![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
চারপাশ থেমে যায় বদলে যায় সময়,মিথ্যে যখন সত্যি হয়।
চেতন ভগত সাম্প্রতিক সময়ে ভারতের অন্যতম জনপ্রিয় লেখক। টাইম সাময়িকী বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ মানুষের যে তালিকা প্রকাশ করেছে, সেখানে ঠাঁই করে নিয়েছেন ৪১ বছর বয়সী এই লেখক। জন্ম ভারতের নয়াদিল্লিতে, ১৯৭৪ সালের ২২ এপ্রিল।তার লেখা বেস্টসেলার বইয়ের মধ্যে রয়েছে " ফাইভ পয়েন্ট সামওয়ান" (২০০৪), ""ওয়ান নাইট এট অ্যা কল সেন্টার"" (২০০৫), ""দ্য থ্রি মিসটেকস্ অব মাই লাইফ"" (২০০৮), ""টু স্ট্যাটস"" (২০০৯), ""রিভুল্যুশন ২০২০"" (২০১১), এবং ""হাফ গার্লফ্রেন্ড"" (২০১৪)। এ বইগুলোর কারনে সারাবিশ্বের পাঠকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়তা পান তিনি। এর মধ্যে চারটি উপন্যাস অবলম্বনে বলিউডে নির্মিত হয় সিনেমা (সিনেমাগুলো হচ্ছে "থ্রি ইডিয়টস, হ্যালো, কাই পো চে এবং টু স্ট্যাটস)। ২০০৮ সালে দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের তথ্য অনুযায়ী ভারতের ইতিহাসে চেতন ভগত ইংরেজি ভাষায় সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বইয়ের লেখক। বই লেখার পাশাপাশি তরুণসমাজকে জাগিয়ে তোলার জন্য উৎসাহমূলক বক্তৃতাও করছেন চেতন ভগত।
চেতন ভগত ২০০৮ সালের ২৪ জুলাই "পুনের সিমবায়োসিস ইনস্টিটিউট অব বিজনেস ম্যানেজমেন্টের" এমবিএ শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে যে বক্তৃতা দেন, তারই ভাষান্তর এই লেখাটি।
আমার যমজ ছেলে দুটোর লাখো ইচ্ছা, কোটি কোটি স্বপ্ন। ছোট একটা খেলনা স্পাইডারম্যানও তাদের বিছানায় লাফ-ঝাঁপ করাতে পারে। পার্কের দোলনার ক্যাচকেচে শব্দও তাদের শিহরিত করতে পারে। বাবার মুখ থেকে শোনা নিছক একটা গল্পও পারে তাদের অনুপ্রাণিত করতে। জন্মদিনের কেক কাটার জন্য কয়েক মাস আগে থেকেই তারা কাউন্টডাউন শুরু করে। তোমরা কি জানো, স্বপ্নের শুরুটা কোথায়? জানো কি, ইচ্ছাশক্তিরা কোথা থেকে আসে? আমি মনে করি, স্বপ্ন আর ইচ্ছাশক্তির জন্ম আমাদের জন্মের সঙ্গেই হয়।
সবার জীবনের একই স্বপ্ন, সফল হওয়া। আর সফলতা হলো প্রদীপের শিখার মতো। প্রদীপ জ্বালাতে তুমি কী করো? প্রথমত, প্রদীপে তেল দাও, যেন জ্বলার জন্য যথেষ্ট জ্বালানি সে পায়। পাশাপাশি কিছু একটা দিয়ে প্রদীপটা আড়ালে রাখো, যেন তা ঝড়-বাতাসের আঘাতে দপ করে নিভে না যায়। সফল হওয়ার স্বপ্নটাও ঠিক সে রকমই। প্রথমত চাই প্রবল ইচ্ছাশক্তি, যার ওপর ভর করে তুমি সফলতার দিকে এগোবে। দ্বিতীয়ত, স্বপ্নটাকে আগলে রাখা চাই। স্বপ্নকে আঁকড়ে ধরে রাখতে হয়, যেন তা কোনোভাবেই ভেঙে না যায়।
