নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

মঞ্জুর চৌধুরী

আমি ঝন্ঝা, আমি ঘূর্ণি, আমি পথ-সমূখে যাহা পাই যাই চূর্ণি’। আমি নৃত্য-পাগল ছন্দ, আমি আপনার তালে নেচে যাই, আমি মুক্ত জীবনানন্দ। আমি হাম্বার, আমি ছায়ানট, আমি হিন্দোল, আমি চল-চঞ্চল, ঠমকি’ ছমকি’ পথে যেতে যেতে চকিতে চমকি’ ফিং দিয়া দিই তিন দোল; আমি চপলা-চপল হিন্দোল। আমি তাই করি ভাই যখন চাহে এ মন যা, করি শত্রুর সাথে গলাগলি, ধরি মৃত্যুর সাথে পান্জা, আমি উন্মাদ, আমি ঝন্ঝা! আমি মহামারী আমি ভীতি এ ধরিত্রীর; আমি শাসন-ত্রাসন, সংহার আমি উষ্ন চির-অধীর! বল বীর - আমি চির উন্নত শির!

মঞ্জুর চৌধুরী › বিস্তারিত পোস্টঃ

এলেনের ঘটনাটি প্রায় দুইশ তম মাস শুটিংয়ের ঘটনা।

০৮ ই মে, ২০২৩ রাত ১০:৪৭

উইকেন্ডে ক্লায়েন্ট আমাকে জরুরি কিছু দিবে, বলল, "তোমার কষ্ট করে এতদূর আসতে হবেনা, চলো মিড পয়েন্টে কোথাও মিট করি।"
আমার মাথায় এলো "এলেন আউটলেট মল।"
সেখানে একটা স্টারবাক্স আছে, সেখানেই দেখা করা যাক।
এই মলে মাসে একবার হলেও যাওয়া হতো। ওদের ওখানে একটা খুব ভাল লেদারের জ্যাকেটের দোকান ছিল। আমার লেদার জ্যাকেটের প্রতি অসম্ভব দুর্বলতা থাকায়, যেতাম। দোকানটি আর নেই, তবে অনেক ভাল ভাল ব্র্যান্ডের দোকানে ছেয়ে গেছে। নিজের জন্য, অন্যের জন্য গিফট কিনতে হলে তাই যাওয়া হতোই। বাচ্চাদের কিছু ভাল দোকান আছে সেখানে। কেউ ডালাসে বেড়াতে আসলেও এখানে যাওয়া মোটামুটি ফরজ। আমার আগের বাসার থেকে মাত্র পনেরো মিনিট দূরত্বে ছিল মলটি।
তারপরে ভাবলাম অত বড় আর ব্যস্ত মলে উইকেন্ডে পার্কিং পাওয়াই কঠিন হবে। কাজেই তারচেয়ে আরেকটু সহজ কোথাও দেখা করা যাক। তাই বললাম, "বেথানি আর সেভেন্টি ফাইভের (হাইওয়ে) কর্নারে যে স্টারবাক্স আছে, চলো সেখানেই দেখা করি।"

