নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

ক্যান্সার অতি বদ রোগ, একে ডিলিট করতে হলে গোটা মানবজাতিকেই এক হতে হবে।

১৩ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১১:১৭

ফেসবুকে দুইদিন পরপর “হেল্প পোস্ট” আসে, “অমুক রোগীর ব্লাড ক্যান্সার, চিকিৎসার জন্য এত লক্ষ টাকা প্রয়োজন। অনুগ্রহ করে দশ টাকা নিয়ে হলেও এগিয়ে আসুন।”
টাকার পরিমান নিতান্তই কম না, পঞ্চাশ লাখের উপরে এবং কোটি টাকার কাছাকাছি। চিকিৎসা বিদেশে হবে, চিকিৎসা ছাড়াও আছে যাতায়াত, থাকা খাওয়া ইত্যাদির খরচ।
এত টাকা নগদ কেউ হাতে রাখে না। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের কাছে হাত পাততে হয়। তারপরেও এত বিপুল পরিমান টাকা সহজে উঠে আসেনা। অনেকেই দিতে চান না। নানা অজুহাত খোঁজেন।
“এত টাকা লাগবে কেন? দেশে চিকিৎসা করছে না কেন? রোগী যে আসল, এর প্রমান কি? নিশ্চয়তা কি যে টাকা মেরে দিবে না?”
সব জেরা শেষে এক পয়সাও দিবে না। উল্টো অন্যকেও নিরুৎসাহিত করবে। অদ্ভুত মানসিকতার মানুষ (!) আমরা।
তা যাই হোক, ব্লাড ক্যান্সারের চিকিৎসা এখন অতি সহজ হয়ে গেছে, ব্যয়ও কমে গেছে, এবং সফলভাবে মানুষের প্রাণও রক্ষা হচ্ছে। শর্ত একটাই, স্টেম সেলস ডোনারের প্রোফাইল ম্যাচ করতে হবে। যা একভাবে চিন্তা করলে অতি সহজ, আবার অন্যদিকে এটিই সবচেয়ে জটিল।
শত শত কোটি মানুষ আছেন পৃথিবীতে। সহজেই ম্যাচ খুঁজে পাবার কথা। কিন্তু সমস্যা এখানেই, সবার প্রোফাইল ডাটাবেসে নেই। মানুষজন জানেই না এইসব ডাটাবেস সম্পর্কে, এবং বিশ্বের বেশিরভাগ দেশে ডাটাবেসই নাই। তাই হয়তো যে মানুষটিকে আপনি খুঁজছেন, সে হয়তো আপনার পাড়াতেই থাকেন, অথচ আপনি জানেন না।
ঘটনা একটু ভেঙে বলি।
বহু বছর আগে একবার জুম্মার নামাজের খুৎবায় ইমাম বললেন একজন ছয়মাস বয়সী শিশুর ব্লাড ক্যান্সার হয়েছে, বোনম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্ট করতে হবে। ডিএনএ প্রোফাইল ম্যাচ করতে হবে। আমরা যেন নিজেদের স্যাম্পল জমা দেই। ম্যাচ করলে ওরাই যোগাযোগ করবে। নিশ্চয়ই পুরস্কার আল্লাহ দিবেন।
আমার তখন নিজেরই একটা ছোট বাচ্চা আছে। আমার বোন ম্যারো দিয়ে যদি কোন বাপ মায়ের সন্তান ফিরে আসে, অমন হাজারটা বোন ম্যারো কোরবান!
দিলাম স্যাম্পল এবং বরাবরের মতই এইবারও আমার লটারি ভাগ্য খারাপ। মিলল না। মন খারাপ হলো। তবে আলহামদুলিল্লাহ, শিশুটির জন্য ম্যাচ ঠিকই খুঁজে পাওয়া গেল।
এর কয়েক বছর পরে আমার ফোনে রিং বেজে উঠলো। অন্য এক রোগীর সাথে আমার প্রোফাইল ম্যাচ করেছে। আমি আগ্রহী কিনা।
আমি বিশ্বাস করি কেয়ামতের দিন আমাকে আমার রবের সামনে দাঁড়াতে হবে। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করবেন এত দীর্ঘকাল পৃথিবীতে থেকে আমি উনার জন্য কি করেছি। আমি তখন বলতে চাই, তাঁর সৃষ্ট এক মানুষের জীবন রক্ষায় অবদান রাখতে পেরেছি। এই কাজের বিনিময়ে আমি তাঁর কাছে সেদিন পুরস্কার দাবি করবো।
এই সুযোগ হারাতে চাইলাম না। রাজি হয়ে গেলাম।
