নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যারা ইমান আনে এবং সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত রয়েছে নহর সমূহ ( আল কুরআন)“সত্য ও সুন্দরকে ভালবাসি, অন্যায়- অবহেলা দেখলে খারাপ লাগে, তাই ক্ষদ্র এ প্রয়াস “

মোঃ খুরশীদ আলম

মোঃ খুরশীদ আলম, চট্টগ্রাম

মোঃ খুরশীদ আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

“দুঃখ করো না, আবার দেখা হবে।”

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৮:৩২

“দুঃখ করো না, আবার দেখা হবে।”
========মোঃ খুরশীদ আলম

ব্যস্তময় শহুরে জীবনে একটু সময় বের করে বেড়িয়ে আসার তাগিদ হৃদয়ে অনুভব করছিলাম আরো আগে থেকে। সুযোগটা এসে গেল এই নভেম্বরে। তের তারিখ হতে পনের তারিখ মোট তিন দিনের নৈমিত্তিক ছুটির দরখাস্ত পেশ করা হল। উদ্দেশ্য একটাই, প্রিয়জনকে শহরের দৃষ্টিনন্দন স্থানগুলো দেখানো। শুরুতে একটা ছোট গল্প বলার অভিপ্রায় আছে। আশা করি গল্পটি ভাল লাগবে।

মিথ্যে বলে ছুটি নেয়াটা আমার একসময় দুরারোগ্য ব্যধি ছিল। ছাত্রজীবনে মিথ্যা বলে কতোযে ছুটি কাটিয়েছি তার ইয়ত্যা নাই। সেবার আমি অষ্টম শ্রেণীর ছাত্র। অজিত বাবু স্যার আমাদের সাধারণ বিজ্ঞান পড়াতেন। আজ স্যারের ক্লাশ আছে, আর দশ জনের মতো সাধারণ বিজ্ঞান বিষয়টিকে আমি যমের মতো ভয় করতাম। অপরদিকে স্যারের বেতের আঘাত সহ্য করার চেয়ে কয়েক গ্লাস নিমের জুস অনেক ভাল ছিল বলেই মনে হতো। কতো যে অভিসাপ দিয়েছি স্যারদের, তা মনে পড়লে নিজেকে বড্ড অপরাধী মনে হয়। যাহোক, যেহেতু আমার দাদা পূর্বেই ইন্তেকাল করেছেন সেহেতু দাদা ইন্তেকাল করেছেন বলে ছুটি নিলে মন্দ হবে না ভেবে স্যারের কাছ থেকে ছুটি নিলাম। কিন্তু হায়! ঐদিনই আমার মা বিদ্যালয়ে সুপুত্রের খোঁজ নিতে এসে আমার কির্তী সবিস্তারে জানতে পারলেন । সেইবার মা-বাবার হাতে যে মার খেয়েছি তা আজো মনে আছে। মারতে মারতে ন্যাড়া করে দিয়েছিল সেদিন। কি ভয়ংকর মা-বাবা! মনে হতো তখন। আর একদিন পূর্ব পরিকল্পনা মতো সিডিএ লোহার ব্রিজ পাড় হয়ে স্কুল পলিয়ে বেড়াচ্ছিলাম। কিন্তু বিধিবাম! সেই অজিত স্যারের কাছেই catch- caught- caught হয়ে পড়লাম। আহা! কি মার মেরেছেন স্যার, তা যদি দেখানো যেত।

এখন সময় অনেক বদলেছে। বাচ্চারা পড়ার ভয়ে মিথ্যা বলে স্কুল পালায় বলে মনে হয় না। পালালে তার সাথে অন্য কোন কারণ জড়িয়ে থাকে। পড়াশোনা এখন অনেক মজার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বদলে গেছি আমিও। কর্মজীবনে বছরে বিশ দিন নৈমিত্তিক ছুটি পেলেও বছরে আট-দশ দিন ছুটি বাকি থেকে যায়, কাটানো হয় না। বন্ধুকে নিয়ে বেড়াতে যাবার উদ্দেশ্যে এবার তিন দিন নৈমিত্তিক ছুটির দরখাস্থ পেশ করলাম। মজার ব্যাপার হলো চতুর্থ ও পঞ্চম দিন ছিল শুক্রবার ও শনিবার। যথারীতি পাঁচ দিনের লম্বা ছুটিতে বন্ধুকে নিয়ে বেড়িয়ে কাটিয়ে দেবার অভিপ্রায় মনে চেপে বসলো।

