নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
প্রেম বিষয়টা অনেক মিষ্টি। একে বুঝেশুনে ব্যবহার করলে মুখে মধু লেগেই থাকে। অপব্যবহারে ডায়েবেটিস হতে বাধ্য।
ওয়েস্টার্ন দেশে থাকি। ওয়েস্টার্ন প্রেমের একটি উদাহরণ দিয়েই না হয় কিছু কথা বলি।
অ্যামেরিকার কর্পোরেট ওয়ার্ল্ডের বেশিরভাগ সুন্দরী মেয়ের (বেশিরভাগ বললাম যাতে কেউ "সব" মেয়ে বলে মনে না করে, ব্যতিক্রমও পাওয়া যায়) সাথে প্রেম করার প্রথম শর্ত হচ্ছে দামি উপহার প্রদান। লুই ভিটনের পার্স, টিফানির রিং, প্রাডার জুতা না হলে আশা করাও ঠিক না এই মেয়ে নিজের মনে কাউকে স্থান দিবে।
স্বাভাবিকভাবেই ভ্যালেন্টাইন্স ডেতে ওদের শর্ত হচ্ছে তাঁর অফিসে যেন ফুল পাঠানো হয়। তাও ক্রোগার/টম থাম্ব জাতীয় রিটেইল থেকে পাঠালে হবেনা। ব্র্যান্ড নেম এখানে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ালমার্ট বা টার্গেট থেকে পাঠালেতো ব্রেকাপই হয়ে যাবে। অফিসের লোকজন কী মনে করবে? এত ফকিরা বয়ফ্রেন্ডের সাথে প্রেম করছে!
দামি রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ অথবা ডিনারে নিয়ে যেতে হবে। মেয়ে ফিগার কশাস, সালাডের বেশি বলতে গেলে কিছুই খায়না। ছেলেও নিজের শরীর ফিট রাখার জন্য বেছে বেছে খায়। তবুও ডাউনটাউনের কোন ফ্যান্সি রেস্টুরেন্টে খেতে হবে। যেখানে বেশি টাকায় কম খাবার পাওয়া যায়। ফেসবুকে ছবি তুলবে, চেকইন দিবে। সবাই দেখুক তাঁদের মধ্যে কত প্রেম!
গ্র্যান্ড ক্যানিয়নে হেলিকপ্টার রাইড, লাস ভেগাসে হুলুস্থুল উইকেন্ড যাপন, ফ্লোরিডায় ফাইভস্টার ক্রুজ ভ্যাকেশন ইত্যাদি নিশ্চয়তা না দিলে বিয়ের প্রশ্নই উঠেনা।
তারপর সব ঠিকঠাক হলে বিয়ে হলে হবে। কিন্তু ধরিত্রী মাতা সূর্যদেবের চারদিকে এক চক্কর দেবার আগেই দেখা যায় সব প্রেম খতম হো গায়া। নতুন বছরে নতুন মানুষের কাছ থেকে নতুন নতুন দামি উপহার প্রাপ্তি দিয়ে পালিত হয় ভালবাসা দিবস।
এমনিতে এইসব ব্যাপার নিয়ে লিখতে ভাল লাগেনা। যার যার দেশের যার যার কালচার। আমার কী? তবে ট্রেন্ডটা বাংলাদেশে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে বলেই রীতিমত আতংকিত হয়ে লিখতে বসলাম।
এই ট্রেন্ডের সবচেয়ে বড় সমস্যাটা কী জানেন? আপনার মনে তখন দামি উপহারটাই টপ প্রায়োরিটি পাবে। সঙ্গী/সঙ্গিনীর মন জয়ের স্থান সে তালিকার অনেক নিচের দিকে থাকে। যে ছেলে তাঁর সঙ্গিনীকে এত দামি উপহার দিচ্ছে, তাঁরতো কিছু বাড়তি চাহিদা থাকবেই। সেখানেও মেয়েটির "মন থেকে ভালবাসা" অনেক নিচের প্রায়োরিটি।
