নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
"সাম্রাজ্যবাদী" অ্যামেরিকার অনেক বদনাম শুনতে পাবেন বাংলাদেশে বা তৃতীয় বিশ্বে থাকলে। ওদের প্যানপ্যানানির মূল বক্তব্য হচ্ছে, অ্যামেরিকা গরিবের রক্ত পান করে হাজমোলা ছাড়াই হজম করে ফেলে। বিশ্বের যত মানুষ গরিব - সবার জন্য এককভাবে এই দেশটা দায়ী।
এইটা ফ্যাক্ট যে এই দেশের শীর্ষ ১% বিত্তশালীরা দেশটির ৮০% অর্থ নিয়ন্ত্রণ করে। মাথা নষ্ট করে দেয়ার মতন তথ্য। মানুষ এত ধনী হয় কিভাবে? বিশেষ করে সেই দেশে যেখানে এখনও রাস্তায় বেরুলে অনেক গৃহহীন জনগণ দেখতে পাওয়া যায়। এবং অতি অবাক করা বিষয় হচ্ছে আমার দেখা প্রায় সব গৃহহীন মানুষই অ্যামেরিকান সিটিজেন। হয় কালো - নয় সাদা, কোন স্প্যানিশ/মেক্সিকান বা ইন্ডিয়ান কাউকে আমি কখনও কাগজের বোর্ড হাতে পথের ধারে বসে থাকতে দেখিনি।
গতর খাটানো কামলাও এদেশে খুঁজে পাওয়া যায়। বেশির ভাগই মেক্সিকান। ইল্যিগাল ইমিগ্র্যান্ট। অমানুষিক পরিশ্রম করে ক্যাশে টাকা কমায়। খুব বেশি আয় কিন্তু নয়। তারপরেও গতর খাটায়। ভিক্ষা করেনা।
চাকরির ক্ষেত্রে কেউ ম্যানেজার হলে নিজের দলে অ্যামেরিকানদের চাইতে অভিবাসীদেরই বেশি পছন্দ করে। কারন - অ্যামেরিকানগুলি মুডি হয়, বেপরোয়া হয় - মুখের উপর চাকরি ছেড়ে দিতে দ্বিধা করেনা। অভিবাসীগুলি মাটি কামড়ে হলেও চাকরি ধরে থাকে।
এই বিষয়েও উদাহরণ দেই।
ধরুন আপনি কোন রেস্টুরেন্টে ম্যানেজার। উইকেন্ডে আপনার রেস্টুরেন্টে প্রচুর ভিড় হয়। সব কর্মচারী ছাড়াও আপনাকেও মাঝে মাঝে ফিল্ডে নেমে যেতে হয় এমন অবস্থা। এই সময়ে যদি কোন কর্মচারী কাজে না আসে, তাহলে বুঝতেই পারছেন কত ঝামেলায় পড়তে হয়।
এবং চোখ বন্ধ করে বলতে পারি এমন সময়ে বেপরোয়াভাবে কাজে অনুপস্থিত কর্মচারীটি হবে একজন অ্যামেরিকান। কারন তাঁর নিজের বাড়িতেও পরিবারের সাথে কিংবা বন্ধুবান্ধবের সাথে বাইরে কোথাও পার্টির আয়োজন করা হয়েছে। একদম লাস্ট মিনিট প্ল্যান ছিল, তাই আগে থেকে জানানো সম্ভব হয়নি।
ম্যানেজার যদি বলে, "তোমাকে বহিঃষ্কার করা হবে।"
তাহলে বলে, "ওকে। আই ডোন্ট কেয়ার।"
ইমিগ্র্যান্টরা এই যন্ত্রনা দেয় না।
তাই কর্মহীন বেকার অ্যামেরিকানগুলি বলে "ইমিগ্র্যান্টরা আমার চাকরি নিয়ে গেল!"
ডোনাল্ড ট্রাম্প এই সুবিধা নিয়েই প্রেসিডেন্ট হয়ে গেল। মুখের সামনে মূলা ঝুলালো - "ইমিগ্র্যান্টদের বিদায় করে তোমাদের চাকরি দেয়া হবে।"
লাস ভেগাসের কোটি কোটি টাকার হোটেল/ক্যাসিনোগুলোর বাইরে অ্যামেরিকান ফকিরের ভিড়। বনানী গোরস্তানের কথা মনে পরে যায়। ঠান্ডায় আমরা কাঁপছি - ওরা এক দুই পয়সা ভিক্ষা করছে সামান্য লাঞ্চ/ডিনারের জন্য। আপনি টাকা দিলে ওরা প্রথমেই যাবে জুয়া খেলতে। এই আশায়, যদি এক ডলার এক মিলিয়ন হিসেবে ফেরত আসে!