বেশির ভাগই আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। অর্থনৈতিক সচ্ছলতা তাই আমাদের কাছে বিরাট একটা অর্জন মনে হয়, আসলেও তাই। প্রতিদিনের চাওয়াগুলো যেখানে শুধু অর্থের কারণে ভেস্তে যায়, সেখানে অর্থনৈতিক মুক্তিই সবচেয়ে বড় সাফল্য। তবু এটাই জীবনের উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়। তাই যদি হতো, মিস্টার আমবানি (মুকেশ আমবানি, ২০০৬ সালে বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির তালিকায় ৫৬তম) আর কোনো কাজ করতেন না। শাহরুখ খান আর নাচ-গান না করে বাড়িতেই বসে থাকতেন। পিক্সার (Pixar) বিক্রি করেই যেখানে কোটি কোটি টাকা কুড়িয়েছেন, উন্নত আইফোনের জন্য স্টিভ জব নিশ্চয়ই আর কঠোর পরিশ্রম করতেন না। তাঁরা এসব এখনো করছেন কেন? কী এমন জিনিস, যা তাঁদের টেনে আনে প্রতিদিনের কাজে, ভেবে দেখেছ কি? তাঁরা এটা করেন কারণ, এতে তাঁরা সুখ খুঁজে পান, আনন্দ পান। তাঁরা এটা করেন কারণ, কাজের মধ্যেই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখেন তাঁরা। কাজের মধ্যেই তাঁরা জীবনকে উপভোগ করেন। তুমি যদি পরিশ্রমী হও, বেশি বেশি পড়াশোনা করো, তুমিও তোমার ফলাফলের মান বাড়াতে পারবে। যদি মানুষের সঙ্গে মিথোস্ক্রিয়া বা স্বতঃস্ফূর্ত মিতালি গড়ে তোলার চেষ্টা করো, দেখবে তুমি যেকোনো সাক্ষাৎকারে ভালো করছ। বেশি বেশি অনুশীলন করলে ক্রিকেটেও তুমি ভালো করতে পারো। এটা হয়তো ঠিক যে তুমি কখনোই টেন্ডুলকার হতে পারবে না। কিন্তু আগের চেয়ে আরেক ধাপ এগোতে তো পারবে। হ্যাঁ, সফল হওয়ার জন্য পরিশ্রম, অনুশীলন আর সংগ্রামের মাধ্যমে এক ধাপ করে এগোনোটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
নিশ্চয়ই কারও মুখে শুনে থাকবে, জীবন একটা কঠিন ও লম্বা দৌড়। আর আমি যেভাবে দেখেছি, জীবনটা হলো সেই দৌড়ের মতো, যেটা আমরা নার্সারি স্কুলে দৌড়েছি। মুখের মধ্যে একটা চামচ, চামচের ওপর একটা মার্বেল নিয়ে দিতে হবে দৌড়। মার্বেল ফেলে খালি চামচ নিয়ে সবার আগে দৌড়ের শেষ দড়িটা ছোঁয়ার কি কোনো মানে আছে? জীবনটাও ঠিক তাই। যেখানে নিজের স্বাস্থ্য আর মানুষের সঙ্গে তোমার সম্পর্ক হলো মার্বেল। তোমার পরিশ্রম তখনই সার্থক হবে, যখন জীবনে ছন্দ আসবে। নইলে তুমি হয়তো সফল হবে, কিন্তু এই যে স্বপ্ন সজিব থাকার, আলোকিত হওয়ার, ধীরে ধীরে সেই স্বপ্ন শুকিয়ে মারা যাবে।
