নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধ্রুবতারা

এম বি ফয়েজ

সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকা এবং জেনে-শুনে সত্য গোপন করা কোন ব্লগারের কাম্য হওয়া উচিত নহে।

এম বি ফয়েজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

মিশরে মুরসির উত্থান ও নাটকীয় পতনের নেপথ্য কাহিনী

১০ ই জুলাই, ২০১৩ রাত ১:০৬

শেষ পর্যন্ত মিশরীয় সেনা-প্রধান আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসির নেতৃত্বে পরিচালিত দেশটির বিশাল সেনা-বাহিনী সাধারন প্রতিবাদীদের দলেই ভিড়লো এবং এক নিদারুন ঠাট্টার পাত্র হলেন মিশরের রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ মুরসি। ৩জুলাই ২০১৩, এক রক্তপাতহীন সামরিক অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশটির প্রথম গনভোটে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইখওয়ানুল মুসলিমিন দলের প্রার্থী মোহাম্মদ মুরসি ক্ষমতাচ্যুত হন। এটা ট্রাজেডি না কমেডি—এ মুহূর্তে বলা মুশকিল। একমাত্র সময়ই এ প্রশ্নের জবাব দেবে। কিন্তু তাহরির স্কোয়ারে এক প্রতিবাদীর হাতে দরা প্লেকার্ড বুধবার রাতে সবার নজর কেড়ে নেয়। তাতে লেখা ছিল ‘মুরসি ও মিশরে মিলে না’। এখানে বলা যায় যে, মিশরের মানুষের প্রত্যাশা পূরনে ব্যর্থ হয়েছেন রাষ্ট্রপতি—এমন যুক্তির জোরেই বুধবার মোরসিকে ক্ষমতাচ্যুত করে সেনাবাহিনী। নাইল ডেল্টার এক গরীব চাষার ছেলে থেকে মিশরের প্রথম নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হওয়ার এ সফরটি মুরসির জন্য সহজ ছিল না। কিন্তু তা সম্ভব হয় একমাত্র মসলিম ব্রাদারহোডের প্রবল সমর্থনের জেরে। মাত্র একবছর আগেও তাঁকে বিদেশে তো দূরের কথা, দেশেও কেঊ চিনতেন না। ব্রাদারহোডের ভয় ছিল, পূর্বের মোবারক সরকারের অবশিষ্ট আমলাদের নিয়ে গঠিত নতুন সরকারে মুরসি হয়তো আটকা পড়ে যাবেন। তাছাড়া, মুরসির নিজের জনপ্রিয়তাও মিশরে তেমন প্রবল ছিল না। এবং দুর্বল অর্থনীতি ও একের পর এক জটিল ও ত্রুটিপূর্ন নীতি তৈরী করে তিনি ক্রমেই দেশবাসীর বিরাগভাজন হয়ে পড়েন। মিশরের সম্ভ্রান্ত মহল মুরসিকে বরাবর এক ধর্মান্ধ ও কট্টরপন্থী, আণ্ডারগ্রাউণ্ড গোপন সংঘের ভাঁড় হিসেবেই দেখেছে। একবছরের কার্যকালের মধ্যে কোনদিনও তাদের মনে আস্থা ও আশা জাগাতে পারেননি ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট মুরসি। গত জানুয়ারীতে তাঁর জার্মান সফরকালে তিনি যখন ইংরেজীতে দুটো কথা বলতে যান, বিরাট গণ্ডগোল বাঁধিয়ে বসেন। দেশের রাজনৈতিক মহলে তিনি সবার হাসির পাত্র হয়ে উঠেন। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে তিনি বার্লিনবাসীকে হতভম্ব করে বলেন, “গ্যাস ও মদে মিলে না।