নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

হারানো যোগসূত্র - একটি সত্য ঘটনা

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ভোর ৪:৫৩

ছেলেটার নাম মোহাম্মদ, পেশায় একজন আমেরিকান কমেডিয়ান। স্ট্যান্ডআপ কমেডি করে, টুকটাক অভিনয়ও করে।
আদি নিবাস ফিলিস্তিন, যদিও ওর জন্ম সেদেশে হয়নি।
ইজরায়েলীরা ওদের বাস্তুচ্যুত করে দেশছাড়া করেছে। ওর বাবা মা কুয়েতে গিয়ে নতুনভাবে জীবন শুরু করে। কুয়েতেই ওর জন্ম।
মুসলিম দেশে নিজেরা ভালই গুছিয়ে নিচ্ছিল। এরপরে সাদ্দাম হোসেন মাত্র এক রাতের ব্যবধানে আবারও ওদের গৃহহীন করে। ঘরবাড়ি সব ছেড়ে ওদের আবারও নিরুদ্দেশের পথে যাত্রা শুরু করতে হয়।
জ্বি ভাই, ক্ষমতা, টাকা, সম্পত্তি এমনই লোভ যা কোন ধর্ম, কোন সম্পর্ক মানে না। ভাই ভাইয়ের গলায় ছুরি চালাতে দ্বিতীয়বার চিন্তা করেনা।

ওর পরিবার এসে আশ্রয় নেয় আমেরিকায়, টেক্সাসের হিউস্টনে, আবারও শূন্য থেকে শুরু হয় ওদের জীবনের লড়াই। এইবার প্রতিকূলতা আরও বেশি। ভিন্ন সমাজ, ভিন্ন সংস্কৃতি, ভিন্ন ভাষার একটি দেশ।
একদিন বাবা মারা যায়।
বয়স বেশি ছিল না।
কিন্তু ক্রমাগত সংগ্রামের এত ধকল নিতে পারেনি বেচারার শরীর। হৃদপিন্ড একদিন বলে বসলো, "I quit!"
বেচারা বলারও সুযোগ পায়নি, "এখনই হার মানলে কিভাবে চলবে? আমার ছোট ছোট ছেলে মেয়ে আছে, ওদের বড় করতে হবে। আমাদের এখনও কাগজপত্র হয়নি, বৈধভাবে কাজ করার অধিকার আমাদের বাচ্চাদের নেই, আমি ওদের এইভাবে একা ফেলে গেলে খুবই স্বার্থপরতা হবে।"
কিন্তু মৃত্যুদূত কাউকে এক মুহূর্তও বেশি সময় দেয়না।
ছেলেটার একটা সময়ে কাগজপত্র হয়। সে আমেরিকার সিটিজেন হয়। জন্ম কুয়েতে, বেড়ে ওঠা হিউস্টনে, কিন্তু তারপরেও সে একজন ফিলিস্তিনি, রক্তে বইছে হাজার বছরের আরব ডিএনএ।

একদিন সে সিদ্ধান্ত নেয় ফিলিস্তিন বেড়াতে যাবার।
তাঁর পৈতৃক গ্রামে এখনও কিছু আত্মীয়স্বজন আছেন। খালা, চাচা মামাদের অনেকেই এখনও সেইসব ভিটেতে আছেন যেখানে একশো, দুইশ, চারশো বা তারচেয়েও বেশি বছর ধরে তাঁর পূর্বপুরুষেরা থাকতেন।
জীবনে এই প্রথম তাঁকে পেয়ে তাঁর গ্রামের আত্মীয়রা উল্লসিত হয়ে উঠে। এই খাবার, ঐ খাবার, কোন কিছুই বাকি নেই। হামুসের সাথে ফিলিস্তিনের বিশ্বখ্যাত জয়তুনি তেলে (অলিভ অয়েল) পিটা রুটি চুবিয়ে খাবার তুলনা পৃথিবীর অন্য কোন খাবারের সাথে সে করতে পারেনা।

