নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

এনটনি

শুধু দেখে যাচ্ছি। চাকরি করি। খাই, ঘুমাই আর দেখি। একদিন কিছু করবো। লোক খুজছি

এনটনি › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঝরা পাতা

২৮ শে আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:২৭

"“এই ছেলে… এই”"

"“আমি?”"

“"না তো কি আমি”"



শুরুটা এভাবেই। পেছনে ছোট্ট শিশুতোষ কৌতুহলের কাহিনী আছে। তবে এদের নাম টা জেনে নেই।

মেয়েটির নাম মায়া। নাহ, কেমন পুরনো দিনের নাম হয়ে গেল, নাম শুনলেই প্রেমে পড়লাম টাইপ। বরং ধরি মেয়েটার নাম "“মিনোভা”"।

ছেলেটা আমি। আচ্ছা ধরি নাম “"অমি”"।



পেছনের ঘটনায় আসি। অমির স্কুল আজিমপুরের দিকে। পড়ে ক্লাস সেভেনে। ছাত্র মোটামুটি। ও শুনেছে ওদের স্কুলের নামেই নাকি একটা গার্লস স্কুল আছে। ওইদিকেই। সেটাই দেখতে স্কুল ছুটির পর এসে ‘'হা’' করে একটা মেয়ের কদবেল কিনে খাওয়া দেখছিল। সাল টা ৯১-৯২ হবে। তখনি মেয়েটা অমিকে ডাকল।



মধ্যবিত্ত সরকারী চাকুরের বাড়ীর বড় ছেলে অমি। স্কুলে যাওয়া আসা রিক্সাতেই করে। মিনোভার বাবাও সরকারী চাকুরে। মেয়ে বলেই হয়তো গাড়ী আর কাজের বুয়া আসে নিতে।



“কথা বলনা কেন?” মিনোভা জিগ্যেস করে অমিকে।

বয়সের তুলনায় অমি কথা ভালই জানে। তাই কথা বাড়াতে সময় লাগেনা। এক কথা দু কথা থেকে জানা হয়ে যায় কি কেন কিভাবে। মিনোভা সদ্য সালোয়ার-কামিজ ধরা, মানে ক্লাস সিক্সে পড়ে।



ব্যাপারটা এখানেই শেষ হতে পারত যদি ওদের আবার নিউমার্কেট বই-খাতার দোকানে দেখা না হত!



“তোমাদের স্কুলেও সাবজেক্টের সাথে খাতার রং মিলিয়ে নিতে হয়?” আজকে অমি প্রথমেই কথা বল্ল।

“ও তুমি”? প্রায় ফিসফিসিয়ে মিনোভা বল্ল “আম্মুর সাথে”।

অমি একাই আসে দোকানে আজকাল। বেশ দ্বিগবিজয়ী ভাব নিয়ে হঠাৎ কি মনে হল, দোকানে ছোট্ট কালি পরীক্ষা করার কাগজ নিয়ে নিজের বাসার ফোন নম্বর লিখে সামনে রেখে বল্ল “ফোন দিয়ে আমাকে চেয়ো। বলবা আমরা স্কুলে একই ক্লাসে পড়ি”।



মাসখানেক পর অলস দুপুর। অমি বাসায়। বৃহস্পতিবার তাই পরদিন বাড়ীরকাজের তাড়াও নেই। বিকাল হয়নি যে খেলতে নামবে। গল্পের বইয়ের স্টকটাও পড়া শেষ। বাবা অফিসে, মা ঘুমে।

ফোন বেজে উঠল। অমি যেয়ে ধরল।

“হ্যালো স্লামালিকুম অমি আছে”?

অমি জানে এটা মিনোভা, কারন যতই কো-এডুকেশনে পড়ুক আর নম্বর দিক, কোন মেয়ে আজ পর্যন্ত অমিকে বাসায় ফোন দেয়নি বা ফোন করে এভাবে চায়নি।

কেমন আছ কি কর টাইপ কথাবার্তা আর “তোমার পছন্দ কিটক্যাট না ক্যাডবেরি” এর বাইরে কথা হলনা। দুজনেরি প্রথম এভাবে কথা। মিনোভা নিজের নম্বর দিলনা। বল্ল পরে দেবে। আর ফোন দিলে এরকম সময়ে দিবে।

অমির মন উড়ু উড়ু। খেলা, গল্পের বই, এ সপ্তাহের নাটক, সব কেমন ফ্যাকাসে হয়ে গেল।



এরপর প্রায় সপ্তাহখানেক পর ফোন এলো।

“ভুলে গেসিলা? ” অমির কন্ঠে অনুযোগ, একটু যেন দাবীও।

“ভয়ে করিনাই। কি বলব, কেউ যদি বুঝে তখন? ” মিনোভার যেন একটু সায় আছে দাবীতে।

কথা বাড়ে, কথা আগায়। প্রায় প্রতিদিন কথা হতে লাগল। আগেরদিন ফোনে ঠিক করে অমি চলে যায় মিনোভার স্কুলের সামনে। কোনদিন চোখের দেখা দেখে, কোনদিন দেখে গাড়ী এসেছিল চলে গেছে, কোনদিন দেখে চলে যাচ্ছে। ফোনে মিনোভাকে বলে ক্লাস থেকে এক্টু দেরিতে বের হতে। স্কুল থেকে বের হয়ে সবদিন তো খাওয়া যায়না, কি বলে বুয়াকে দাড় করে রাখবে।

