নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

\"নিশ্চয়ই তিনি (হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর রাসূল এবং শেষনবী।\" - সূরা আহযাব : ৪০

NurunNabi

লিখক শিক্ষাবিদ ও গবেষক

NurunNabi › বিস্তারিত পোস্টঃ

যুবকটি আহমদী জামাত ত্যাগ করতে চায়

১১ ই নভেম্বর, ২০২২ রাত ৯:১২

আমি এই (কাদিয়ানী-আহমদী) দল থেকে বেরিয়ে আসতে চাই!

(কাদিয়ানী যুবকের ফোনালাপ থেকে....)

লিখাটির কথাগুলো যুবকের ফোনালাপ থেকে হুবহু কপিকৃত...

প্রিয় স্যার! আমি নোয়াখালী সোনাইমুড়ী উপজেলার অম্বরনগর (ইউনিয়ন ও গ্রাম) থেকে বলছি। কয়দিন আগে আপনার একটা ভিডিও দেখি, অম্বর নগরের একটি ডকুমেন্টারি ভিডিওতে আপনার মোবাইল নম্বরটি (০১৬২৯-৯৪১৭৭৩) পেয়ে ফোন দিলাম। স্যার আমাকে বাঁচান! আমি গভীরভাবে কোনো কিছু না চিন্তা করে কাদিয়ানী দলে বাইয়েত নিয়েছিলাম। খুব গোপনে। এখন আমি তাদের থেকে বেরিয়ে আসব। দয়া করে পদ্ধতি বাতিয়ে দিন। (কাঁদা কাঁদা কণ্ঠে বলল)।

: কী হয়েছে খুলে বলুন!

স্যার তাহলে শুনুন! আমি কলেজে পড়ি। ওদের ভিডিওগুলো দেখতাম। ভালো লাগত। কিন্তু আমি তো আরবী পারিনা, বুঝিওনা। তাই ওদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ভুল কি সঠিক তা বুঝারও উপায় ছিলনা। একদিন তাদের নাম্বার নিলাম। ফোন করলাম। আমি তাদের জামাতে বাইয়েত নিতে আগ্রহ জানাই। আমাকে তাদের কেন্দ্র থেকে জানাল, অম্বরনগরে আমাদের কার্যক্রম এখন বন্ধ। তুমি বরং নোয়াখালী চৌমুহনীতে চলে যাও। সেখানে "মণ্ডপপাড়া" নামে একটি এলাকা আছে, সেখানে আমাদের জামাত আছে, মসজিদ (উপাসনালয়)ও আছে।

যাইহোক, আমি গেলাম। আমি তাদের কথাবার্তা শুনলাম। এরপর যথাসময় আমাকে বাইয়েত ফরম দেয়া হল, পূরণ করলাম। বাইয়েতে শামিল হয়ে গেলাম। অনেক ভালো ভালো উপদেশ শুনালো, শুনলাম। এভাবে কয়েক বছর পার করলাম। আমি পড়াশোনার পাশাপাশি নিজের খরচের জন্য সামান্য আয় করতাম। সেখান থেকে প্রতি মাসে ১৬% হারে চাঁদা দিতে বলত, দিতাম।

আমি কিন্তু বেশিকিছু বুঝে ওদের জামাতে বাইয়েত নিই নি। আলেমরা তো ওদেরকে কাফের ইত্যাদি বলেন। জানতাম। কেন বলেন তাও জানি। কিন্তু এগুলো নিয়ে কখনো সিরিয়াল হইনি, বুঝার চেষ্টাও করিনি; মিথ্যা বলে উড়িয়ে দিতাম। জাস্ট আহমদীদের বাহ্যিক আচার আচরণ, অনুষ্ঠান আর আভ্যন্তরীণ আন্তরিকতা ও উদারতায় নিজেকে সঁপে দিলাম। আমি যে গোপনে বাইয়েত নিয়েছি সেকথা আমার বাবা মা ভাই বোন কেউই জানেনা। আমার একজন প্রাণপ্রিয় গয়ের আহমদী বন্ধু জানত, তাকে সব সময় আমার সব গোপন বিষয়ে বলতাম।

এখন আমার একটা চিন্তা হল যে, আমি কেমন দলে এলাম যারা আমাকে আহমদীদের বাহিরে বিয়ে করতে পারব না বলছে। আমি নাকি আমার মা বাবার জানাযাতেও শরিক হতে পারব না অর্থাৎ জানাযা পড়তে পারব না! ইতিপূর্বে যখন বাইয়েত ফরমে স্বাক্ষর করতেছিলাম তখন কিন্তু এগুলো বলেনি। আমার মা, যিনি আমাকে দুধ পান করিয়ে বড় করলেন, দশ মাস দশ দিন গর্ভে ধারণ করলেন; যে মায়ের পদতলে আমার বেহেশত, আমি যদি সে মায়ের শেষ বিদায়ী অনুষ্ঠানে যোগদান করতে না পারি, মা-কে ইসলামি নিয়ম পদ্ধতিতে শেষ বিদায় সালামটাও জানাতে না পারি, তাহলে আমার মত নাফরমান আর হতভাগ্য ছেলে আর কে হতে পারে!