দশ নভেম্বর সকাল দশ ঘটিকায় প্রাণের বন্ধুকে চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন হতে রিসিভ করি। এতো সকালে চট্টগ্রাম শহরের কোন ফুল দোকান খুলেনি। তাই ফুল দিয়ে বরণ করে নেবার ইচ্ছাটা মনের ভেতরেই চাপা রইল, বাস্তবে রুপ নিলো না। আমাদের যাত্রা এখান থেকে শুরু। আমি-সে ও আমার বাইক।
আমরা দশ মিনিটের মধ্যে আগ্রাবাদ এসে পৌঁছলাম। হালকা জলযোগ সেরে বন্ধুর চাকুরীর দরখাস্তটা জমা দিয়ে ছুটলাম কাটগড়, মুসলিমাবাদে। চট্টগ্রামের ছেলে হিসাবে এখানকার আলো-বাতাস, পথঘাট সব কিছুর সাথে আমার একটু বাড়তি সখ্যতা। তাই গন্তব্যে পৌঁছাতে বেশী বেগ পেতে হয়নি। ঘণ্টা খানেকের মধ্যে আমরা লক্ষ্যে পৌঁছাতে সক্ষম হই। এটা ভাড়া বাসা, দুইটি বেড, বাথরুম, বারান্দা, ডাইনিং রুম, রান্নাঘর সব কিছু মিলিয়ে সাজানো গুছানো পরিপাটি ঘর। যে কোন ঘরের সাজগোছ দেখে আপনি এখানকার মালকিনের রুচিবোধ ও তার শিল্পকর্ম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান লাভ করতে পারবেন।

এই এলাকাটি বেশ ব্যস্ততম এলাকা। পতেঙ্গা থানাধীন এখানকার একদিকে কে. ই. পি জেড ও অন্যদিকে সি. ই. পি. জেড। অন্যদিকে রয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর ও ডিপো ইত্যাদি। দেশের লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে এখানে। চাহিদা ও যোগান মিলে এখানকার ছোট ছোট ঘরগুলোর ভাড়াও অনেক বেশী। শুধু কাটগড় এলাকাই নয়- ইপিজেড, বন্দরটিলা, ষ্টিল মিল, হোসেন আহাম্মদ পাড়া, চারিহালদা সহ চতুর্দিকে বছরের যেকোন সময় যেকোন লোকালয় হতে ঘর ভাড়া বেশি। বিকেল পাঁচটা হতে এই এলাকাগুলোতে মানুষের ঢল কি পরিমাণ ব্যস্ততা সৃজন করে তা না দেখলে বুঝা সম্ভব নয়।

পরের দিন চৌদ্দ নভেম্বর। চট্টগ্রাম জাতিতাত্বিক জাদুঘর ও বায়েজিদ বোস্তামী (রহ) মাজার পরিদর্শনে বের হলাম। মুসলিমাবাদ হতে আগ্রাবাদ কম পথ নয়। তার মধ্যে সড়ক উন্নয়নের কাজ, রাস্তার খোঁড়াখুড়ি, রাস্তার জ্যাম ইত্যাদি মিলিয়ে ভ্রমণের আনন্দে অনেকটাই মলিনতা সৃষ্টি করে।


[ জাতিতাত্বিক জাদুঘর, চট্টগ্রাম এর সম্মুখ ভাগ]

