েরও নিজের সন্তানদের নিয়ে একই অনুভূতি হয়। এবং সন্তানদের প্রধান দায়িত্ব হওয়া উচিত তাঁরা বেঁচে থাকতে কখনই যেন কোন সন্তানের মৃত মুখ তাঁদের দেখতে না হয়, সেটা নিশ্চিত করা। আমি সাঁতার জানিনা, আমি তাই গভীর পানিতে নামিনা। কেন? কারন আমি আমার ভাইয়ের চেয়েও আপন বন্ধু ইকবালের মৃত্যুতে তাঁর মা বাবাকে কাঁদতে দেখেছি।
নিজের সন্তানের জানাজার চেয়ে ভারী বস্তু পৃথিবীতে আর কোন কিছু নেই। আর সেই সন্তানের লাশই নিতে অস্বীকার করা পিতামাতার বুকে কী হাহাকার চলছে সেটা কারোর পক্ষেই কল্পনা করা সম্ভব নয়।
কাজেই, আল্লাহর দোহাই - তোমার যদি বেহেস্তে যাওয়ারই ইচ্ছা হয়, সবার আগে নিজের বাপ মায়ের সেবা করো। কারন নবীজি (সঃ) বলেছেন, বেহেস্তে যাওয়ার সবচেয়ে সহজতম উপায় হচ্ছে পিতামাতার সেবা করা।
কোন কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে সেই বিষয়ে পড়াশোনা করো। নিজের মগজ জ্ঞানে জ্ঞানে ভরে তুলো। রাস্তা থেকে যে কেউ এসে ঝাড়ু দিয়ে তোমার মগজ ঝোলাই করে যেতে পারে - নিজের মগজকে এত ঠুনকো রাখা কতটা যৌক্তিক তুমিই বলো?

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.