প্রেম ভালবাসা কি না বুঝলেও ওরা হয়তো বোঝে ওদের মধ্যে অনেক টান। হয়তো মায়া।

ভালবাসা উপেক্ষা করা যায়, হয়ত, মায়া উপেক্ষা করা যায়না। ওরাও পারেনা, পারেনি।



বছর ঘুরে যায়। দুজনি রেজাল্ট খারাপ করে পরের ক্লাসে ওঠে। প্রায়ই ফোনে কথা, হঠাৎ হঠাৎ একজন আরেকজন কে স্কুল-ড্রেসে দেখা, খুব বেশি হলে মিনোভা ওর লম্বা চুল টা স্কুল থেকে বের হবার আগে বাথরুমে যেয়ে বেনী খুলে পিঠের উপর ছড়িয়ে বের হয় অমির দেখার জন্য। আর বাসায় যেয়ে ফোনে এই নিয়ে গল্প আর কল্পনা।



কয়েকদিন হল মিনোভার ফোন নাই। কই যে গেল মেয়েটা। হ্যা, অমি এখন মিনোভার বাসার নম্বর জানে, ওর গলার আওয়াজ চেনে। কিন্তু ফোন ধরে অন্যকেউ।

এর মধ্যে একদিন টিফিন টাইমে স্কুল পালিয়ে আগে আগে মিনোভার স্কুলের সামনে দাড়িয়ে থেকেও দেখেছে, মিনোভা বা ওদের গাড়ী কোনটাই দেখেনি।



ফোন এল। জ্বর ছিল। দুর্বল অনেক। তাই স্কুলে যায়না। টেস্ট দিয়েছে। রিপোর্টে নাকি কি সমস্যা। আবার করছে এবার। দুইদিন নাকি পি.জি হাসপাতালে ছিল।



দিন দিন কথা কম হচ্ছে। দেখা হয় ই না। এ কেমন শরীর খারাপের নমুনা! বছর ঘুরে গেল। অমি ক্লাস নাইনে। মিনোভার এইটে ওঠার কথা, পরীক্ষা নাকি হাফ ইয়ারলী ফাইনাল কিছুই দিতে পারেনি। তাই সেভেনেই রয়ে গেছে।



রগচটা অমির কেমন ভেতরে ভেতরে কান্না পায়। এই সমপর্কের মধ্যে এখন আদর রাগ থেকে অমির বকা এমনকি মাঝে মাঝে গালি (!)ও আছে। মিনোভা মেয়েটা কেমন যেন। অমি যেন ওর কাছে বাচ্চা। আদর দিয়ে কথা বলেই যায়। গালি খেয়েও আল্লাদ করে যায়।

অমি প্রমিস করে একদিন মিনোভাকে, আর রাগারাগি করবেনা। মিনোভা হাসে।

“পাগল সোনা আমার। তুমি বোঝ তোমার গালাগালিটাও যে আমার? তোমার শত্রুর জন্যেও কিছু রাখিনাই আমি।”



অনেকদিন হল মিনোভা ফোন করেনা। একবার বলেছিল ওর নাকি লিউকেমিয়া হয়েছে। আরেকবার বল্ল কি যেন। তবে মাথার নাকি চুল পড়ে গেছে কি একটা “ray” দেয়ার পর। মিনোভা স্কুলে যায়না। মাঝে মাঝে বাসায় আসে। হাসপাতালে থাকে বেশিরভাগ। অমি দুয়েকবার হাসপাতালের গেটে যেয়ে মিনোভাকে গাড়ি থেকে নামতে দেখেছে। সেই ওদের একজন আরেকজনকে স্কুল-ড্রেস ছাড়া দেখা। শেষ দুবার দেখলো মিনোভা আরো ফর্সা তবে মাথায় স্কার্ফ পড়া।

কিন্ত এবার ফোন না করার সময় বেড়েই যাচ্ছে। প্রায় দুই মাস পেরিয়ে গেল। বাসায় ফোন করেও লাভ হয়না। মিনোভা ধরেনা। বাসার ঠিকানা ধরে যেয়েও সামনে দাড়িয়ে চলে এসেছে অমি। কিভাবে জানতে চাবে মিনোভার কথা?



একদিন সুযোগ আসে। নিউমার্কেটের উল্টা পাশে কয়েন বক্স ফোনে একটা মেয়েকে ফোন করতে দেখে অনুরোধ করে মিনোভাকে ফোনে চেয়ে দিতে। মেয়েটা মুচকি হেসে ফোন করে কথা বলে ফোন রেখে দিয়ে তাকিয়ে বলে “বাসায় যে ফোন ধরেছিল বল্ল দুই মাস আগে মারা গেছে। এরপর কাঁদছিল, তাই ফোন রেখে দিলাম।”

কেন যেন বিশ্বাস হলনা। দুই-তিনদিন কয়েন বক্স ফোনের আশেপাশে ঘুরঘুর করে আরেকজন মেয়েকে দেখলাম, অনুরোধে ফোন করল। একি কথা জানাল।



মায়া কাটানো যায়, ভালবাসা কাটানো কি যায়?

একটা ছবিও যে বাবা মার কাছে ধরা পড়ার ভয়ে রাখা হয়নি। অমি তো এটাও জানেনা মিনোভার কবর কোথায়



মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৩ বিকাল ৪:৪৮

শায়মা বলেছেন: কি সাংঘাতিক!!!


ভীষন মন খারাপ করা।


প্রিয়তে রেখে দিলাম ভাইয়া।:(

২| ০৪ ঠা আগস্ট, ২০১৪ দুপুর ১:১২

এনটনি বলেছেন: অবশ্যই আপু। অনেক ধন্যবাদ

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.