নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ধ্রুবতারা

এম বি ফয়েজ

সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকা এবং জেনে-শুনে সত্য গোপন করা কোন ব্লগারের কাম্য হওয়া উচিত নহে।

এম বি ফয়েজ › বিস্তারিত পোস্টঃ

‘মোদি-সুনামি’, গগৈর ঔদ্ধত্যে কংগ্রেসের ভরাডুবি অসমে।

৩১ শে মে, ২০১৪ রাত ৩:২৫

গোয়াহাটী ৩১মে (এম বি ফয়েজ)

পরিবর্তনের ঢেউয়ে অসমেও উড়ে গেছে কংগ্রেসের সুরক্ষিত দুর্গ। প্রবল মোদি হাওয়া সুনামি হয়ে যেভাবে আছড়ে পড়েছে দেশজুড়ে তা থেকে বাদ যায়নি অসমও। বিজেপির চমকপ্রদ উত্থানে ধূলিসাৎ হয়েছে কংগ্রেস এ রাজ্যে। মুখ্য মন্ত্রী তরুন গগৈর ঔদ্ধত্য বাস্তবের মাটিতে মিশে গেছে। গতি ১৩ বছর ধরে রাজ্যের শাসম ক্ষমতায় যারা, বিধানসভায় যাদের বিধায়ক সংখ্যা ৭৮, লোকসভা ভোটে তারাই কিনা পর্যুদস্ত হল। সাত থেকে কংগ্রেসের সাংসদ সংখ্যা একলাফে নেমে গেল তিনে। বিজয়কৃষ্ণ সন্দিকৈ, পবন সিং ঘাটোয়ার, রানি নরহ, কিরিপ চলিহার মতো হাইপ্রোফাইল ও হেভিওয়েট নেতাদের ভরাডুবি ঘটল। গনতন্ত্রের পরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ন হওয়া তো দূরের কথা, গেরুয়া ব্রিগেডের কাছে রীতিমত নাস্তানাবুদ হয়েছেন রথী-মহারথীরা। রাজনীতির ময়দানে নবাগত তরুন গগৈ তনয় গৌরব গগৈ, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সন্তোষ দেব তনয়া সুস্মিতা দেব ও প্রবীন নেতা বীরেন সিং ইংতির হাত ধরে মুখরক্ষা হল শাসক পক্ষের। মুখ্যমন্ত্রী গগৈ হয়তো এমন বিপর্যয় স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারেননি। তাঁর ক্ষমতার দাম্ভিকতা এবং অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস কংগ্রেসের ভরাডুবি ডেকে আনলেও দেওয়াল লিখন পড়তে পারেননি তিনি। অথবা ইচ্ছা করেই হয়তো বাস্তব সত্যকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করে গেছেন।



তবে, গগৈ মন্ত্রীসভার অন্যতম দাপুটে মন্ত্রী তথা সরকারের মুখপাত্র ড০ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বিগত পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট প্রাপ্তীর হার হ্রাস-মুখী দেখে আগাম তার প্রতিকার নিতে মুখ্য মন্ত্রীকে অনুরোধ জানালে দাম্ভিক মুখ্য মন্ত্রী তাঁর স্বভাব সিদ্ধ ভঙ্গিমায় “বাদ দিয়া হে” বলে সে প্রস্তাব উড়িয়ে দেন। এছাড়া, বিটিএডিতে সংঘটিত বারংবার জাতিদাঙ্গায় নিরীহ সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের লোক নিহত হওয়ার ঘটনা কংগ্রেসের ভোট ব্যাঙ্কে দারুন থাবা বসিয়েছে। তাঁরই প্রমান হ’ল সাম্প্রতিক লোক-সভা নির্বাচনে কংগ্রেস সমর্থিত বিপিএফ প্রার্থী ইউ জি ব্রহ্মের সূচনীয় পরাজয়। বিটিএডির এই একটি মাত্র আসনে নির্দল প্রার্থী নব সরনীয়া ৩,৫৪,৭৪৬ ভোটের ব্যবধানে কংগ্রেস সমর্থিত বিপিএফ প্রার্থীকে ধরাশায়ী করে নির্বাচিত হন। অর্থাৎ নব সরনীয়া পেয়েছেন ৬,২৬,২৭৮ ভোট এবং ব্রহ্মের প্রাপ্ত ভোট হ’ল ২,৭৪,৭,৪৯ ভোট।