জীবনকে কখনোই সিরিয়াসভাবে দেখবে না। যোগব্যায়ামের ক্লাসে একজন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের হাসানোর জন্য নানা গল্প করতেন। একদিন এক ছাত্র জিজ্ঞেস করল, ‘আচ্ছা স্যার, যোগব্যায়ামের ক্লাস থেকে হাসাহাসির গল্প বাদ দিলে কী হবে?’ স্যার বললেন, ‘সিরিয়াস নয়, সিনসিয়ার হও।’ স্যারের সেদিনের এই কথাটা আমার প্রেরণা জুগিয়েছে—কি লেখায়, কি কাজে কিংবা সবার সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্রে। দেখ, লেখালেখিতে প্রতিদিনই আমার নতুন নতুন ছক-মতের সৃষ্টি হয়। প্রতিদিন প্রশংসা পাই আবার শুনতে হয় কঠোর সমালোচনাও। আমি যদি সবকিছুকেই গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিই, তাহলে কীভাবে আমি লিখব? কিংবা আমি বাঁচব কীভাবে? জীবনটাকে খুব কঠিনভাবে নেওয়ার কিছু নেই। এই তিনটা জিনিস মনে রেখ—লক্ষ্যটা হতে হবে যৌক্তিক, স্বপ্নের সঙ্গে কাজের থাকবে ভারসাম্য আর কাজ করবে আনন্দের সঙ্গে। হ্যাঁ, কাজের ফাঁকে ফাঁকে প্রাণে থাকা চাই আনন্দ। কটা ক্লাস ফাঁকি দেবে, ইন্টারভিউতে তালগোল পাকিয়ে ফেলবে, প্রেমে পড়বে—এসব হতেই পারে। আমরা তো আর মেশিন নই।
প্রথমত, স্বপ্ন ভাঙে যে ঝড়ে, তার নাম ব্যর্থতা। যদি সবকিছু পরিকল্পনা অনুসারে না হয়, তখন তুমি নিজেকে ব্যর্থ মনে করো। পরিশ্রমের তুলনায় ফল না পেলে তুমি বিচলিত হয়ে যাও। ঠিক আছে। কিন্তু বড় হতে হলে নিজেকে আরও শক্ত করতে হবে। ব্যর্থতা এড়ানো খুবই কঠিন। তবে ‘ব্যর্থতা আমাকে কী শেখাল’ নিজেকে এই প্রশ্ন করতে হবে। নিজের ভুলগুলো শুধরে নিতে হবে। হয়তো নিজেকে তুমি দুর্বল ভাবো। হীনম্মন্যতায় ভোগো। সবকিছুর আশা ছেড়ে পালিয়ে বাঁচতে ইচ্ছে করবে তোমার। যেমনটা আমার হয়েছিল, যখন নয় জন প্রকাশক আমার প্রথম বইটা প্রকাশ করার ব্যাপারে ‘না’ বলেছিলেন। জীবনটা আসলে তা-ই, প্রতিযোগিতায় ভরা। হীনম্মন্যতায় না ভুগে বারবার চেষ্টা-সাধনায় যেকোনো সমস্যার সমাধান করতে হবে।
হতাশা হলো ব্যর্থতার মামাতো ভাই। তুমি কি কখনো হতাশ হয়েছ? তা আবার বলতে, কী বলো? যানজট থেকে শুরু করে কাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে হতাশা ঘিরে ধরে আমাদের। হতাশা তোমার উত্তেজনার স্ফুলিঙ্গকে স্তিমিত করে দেয়। এবং সহসা নেতিবাচক ভাবনার সাগরে ডুবিয়ে অকাল মৃত্যু ডেকে আনে তোমার ভেতরের সুপ্ত ইচ্ছাটার। হতাশা তোমাকে তিলে তিলে তিক্ত করে দেয়। এ জন্য বড় হতে চাইলে হতাশাকে অবজ্ঞা-উপেক্ষা করতে শিখতে হবে।