বিকেলে গ্রাম ঘুরে দেখতে বের হয়। গ্রামের একাংশে বিশাল দেয়াল তুলে দেয়া হয়েছে। ইজরায়েলি ভূমিদস্যুরা তাঁদের উৎখাত করে করে নিজেদের দখলদারিত্ব প্রতিষ্ঠা করেছে। কেউ কিছু বলতে পারেনা। কারোর বলার সাহস নেই। শুধুমাত্র ফিলিস্তিনিরা হাউমাউ করে কাঁদে। মধ্যরাতে কুকুরের কান্নায় যেমন ঘুমন্ত গৃহস্থের কোন বিকার হয়না, ইজ্রায়েলীরা ফিলিস্তিনিদের সেই কুকুরের সম্মান দিতেও রাজি নয়। গুলি করে ওদের চুপ করিয়ে দেয়া হয়। শিশু বয়সে নিজ গৃহ থেকে অন্যায়ভাবে বিতাড়িত হয়ে গৃহহীন হয়ে জীবন কাটিয়ে দেয়া লোকের সংখ্যা হাজারে হাজার। অনেকে আজও বেঁচে আছেন। ছানিপড়া চোখে স্বপ্ন নিয়ে। একদিন তাঁদের ঘরে, নিজ উঠোনে তাঁরা ফেরত যাবেন।
দৃষ্টিশক্তির পাশাপাশি স্বপ্নও দ্রুত ফিকে হয়ে আসে।
কেউ বলেন, অলীক স্বপ্ন না দেখতে। হৃদয় ভাঙার কষ্ট থেকে তাহলে নিজেকে রক্ষা করা যাবে।
তাঁরা বলেন, স্বপ্নই যদি না দেখি, তাহলে সেটা পূরণ হবে কিভাবে?

গ্রামে ঘুরতে ঘুরতে মোহাম্মদ একটি মসজিদ দেখতে পায়।
বহু প্রাচীন সেই মসজিদের বয়স জানতে চাইলে ওর কাজিন বলে, "কয়েক শো বছর ধরে এটি আমাদের গ্রামের মসজিদ।"
মোহাম্মদ বলে, "আমি সেই মসজিদে যেতে চাই। আমি সেখানে আসরের নামাজ পড়বো।"
কাজিন বলে, "সিরিয়াসলি? কেন?"
"ওটা এত শতাব্দী ধরে দাঁড়িয়ে আছে, নিশ্চই আমার বাবা, আমার দাদা সেখানে নামাজ পড়তেন। আমাকে সেই মসজিদে যেতেই হবে।"
মোহাম্মদ কোনভাবে তাঁর পূর্বপুরুষদের সাথে যুক্ত হতে চায়। দাদার স্নেহ সে পায়নি। আল্লাহ বাবাকেও শৈশবেই নিজের কাছে ডেকে নিয়েছেন। যদি আরেকটিবার তাঁকে জড়িয়ে ধরতে পারতো! কোন উপায়ে, কোন অলৌকিক উপায়ে বাবার স্পর্শ যদি সে পেত! বাবাকে যে তাঁর অনেক জরুরি কথা বলার আছে!

তাঁরা গিয়ে মসজিদে উপস্থিত হয়। ভিতরে তেমন কেউ ছিল না। তাঁরা আসর নামাজ পড়ে। মোহাম্মদ উপলব্ধি করার চেষ্টা করে তাঁর পূর্বপুরুষদের স্পর্শ। এখানে এই মসজিদের প্রাঙ্গনে কোন এককালে তাঁর বাবা, তাঁর বাবা, তাঁরও বাবা হেঁটেছেন। কাতারে দাঁড়িয়ে নামাজ পড়েছেন, এই মাটিতেই সিজদায় মাথা ঠেকিয়েছেন। মোহাম্মদ হাত দিয়ে সেই মেঝে ছুঁয়ে দেখে।

এই সময়ে মসজিদের ভিতরের কিছু লোকজনের সাথে তাঁর কথাবার্তা হয়। একজন বলেন, "এখন মাগরেবের সময় হয়ে গেছে, তুমিই আজান দাও!"
মোহাম্মদ ঘাবড়ে যায়। বলে, "আমি কিভাবে আজান দিতে পারি? তোমরা দাও!"
ওরা বলে, "তুমি অতিথি, তুমিই দাও!"
ইসলামে মুয়াজ্জিনের সম্মান অনেক! সম্মানিত অতিথিকে আরও সম্মানিত করতে আমরা আজান দিতে বলি। মোহাম্মদ ভাবে, সে কি এর যোগ্য? এ যে বিশাল দায়িত্ব! সেকারনেই ও ঘাবড়ে যায়।
"তুমি কি আজান দিতে পারো না?"
"অবশ্যই আমি পারি। কিন্তু আমি কিভাবে দিব?"
ওরা জোর করেই ওকে মাইক ধরিয়ে দেয়। মোহাম্মদ ডেকে উঠে, "আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার!"

