নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

একদিন না একদিন আপনার ছেলেমেয়ে প্রধানমন্ত্রী হবে - নাহয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে বসে নাস্তা খাবে। চ্যালেঞ্জ!

১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৩১

আমার বস সেদিন একটা পোস্ট দিল ফেসবুকে। নিউইয়র্কে ঐতিহ্যবাহী এক ফাইভ স্টার হোটেলে তাঁর সব পুরানো বান্ধবীরা গেট টুগেদার করছে। তাঁর ফেসবুক পোস্টটি ছিল, "একটা সময়ে আমরা পকেট হাতড়ে খুচরা পয়সা একত্র করেছি গাড়ির তেলের খরচের জন্য - আজকে সেই বন্ধু সার্কেলের কেউ ফিজিসিস্ট, কেউ ল'ইয়ার, কেউবা ডাক্তার।"
আমার বস নিজে আমাদের ডিপার্টমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট।
চিরদিন সবার সমান যায়না। সুসময়ে অতীতের দুঃসহ ঘটনাগুলো বড্ড সুখের অনুভূতি জাগায়।
আমার দাদা ছিলেন সরকারি কর্মকর্তা। কাস্টমস সুপার, ডিপার্টমেন্ট - নার্কোডিক্স। এই চাকরি পেলে যেকোন আদম সন্তান আল্লাহর কাছে কেবল একটা অভিযোগই করে, কেন তিনি তাঁকে মাত্র দুইটা হাত দিয়ে পৃথিবীতে পাঠিয়েছেন। ঘুষ গ্রহণ করার জন্য এ হাত সংখ্যা যে বড্ড কম!
আমার দাদা উল্টা দাঁতে দাঁত চেপে জীবন কাটিয়ে দিলেন, একটা ঘুষের পয়সা গ্রহণ করেননি। তাঁর একটাই কথা, "ঘুষ নেব কার জন্য? নিজের বাচ্চাদের জন্য? আমি মরলে পরে তাঁরাতো আমাকে সাপ বিচ্ছুর খাবার হবার জন্য কবরে শুইয়ে দিয়ে আসবে, আমি এঞ্জয় করবোটা কী?"
কথা প্রসঙ্গে হজরত আলীকে (রাঃ) টেনে আনা যাক।
খলিফা আলী (রাঃ) একবার তাঁর সহচরদের নিয়ে কবরস্থানের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। নিজের সঙ্গীসাথীদের শোনানোর জন্য তিনি কবরগুলোর উদ্দেশ্যে বললেন, "তোমাদের স্ত্রীরা এখন অন্য লোকের স্ত্রী, তোমাদের সন্তানরা তোমাদের ফেলে যাওয়া সম্পদ নিয়ে মারামারি করছে, তোমাদের জায়গা জমি টাকা পয়সা জামা কাপড় সব এখন অন্যের ভোগ্য পণ্য - হে কবরবাসী মানুষ, তোমরা কেমন আছো?"
কত সহজে কত কঠিন শিক্ষা শিখিয়ে দিলেন। I love this man! রাদ্বিআল্লাহ আনহু!
তা আমার বাবা যখন ছোট, একবার দাদাকে জিজ্ঞেস করেই বসলেন, "তোমার জুনিয়র অফিসারদের নিজেদের বাড়ি, নিজেদের গাড়ি আছে, ওদের বাড়িতে বেড়াতে গেলে কত মজার মজার নাস্তা খেতে দেয়া হয়। আমাদের বাড়িতে আমরা বেলা বিস্কিট (চিটাগংয়ের লোকমাত্রই চেনেন কোন বিস্কিটের কথা বলছি) এবং খুব বেশি হলে সুজির হালুয়া দেয়া হয়। কেন?"
দাদা বললেন, "তুমি ওদের বাড়ি, গাড়ি আর নাস্তা দেখে আফসোস করো, অথচ ওদের অশান্তির দিকে নজর দিলে ওদের জন্য করুণা করতে।"
দেখা যেত প্রায় সব কর্মকর্তারই হয় ছেলে ড্র্যাগ অ্যাডিক্ট, নাহয় মেয়ে পাগল, নাহয় স্ত্রীর পরকীয়া আছে, নাহয় কিছু না কিছু সমস্যা আছেই। আমরাই বরং ভাল, ডাল ভাত খেয়ে দিব্বি ভাল আছি।
হুমায়ূন আহমেদের গল্প শোনাই? সবাই জানেন, তবু বসের কথা মনে পড়ে গেল।
