নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধ্রুবতারা

এম বি ফয়েজ

সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকা এবং জেনে-শুনে সত্য গোপন করা কোন ব্লগারের কাম্য হওয়া উচিত নহে।

এম বি ফয়েজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

'সালাফি-ওহাবী বর্বরতায় মিশরে খেলাফত প্রতিষ্ঠিত হবে?’

০৯ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ২:৪৯

সালাফি মতবাদ বিশ্ব সাম্রাজ্যবাদী শক্তির হাতেই গড়ে তোলা একটি ফিরকা এবং সালাফিদের বর্বরতাকে ইসলামের চেহারা হিসেবে তুলে ধরতে চায় সাম্রাজ্যবাদীরা। আমরা যদি বিভিন্ন ধর্ম বা ধর্মীয় উৎসগুলো নিয়ে গভীরভাবে পর্যালোচনা করি তাহলে দেখতে পাবো বহু ধর্ম কালের পরিক্রমায় বিভিন্ন মাযহাব বা ফের্কায় বিভক্ত হয়ে গেছে। মহান ঐশী ধর্মগুলোর ক্ষেত্রেও এ সত্য সমানভাবে প্রযোজ্য। ধর্মগুলোর প্রবর্তন করেছিলেন যাঁরা,তাদেঁর সাথে কালগত দূরত্ব সৃষ্টির কারণে এইসব মাযহাব আর ফের্কার জন্ম হয়েছে। আর হ্যা, এ ধরনেরই আরেকটি ফের্কা হচ্ছে 'ওহাবি' ফের্কা।

নিঃসন্দেহে ঐশী ধর্মগুলোতে এতোসব ফের্কা আর মাযহাবগত মতপার্থক্য এসেছে মানুষের চিন্তা থেকে। কেননা আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা সকল নবী-রাসূলেরই লক্ষ্য বা মিশন ছিল এক আল্লাহর প্রার্থনা বা একত্ববাদের প্রতি মানুষকে আহ্বান করা। এক্ষেত্রে সকল নবীরই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল এক ও অভিন্ন এবং তাদেঁর সবাই মানব জাতিকে বিচ্ছিন্নতা পরিহার করে ঐক্যবদ্ধ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। সর্বশেষ ত্রাণকর্তার আবির্ভাব এবং জুলুম নির্যাতনের অবসান ঘটিয়ে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করাও সকল ঐশী ধর্মের অভিন্ন বিশ্বাস। একইভাবে সকল ঐশী ধর্ম এ ব্যাপারে অভিন্ন বিশ্বাস পোষণ করে যে, ওহী আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে-যা সকল মারেফাত বা আধ্যাত্মিকতার উৎস। তবে ইতিহাসের কাল পরিক্রমায় আমরা লক্ষ্য করবো,সামাজিক পরিবেশ-পরিস্থিতি, লোভ-লালসা এবং পার্থিব মুনাফার লোভে অথবা অন্য কোনো দুরভিসন্ধিমূলক চিন্তার কারণে কোনো কোনো ব্যক্তির মাঝে ধর্ম সম্পর্কে ভুল উপলব্ধির প্রকাশ ঘটেছে।

পৃথিবীর প্রাচীনতম সভ্যতার দেশ নীল নদীর তীরে গড়ে উঠা মিশরও আজকের ঐ সালাফি-ওহাবী বর্বরতায় ছেয়ে গেছে। বিগত ১৯২৮ সালে মিশরের ইখওয়ানুল মুসলিমিনের যাত্রা শুরু হলেও সুদীর্ঘ ৮৪ বছর পর ২০১২ সালে সংগঠনটির কোনো নেতা দেশটির প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করলে গত মাসে সালাফি এবং ওহাবীরা তাদের বর্বর তাণ্ডব চালিয়ে একদল শিয়া মুসলমানদেরকে হত্যা করে। ইখোওয়ানুল-মুসলিমিন দলের পরিভাষায় তারা দেশটিতে তথাকথিত “খিলাফত” প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। কিন্তু শিয়ারা যে মুসলমানদের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং তাদেরকে স্বীয় ধর্মীয় অনুভূতি ও রাজনৈতিক স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত রেখে খিলাফত প্রতিষ্ঠা অসম্ভব—সে কথা দলটির সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতারা মানতে নারাজ। আবার কারো কারো মতে শিয়ারা “কাফের”। তবে মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান শেইখ আহমাদ আততাইয়্যেব বলেছেন, শিয়া মুসলমানদেরকে কাফির বলা অগ্রহণযোগ্য এবং তিনি শিগগিরই শিয়া মুসলমানদের পেছনে নামাজ আদায় করবেন।

