নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

খাদ্যে ভেজাল মেশানো

১৫ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৯:৪০

চোখের দেখায় কোন পশুর হাড্ডি সেটা বলে দেয়ার অলৌকিক ক্ষমতায় বিশ্বাস করে, গুজব ছড়িয়ে কারোর ব্যবসা ও রেপুটেশনের বারোটা বাজানোর অভ্যাসের বিরুদ্ধে সেদিন লিখলাম। এখন লেখা যাক উল্টো বিষয় নিয়ে, মানে আসলেই যারা খাদ্যে ভেজাল মেশায় তাদের নিয়ে।

যেমন কিছুদিন পরপরই ভাইরাল ভিডিও দেখা যায়, অমুক জ্যুসের ফ্যাক্টরিতে দেয়ালের পেইন্ট ব্যবহার করে মানুষকে খাওয়ানো হয়। তমুক মসলার কারখানায় মরিচের সাথে ইটের গুঁড়া ভরে দেয়া হয়। অমুক তমুক ফ্যাক্টরিতে আচারের জন্য পঁচা ফল ব্যবহার করা হয়। মোটামুটি বিখ্যাত সব রেস্টুরেন্টেরই কিচেন ভয়াবহ নোংরা। মরা পশুর মাংস খাইয়ে দেয়ার অভিযোগ আজকের না, বহু বছর পুরানো। ফুচকার ফ্যাক্টরিতে অভিযান করে পাওয়া গেছে ইঁদুরের গু। আমার মনে আছে আমেরিকায় একবার এক লোক ইঁদুরের পেশাব খেয়ে মরে গিয়েছিল। গ্যারেজে রাখা কোকের ক্যানের মধ্যে ইঁদুর পেশাব করে দিয়েছিল, বাতাসে সেটা শুকিয়ে যাওয়ায় ও টের পায়নি। যখন ক্যানে চুমুক দিয়ে খায়, তখন ভাইরাস ওর শরীরে প্রবেশ করে।
আমরা বাঙালিরা ইঁদুরের গু মুত খেয়ে দিব্যি বেড়ে উঠছি! আমাদের ঠ্যাকাবে কে?

আমি যখন দেশে ছিলাম, গুলশান ২ এর ফুটপাথে একটা লোক ফ্রাইড চিকেন বিক্রি করতো। দামটা এখন ঠিক মনে নেই, তবে ১০-১৫ টাকার মতন অবিশ্বাস্য কম মূল্যে ছিল, এইটা মনে আছে। যেখানে দোকানেই চিকেনের নাম ছিল কয়েক শ টাকা, সেখানে কিভাবে মাত্র ১০-১৫ টাকায় চিকেন ফ্রাই সে বিক্রি করে, এইটা নিয়ে কেউ চিন্তা করতো না। লোকে ভিড় করে খেত।
ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাস এলাকাতেও তেমনই অবিশ্বাস্য কম দামের একটা রেস্টুরেন্ট ছিল। খাই নাই, তাই এখন আর মনে নাই কি কত দামে পাওয়া যেত। কিন্তু অংকের হিসাবে মেলানো অসম্ভব ছিল এইটা মনে আছে।
নীলক্ষেতের তেহারির হালও তেমন। লোকে বলতো পশুর চামড়া ছিলার পরে সেখানে যে ছোট ছোট মাংস লেগে থাকে, ওরা নাকি সেটাই কিনে এনে রান্না করে বিক্রি করে। সমস্যা নাই। তাওতো সেটা গরুর মাংস! নাহলে সে খরচ পোষাবে কিভাবে?
এদিকে মিরপুরে পাওয়া যেত এক টাকার শিক কাবাব! ছোট সাইজ, কিন্তু তারপরেও, মাত্র এক টাকায় কিভাবে সম্ভব? আল্লাহ মালুম সেটা কিসের মাংস ছিল!

আমাদের বাঙালিদের সমস্যা এখানেই। আমরা একই সাথে লাক্সারিও চাইবো, আবার দামও দিতে চাইবো না। এইটার ফায়দা তুলতেই অসৎব্যবসায়ীগুলি মাঠে নামে।
"গুলশানে বাফে মাত্র পাঁচশো টাকায়" - বলে প্রচার করে দিল, অমনি সবাই নাচতে নাচতে গিয়ে হাজির হলো। একটুও চিন্তা নাই লোকটা নিশ্চই লঙ্গরখানা খুলে বসেনাই, অবশ্যই লাভ করছে। কিন্তু দুর্মূল্যের বাজারে সেটা কিভাবে সম্ভব? উত্তর হচ্ছে, নিশ্চই সে কোন না কোন ঘাপলা করছে।
এক চালের ব্যবসায়ীকে চিনতাম, ও এক বস্তা চালের মধ্যে এক কেজি পাথর মিশিয়ে বিক্রি করতো। ওটাই লাভ। বেকুবরা সস্তা দেখে কিনে ফেলতো, কিন্তু আসল জায়গায় গিয়ে ধরা খেত।
দেড়শো টাকা প্লেটের বিরিয়ানি খাবা, চার পাঁচ পিস্ বড় বড় সাইজের মাংসও চাইবা, একটুও হিসাব করবা না ৯০০ টাকা দরের মাংসের বাজারে ব্যবসায়ী কিভাবে এটা ম্যানেজ করলো? ওরতো কর্মচারীদের বেতন দিতে হয়, দোকানের অন্যান্য বিলও আছে, সবই আসে এই খাবার বিক্রি করে। দেড়শো টাকা প্লেট হলে কমসে কম ওর খরচ রাখতে হয় সর্বোচ্চ পঞ্চাশ টাকা। এরবেশি খরচ করলেই ওর লস। ও কিভাবে খরচ ম্যানেজ করছে? একাউন্টিংয়ের সবচেয়ে কঠিনতম অধ্যায়ের একটি হচ্ছে কস্ট একাউন্টিং। ওয়ালমার্ট কিভাবে কস্ট ম্যানেজ করে সেটা নানান বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠ্যসূচিতে ব্যবহার করে। আমাদের এইসব ব্যবসায়ীরাতো তাহলে একেকজন লেজেন্ড!