“ আসলে মুরসি মদ খেয়ে গাড়ী না চালানোর ব্যাপারেই কিছু একটা বলতে চেয়েছিলেন। পরবর্তীতে এ মন্তব্য নিয়ে ইন্টারনেট সহ অন্যান্য প্রচার মাধ্যমে বিস্তর হাসিঠাট্টা হয়। এমনকি, এক কৌতুক-শিল্পীকে রাষ্ট্রপতিকে অপমান করার দায়ে আটকও করা হয়। কাজেই, বুধবার প্লেকার্ডের লেখাটি তাহরির স্কোয়ারে আরোও একবার হাসির ফোয়ারা ছোটায়। ওকলাহোমা ইউনিভার্সিটির ইসলামী আরব রাজনীতির একজন বিশেষজ্ঞ, সামের শেহাতা মিশরে মুরসির ভাগ্য ও বর্তমান পরিস্থিতির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বললেন, ‘গনতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকারকে সেনা ক্ষমতাচ্যুত করেছে। আর এতেই আহ্লাদে আটখানা হয়েছেন উদারপন্থী। আসলে মিশরের রাজনীতিটাই হল এরকম। ওখানে এমন সব গনতন্ত্রপন্থীদের আধিপত্য চলে যারা কিনা উদারপন্থী নন। আবার উদারবাদীরাও কিন্তু ঠিক গনতান্ত্রিক না।‘ মুরসির জয়ে অনেকেই এক গনতান্ত্রিক মিশরের স্বপ্ন দেখেছিলেন। কিন্তু তখনও দেশি-বিদেশী বিশ্লেষকরা বলেছিলেন, তাঁর পথ মোটেও সহজ হবে না। ক্ষমতায় টিকে থাকতে হলে তাঁকে সেনাবাহিনীর সংগে আপোস করতে হবে। বাস্তবে, ক্ষমতা গ্রহন করেই সামরিক বাহিনীকে রীতিমত চ্যালেঞ্জ করে বসেন মুরসি। গতবছর গন-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের তদন্তের নির্দেশ দেন তিনি। এছাড়া পার্লামেন্ট বিলুপ্তি ও পুনরুজ্জীবিত করা নিয়ে সামরিক বাহিনীর সুপ্রিম কাউন্সিল ও সর্বোচ্চ সাংবিধানিক আদালতের সংগেও মুরসির বিরোধ চরমে পৌছে। মিশরের ততকালীন সশস্ত্রবাহিনীর প্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী ফিল্ড মার্শাল হুসেইন তানতাবি ও সামরিক বাহিনীর চীফ অফ স্টাপ সামি আনানকে অপসারন করেন মুরসি। তানতাবির জায়গায় সশস্ত্রবাহিনীর প্রধান ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী করা হয় জেনারেল আব্দেল ফাত্তাহ আল সিসিকে। দুই জেনারেলকে বরখাস্ত করার পাশাপাশি মুরসি সামরিক পরিষদের আনা প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা খর্বকারী সাংবিধানিক সংশোধনীও বাতিল করেন। একটি বিতর্কিত ডিক্রী জারি করে নিজের ক্ষমতা বাড়ানোর চেষ্টা করেন। সমালোচকদের মতে, মিশরে অংশগ্রহনমূলক গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারেননি ইসলামি প্রেসিডেন্ট মুরসি। রাষ্ট্র পরিচালনায় বিরোধীদের আস্থায় নিতে পারেননি তিনি। তাই শুরু থেকেই তাঁকে নানামুখী বিরোধিতায় পড়তে হয়েছে। শরিয়া আইনকে মিশরের নতুন সংবিধানের ভিত্তি করেছিলেন মুরসি। এটা ছিল হোসনি মোবারক-বিরোধী অভ্যুত্থানের চেতনার পরিপন্থী। তাছাড়া, সংবিধানে নারী ও সংখ্যালঘুদের অধিকারের বিষয়েও বৈষম্য করা হয়েছে। এ পদক্ষেপে সংখ্যালঘু ও উদারবাদীরা ক্ষুব্ধ হন।

মুরসির অকাল পতন ও মিশরের বর্তমান পরিস্থিতির জন্য মুরসির অদূরদর্শিতা দায়ী বলে অভিমত ব্যক্ত করেছে ইসলামিক গনপ্রজাতন্ত্র ইরান। সৌদি আরব, আমিরাত ও জর্দানই প্রথম আরব দেশ যারা মিশর সেনাবাহিনীর এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। সৌদি আরবের রাজা আব্দুল্লাহ বিন আব্দুল আজিজ এক বার্তায় মিশরের জনগণকে শুভেচ্ছা জানিয়ে দেশটির সেনাবাহিনীর গৃহীত সব পদক্ষেপের প্রতি সংহতি প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, সেনাবাহিনী সংকট থেকে মিশরকে উদ্ধার করেছে এবং তারা দূরদর্শিতার সঙ্গে সব পক্ষের রাজনৈতিক অধিকার রক্ষা করবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.