এরাও অতি সহজভাবেই মেনে নেয়। আঠারো বছর বিবাহিত জীবন যাপনের পরেও এক মহিলাকে চিনি যে কেবল একটি আপেল এবং এক কাপ পিনাট বাটার দিয়ে লাঞ্চ করে। কারন এর বেশি খেলে তাঁর শরীরে মেদ জমবে, তাঁর স্বামী তাহলে তাঁকে আর ভালবাসবে না।
আমাদের মা খালাদের দেখেন। জীবনেও এইসব নিয়ে তাঁদের ভাবতে হয়নি। কারন আমাদের বাপ খালুদের ভালবাসার লিস্টে টপ প্রায়োরিটিতে তাঁরাই আছেন। তাঁরা তাঁদের এই হুমকি দিয়ে সংসার করেননি যে বছরের একটি বিশেষ দিনে লুই ভিটনের ব্যাগ না হলে তিনি অন্য ব্যাটার হাত ধরে চলে যাবেন।
ভাবতেই পারেন, আমি দামি উপহার দিচ্ছি, ও যাতে খুশি হয়।
খুবই ভুল স্ট্র্যাটেজি। ওর খুশি হবার কথা আপনার সাহচর্যে। থাইল্যান্ড থেকে ইম্পোর্ট করা দামি গোলাপ উপহার দিলেন, নাকি চলতে চলতে ঘাস থেকে ছিড়ে একটি ফুল তুলে দিয়ে রোমান্টিক কোন কবিতার দুইটি চরণ বললেন, সেটা ম্যাটার করার কথা পরে। চিরকাল কারোর সমান যায় না। দেখা যাবে আপনার দুঃসময়ে, এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সেটা অর্থ সংকটে, আপনাকে ছেড়ে যাওয়া মানুষদের মধ্যে সবার আগে থাকবে আপনার সঙ্গিনীর নাম।
এখানে স্বামীর চাকরি চলে গেলে দেখা যায় কর্মজীবী স্ত্রীটিও একদিন ছেড়ে চলে যায়। কয়দিন একটি বেকার অকর্মা লোককে বসে বসে খাওয়ানো যায়?
আবার মেয়ের বাবার অর্থ সম্পদের বিশাল পাহাড় দেখে কোন ছেলে বিয়ে করলো। মেয়েটি ভাল করেই জানে কেন তাঁর জীবনে এই ছেলেটি এসেছে। একদিন সে যখন বিপদে পড়বে - মেয়েটি যদি জুতাপেটা করে তাকে ঘর থেকে তাড়িয়ে দেয় - আপনি কী দোষ দিতে পারবেন?
কিন্তু তাঁর জীবনে যদি আপনার উপস্থিতিই প্রধান হয়ে থাকে, তাহলে দেখবেন, পুরো পৃথিবীর সাথে লড়াইয়ের সময়ে আপনার পাশে আপনার সঙ্গীটিই থেকে যাচ্ছে।
উদাহরণ আমি নিজে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বার সময়ে প্রেম করেছি। টিউশনির অল্প টাকায় ফুটানি দেখানো সম্ভব ছিল না। পিতার কলিজা কাটিয়া প্রেমিকার সন্তুষ্টি অর্জনের আরাধনা আমার জীবনেও ছিল না। আমরা গল্প করতে করতে অনেকটা পথ হেঁটেছি। লোকাল বাসে বাদুড় ঝুলা হয়ে শহর ঘুরেছি। সারাটাক্ষন আমার লক্ষ্য কেবল এটাই ছিল যে ও যেন উপলব্ধি করতে পারে, আমি ছাড়া সে পূর্ণতা পাবেনা। আমার সাথে কাটানোর জন্য একটি জীবনও বড্ড কম সময়।
ফল পেয়েছি যখন আমাদের বিয়ে নিয়ে জটিলতা দেখা দিল। ও একাই লড়ে ওর পরিবারকে রাজি করালো।