এ বারের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস যে দেশ থেকে ধুয়েমুছে সাফ হয়ে যাবে তাঁর পূর্বাভাস মিলেছে সবক’টি একজিট পোল সমীক্ষায়। অসমেও যে দলের তরী ডুববে তারও স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছিল; তবে দেশের তামাম সংবাদ মাধ্যম, ভোট বিশ্লেষক ও ভোট পণ্ডিতদের ভবিষ্যদ্বাণী তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন গগৈ। এআইইউডিএফ দলের সুপ্রিমো বদরুদ্দিন আজমলের পালে সংখ্যালঘু ভোটের হাওয়া লাগতে শুরু করেছে আচ করে লোকসভা ভোটের আগে ভাগে তাঁরই দলের বিচক্ষণ নেতা-মন্ত্রীরা গগৈকে সে হাওয়া মেসমেরিজমের মত ঘুরিয়ে দিতে উপদেশ দিলে গর্বিত তরুন পাল্টা হুঙ্কার ছুড়ে বললেন, “Who is Badaruddin?” আর লোক-সভা ভোটের ফলাফল দেখে এখন ঐ নেতা-মন্ত্রীরাই গগৈকে দোষারূপ করে বলছে, এ হ’ল তরুন গগৈর “বাদ দিয়া হে” ও “Who is Badaruddin?” বলার সুফল ফল।



চানক্যের বুথ ফেরত সমীক্ষায় দাবি করা হয়েছিল, কংগ্রেস ৪টি, বিজেপি ৮টি, এবং এইইউডিএফ ও নির্দল প্রার্থীরা একটি করে আসনে জয়ী হবেন। টানা তিনবার রাজ্যের শাসন ক্ষমতায় থেকে হ্যাটট্রিককারী তরুন গগৈর রাজ্যে সমীক্ষার পূর্বানুমান থেকেও কম, মাত্র তিনটি আসনে জয়ী হল কংগ্রেস। প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়ার চোরাস্রোত এবং ‘মোদি ম্যাজিক’ এখানেও যে মন্ত্রের মতো কাজ করেছে, তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিজেপির ক্ষেত্রে সমীক্ষার পূর্বানুমান মিলে গেল অক্ষরে অক্ষরে। সাতটি আসনে জিতে কংগ্রেসের সুরক্ষিত দুর্গ হিসেবে চিহ্নিত এ রাজ্যে ইতিহাস গড়ল বিজেপি। কেবল ইতিহাস নয়, দলের এটা এক রেকর্ড সৃষ্টিকারী সাফল্য। আর কংগ্রেসের হাল করুণার যোগ্য! উজান অসমে বাগান ভোট ব্যাঙ্ক, নিম্ন অসমে সংখ্যালঘুদের উপর একচেটিয়া আধিপত্য তাসের ঘরের মত ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল। সদিয়া থেকে ধুবড়ি, নগাও থেকে ডিব্রুগড় মাইক্রোস্কোপ দিয়েও খুজে পাওয়া যাবে না কংগ্রেসকে। ষোড়শ লোকসভা নির্বাচন একেবারে লেজে গোবরে একাকার করে ছেড়েছে সোনিয়া, রাহুল ও গগৈর নেতৃত্বাধীন শতবর্ষ প্রাচীন দলকে। অবশ্য রাজ্যের শিক্ষা ও স্বাস্থ্য দপ্তরের মন্ত্রী ড০ হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেছেন, “নরেন্দ্র মোদী গোয়াহাটী এসে নির্বাচনী সভায় কোন জাতীয় ইস্যু উত্থাপন করেননি। পানীয় জল, ডি ভোটার ইস্যু, অবৈধ অনুপ্রবেশকারী, দুর্নীতি দূরীকরণ ও উন্নয়নের কথা বলেই স্থানীয় সমস্যা জর্জর মানুষের মনে আসন করে নিয়েছেন; যাহা মুখ্যমন্ত্রী তরুন গগৈকে অনেক আগেই সমাধান করতে হয়েছিল।



লোকসভা ভোটে শোচনীয় পরাজয়ের পর এখন তরুন গগৈ মন্ত্রী-সভা ছোট-বড় দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। ৭৮ জন বিধায়কদের মধ্যে ৪৫ জনই গগৈর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রকাশ করে নেতৃত্বে পরিবর্তন চাইছেন। দলের হাইকমান্ড আগামী ১০ দিনের ভেতরে এ ব্যাপারে সুরাহা করছেন বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক তাবড় মন্ত্রী জানিয়েছেন।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.