এনিওয়েজ, কুকুর, বাদুড়, শেয়াল, ইঁদুর, শুকর ইত্যাদির মাংস যদি আমাদের না জানিয়ে খাইয়ে দেয়া হয়, বলা হয় যে ওটা গরু/খাসি/ভেড়ার মাংস, তবে আমাদের ধর্মভ্রষ্ট হবেনা - আপনি যেই মুসলিম ছিলেন, তেমনই থাকবেন, সব গুনাহ হবে যে মিথ্যা বলেছে ওর। কাজেই "হারাম খাইয়ে ফেলেছে, আমি দোজখে চলে যাচ্ছি" টাইপ টেনশনে ভুগতে হবেনা।
তবে এর ফলে বিভিন্ন রোগ হতে পারে যা আসলেই চিন্তার বিষয়। বাদুড়ের মাংস খাওয়ার ফলে কি কি রোগ হতে পারে সে তালিকা সুবিশাল। কুকুরের মাংস খেলে রেবিস চলে আসতে পারে আমাদের শরীরে। তেমনই নানান নিষিদ্ধ পশুর মাংসে নানান রোগ আছে যা আমার আপনার এবং দেশের বহু মানুষের প্রাণ নিয়ে নিতে যথেষ্ট। এইটা মোটেই ট্রলিংয়ের মতন হাল্কা বিষয় না। সাথে যোগ করুন ফরমালিন মেশানো ফল, মাংস, মাছ, শাক সবজি। যোগ করুন ডিস্টেম্পার মেশানো ফলের জ্যুস, কাপড়ের রং মেশানো খাবার, আরও নানান কেমিকেল মেশানো খাদ্য সামগ্রী যা শরীরে বিষ হিসেবে প্রবেশ করছে। এসব খাওয়ার ফলে আমাদের ভিতরের সব অর্গান ফাংশন করা বন্ধ করে দিচ্ছে। ক্যানসার হচ্ছে, কম বয়সেই স্ট্রোক বা হার্ট এটাকে লোকজন মরছে। এদের শাস্তি মাত্র এক দুই লাখ টাকা জরিমানায় হওয়া উচিৎ না। এগুলো এটেম্প্ট টু মার্ডারতো অবশ্যই, অথবা ইতিমধ্যেই হয়ে যাওয়া মার্ডার কেস। ড্রাগ্স ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে যেমন কঠোর নীতি অবলম্বন করা হয়, খাদ্যে বিষ মেশানো এইসব অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধেও প্রচন্ড কঠোর ব্যবস্থা নেয়া উচিৎ। ন্যূনতম শাস্তি যাবজ্জীবন এবং সর্বোচ্চ হওয়া উচিৎ মৃত্যুদন্ড। নাহলে এই ধারা সহজে বন্ধ হবেনা।
আসছে রমজান মাস, সারা বিশ্বের মুসলিমদের জন্য মহাপবিত্র, রহমতের মাস। অথচ আমরা বাংলাদেশের মানুষের মতন একে ভয়াবহ আজাবের মাস বানিয়ে ফেলেছি! যেখানে প্রতিটা মুসলিম দেশে রমজান উপলক্ষ্যে দাম করে, সেখানে আমাদের দেশে দাম কয়েক গুন বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি খাদ্যে ভেজাল মিশিয়ে আরও বহুগুন লাভ করে থাকি। রমজানের যে মূল উদ্দেশ্য, তাকওয়া অর্জন, সেটার থেকে কোটি কোটি মাইল দূরে আমাদের অবস্থান।
আমাদের সুবুদ্ধির উদয় হোক!

