নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!
বাংলায় একটা কঠিন শব্দ আছে "কূপমণ্ডুক," সহজ ভাষায় কুয়ার ব্যাঙ। মানে হচ্ছে যেই ব্যাঙের কাছে ঐ কুয়াটাই হচ্ছে পৃথিবী। ও জন্মায় ঐ কুয়ায়, বেঁচে থাকে সেখানে এবং একটা সময়ে মারাও যায় ঐ কুয়াতেই।
ঐ ব্যাঙের কাছে যদি বলেন পৃথিবী বিশাল, আছে জঙ্গল, পাহাড়, সাগর, আছে কোটি কোটি বিচিত্র রকমের প্রাণী, আছে প্রাকৃতিক বৈচিত্র, এর কোনটাই সে বিশ্বাস করবে না। কারন ও এর কিছুই দেখেনি।
শব্দটা আমরা রূপক অর্থে ব্যবহার করি। অনেকভাবেই অনেকের উপর এর প্রয়োগ ঘটানো যায়। আজকে "দেশপ্রেমিকদের" ব্যাপারে কিছু বলব।
সবার আগে আমাকে বলেনতো "দেশ" কি? সহজ ভাষায় নির্দিষ্ট সীমারেখার মধ্যে একটি নির্দিষ্ট ভৌগলিক ভূখন্ড। যেমন বাংলাদেশ। ইন্ডিয়া। পাকিস্তান। এই সীমারেখাও আপেক্ষিক। যেমন একশো বছর আগেও ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, বাংলাদেশ তিনটাই ছিল এক দেশ। ভবিষ্যতে আরও টুকরা হয়ে আরও অনেক দেশ হবেনা, এর কোন নিশ্চয়তা নেই। আজকের ইউক্রেন কয়েক বছর আগেও সোভিয়েৎ রাশিয়ার অংশ ছিল, ভবিষ্যতে আবারও এর অন্তর্ভুক্ত হতে পারে।
তো, দেশ নিয়ে আমাদের প্রেম অনেক। কেন? কারন আমরা সেই দেশে জন্মাই, থাকি, বড় হই ইত্যাদি। দেশ এবং দেশের মানুষ কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন বিষয়। দেশ নিষ্প্রাণ বুদ্ধিহীন ভূমি, কাজেই এর দোষ ত্রুটি থাকা সম্ভব না। বাংলাদেশ সুজলা সুফলা, আরব নিষ্প্রাণ ধুধু ম্রু প্রান্তর। সেখানে আমাদের মতন ফসলের উৎপাদন হয়না। তাই বলে ওরাও পিছিয়ে নেই। ওদের আছে তেলের খনি, সোনার খনি। আমাদেরও আছে প্রচুর খনিজ সম্পদ। পৃথিবীর সব "দেশে"ই কিছু না কিছু থাকেই।
কিন্তু দেশের মানুষ যেহেতু বুদ্ধিমান প্রাণী, কাজেই দেশের মানুষের দোষত্রুটি থাকেই। পৃথিবীতে এমন কোন জাতি খুঁজে পাবেন না যাদের কোন সমস্যা নাই। থাকতেই হবে। মানুষ জন্মেছেই এমনভাবে।
এখন আপনি হয়তো একটি নির্দিষ্ট দেশে জন্মেছেন। জীবনেও অন্যান্য দেশে যাননি, অন্য দেশের কৃষ্টি কালচার, সভ্যতার সাথে আপনার পরিচয় ঘটেনি। আপনাকে তখন কূপমণ্ডুক বলা চলে। এতে লজ্জিত, বা অপমানিত হবার কিছু নেই। আমেরিকারই কোটি কোটি জনতা কূপমণ্ডুক জীবন কাটায়। পাশের স্টেটেও বেড়াতে যায় না এমন প্রচুর লোক আছেন।
তবে, কূপমণ্ডুক জীবন যাপন করাটা মোটেই বুদ্ধিমানের কাজ না। আপনাকে অবশ্যই মানসিকভাবে দেশ বিদেশ ভ্রমন করতে হবে। এবং সেক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করবে বই। ভাল আর্ট সিনেমা কিছুটা ধারণা দিবে। এছাড়া নানান জার্নালতো আছেই। এখনতো ফেসবুকের যুগ। ট্রাভেলার ভ্লগারে দুনিয়া ভরপুর। ওদের ভ্লগও দেখতে পারেন। যতই ভ্রমন করবেন, ততই মন মানসিকতা পাল্টাবে। এবং তখন অন্যদের ভালোর সাথে নিজের তুলনা করে আপনি সঠিক/বেঠিকের পার্থক্য করতে শিখবেন। নিজের জীবনকে উন্নত করতে এর কোন বিকল্প নেই।
এখন উদাহরণ দেই।
আমি আমেরিকায় আছি পনেরো বিশ বছর ধরে। একটি দেশ গত একশো দুইশ বছর ধরে পৃথিবীর পরাশক্তি হয়ে বসে আছে, সেটা জানতে হলেওতো আমাকে একটু মাথা ঘামাতে হবে, তাই না? ওরা কি করে ফেলছে যা আমরা করতে ব্যর্থ হচ্ছি?
