![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
I am a Bangladeshi Marine Engineer, Ex Cadet of Bangladesh Marine Fisheries Academy (BMFA), Ex Captain of NCC.
মেরিনে পড়ার ইচ্ছা যাদের (বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে)
২০১২ সাল
- ভাই, আব্বার মেরিনে পড়ানোর খুব ইচ্ছা। মেরিনে ভর্তি হলে কেমন খরচ লাগবে? আপনি তো জানেন আমাদের ফ্যামিলির অবস্থা।
- হুম।
- আব্বা তারপরও চাচ্ছে আমি ভর্তি হই।
- কিন্তু এখনতো মেরিনের অবস্থা ভাল না, খুব খারাপ। আমার মনে হয় অন্য কোথাও ভর্তি হওয়াটা ভাল হবে। আর দিন দিন আরও কঠিন হয়ে যাচ্ছে, তোমাকেতো সেদিন সব কিছু বললাম।
- আব্বাকেও তাই বললাম, তারপরও তো বলছে "তুই ভর্তি হ, টাকা পয়সা যা লাগে, যেভাবে পারি আমি ম্যানেজ করব।"
- ভর্তি হওয়াটা তো সমস্যা না, পড়াশুনা শেষ করে জব পেতে হবে না?
- হ্যা, সেটাও আব্বাকে বলছি, সে রেগে গেছে উল্টা আমার উপর। তাকে বললাম ঢাকা ইউনিভারসিটিতে চান্স পাইছি, এখানেই পড়ি, তার এক কথা "এখানে পড়ে কি করবি মেরিনে পড়, তাড়াতাড়ি জব পাবি। "
ভাই, আমি কি করব বুঝতেছি না।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলাম, তারপর বললাম, আংকেলের নাম্বার দাও, আমি কথা বলি।
- আসসালামু আলাইকুম আংকেল।
- ওয়ালাইকুম আসসালাম, কে?
- জি, আংকেল আমি সজীব।
- কেমন আছো বাবা?
- আলহামদুলিল্লাহ্, আল্লাহ ভাল রাখছেন। আপনার শরীর কেমন?
- ভাল থাকি কিভাবে ছেলেটাকে নিয়ে বড় চিন্তায় আছি। কোন মেরিনে যে ভর্তি করাবো, বুঝতেছিনা। আচ্ছা, তুমি বলতো কোথায় পড়ালে ভাল হবে?
- রিয়াদ তো ঢাকা ইউনিভারসিটিতে চান্স পাইছে, ওখানেই ভর্তি করান।
- পাস করে তো চাকরি পাবে না, তার থেকে মেরিনেই পড়ুক।
- কিন্তু আংকেল, এখন মেরিনের জব মার্কেট তো ভাল না। জব পাওয়া খুব কঠিন হয়ে গেছে।
- তোমার তো জব হয়েছে, ভালইতো আছো।
- জি, আংকেল, সত্যি বলতে তখন জব মার্কেট মোটামুটি ভাল ছিল। কিন্তু এখন খুব খারাপ।
- তুমি সরকারীতে পড়ছ না?
- জি।
- প্রাইভেট মেরিনে ওই সমস্যা নাই, জব ওরাই দেবে বলছে। আমাদের দেশের যে কি অবস্থা, সরকারী থেকে এখন বেসরকারিরাই ভাল কিছু করছে, আসলে সরকারী ইন্সটিটিউট এতো ভাল করে ক্লাস ই হয়না, পাস করে জব পাবে কিভাবে, কিছুতো জানতে হবে।
এরপর আমার মুখ থেকে কথা আর বের হয়না। আমি কি বলব বুঝতে পারিনা। চুপ করে অনেক কথা শুনি তার।
ছেলেটার ভবিস্যতের কথা ভেবে চিন্তায় পড়ি, এর আগে ৩ জন ছেলেকে বাঁচিয়েছি তার বাবা মা কে বুঝিয়ে। এই ছেলের ক্ষেত্রে হেরে যাব, মানতে পারছিলাম না। দুইদিন শুধু ভাবলাম, তারপর আবার আংকেলকে ফোন দিলাম। তিনি এভাবে রেগে যাবেন বুঝিনি, আমি নাকি তার ছেলে মেরিনে পড়ুক এটা চাইনা, কারো ভালই নাকি আমার সহ্য হয়না, আমার জন্যই নাকি ছেলেটা তার কথা শুনে না, আরও অনেক কিছু। আবারো আমি নিশ্চুপ হই। আমার মুখ থেকে কথা বের হয় না।
২০১৫ সাল
- কেমন আছো বাবা?
- জি, আলহামদুলিল্লাহ ভাল, কে বলছেন?
- আমি রিয়াদের বাবা।
- জি আংকেল, কেমন আছেন? আপনার শরীর কেমন?
- আছি কোনরকম, ছেলেটা কে নিয়ে খুব চিন্তায় আছি, এক বছরের উপর হয়ে গেল, চাকরি তো পাচ্ছে না। আমার ব্যবসাটাও আর ভাল যাচ্ছে না। কি করি বলতো বাবা?
- চাকরির বাজার তো অনেকদিন থেকে খুব খারাপ আংকেল, আপনাকে তো তখন বলছিলাম, তা ওর একাডেমী কি বলে? তাদের তো জব দেয়ার কথা।
- ওরা এখন উল্টা কথা বলে, পড়ানো নাকি তাদের দায়িত্ব, জব নাকি তাদের দায়িত্ব না। আর সরকারী থেকে পাস করেই নাকি জব পাচ্ছে না।
- জি।
- এমন অবস্থা হবে আমি বুঝিনি কখনো।
আমি বরাবরের মতো এবারো নিশ্চুপ। এমন বাবাকে সান্তনা দেয়ার ভাষা আমার জানা নেই। শুধু বললাম, " আল্লাহ, আল্লাহ করেন, আল্লাহ-ই ভরসা। "
তাই সবাইকে কে অনুরোধ, মেরিনে পড়ানোর আগে বর্তমান অবস্থাটা বুঝুন, না বুঝে আপনার ছেলেকে বা ভাইকে বা আপনার কোন আত্নীয়-স্বজনকে ভর্তি করাবেন না।
©somewhere in net ltd.