আজান শেষে মসজিদে এক মুরুব্বি এসে উপস্থিত হন। চেহারার গাম্ভীর্য দেখেই মন ঘাবড়ে উঠে। বোঝা যায়, এই ভদ্রলোকের জন্ম হয়েছে মানুষকে ধমক দেয়ার জন্য।
"এই আজান কে দিয়েছে?"
মোহাম্মদের ধারণা হয় সে নিশ্চই কোন ভুল করেছে। নাহলে শুধু শুধু কেন জানতে চাইবেন? সে ভেবেছিল ওর কাজিনরা ওর রক্ষায় এগিয়ে আসবে। কিন্তু ওরা সাথে সাথে ওর দিকে আঙ্গুল দেখিয়ে বলে, "ও দিয়েছে।"
মুরুব্বি এগিয়ে এসে বলে ওঠেন, "তুমি দশ মিনিট আগে আজান দিয়ে দিয়েছো। সূর্য ডুবতে এখনও দশ মিনিট বাকি।"
মোহাম্মদ বলে, "কিন্তু মসজিদের ঘড়ি যে দেখাচ্ছে এখন সময় হয়ে গেছে?"
"ওটা দশ মিনিট এগিয়ে আছে।"
মোহাম্মদ দাঁত কামড়ে মনে মনে বলে, "আগেই জানতাম, কিছু একটা গন্ডগোল পাকাবোই!"
মুরুব্বি বলে ওঠেন, "তোমাকে বিদেশী মনে হচ্ছে। কার বাড়িতে এসেছো? কে তুমি?"
মোহাম্মদ নিজের পরিচয় দেয়। নিজের পরিবারের নাম বলে। বৃদ্ধের চেহারার গাম্ভীর্য আচমকাই উজ্জ্বলতায় পাল্টে যায়। ঝলমলে স্বরে তিনি বলে ওঠেন, "কি আশ্চর্য! তুমি মুস্তফার ছেলে? মুস্তফা আর আমি খুবই ভাল বন্ধু ছিলাম। আমরা এক সাথে বড় হয়েছি।"
বৃদ্ধ যেন কয়েক মুহূর্তের জন্য নিজের শৈশবে ফিরে গিয়েছিলেন। একটি ছোট নিশ্বাস চেপে তিনি উপলব্ধি করেন, জীবন কত দ্রুত ফুরিয়ে আসে!
তিনি মোহাম্মদের মাথায় হাত বুলিয়ে দেন। একজন বাবা যেমন তাঁর ছেলেকে আদর করেন।
তারপরে কিছুক্ষন বিরতি নিয়ে তিনি বলেন, "তুমি যে একটু আগে আজান দিলে, তুমি কি জানো এই মাইক কে ফিট করেছিল?"
মোহাম্মদ থমকে যায়। তাঁর হৃদপিন্ড লাফাতে শুরু করে। চোখ নিংড়ে বেরিয়ে আসা জর্দান নদীর জল ম্যাক্সিকান উপসাগরের নোনা পানির সাথে মিলে মিশে তোলপাড় হয়ে যায়।
বৃদ্ধ বিড়বিড় করে বলে ওঠেন, "তোমার বাবা!"
টেক্সাসের উঠতি কমেডিয়ান মোহাম্মদ আমেরের পিতা মুস্তফা একজন টেলিকম ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। ইলেক্ট্রিকের কাজ বুঝতেন বলে গ্রামের মসজিদের জন্য তিনি মাইক ফিট করে দিয়েছিলেন। এরপরে তাঁকে গ্রাম ছাড়তে হয়, দেশ ছাড়তে হয়, পৃথিবীও ছাড়তে হয়। এরই বহু বছর পরে একদিন তাঁরই ছেলে এসে সেই একই মাইকে আজান দিয়ে ঘোষণা করে, "আল্লাহ মহান! আল্লাহ মহান!"

(বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে)

মন্তব্য ৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:৩৫

বিটপি বলেছেন: অবশ্যই আল্লাহ মহান। ইসরাইল দেশটা কেবল ইহুদী সম্প্রদায়ই নয়, প্রতিনিধিত্ব করছে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা মুসলিম বিদ্বেষী সমস্ত জনগোষ্ঠীর। এদের দিন একদিন ঠিকই ফুরাবে ইনশাল্লাহ। বাইতুল মুকাদ্দাসে (ডোম অফ রক) সমবেত মুসল্লীরা এক হয়ে ঘোষণা করবে "আল্লাহু আকবার"

২| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০২

রাজীব নুর বলেছেন: জাযাকাল্লাহ খাইরন।

৩| ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৪৫

অপু তানভীর বলেছেন: ইউটিউবে এক আহমেদ আমেরে কমেডি আমি মাঝে মাঝে দেখি । এইটা জন কি সেই জন?
লিংক

৪| ২০ শে ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৪৭

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: পড়ে ভাল লাগল।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.