ধারণা ছিল হাড্ডি কেটে বা সিরিঞ্জ দিয়ে হাড্ডির ভিতর থেকে বোনম্যারো নিবে। জানলাম চিকিৎসাবিজ্ঞান আরও বহু যুগ এগিয়ে গেছে। “রক্তদানের" মতন আমার শরীর থেকে রক্ত নিবে, স্টেমসেলস রেখে দিয়ে আমারই রক্ত আমার শরীরে ফেরত পাঠাবে। চার পাঁচ ঘন্টা সময় লাগবে। এই দীর্ঘ সময় আমি সিনেমা দেখতে পারবো, বই পড়তে পারবো ইত্যাদি।
লং স্টোরি শর্ট, আমার স্টেম সেলসে কাজ হলো। ভদ্রমহিলা বেঁচে উঠলেন। তাঁর আত্মীয়রা অবাক হয়ে দেখলো চাইনিজ বৃদ্ধা মহিলার মাথায় নতুন চুল যা গজালো সেটা কোঁকড়া এবং ঘন।
গত গ্রীষ্মে নিউইয়র্ক ভ্রমনে আমার অন্যতম লক্ষ্য ছিল আমার নতুন চাইনিজ পরিবারটির সাথে দেখা করা। বৃদ্ধা খুব করে চাইছিলেন দেখা করতে। ফ্লাইট মিস করায় আমার আর বোস্টন যাওয়া হলো না। ইন শা আল্লাহ, বেঁচে থাকলে হবে কোন একদিন।
তবে যে কারনে আবারও ঘটনাটি লিখলাম, তা হচ্ছে, আমাদের দেশে DKMS বা Be the match এর মত কিছু সংস্থা কি গড়ে তোলা সম্ভব না? খুব বেশি পয়সা লাগবে না। মানুষজন তাঁদের dna স্যাম্পল জমা দিবেন, তাঁদের ডাটাবেসে সব প্রোফাইল সংরক্ষিত থাকবে। মানুষের দানের টাকায় আধুনিক ক্যান্সার গবেষনা ইনস্টিটিউট খুলে ফেলার কল্পনার চাইতে এই প্রকল্প অনেক কম খরুচে এবং বাস্তব সম্মত। দেশে ইতিমধ্যেই ভাল চিকিৎসক আছেন, যতদূর জানি ক্যান্সার গবেষণাও দেশে হচ্ছে। যদি নাও হয়, উন্নত বিশ্বে ঠিকই হচ্ছে, এবং নতুন কিছু আবিষ্কার হওয়া মাত্রই যা আমাদের দেশে এপ্লাই করা সহজ ও সম্ভব। আপনিই আমাকে বলেন, একটা মেমোরিয়াল স্লোয়ান ক্যাটারিং পর্যায়ের ইনস্টিটিউট দেশে খুলতে কি বিপুল পরিমান টাকার প্রয়োজন সেটা জানেন? হুদাই কোটি টাকা ব্যয়ে আরেকটি আধা কাচরা ইনস্টিটিউট না করে বরং dkms বা be the match এর মতন প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা, বা ওদের কোন শাখা দেশে খোলা কি সহজ আর ফলপ্রসূ না?
সহজে বুঝতে চাইলে, আমার পাড়ায় একজন মিষ্টির দোকান খুলল, আমি বুদ্ধিমান ও ভালমানুষ হলে একটা গোয়াল ঘর দিব, এবং নিশ্চিত করবো আমারই গোয়ালের দুধ কিনে ও মিষ্টি বানাবে। আরও বুদ্ধিমান হলে ওর মিষ্টিকে ন্যাশনাল লেভেলে ডিস্ট্রিবিউট করার ব্যবস্থা নিব। দুইজনই তাহলে উপকৃত হবো। পাড়ার লোকেরও উপকার হবে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলের মানুষও আমাদের মিষ্টি খাবে।
সেটা না করে আমি করবো কি ওরই দোকানের পাশে আরেকটা মিষ্টির দোকান দিব। ওরই কারিগরদের ভাগায়ে আনাটাই হবে আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। ওর দোকানের নামটাও পারলে মেরে দিব। মাঝে দিয়ে না আমি নিজে উঠবো, না আগেরজনকে উঠতে দিব।
ঠিক এই কারনে আমেরিকার ম্যাকডোনাল্ডস, কেএফসি, সাবওয়ে, স্টারবাক্স দুনিয়াজুড়ে শাখা খুলে বেড়ায়, আমাদের হাজি, নান্না, শমসেররা পুরান ঢাকা থেকেই বের হতে পারেনা।

ক্যান্সার অতি বদ রোগ, একে ডিলিট করতে হলে গোটা মানবজাতিকেই এক হতে হবে।
ছবিতে আমার “চাইনিজ মা।” যার শরীরে আমার রক্ত বইছে। :)

মন্তব্য ১ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৬

সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: ছবি কই? আপনার লেখা শুনে আমারও এই ভাবে দান করতে ইচ্ছা করছে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.