চট্টগ্রাম শহরের প্রাণকেন্দ্র আগ্রাবাদ বাণিজ্যিক এলাকার বাদামতলি মোড় হতে কমার্স কলেজ রোড ধরে বিশ কদম এগিয়ে গেলেই দেখতে পাবেন এশিয়া মহাদেশের অন্যতম জাতিতাত্বিক জাদুঘর, চট্টগ্রাম জাতিতাত্বিক জাদুঘরটি। অপরটি রয়েছে সূর্যোদয়ের দেশ জাপানে। ঊনিশশত পঁয়ষট্টি সনে এক দশমিক দুই পাঁচ একর স্থানের উপর নির্মিত এই জাদুঘরে ঊনত্রিশটি নৃতাত্বিক গোষ্ঠির জীবনধারা, পঁচিশটি আদিবাসী, পাঁচটি বিভিন্ন দেশের জাতিতাত্বিক তুলনামূলক বিশ্লেষণ, আমাদের দেশের বিভিন্ন উপজাতির জীবনধারা প্রদর্শীত হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠির ব্যবহৃত অস্ত্র, ফুলদানি, কাপড়, নৌকা, কাঁচি, অলংকার, বাঁশের পাইপ, তামাক সাজাবার পাত্র, শিকার করার অস্ত্র যেমন- তীর, ধনুক, বল্লম ইত্যাদি প্রদর্শন করা হয়েছে। যাদুঘরের ভবনের সামনে সবুজ বাগানটি আপনাকে আবশ্যই আকর্ষণ করবে। আগে টিকেট কাউন্টার ভবনের ভিতরের অংশে থাকলেও এখন তা একটু এগিয়ে মূল ফটকের পাশে স্থানান্তর করা হয়েছে। পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই বলে গাড়ি নিয়ে আগন্তুকদের কখনো বিড়ম্বনার মুখোমুখি পড়তে হলেও ভ্রমণ পিয়াসী মানুষের কাছে এটা কোন সমস্যা নয়।

অপরাহ্নের বেশ কিছুপূর্বে আমরা ভেতরে প্রবেশ করি। এখানে আমি নতুন নই। মনে পড়ে স্কুল পালিয়ে এখানে বেশ কয়েকবার এসেছিলাম। গ্যলারি মোটামুটি বড় হওয়ায় বেশ কিছু সময় এখানে অতিবাহিত করা সম্ভব হত। যা হোক, গেটের ভিতরে প্রবেশ করেই আমার ছবি পাগল বন্ধুটি বাইরের ও ভেতরের বেশ কিছু ছবি তুলে নিল। ধীরে ধীরে তাকে চারটি গ্যালারিই ঘুরিয়ে দেখালাম। সে প্রত্যেকটি নিদর্শন খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছিল আর প্রশ্ন করে জেনে নিচ্ছিল তার যত জিজ্ঞাসা।


[জাদুঘরের ভিতরে রক্ষিত আদিবাসিদের মিউজিক্যাল সরঞ্জাম]



[প্রাচীন সিন্দি, পাকিস্তানের পারিবারিক জীবনযাত্রা]


এটি সুলতানুল আরেফিন নামে খ্যাত হযরত বায়েজিদ বোস্তামী (রহ) এর মাজারের সামনের অংশ। আমরা এখানে এসে পৌঁছাই আসরের নামাযের কিছুটা পূর্বে। বায়েজিদ বোস্তামী এর নামে এই মাজারের নামকরণ করা হয়েছে মর্মে জনশ্রুতি থাকলেও হযরত এখানে কখনো এসেছিলেন তার কোন ঐতিহাসিক দলিল পাওয়া যায়নি। চট্টগ্রামের নাসিরাবাদ এলাকায় সেনানিবাসের পাশে একটি বড় পাহাড়ের উপরে অবস্থিত এই মাজারটি পূর্ণার্থীদের মিলনমেলা ও একটি পর্যটন এলাকা হিসাবে খ্যাতি পেয়েছে অনেক আগেই। সাপ্তাহিক ছুটিতে এখানকার উপচে পড়া ভিড় আপনার মনে ভাবান্তর জাগাতে বাধ্য। চট্টগ্রামের বাইরে থেকে আগত যে কোন পূর্ণার্থীরই কাম্য থাকে হযরতের মাজার জেয়ারত করার। আমার ভ্রমণ পিয়াসী বন্ধুটিও এর ব্যতিক্রম ছিল না।