বার্তা সংস্থা বারাসা জানিয়েছে, আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান বলেছেন, আমাদের মধ্যে এ ধরনের অর্থহীন চিন্তাধারা প্রতিষ্ঠিত হলে আমরা মুসলমান ও আরবরা মুসলিম এবং আরব সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলব।

শেইখ আহমাদ আততাইয়্যেব আরো বলেছেন, বর্তমানে বিশ্বব্যাপী মুসলমানদের ঐক্য জরুরি হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম জাতিগুলোকে পরস্পর থেকে বিচ্ছিন্ন করার লক্ষ্যে ষড়যন্ত্র পাকানো হচ্ছে। ঐক্য ও সংহতি ছাড়া মুসলমানরা ভবিষ্যতে সম্মান অর্জন করতে পারবে না বলেও তিনি সতর্ক করে দিয়েছেন।

কোনো কোনো টেলিভিশন চ্যানেল শিয়া মুসলমানদেরকে কাফির হিসেবে প্রচার করায় তার প্রতিবাদ জানিয়ে মিশরের আল আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান বলেন, এটা গ্রহণযোগ্য নয় এবং এ ধরনের বক্তব্যের পক্ষে কোনো যুক্তি পবিত্র কুরআন, হাদিস ও ইসলামী বর্ণনায় নেই।

তিনি আরো বলেন, শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের মধ্যে এমন কোনো মতপার্থক্য নেই যে তা তাদেরকে ইসলাম থেকে খারিজ করে দেয় এবং ইজতিহাদি বা গবেষণা-কেন্দ্রিক কিছু বিষয়ের রাজনৈতিক অপব্যবহারের কারণেই চলমান এ পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।

শেইখ আহমাদ আততাইয়্যেব মুসলমানদের যে কোনো শহর বা জনপদে সফর করতে, বিশেষ করে আমিরুল মুমিনিন হযরত আলী (আ.)’র পবিত্র মাজার ধারণকারী ইরাকের পবিত্র নাজাফ শহরেও সফর করতে প্রস্তুত বলে ঘোষণা করেন।

তার সঙ্গে দেখা করতে আসা একদল ইরাকিকে তিনি বলেছেন, আমি শিগগিরই ইরাক ও বিশেষ করে নাজাফ সফর করব এবং আমি শিয়া ও সুন্নি মুসলমানদের জন্য পিতার সমতুল্য।

উল্লেখ্য, মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের মুসলমানদের অন্যতম প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়। ফাতিমিয় শিয়া মুসলিম শাসকরা ঐতিহ্যবাহী এই বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছিলেন শত শত বছর আগে। বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয় সুন্নি বিশ্বের অন্যতম প্রধান ইসলামী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয়।

ইরানের শীর্ষস্থানীয় আলেম ও তেহরানের জুমা নামাজের খতিব হুজ্জাতুল ইসলাম কাজেম সিদ্দিকি সালাফি এবং ওয়াহাবিদের এ জঘন্য হামলায় মিশরের শিয়া মুসলিম আলেম হাসান শাহাতেসহ একদল শিয়া মুসলমানকে হত্যার নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, এই বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ড মুসলিম বিশ্বের জন্য একটি অশনি সংকেত বা বিপদ-ঘণ্টা। এ ধরনের অপরাধের ব্যাপারে জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলোর নীরব থাকা উচিত নয়। হুজ্জাতুল ইসলাম কাজেম সিদ্দিকি গত ২৮শে জুন, ২০১৩, তেহরানের জুমা নামাজের খোতবায় এইসব মন্তব্য করেছেন। উল্লিখ্য, আরব এবং মুসলিম বিশ্বের অনেক বুদ্ধিভিত্তিক আন্দোলনের সূচনা করেছে এ দেশ।

বলা বাহুল্য, গত ৩জুলাই, ২০১৩, দেশটির সামরিক বাহিনী এক রক্তপাতহীন সামরিক অদ্ভুলথানের মাধ্যমে গনভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুরসিকে গতিচ্যুত করার পর মুসলিম বিশ্বের দেশগুলো থেকে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া প্রকাশ পায়নি। সেটি মিশরের সাম্প্রতিক সালাফি-ওহাবী বদান্যতা ও ইখোওয়ানুল মুসলিমিন দলের গনভিত্তিহীনতার প্রতিফলন? এভাবে সালাফি-ওহাবী দৌরাত্ম চলতে থাকলে মিশরে সত্যিকার অর্থে “খিলাফত” প্রতিষ্ঠিত হবে?

(তথ্য সংগ্রহঃ রেডিও তেহরান)



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.