এবং কিছুক্ষনের মধ্যেই তাদের আবার দেখা যায় রাস্তায় নেমে ভিক্ষা করতে। নিজের গাড়ি বাড়ির মতন আপনার দেয়া টাকাটাও সে জুয়ায় হারিয়ে ফেলেছে।
অ্যামেরিকানদের মধ্যে যারা শিক্ষিত, যারা পরিশ্রমী, তাঁরা কিন্তু প্রত্যেকেই উদাহরণ দেয়ার মতোই আদর্শ। ওদের ডিসিপ্লিন, পাংচুয়ালিটি, প্রফেশনালিজম দেখে চোখ কপাল ফুঁড়ে উপর দিয়ে উঠে যায়। তাঁরা কিন্তু বেহুদা প্যানপ্যানানি করেনা।
অকর্মগুলি এরপর প্রয়াত নেতা কাস্ত্রো সাহেবের ফিলোসফি কপচানো শুরু করে। রবিনহুডের গুনগান গায়। ধনীর পকেট কেটে গরিবের ব্যাংকে ঢালো। রক্তচোষা "ধনীদের" উচিৎ শিক্ষা দাও।
অতি জটিল থিওরিতে যাব না। নিজের অভিজ্ঞতা বলবো - যাতে সহজে বুঝতে পারেন।
আমি যখন এই দেশে আসি, আমার বাবা আমাকে ৫০০ ডলার ধরিয়ে দিয়ে গিয়েছিলেন। বাংলাদেশের হিসেবে অনেক টাকা, অ্যামেরিকার হিসেবে কিছুই না।
আমার ফুপাতো ভাইয়ের বাড়িতে ছিলাম, চাকরি করলাম, ছয়মাসের মধ্যেই নিজের গাড়ি কিনে এপার্টমেন্ট ভাড়া করে আলাদা হয়ে গেলাম। কঠিন সময় গিয়েছে খুব। রিটেইল শপে চাকরি করে পড়াশোনা চালানো সহজ বিষয় না।
তা একটু আধটু পরিশ্রমতো করতেই হবে। পড়াশোনা শেষে চাকরি শুরু করলাম। এখন মাশাল্লাহ নিজের বাড়িতেও উঠে পড়েছি।
শুরু করেছিলাম পাঁচশো টাকা পকেটে নিয়ে। খুব বেশিদিন আগের ঘটনা কিন্তু নয়। দশ বছরও হয়নি। আমি আপাতত যা পেয়েছি তাতে ভীষণ খুশি। আমার পরে এসে অনেকেই আরও অনেক উপরে উঠে গেছেন। আবার আমার আগে এসেও অনেকে কিছুই করতে পারেন নাই। আমি মাঝামাঝি আছি - এতেই আমি ধন্য।
মজার বিষয় হচ্ছে, যারা কিছুই করতে পারেনাই - তারাই সাম্রাজ্যবাদী অ্যামেরিকার দোষ খুঁজে বেড়ায়। সব দোষ ধনীদের, সব দোষ তার কোম্পানির ম্যানেজারের, তার বসের। সে এত পরিশ্রম করে - তাও তার অভাব দূর হয়না। আজকে সে এশিয়ান বলেই, আজকে সে মুসলিম বলেই, আজকে সে এইটা ঐটা সেইটা বলেই বঞ্চনার শিকার হয়েছে।
তা আমারও যে সব অভাব দূর হয়ে গেছে তা কিন্তু নয়। আয়ের সাথে খরচও বেড়েছে এক্সপোনেনশাল হারে। মাথানষ্ট হয়ে যায় খরচের রিসিট দেখলে। কিন্তু সেই খরচ মেটাতেই পরিশ্রম করতে হচ্ছে। অন্যের উপর দোষ দিয়ে বসে থাকার সময়টা পাচ্ছিনা।
কিন্তু লজিক্যালি পথে বসে ভিক্ষা করার কথা ছিল কার? সম্পূর্ণ নতুন দেশে, পৃথিবীর অন্যপ্রান্ত থেকে মাত্র পাঁচশো টাকা পকেটে নিয়ে যে ছেলেটা এদেশে এসেছিল তাঁর। যে ফাজিল এদেশে জন্মেছে - তারতো অবশ্যই নয়।
তা এঘটনা থেকে কী শিখলাম?
Loser (বাংলায় বললে বলবো "ফাতরা") পোলাপানের মতন অন্যের উপর দোষ না দিয়ে নিজে পরিশ্রম করুন, তাহলে জীবনে কিছু একটা করতে পারবেন। নাহলে আপনার মাথায় কাঁঠাল ভেঙে অন্যে খাবে - আপনি বেকুবের মতন সেটা হতে দিবেন।
©somewhere in net ltd.