উক্ত তারবিয়তে একজন আহমদী সদস্য জামাতের মুরুব্বিকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে তিনি উত্তর দিলেন, জানাযা জাস্ট একটা আনুষ্ঠানিকতা, এটা অত প্রয়োজনীয় নয়। আহমদীদের জন্য নির্দেশ হল, তাদের মা বাবার জানাযাতে শরীক হলেও শুধুমাত্র দাঁড়িয়ে থাকবে। আমরা আমাদের জায়গা থেকে ঐ মাইয়্যেতের গায়েবানা জানাযা পড়ে দেব।

কথাগুলো শুনে আকাশ যেন আমার মাথার উপর ভেঙ্গে পড়লো। এখন আমি সাধারণ জ্ঞানে চিন্তা করলাম যে, যে জামাত (দল) পিতা মাতার জানাযা পড়তেও আপত্তি তুলে, শুধুমাত্র দাঁড়িয়ে থাকতে বলে, সে জামাত তো আমাকে পিতা মাতার সাথে শেষ বিদায়ী অনুষ্ঠানে গাদ্দারি আর নাফরমান হতেই শিক্ষা দিল! এই জামাত যদি ইসলামের ভেতরেরই হত তাহলে কিজন্য আমার পিতা মাতার জানাযা থেকে আমাকে বিরত রাখতে চাচ্ছে?

আমি তাদেরকে দুটি প্রশ্ন করব ভাবছি!

১- আহমদী জামাত ইসলামের দল হলে তবে কিজন্য পিতা মাতার জানাযা পড়তে আপত্তি থাকবে?

২- আমার পিতা মাতা তো আহমদী নন (অর্থাৎ কাদিয়ানী জামাতে বাইয়েত নেন নি)। তাহলে আহমদী মুরুব্বি আমাকে কিভাবে বলতে পারলেন যে, তারা তাদের জামাতের পক্ষ থেকে আমার পিতা মাতার জন্য গায়েবানা জানাযা পড়ে দেবেন? দোয়া করবেন?

: এখন আমি আপনাকে কিভাবে সাহায্য করতে পারি?

স্যার! আমি ওদের সাথে আর নেই। এখন আপনার কাছ থেকে আমার জানার বিষয় হল, আমি যদি ওদের জামাত ছেড়ে দেয়ার ঘোষণা দিই তবে কি ওরা আমাকে ক্ষতি করতে পারে? কী কী উপায়ে ওরা আমাকে চাপ দিতে পারে?

আমি : ওরা সাধারণত সেসব যুবকদের উপর চাপ প্রয়োগ করে সফল হয় যেসব যুবক কাদিয়ানী ফ্যামিলিতে বিয়ে করেছে অথবা কাদিয়ানীদের অনুগ্রহ নিয়ে বেঁচে থাকে। অর্থাৎ কাদিয়ানীরা যদি তাকে চাকুরী দেয় বা কোনো কর্মসংস্থানে চাকুরী পেতে সহযোগিতা করে, শুধুমাত্র সেসব ক্ষেত্রেই তারা তার রিযিকে হানা দিয়ে কাবু করার চেষ্টা করে। যেসব যুবক ফ্রিডম বা স্বাধীন, তারা কখনো কাদিয়ানীদের পরওয়া করেননা।

যুবক : কিন্তু স্যার! ওদের সাথে বিভিন্ন প্রোগ্রামে আমার পিকচার আছে। ওরা যদি আমার পরিবার বা আত্মীয় স্বজন, গ্রামবাসীকে আমার আহমদী (কাদিয়ানী) হবার বিষয়টি বলে দেয়, তাহলে তো আমি এবং আমার পরিবার খুবই ক্ষতিগ্রস্ত হব এবং বিপদে পড়ে যাব।

আমি : আপনি ভয় পাবেন না। ওরা আশাকরি আপনাকে এধরণের কোনো ব্ল্যাকমেইল করার সাহস দেখাবেনা। কারণ ওরাও আপনার কাছে এক প্রকারের জিম্মি। কিভাবে জানেন? অম্বরনগর আর চৌমুহনী সহ নোয়াখালীর বিভিন্ন এলাকায় গোপনে যেসব যুবক ওদের বাইয়েত নিয়েছে সেসব তথ্য তো আপনার নিকটেও আছে তাই না? এই যে আপনি বললেন, অমুক স্কুলের অমুক শিক্ষক, অমুক জায়গার মিট লাইফের অমুক কর্মকর্তা, অমুক ব্যাংকের অমুক কর্মকর্তা গোপনে তাদের বাইয়েত নিয়েছে, আপনার জন্য ওদের নাকে রশি লাগানোর জন্য এটুকুই যথেষ্ট। ওরা যদি আপনার বিষয়টি লোক-সমাজে প্রকাশ করে দেয়ার থ্রেট দেয় তাহলে আপনিও বলবেন যে, আমার কাছেও এমন সব তথ্য আছে, যদি তোমরা আমারে জয় বাংলা করতে আসো, তো আমিও তোমাদের জামাতরে জয় বাংলা করে দেমুনি!!