তাঁর পিতা ছিলেন একজন পুলিশ কর্মকর্তা, এবং তারচেয়ে বড় কথা, একজন সৎ ব্যক্তি। তাঁদের প্রতিবেলা ভাতের সাথে খাবারের মেনু ছিল নিমপাতা বড়া। তাঁদের বাড়ির পাশের বিরাট নিম গাছের সব পাতা তাঁরা তেলে ভেজে খেয়ে বড় হয়েছেন। ফল কী? এক ভাই হুমায়ূন আহমেদ, কেমিস্ট্রিতে পিএইচডি; আরেক ভাই জাফর ইকবাল, ফিজিক্সে পিএইচডি; আরেক ভাই উন্মাদ!
সৎ উপার্জন কখনও বৃথা যায় না। ছেলে মেয়েরা বুঝতে পারে টাকার মূল্য কী, ছেলে মেয়েরা শিখে বাবা মা কতটা গভীর জল সাঁতরে পাড়ি দিয়ে তাঁদের মানুষ করেছেন। এর মূল্য তাঁদের দিতেই হবে। মানুষের মতন মানুষ হয়ে দেখাতেই হবে। জেদ কামড়ে ধরে তাঁরা মানুষ হবার চেষ্টা করে।
উল্টোদিকে আমরা দেখি মন্ত্রীর টিনেজ ভাতিজা মদের বোতলের ছবি ফেসবুকে আপলোড দিয়ে মাতাল অবস্থায় গাড়ি চালাতে গিয়ে মানুষ হত্যা করে। দুর্নীতিবাজ কোটিপতি ব্যবসায়ীর ড্রাগ অ্যাডিক্ট ছেলে নেশার ঘোরে মেয়ে উঠিয়ে নিয়ে এসে ধর্ষণ করে খুন করে লাশ গুম করে ফেলেছে।
অপরাধ কেবল উচ্চবিত্ত পরিবারের ছেলেরাই ঘটায় না। নিম্নবিত্তের পরিবারেও এমন ঘটনা ঘটে। বাপ খাটতে খাটতে কোমরের হাড্ডি বাঁকিয়ে ফেলেছেন, ছেলে শর্টকাটে ধনী হওয়ার মানসিকতায় এমন কিছু একটা করেছে, যার পরিণতি কেবল ধ্বংসই। একটু এদিক ওদিক নজর ফেরান, কোটি কোটি উদাহরণ পাবেন।
সমাধান কী ভাই?
সমাধান হচ্ছে, ছেলে-মেয়েদের সাথে বেশি বেশি করে সময় কাটান। আপনি যদি ওদের না বুঝান যে আপনি ওদের মানুষ করার জন্য কতটা ত্যাগ স্বীকার করছেন, আমি লিখে দিতে পারি ওরা সেটা বুঝতে পারবে না। চূড়ান্ত হারামি সন্তান হলে উল্টো আপনাকেই দোষারোপ করে বলবে, আপনি ওদের জন্য কিছুই করেননি।
ওদের বোঝান সৎ উপার্জনের মূল্য কী! ওদের বুঝান টাকা পয়সার চেয়েও মানুষ হওয়াটাই জীবনের সবচেয়ে বড় সাফল্য।
যখন তাঁরা বুঝতে শুরু করবে ওদের মানুষ হওয়াটাই আপনার নিজের জীবনের মূল্য - তখন স্বয়ং ইবলিশ এসেও ওদের অমানুষ বানাতে পারবেনা। চ্যালেঞ্জ!
তামুর হাসান ভাইয়ের (আমার ফেসবুক গ্রুপ ক্যানভাসের সদস্য) জীবনের একটা ঘটনা এই লেখা লিখতে বাধ্য করলো। এক ঈদে তাঁদের হাতে বাবার পাঠানো টাকা সময় মতন এসে পৌঁছেনি বলে তাঁর মা নিজের শাড়ি কেটে সারারাত বসে সেলাই করে তাঁদের নতুন শার্ট বানিয়ে দিয়েছিলেন। আজকে তিনি দামি পোশাকে প্রেসিডেন্ট প্রধানমন্ত্রীর সাথে বসে ঈদের নাস্তা করেন।
আপনিও চান আপনার ছেলে-মেয়ে ভবিষ্যতে এইরকম সফল হোক?
তাহলে ছেলেমেয়েদের সুখের দোহাই দিয়ে অযথা সাধারণ মানুষের কলিজা কেটে টাকা কামানো বন্ধ করুন। ছেলেমেয়েদের শেখান, যা আছে, তাই নিয়ে কিভাবে সুখী হতে হয়। এইটা নেই কেন, ওটা নেই কেন করে করে আফসোস করলে ডিপ্রেশনই বাড়বে কেবল, সুখ আসবেনা মনে। ছেলেমেয়েদের শেখান, পৃথিবীতে ইজি মানি বলে কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। যদি সফল হতে চাও, পরিশ্রম করো। পড়ালেখা করো, খেলাধুলা করো, নিজের ভিতরে যদি কয়লাচাপা কোন প্রতিভার সন্ধান পাও, সেটাকে ঘষে ঘষে হীরা বানিয়ে ফেল। একদিন না একদিন তুমি, নাহয় তোমার ছেলেমেয়ে প্রধানমন্ত্রী হবে - নাহয় প্রধানমন্ত্রীর সাথে বসে নাস্তা খাবে। চ্যালেঞ্জ!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.