আজকাল তো সবকিছু লাইন-ঘাটের ব্যাপার। যার বাবা ধনী, যার মুখ সুন্দর, তারা বলিউড থেকে শুরু করে যেকোনো জায়গায় সহজেই সুযোগ পাচ্ছে। গোটা দেশটা যেন বৈষম্যে ছেয়ে গেছে। তবু যা কিছু আছে, তা-ই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা উচিত। একই সঙ্গে যা নেই, তাকে গ্রহণ করার মানসিকতাও থাকতে হবে। দেখ, আমি কিন্তু ঐশ্বরিয়া রাইকে অপছন্দ করি না। কিন্তু আমার দুটো ছেলে আছে, আমি মনে করি তারা ঐশ্বরিয়ার চেয়ে অনেক সুন্দর। হাল ছেড়ো না। কখনোই বৈষম্য-বিচিন্তায় নিজের স্বপ্নকে ছোট করে দেখবে না।
তুমি যতই বড় হবে, নিজেকে আলাদা করে আবিষ্কার করবে। তুমি যখন ছোট ছিলে, আর সব বাচ্চার মতো তুমিও কিন্তু আইসক্রিম খেতে ভালোবাসতে। এখন তুমি কলেজে পড়ছ। কলেজে তোমার মতো আরও অনেক ছাত্র আছে। কিন্তু ১০ বছর পরে নিজেকে সম্পূর্ণ একা দেখবে। তুমি যা চাও, যা তুমি বিশ্বাস করো, যেভাবে ভাবতে ভালোবাস, হয়তো কিছুই তার মিলবে না একেবারে পাশের মানুষটির সঙ্গে। কারও সঙ্গে তোমার স্বপ্নের মিল না দেখে তোমার মনের ভেতর এক ধরনের দ্বন্দ্ব তৈরি হতে পারে। কিন্তু কখনোই স্বপ্নের সঙ্গে আপস করবে না। নিজেকেও ভালোবাসতে জানতে হয়। আগে নিজেকে ভালোবাস, তার পরে ভালোবাস অন্যকে।
তোমরা এখন জীবনের সবচেয়ে আনন্দের বয়সে আছ। কেউ যদি আমাকে অতীতে ফিরে যাওয়ার সুযোগ দিত, নিশ্চয়ই আমি বেছে নিতাম কলেজজীবনকে। এই সময়ে সবার চোখ-মুখে থাকে জ্যোতি। শোনো, বর্ষাকালে বৃষ্টি হবে এটাই স্বাভাবিক। তোমার জীবনেও স্বপ্নপূরণের পথে এ রকম বাধাবিপত্তি একের পর এক আসতেই পারে। বৃষ্টি থেকে বাঁচার জন্য যেমন ছাতা কিংবা বৃষ্টির পোশাক ব্যবহার করো, ঠিক তেমনি স্বপ্নকেও তোমার সেভাবেই আগলে রাখতে হবে। তুমি, আমি সব মানুষই স্বপ্ন দেখি। সবার মধ্যেই আছে আলোর দ্যুতি। এ জন্যই আমি বলে থাকি, আমি এসেছি লাখো-কোটি নক্ষত্রের আলোয় আলোকিত দেশ থেকে।
সূত্র: প্রথম আলো ও উইকিপিডিয়া।
এবং 'চেতন ভগতের' নিজস্ব ওয়েবসাইট Click This Link
১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:২৯
KH marup বলেছেন: ধন্যবাদ আরভিন,আপনার মুল্যবান কমেন্ট এর জন্য।সাথে থাকবেন আশা করি
২| ১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:৪০
ফরিদ আহমদ চৌধুরী বলেছেন: পড়ে ভালো লাগলো।
১৯ শে অক্টোবর, ২০১৬ রাত ১:৩০
KH marup বলেছেন: ধৈর্য নিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ জনাব।
©somewhere in net ltd.
১|
১৮ ই অক্টোবর, ২০১৬ বিকাল ৪:০০
আরভিন বলেছেন: তথ্যবহুল লেখা।অনুপ্রেরণা পেলাম।ধন্যবাদ!