দেখবেন, কেল্লা ফতে হয়ে গেছে, চিন্তা করার কারণ নেই!

যুবক : ধন্যবাদ স্যার, এভাবে চিন্তা করিনি। এখন আমি সাহস পেলাম। আমার আর চিন্তা নেই!

আমি : আচ্ছা, পরিবারের কেউ জানলে আপনার কী সমস্যা হতে পারে বলে মনে করেছিলেন?

যুবক : স্যার! আমি নিজের চেয়ে নিজের ছোট বোনটির ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় পড়েছিলাম। যদি গ্রামের মানুষ জানতে পারে যে, আমি ওদের সাথে থাকি বা ওদের থেকে বাইয়েত নিয়েছি তাহলে আমার বোনের বিবাহ বাধাগ্রস্ত হবে। লোকে কাদিয়ানী বলিয়া ধিক্কার দেবে, কাদিয়ানী মেয়ে বলে আমার বোনকে কলঙ্ক দেবে। তা ছাড়া আমিও ভালো কোনো মুসলিম পরিবারে বিয়ে করতে পারব না। আর নিজ গ্রামেও স্বাভাবিক জীবন যাপন করা আমার পক্ষে সম্ভব হবেনা।

আমি : আপনার জন্য তো ওদের নিকট দারুণ অফার আছে। ওদের যেসব পরিবার লণ্ডন, কানাডা, জার্মানি ইত্যাদি দেশে থাকে সে রকম একটা মেয়ে বিয়ে করে ফেললে তো আপনি সাকসেস! ইউরোপের নীল দুনিয়ায় বিলাসবহুল জীবন যাপন করতে পারবেন। তাহলে চিন্তা কিসের!!

যুবক : স্যার! সত্যি কথা হল, ওদের কাছে টাকা-ই সব! আমি আহমদী, গরিব এবং বাংলাদেশি; এটাই আমার জন্য ওদের সেসব ইউরোপীয় নীল দুনিয়ার আহমদীদের মেয়ের পাত্র হতে প্রধান বাধা। নেট দুনিয়ায় যাদের বিচরণ তারা জানে যে, ঐ নীল দুনিয়ার আহমদীদের মেয়েদের বিবাহ বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বড় বড় পয়সা ওয়ালাদের সাথেই হয়ে থাকে; এক্ষেত্রে পাত্র কোন ধর্মের সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। সুতরাং স্যার! যে নীল দুনিয়ার আকাশে উড়ার স্বপ্নের কথা বললেন সেটা আমাদের বেলায় স্বপ্নই শুধু।

আমি : নিয়মিত কি চাঁদা দিতেন?

যুবক : জ্বী দিলাম। কিন্তু ওদের থেকে বেরিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর থেকে আর দিইনা, ওদের ওখানে যাওয়াও বন্ধ করে দিয়েছি। স্যার শুনে আশ্চর্য হবেন, যদি কোনো মাসে চাঁদা দিতে না পারি, তাহলে সে মাসের জন্য আমাকে বকেয়া লিস্টে রাখা হয়। পরবর্তী মাসে বকেয়া সহ আদায় করতে বাধ্য করে। আমি হাদীস কুরআন পড়ে ওদেরকে ভালোবাসিনি। ওদের বাহ্যিক আচার আচরণ আর সুন্দর ব্যবহারে আমি ওদের নিকট বাইয়েত নিয়েছিলাম। কিন্তু আস্তে আস্তে ভেতরের রূপটা আমার সামনে প্রকাশ হয়ে যায়। এখন আমি বুঝতে পারছি। আর আপনার ভিডিও দেখে, যেখানে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেকে "নবী রাসূল" দাবী করা, নিজেকে "মুহাম্মদ (সা.)" বলে দাবী করার সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছেন; তা নিজ চোখে দেখার পর আমি ওদেরকে আর কিভাবে মুসলমান বলে বিশ্বাস করতে পারি! (অসাপ্ত)

কাদিয়ানীরা কতটা ভয়ংকর ও সত্য গোপনকারী তা জানতে আপনাকে এই লিখাটি অবশ্যই পড়তে হবে - Click

(যুবকটির ইস্তিকামতের জন্য সবাই দোয়া করবেন)।

ছবি - প্রতিকি

লিখক, শিক্ষাবিদ ও গবেষক
প্রিন্সিপাল নূরুন্নবী।
এডমিন http://www.markajomar.org

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.