আমি যখন স্টারবাক্সে বসা, তখন কয়েকটা ইমার্জেন্সি ভিহাইকেলকে সাইরেন বাজিয়ে হাইওয়ে ধরে উড়ে যেতে দেখলাম।
এদেশে রোড একসিডেন্ট তেমন কোন বড় ঘটনা না। নিয়মিতই ঘটে। একসিডেন্ট হলে এম্বুলেন্স, ফায়ার ট্রাক, পুলিশের গাড়ি এইরকমই ছুটে যায়। কাজেই ধরে নিলাম তেমনই কিছু একটা হয়েছে।
ফেরার পথে দেখি লোকজন নোটিফিকেশন পাঠানো শুরু করেছে "এলেন আউটলেট মলে একটিভ শ্যুটার আছে, ঐ এলাকা এড়িয়ে যেতে বলা হচ্ছে।"
মানে হচ্ছে, যেই সময়টায় আমি স্টারবাক্সে, মাত্রই দুই এক্সিট পরের মলটাতে যেখানে তখন আমার থাকার কথা ছিল, সেখানে তখন এক বদ্ধউন্মাদ সন্ত্রাসী ar-১৫ রাইফেল দিয়ে পিঁপড়ার মতন মানুষ খুন করছে। আমার ভাগ্য ভাল ছিল, আল্লাহ যদি সঠিক সময়ে আমার মন পাল্টে না দিতেন, তাহলে আমিও ওদের একজন হতে পারতাম। যখন গুলাগুলি শুরু হয়েছে, তখনই হয়তো আমি গাড়ি নিয়ে পার্কিং খুঁজছি অথবা গাড়ি পার্ক করে দোকানের দিকে হাঁটছি।
আট-নয়জন মারা গেছেন। একাধিক মানুষ ক্রিটিকাল কন্ডিশনে। হাজার হাজার মানুষ মেন্টাল ট্রমার মধ্য দিয়ে গেছে। এক শিশুকে রক্ষা করতে গিয়ে তাঁর মা মারা গেছেন। শিশুকে গুলি থেকে বাঁচাতে মা ওকে জড়িয়ে ধরেছিলেন, যখন উদ্ধারকারীরা এলো, শিশুটি বলছিল, "আমার মমি ব্যথা পেয়েছে, ওকে সাহায্য করো।"
অবুঝ শিশুটি বুঝেই নাই যে মমি আর নেই। আর কখনই মমির সাথে তাঁর বেড়াতে আসা হবে না।
এই শিশু কি সারাজীবনে একটি মুহূর্তের জন্যও স্বাভাবিক হতে পারবে?
প্রতিটা ভিকটিমের এবং তাঁদের স্বজনদের একই কাহিনী। ভিকটিমের বয়স পাঁচ বছর থেকে শুরু করে ষাটোর্দ্ধ পর্যন্ত আছে। ওদের জীবনটা কি আর আগের মতন হবে কখনও?

কেন এমনটা হলো? কারন এক অমানুষের হঠাৎ মতিভ্রম হয়েছে, শখ হয়েছে মরার আগে কিছু মানুষকে হত্যা করে মরে যাওয়া।

"গান কন্ট্রোল" আমেরিকায় সবচেয়ে কুৎসিততম ইস্যু। পঞ্চাশ ষাটের দশকের আগের রেসিজমের মতন এটি এমন এক ক্যান্সার যা জাতিটাকে মেরে ফেলছে, অথচ লোকে বুঝতেই পারছে না। হ্যা, এই দেশের কনস্টিটিউশনই এদের অধিকার দিচ্ছে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করার, এবং আমি স্বীকার করি এর প্রয়োজনও আছে। আমি একশো একটা বা তারও বেশি উপকার দেখাতে পারবো বন্দুক বহনের, কিন্তু এই "মিলিটারি ওয়েপন" বহন করার যে অধিকার, সেটাকে কোনভাবেই জাস্টিফাই করা সম্ভব না। এই লোকটি একটি দোনলা বন্দুক বা রিভলবার দিয়ে কোন অবস্থাতেই এত কম সময়ে এত মানুষকে হত্যা করতে পারতো না।
একটি আঠারো বছরের নিচের কিশোর বাজার থেকে সিগারেট কিনতে অক্ষম, মদ কিনতে অক্ষম, ট্যাটু আঁকাতে অক্ষম, এদেশের আইন এইসব ব্যাপারে এতটাই কড়া, অথচ সে অনায়াসেই এইসব সেমি অটোমেটিক মারণাস্ত্র কিনে ফেলতে পারে। বন্দুক কেনার ফর্মে লেখা থাকে, "তোমার কি কোন মেন্টাল কন্ডিশন আছে?" সেখানে যদি কেউ "না" লিখে দেয়, কেউ পরীক্ষাও করেনা আসলেই সেটা সত্যি না মিথ্যা।
তারপরে মেন্টাল ক্র্যাকরা যে কি করতে সক্ষম সেটাতো প্রতিদিনই আমরা দেখি।
সবচেয়ে হতাশাজনক হচ্ছে, রাজনীতিবিদেরা সবক্ষেত্রেই অর্ধসত্যটা জাতির কাছে পরিবেশন করে। "ওদের মেন্টাল সমস্যা ছিল। আমাদের এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।" - কিন্তু মেন্টাল রোগী কিভাবে এত ভয়াবহ মারণাস্ত্র কিনতে পারছে, সেটার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়ার কথা কেউ বলে না। বললেই ভোট ব্যাংক নষ্ট হবে। সে যে দলেরই হোক না কেন। এই ইস্যুতে রিপাবলিকান-ডেমোক্রেট ভাই ভাই।