তখনই দেখতে পাই ওদের আইনের প্রয়োগ, বিচার ব্যবস্থা, সামাজিক নিরাপত্তা ইত্যাদি আরও অনেক কিছু। সামান্য যে যন্ত্রপাতি যা তাঁরা দৈনন্দিন কাজে ব্যবহার করে, সেটা তৈরির সময়েও ব্যবহারকারীর নিরাপত্তার বিষয়টা আগে মাথায় রাখে। আর আমাদের অবস্থাটা দেখেন? বঙ্গ মার্কেট দেশের সবচেয়ে ব্যস্ততম মার্কেটের একটি। অথচ সেখানে কোন সিস্টেমেরই বালাই নেই। আগুন লাগলে কি ঘটতে পারে সেটারই উদাহরণ আজকে দেখলাম। যদি ভিতরে মানুষ থাকতো? অগ্নিনির্বাপনের ব্যবস্থা কি? শূন্য। ফায়ার ব্রিগেড এলো, মারও খেল। দুনিয়ার আর কোন সভ্য দেশে মানুষ আগুন নেভাতে আসা ফায়ার ব্রিগেডের উপর হামলা করে আমাকে উদাহরণ দিতে পারেন? এদিকে আগুন জ্বলছে, সাথে সমানে লুটপাট চলছে। যত পারো কাপড় চুরি করো। এমন না যে আগুন নেভানোর জন্য ভিড় জমা হয়েছে। চোরগুলি এসেছেই চুরি করতে। এদেরই অনেকে রোজা রেখেছে। ইফতারের আগে এক গ্লাস পানি পর্যন্ত মুখে দিবে না। চুরির পোশাকেই ঈদ করবে। বাড়তি পোশাক বিক্রি করে সেমাই খাবে। কি অদ্ভুত! কি অদ্ভুত!
কথাটা বলায় আমি কি দেশের সমালোচনা করলাম, নাকি দেশের মানুষের?
উগ্র দেশপ্রেমিক আলগা দরদ দেখাতে তখন বলবেন, "আপনি বিদেশে গিয়ে দেশের সমালোচনা করেন! কাকের ময়ূর সাজার চেষ্টা!"
নারে কূপমণ্ডুক! আমি দেশের মানুষদের সমালোচনা করছি। আমি প্র্যাকটিক্যালি দেখছি মানুষের আচার আচরণের কারনে কিভাবে একটি দেশ বিশ্বের রাজ দরবারে মুকুট মাথায় সিংহাসনে বসে। আমি শুধু বলছি সেসব নিজ জীবনে এপ্লাই করলে আমরাও পারবো সম্রাট না হোক, উজির নাজির কিছু একটা হতে।
বললে অবিশ্বাসও করতে পারেন, কিন্তু এই বাঙালিরাই বিদেশে আসলে জেন্টেলম্যান হয়ে যায়। চুরি ডাকাতি ছিনতাই ইত্যাদি কাজে আমাদের পাবেন না। আমরা সময় মতন নিজ নিজ অফিসে যাই, কাজ করি, বাচ্চা কাচ্চাদের মানুষ করার পেছনে ছুটাছুটি করি, উইকেন্ডে দাওয়াত খেয়ে জীবন পার করে দেই। যা আমরা বিদেশে করছি, সেটা দেশে করছি না কেন? কারন বিদেশে দুই নম্বরি করলেই ধরা খাব। পুলিশকে পাঁচ ডলার ঘুষ সাধলে ফেডারেল অফিসারকে ঘুষ সাধার অপরাধে হাতে হাতকড়া পরিয়ে জেলে ভরে দিবে।
আর আমার দেশে আমরা করি কি কোয়ালিটি কম্প্রোমাইজ করে ঘুষের জন্য আলাদা বাজেট রাখি। মানে হচ্ছে, খরচ আমার একই হচ্ছে, উল্টা অপরাধ বাড়ছে। বরং আমি যদি যা চুক্তি করা হয়েছিল, সেই কোয়ালিটিই ধরে রাখি, তাহলে ঘুষের টাকা বেঁচে যাবে, আমার পকেটে ঠিক তত টাকাই আসবে।
কিছু বুঝাতে পারলাম?
এখন আবার দেশপ্রেম নাই, দেশের সমালোচনা করি, দেশমাতৃকার বেঈমান সন্তান টাইপ আল্লাদ শুরু কইরেন না। নিজে শুধরান, দেশের জন্যই সেটা কাজে আসবে।
২| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:৫৭
জ্যাক স্মিথ বলেছেন: বিভিন্ন দেশের কালচার সমন্ধে জানতে আমার খুব ভালো লাগে।
৩| ০৫ ই এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১১:২২
কামাল১৮ বলেছেন: ভারত যেমন তিন টুকরা হয়েছে,আপনি বলছেন আরো ভাগ হতে পারে । হতেই পারে।আমাদের প্রচেষ্টা থাকতে হবে আবার এক ভারত হওয়ার।টুকরো টুকরো হওয়া ভালো কিছু না।ঐক্য বদ্ধ হওয়া ভালো।
©somewhere in net ltd.
১| ০৪ ঠা এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১০:৫৫
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি আসলে কি বলতে চাচ্ছেন?