[বায়েজিদ বোস্তামী (রহ) এর দরগাহের সম্মুখভাগ]

আপনি লক্ষ্য করবেন মাজারে প্রবেশের সম্মুখভাগ হতে উপরে উঠার সিড়ি পর্যন্ত অসংখ্য দোকান বিভিন্ন মিষ্টি জাতীয় খাবার বিশেষত পাউরুটি, কলা, মোম, আগরবাতি ইত্যাদির পসরা সাজিয়ে বসে আছে। এখানকার কাছিমগুলোকে মানুষ বিভিন্ন আশা আকাঙ্খা পূরণের নিয়্যতে খাবার দেয়। মাজারের সম্মুখে সুবিশাল দিঘী ও তার নীল জল এবং এখানকার কাছিমগুলো আমার বন্ধুর নজর আকর্ষণ করেছে। খুব মনোযোগ দিয়ে দেখছিল সে প্রত্যেকটি দৃশ্য; এ অনুভূতি আমাকে যে কিরুপ আভিভূত করেছে তা কেবল আমিই জানি। এই দিঘীর কাছিমগুলো আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বিরল ও একটি বিপন্ন প্রজাতি যা এই মাজারের এই দিঘীটি ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও সন্ধান পাওয়া যায় না। স্থানীয়ভাবে এখানকার কাছিমগুলোকে মাজারী ও বড় গজার মাছগুলোকে গজারী বলে অভিহিত করা হয়।



[মাজারের সামনের অংশের দিঘীর কচ্ছপ]

আমার বন্ধু উপরে উঠতে চাইল। মেয়ে মানুষ বলে তাকে ওযু করে উঠতে বললাম এবং কেননা মাজারে জ্বীন থাকে বলে তাকে ভড়কে দিলাম। সে আমার কথা বিশ্বাস করলো এবং অযু করে উপরে উঠে গেল। সিড়ির পাশেই রয়েছে জুতা পাহাড়া দেয়ার লোক। দশ টাকার বিনিময়ে আমরা দুজনের দুই জোড়া জুতা জমা দিয়ে উপরে উঠে গেলাম। মাজারের উপরের অংশে ইট বিছানো রাস্তার দুই পাশে অসংখ্য ভিক্ষুক নজরে পড়লো। এরা এখানকার সব। একজনকে দিয়েছেন তো হয়েছে, সকলে আপনাকে ঘিরে ধরবে। তথ্যটি আমার বন্ধুটিকে জানিয়ে দিলাম। কিন্তু এই তথ্য তার কাছে নতুন বলে মনে হলো না, কারণ সে আগে থেকেই তা জানে।
আমি হেঁটে সূরা ফাতিহা, সূরা এখলাস আর দুরুদ শরীফ পড়তে লাগলাম। আমার বন্ধুটিও অনুরুপ পড়তে লাগল। কবরের পাশে দাঁড়িয়ে দোয়া করতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নাই, সেও তা জানত। ছোট রাস্তার দুইপাশের চাঁপাফুল গাছগুলো তাগা ও রঙ্গিন সুতোর ভারে স্বাভাবিকতা হারিয়েছে অনেক আগে, তাদের স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক মোটা দেখাচ্ছিল।
আমরা ফেরার পথে। সিঁড়ির নিচে একজন অল্প বয়সী নারী ভিক্ষুক হাত বাড়িয়ে দিল। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম বিশ টাকা হতে দশ টাকা রেখে দশ টাকা ফেরত দিতে পারবে কিনা। হেসে প্রথমে না বলেন। আমি বললাম তাহলে দিবো না, সুযোগ একবারই আসে। তিনি হাসলেন এবং দশ টাকা রেখে দশ টাকা ফেরত দিলেন। আমরা ভেতরে বাইরে আরো কিছুক্ষণ হাঁটলাম। আবার দেখা হল সেই ভিক্ষুক মেয়েটির সাথে। মেয়েটি ভাইয়া সম্বোধনে আমাদের দিকে তাকিয়ে এক রহস্যময় হাসি দিল। এই হাসির অর্থ আমি খুঁজিনি। কিন্তু বুজেছি যে, পৃথিবীর বুকে এতো সুন্দর হাসি আমি কোন দিন দেখিনি। আমার কানে বাজে তার সেই “ভাইয়া” ডাকটি আর চোখে ভাসে তার সেই অসম্ভব সুন্দর হাসি। সুখে থাক বোন তুই তোর প্রিয়জনদের নিয়ে।


[বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার]

সন্ধ্যায় ফেরার পথে আমরা বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার দিয়ে এগুচ্ছিলাম। চারদিকের আলো, উঁচু দালানকোঠা, সন্ধ্যারাতের চট্টগ্রামকে একটা ভিন্ন ধরণের মাত্রা দিয়েছে। ফ্লাইওভারের সৌন্দর্য, বাতাস কেটে এগিয়ে যাওয়া আমাদের অনুভূতিকে আরো তীক্ষ্ণ করেছিল। দুই হাজার দশ সালে এই ফ্লাইওভারটির ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দুই হাজার বার সালে ফ্লাইওভারের এক অংশের গার্ডার ধসে অনেক শ্রমিক আহত ও নিহত হয়। চট্টগ্রামের জনসাধারণের যোগাযোগে বহদ্দারহাট ফ্লাইওভার এক সোনালী অধ্যায়ের সূচনা করে।



রাত আটটার দিকে আমাদের যাত্রা শেষ হয়। সারা দিনের ক্লান্ত শরীর। আমরা ফিরে আসি আমাদের নিড়ে। এর মাঝে নেভাল গিয়েছি, নেভাল থেকে কাটগড় পযন্ত জনমানবহীন সবুজ সড়কে বাইক চালানোর মজাই আলাদা।

আর কিছুক্ষণ পর (আঠার নভেম্বর বিকাল পাঁচটা) চট্টগ্রাম রেলওয়ে স্টেশন হতে চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে আমার এই বন্ধু রওয়ানা দিবে, সেখান হতে লঞ্চে বরিশাল যাবে। চট্টগ্রামে যদিও আমি তাকে রিসিভ করেছিলাম কিন্তু বিদায় বেলায় পুরো আকাশের সকল মেঘ মাথায় ভর করল যখন তার ফোন পেয়ে জানতে পারি তাকে Good buy জানানো যাচ্ছে না। সে বিকাল সাড়ে চারটায় ফোন করে জানিয়ে দিল, “তোমার সাথে দেখা হবে না, সমস্যা আছে।” আমি কিছুতেই নিজেকে সামাল দিতে পারছিলাম না। তার নিষেধাজ্ঞা আমাকে দুঃসাহসী করে তুললো। ঝড়ের গতিতে বাইক চালিয়ে স্টেশন চলে এলাম। হণ্যে হয়ে তাকে খুঁজছি, কোথাও তার দেখা মিলছে না। এমন সময় ফোন দিয়ে বললো “ কেন এসেছ, তুমি চলে যাও।” আমি কোনভাবেই নিজেকে বুঝাতে পারছিলাম না। তাই আকুতি জানিয়ে তাকে বললাম, “আমি তোমার সাথে কোন কথা বলব না, তুমি বগীর বাইরে এসে দাঁড়াও, দূর থেকে শুধু একবার দেখব, আর কোন দিন তোমাকে বিরক্ত করব না।” কিছুক্ষন পরে সে ফোন দিয়ে জানাল “ আস” । আমি বগীতে গিয়ে উঠে দাঁড়ালাম। কিছুতেই কান্না চাপিয়ে রাখতে পারিনি, ওর চোখে ধরা পড়ে যাই। ও সান্তনা দিয়ে জানাল – “কান্না করো না, আবার দেখা হবে।”