সাইকোলজিস্টদের মতে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হবে। কোভিড, লকডাউন, ইকোনমিক আনস্টেবিলিটি ইত্যাদি বহু কিছু মানুষের মন মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলছে। তারচেয়ে ভয়ংকর কথা, যে কেউ যে কোন ভয়ংকর অস্ত্র কিনে ফেলছে। আর তাই, বছরের তিনশো পঁয়ষট্টি দিনের অর্ধেকও শেষ হয়নি, অথচ এরই মধ্যে এলেনের ঘটনাটি প্রায় দুইশ তম মাস শুটিংয়ের ঘটনা। টেক্সাস, যেখানে জনসংখ্যার চাইতে বন্দুকের সংখ্যা বেশি, যেখানে ঘরে ঘরে বন্দুক এবং ওরা এ নিয়ে গর্বিত ও কিছুদিন আগেও অহংকার করে বলতো "আমাদের এখানে এসব মাস শুটিং হবে না, কারন যখন কোন ব্যাড গাই বন্দুক বের করবে, আমরা গুড গাইরা ওদের গান ডাউন করবো" - সেই টেক্সাসেই অতি সম্প্রতি এই ঘটনার সংখ্যা বহুগুন বেড়ে গেছে। গত বছর একটি স্কুলে ঘটেছে, এই বছরও এখানে ওখানে ঘটতে ঘটতে এখন বাড়ির সামনের মলে ঘটেছে। কোথাও কোন গুড গাই আগে থেকেই গান ডাউন করতে পারেনাই। যারা মারা গেছেন, মারা যাচ্ছেন, তাঁদের কয়জনের বাড়িতে যে অস্ত্র ছিল কে জানে! এদেরই অনেকে হয়তো অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের বিরুদ্ধে জোরালো ছিলেন। উঁচু গলায় বলতেন "এটি আমার সাংবিধানিক অধিকার!" অথচ আজকে তাঁরাই এর শিকার হলেন! ওরা বুঝে না, বন্দুক থেকে ছুটে আসা বুলেট কখনও কারোর জাত ধর্ম পলিটিক্যাল ফিলোসফি ইত্যাদির পরোয়া করেনা। সে শুধু অন্ধের মত ছুটে যায় লক্ষ্যভেদের উদ্দেশ্যে।
এবং কে জানে, সেদিন সৌভাগ্যবান ছিলাম বলে একদিন "wrong time wrong place" এ যে থাকবো না, এরতো কোন গ্যারান্টি নাই।
আজীবন আল্লাহ ভরসায় চলেছি, এইবার আল্লাহ একদম খাস করে, ইংলিশে বললে "টেইলর মেড/কাস্টমাইজ করে" প্রাণে রক্ষা করেছেন, আবারও আলহামদুলিল্লাহ!
তিনি যেন আমাদের সবাইকে রক্ষা করেন। ভাগ্যের সামনে আমরা অসহায়, এবং তিনিই ভাগ্য নিয়ন্ত্রক।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই মে, ২০২৩ দুপুর ১২:৪১

রাজীব নুর বলেছেন: আপনাকে অন্যের লেখা পড়তে হবে, মন্তব্য করতে হবে। তাহলে লোকজন আপনার লেখা পড়বে, মন্তব্য করবে। এটাই ব্লগিং।

১১ ই মে, ২০২৩ রাত ১১:২২

মঞ্জুর চৌধুরী বলেছেন: পড়া হয় মাঝে মাঝে ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.