বিয়ের পরেও ঝামেলা কম হয়নি। অর্থ সঙ্কট ছিল প্রধান সমস্যা। আমার নতুন চাকরি। বেতন খুবই কম। ওকেও কাজ করতে হয়েছে - যাকে আমরা বলি অড জব। গাড়ি ছিল একটাই। সেটা আমি নিয়ে যেতাম অফিসে। তিনঘন্টা সময় লাগিয়ে একটার পর একটা বাসে চেপে ওকে কাজে যেতে হয়েছে। গাড়িতে যেটা ছিল সামান্য কুড়ি মিনিটের পথ। কাজ শেষে আরও ঘন্টাখানেক অপেক্ষা করেছে যাতে আমি কাজ শেষে তাঁকে গাড়িতে করে নিয়ে আসতে পারি। এখন প্রায় সব বাঙালি নারীদের মতন প্রায়ই তাঁকে বলতে শোনা যায় - তোমার সাথে বিয়ে করেই আমার জীবন বরবাদ হয়ে গেছে। কিন্তু আমি কোন বিপদে পড়লে, কিংবা অসুস্থ হলে সবার আগে এগিয়ে আসে সেই।
প্রেম করুন, এটি অতি স্বাভাবিক মানবীয় গুন। মানুষ হয়ে জন্মালে মানুষের প্রতি অনুরাগ জন্মাবেই। কিন্তু সেটা যেন মানুষটার প্রতিই থাকে। তাঁর ওয়ালেটের ওজন মেপে যখন প্রেম করতে নামবেন, সেটা নিজেকে অতি সস্তায় বিক্রি করা ছাড়া আর কিছুই না। নিজের মূল্য নিজের কাছেই বৃদ্ধি করুন। এমন কাউকেই ভালবাসতে শিখুন, যে টাকা দিয়ে আপনাকে কিনতে চায়না, বরং প্রাণ উজাড় করে ভালবাসে। তাহলেই দেখবেন প্রিয়জনের সাথে ফুটপাথের পাশে দাঁড়িয়ে ফুচকা খাওয়ার আনন্দটাও আপনি কোন ফাইভস্টার ডিনারের বিনিময়ে লেনদেন করতে চাইবেন না।
২| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সকাল ১১:০০
সাঈদ মোহাম্মদ ফাহিম আবরার বলেছেন: অসাধারণ লেখনী আপনার। কিভাবে যে ধন্যবাদটা ব্যাক্ত করব বুঝতে পারছি না।
৩| ১৯ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১:২৫
মুহিব আকন্দ বলেছেন: সত্যি ভাললেগেছে। এ সুস্থ্ চিন্তার জন্য আমি আপনাকে ভালবাসলাম।
৪| ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:৩৩
শ্যাডো ডেভিল বলেছেন: "এমন কাউকেই ভালবাসতে শিখুন, যে টাকা দিয়ে আপনাকে কিনতে চায়না, বরং প্রাণ উজাড় করে ভালবাসে।" -একথাটা নাহয় আমি বুঝলাম, কিন্ত যাকে এরকম ভালোবাসা দিতে চাই, সেকি বুঝবে?? বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই 'না'। আর সবার জন্যই আপনার সব কিছু উজাড় করে ভালোবাসা দিতেও মন চাইবে না, অর্থাৎ আপনি সেই 'ভাইব'টা ফিল করবেন না। তাহলে উপায় ??
বাট আপনার চিন্তাধারা সঠিক, এভাবে আজকাল অনেকেই ভাবে না।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ রাত ১২:৪২
কল্পদ্রুম বলেছেন: ভালো লাগলো সুন্দর চিন্তার লেখা পড়ে।ভালোবাসা যদি উপহারের দামের উপর ভিত্তি করে বিচার করা হয় তাহলে আর যাই হোক ভালোবাসা নয়।