মন্তব্য ৭ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৭) মন্তব্য লিখুন

১| ১৫ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৯:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: আপনি হয়তো বহু বছর আগের কথা বললেন।
এখন খাবারের দাম অনেক বেশি। হোক সেটা ফুটপাতের খাবার অথবা রেস্টুরেন্টের খাবার। ঢাকার হোটোলে এক পিস ইলিশ মাছের দাম এখন ৪০০/ টাকা।

নীলক্ষেত এলাকার তেহারি ফালতু তেহারি। এরকম ফালতু তেহারি আর কোথাও পাওয়া যায় না।

১৭ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১০:৪৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: দামের উদাহরন দেয়া হয়েছে যাতে লোকে মূল বক্তব্য বুঝতে পারে। দেশে ঢাকা শহরই একমাত্র স্থান না যেখানে রেস্টুরেন্ট আছে। পাঠক যে যার মত বুঝে নিয়ে নিজ নিজ শহর কল্পনা করে নিবে।

২| ১৫ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ৯:৫৫

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার উচিৎ অন্যদের পোষ্ট পড়া এবং মন্তব্য করা।

৩| ১৬ ই মার্চ, ২০২৩ সকাল ৮:৫১

বিটপি বলেছেন: বাফে ৫০০ টাকায় বিক্রি করলেও দিনে যদি অন্তত ১০০ কাস্টোমার পাওয়া যায় - জনপ্রতি কমপক্ষে ১০০ টাকা করে লাভ করা যায়। আমি বিস্তারিত হিসাব দিতে রাজী আছি। ৫০০ টাকায় বুফে মোটেও সস্তা নয়।

হাড্ডি দেখে কোন প্রাণীর মাংস বলে দেয়া হয়তোবা সম্ভব না, কিন্তু নির্দিষ্ট কোন প্রাণীর মাংস যে নয়, সেটা অনুমান করা কঠিন নয়। যে ব্যাক্তি ছবি ভাইরাল করেছে, তার দেখানো হাড্ডি কোনমতেই খাসীর হাড্ডি হতে পারেনা - উনি প্রশ্নও রেখেছেন যে ওটা কিসের মাংস?

আপনার একটা আপত্তিকর কথা হল "লাক্সারিও চাব, আবার দামও দিতে চাইবনা" - এটা একদমই মানা যাচ্ছেনা। পাশাপাশি দুইটা তেহারির দোকান। একটাতে প্রতি হাফ তেহারি বেঁচে ১০০ টাকা, আরেকটাতে ১৬০ টাকা। গিয়ে দেখেন তো কোনটাতে কাস্টোমার বেশি? মানুষ রেস্টুরেন্টের খাবারে সস্তা চায়না, কোয়ালিটি চায়। যে দাম দেয়, সেই কোয়ালিটি না পেলে অসন্তোষ তো থাকবেই।

১৭ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১০:৫৩

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: ভাই, আপনাকে "লাক্সারি" কি সেটা আগে বুঝাই।
লাক্সারি মানে হচ্ছে দোকানের ভিতর আমার টেবিল, প্লেট, রুমাল, কাটলারী ইত্যাদি থাকবে ঝকঝকে। একটা ওয়েটার থাকবে যে কিছুক্ষন পরপর খোঁজ নিবে আমার কিছু লাগবে কিনা। এসি থাকবে। অন্যের টেবিলের আলাপ আমার টেবিলে শোনা যাবেনা, আমার টেবিলের আলাপও অন্য টেবিলে শোনা যাবেনা। আমার টেবিল থেকে বাইরের প্রকৃতির একটা ভিউ থাকবে। বাইরের কোন দুর্গন্ধ ভিতরে আসবেনা, আবার রেস্টুরেন্টের ভিতরেও অনবরত খাবারের গন্ধ যাতে না থাকে সেজন্য একজস্ট ফ্যান চলতে থাকবে, এয়ারফ্রেশনার অনবরত চালু থাকবে।
এইসব প্রোভাইড করতে হলে লোক নিয়োগ করতে হবে। মানে খরচ বাড়বে। যেটা সাধারণ হোটেল, যেখানে এইসবের ধার ধারেনা, টেবিল নোংরা না পরিষ্কার সেটা ম্যাটার করেনা, এক কাস্টমারের ঘাড়ের উপর আরেকজন উঠে যায়, এক ওয়েটার আট দশটা টেবিল সামলায়, রাস্তার পাশে দিয়ে নালা যাচ্ছে, সেটার গন্ধ আসছে ইত্যাদি। এখন যদি বলেন দুই দোকানেই একশো টাকায় বিরিয়ানি বিক্রি করতে হবে, তাহলে ভাই কস্ট একাউন্টিং, বিজনেস ফিন্যান্স, কস্ট ম্যানেজমেন্ট ইত্যাদি নিয়ে একটু পড়াশোনা করেন।
লাক্সারি গুড্স এবং জেনারেল প্রোডাক্টের মাঝের পার্থক্য, প্রফিট মার্জিন ইত্যাদি নিয়ে একটু পড়ুন। তারপরে হিসাব করবেন জনপ্রতি একশো টাকা লাভে বিক্রি করতে হলে দাম কত রাখতে হবে।

৪| ১৬ ই মার্চ, ২০২৩ বিকাল ৩:০০

রাজীব নুর বলেছেন: মন্তব্যের উত্তর দিতেও কষ্ট না সময়ের অভাব?

১৭ ই মার্চ, ২০২৩ রাত ১০:৪১

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: সময়ের অভাব।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.