ট্রেন ছাড়ার আরো বিশ মিনিট বাকী। আমি বগীর বাইরে, ওতার নিজ আসনে বগীর ভেতরে। কথা হলো অনেকক্ষণ। আমার কান্নামাখা কথাগুলো তার হৃদয়ে কতটা আঁচড় কেটেছে তা আমি জানিনা। তবে তার শেষ কয়েকটি বাক্য আমার হৃদয়ে আঁচড় কেটেছে। তার শেষোক্ত কথাগুলো হয়তো হৃদয় থেকে কখনো মুছে যাবে না। সে বললো- “ সময় আমাদের আলাদা দেখতে চায়না বলেই এতো বাঁধা সত্বেও তোমাকে আমার কাছে নিয়ে এসেছে। দুঃখ করোনা, আবার দেখা হবে।”
ট্রেন ছাড়ার পূর্ব পযন্ত তার হাত ধরা ছিল। ট্রেন ছেড়ে দিল। আমি তাকিয়ে রইলাম তার চলে যাবার পথে, সেও আমার দিকে তাকিয়ে রইল। একসময় ট্রেন অনেক দূরে চলে গেল, আমার দৃষ্টিসীমার বাইরে। ভাল থেক তুমি। আবার দেখা হবে, এই স্টেশনে ইনশাআল্লাহ


২৮-১১-২০১৮খ্রি. রাত ১২: ২০ মিনিট।


মন্তব্য ৬ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:১১

হাবিব বলেছেন: ভ্রমনের সুন্দর বর্ণনা.......... কিন্তু কাছিমের ব্যাপারে যে কথা প্রচলিত আছে তা কতটুকু সত্য?

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৪৮

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: ওগুলো স্যার প্রচলিত কথা, “ প্রচলিত” কথাগুলো সাধারণত এলাকার মানুষজনের মুখে মুখে ছড়ানো ব্যাপার হয়ে থাকে। এগুলো শুধু শুনতে হয়, মানতে নয়। ধন্যবাদ স্যার, ভাল থাকবেন।

২| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৩২

নজসু বলেছেন:



ছাত্রাবস্থায় মিথ্যা বলে ছুটি নেয়া ।অনেকের স্বাভাবিক স্বভাব বলে গণ্য হতো।
এর মধ্যে বেশি প্রচলন ছিলো পেট ব্যথা।
এই বিষয়টার এতো চল হয়েছে যে পেট ব্যথার কথা সহজে আর কেউ বিশ্বাস করতে চায়না।
আপনার সাথে আমিও একমত এখন আর বাচ্চা কাচ্চারা মিথ্যা বলে স্কুল ফাঁকি দিতে চায়না।
পাঠদান, স্কুল এখন অনেক আনন্দের হয়েছে।

আপনার সাবলীল বর্ণনা ভালো লেগেছে।
ছবিগুলো আরেকটু বড় হলে দেখতে ভালো লাগতো।
বায়েজিদ বোস্তামী (র) এর দরগার ছবিটা যতো বড়, বাকিগুলো ততো বড় হলো ভালো হতো।

আজিজ স্যার আর আপনার ঘটনাটা খুব মজা পেলাম।
এই রকম স্মৃতির মতো কিছু কিছু স্মৃতি মানুষ যেন ইচ্ছে করেই মনে রাখে।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫১

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: আপনি অনেক গুছিয়ে সুন্দর করে মন্তব্য করেন, আমার ভাল লাগে।
ছবিগুলো কেন যে ছোট হলো তা আমি জানিনা, তবে একটা কারণতো আছে।
আমি অত ভাল ছবি তুলিও না।
যা হোক, আপনাকে ধন্যবাদ। অনুপ্রাণিত হলাম আপনার অংশগ্রহণে।

৩| ০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:০৭

রাজীব নুর বলেছেন: আমি জানি দেখা হবেই।

০২ রা ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:১০

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই। ভাল থাকবেন, সুস্থ থাকবেন আশা করি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.