নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যারা ইমান আনে এবং সৎকাজ করে তাদের জন্য রয়েছে জান্নাত যার নিচ দিয়ে প্রবাহিত রয়েছে নহর সমূহ ( আল কুরআন)“সত্য ও সুন্দরকে ভালবাসি, অন্যায়- অবহেলা দেখলে খারাপ লাগে, তাই ক্ষদ্র এ প্রয়াস “

মোঃ খুরশীদ আলম

মোঃ খুরশীদ আলম, চট্টগ্রাম

মোঃ খুরশীদ আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

তকদির বিশ্বাস মানুষের স্বাধীন ক্রিয়াকলাপের পরিপন্থি নয়

২৯ শে জুন, ২০২০ দুপুর ১২:১২



তকদির শব্দটি বাবে তাফয়িল এর মাসদার এবং এ শব্দটি ক্বাদরুন শব্দ হতে নিষ্পন্ন যার অর্থ হলো কোন বস্তুর পরিমাপ নির্ধারণ করা, ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি।
পারিভাষিক অর্থে তকদির হলো- প্রতিটি বস্তুর যথোপযুক্ত পরিমিত তথা সুন্দর-অসুন্দর, উপকার-অপকার এবং তাকে পরিবেষ্টনকারী সময় ও স্থান এবং তজ্জন্য প্রাপ্ত পুরষ্কার ও শাস্তি পূর্ব হতে নির্ধারিত থাকা। (শারহু আকাইদ নাসাফিয়্যা, 82)

প্রাথমিক আলাপচারিতায় যে তথ্য জানা দরকার :

ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের ঈমান ও আকিদা সহজ-সরল থাকায় রাসুল (স) এর নির্দেশ পাওয়ামাত্রই সাহাবায়েকেরাম তা পালন করার জন্য ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়তেন এবং খুটিনাটি ব্যাপার নিয়ে আদৌ মাথা ঘামাতেন না। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের সাথে সাথে অনারব বিভিন্ন জাতি ও সম্প্রদায়ের ইসলাম গ্রহণ ও তাদের মধ্যেকার পূর্ববর্তী ধর্মমত, আকিদা-বিশ্বাস ও ধ্যান-ধারণা অনুযায়ী তারা ইসলামের আকায়েদ সংক্রান্ত বিষয়গুলো ব্যাখ্যা করতে শুরু করে। ফলে ইমান ও আকিদার ব্যাপারে মুসলমানদের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দিতে থাকে। আকাইদ সম্পর্কীত বিশ্বাসমালার ব্যখ্যা করতে গিয়ে নানাবিধ দলের সৃষ্টি হয় এবং বিবাদ-বিরোধ তৈরী হয়। প্রখ্যাত কালামবিদ আব্দুল করীম শাহরেসতানী তার “কিতাবুল মিলাল ওয়ান্ নিহাল” নামক প্রসিদ্ধ গ্রন্থে মুসলমানগণ যে চারটি প্রধান বিষয়ে মতবিরোধের ফলে বিভিন্ন দল ও উপদলে ভাগ হয়ে পড়েছিলেন তা বিস্তারিত তুলে ধরেন।
প্রথমত- কর্ম ও ইচ্ছায় মানুষের স্বাধীনতা আছে কি না ?
দ্বিতীয়ত- আল্লাহর সিফাত বা গুণাবলী আছে কি না ?
তৃতীয়ত- ঈমান ও আমলের সম্পর্ক কি? আমল কি ঈমানের অংশ না তা থেকে ভিন্ন?
চতুর্থত- ন্যায় ও অন্যায় নিরূপনে ওহী এবং বুদ্ধি- এই দুইটির মধ্যে কোনটি প্রধান ?
বলাবাহুল্য যে, এই চারটি প্রশ্নকে কেন্দ্র করেই মুসলমানদের মধ্যে নানা দল ও উপদল কিংবা মতবাদ গড়ে উঠে।

তকদিরে বিশ্বাসের গুরুত্ব :

তকদিরে বিশ্বাসের গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম। তকদিরে বিশ্বাস স্থাপন করা ফরজ যেমনটি আল্লাহর উপর ঈমান আনা ফরজ। তকদিরে বিশ্বাস ঈমানের একটি মৌলিক বিষয়। দুনিয়া ও তদস্থিত সমস্ত কিছুর তকদির আল্লাহ তায়ালা নির্ধারন করে রেখেছেন। প্রসঙ্গক্রমে আল্লাহ তায়ালা বলেন- “ তিনিই সৃষ্টি করেছেন এবং ভারসাম্য স্থাপন করেছেন, তিনি তকদির নির্ধারণ করেছেন। অতঃপর পথ দেখিয়েছেন। ” – সুরা আল আলা-2-3

মানুষের তকদির নির্ধারিত হয়ে আছে। পৃথিবীর শুরু হতে বর্তমান ও তার ভবিষ্যত তকদির মহান আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত হয়ে আছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-“ তারই কাছে অদৃশ্যের চাবি রয়েছে, এগুলো তিনি ব্যতিত কেউ জানেনা। তিনি জানেন যা কিছু আছে স্থল ও জলে। কোন পাতা ঝরে না, কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্যকণা জমিনের অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আদ্র কিংবা শুষ্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে। ” – সুরা আনআম- 59
রাসুল (সঃ) বলেন- “ সৃষ্টির সূচনালগ্নে আল্লাহ কলমকে সৃষ্টি করলেন এবং তাকে বললেন-লেখ। কলম বলল- হে পরওয়ারদিগার কী লেখব? আল্লাহ তায়ালা বললেন- কিয়ামত পর্যন্ত যত সৃষ্টি হবে সব কিছুর তকদির লেখ। ” (আহমাদ, আবু দাউদ)
ব্যতয় ঘটে তখন যখন একশ্রেণীর মানুষ প্রশ্ন তুলে যে, মহান আল্লাহ তায়ালা যদি দুনীয়া ও তদস্থিত সকল কিছুর পূর্বাপর অবস্থান ও ভবিষ্যত অবস্থা পূর্ব হতেই নির্ধারণ করে রাখেন তখন বান্দার মন্দভাল কাজের জন্য বান্দা স্বয়ং কেন দায়ী থাকবে-যেহেতু মহান আল্লাহ কর্তৃক সবকিছু পরিচালিত, নিয়ন্ত্রিত ও পূর্ব হতে নির্ধারিত হয়ে থাকে। তকদির সম্পর্কীত এই জিজ্ঞাসা আজকে নতুন নয় বরং বহু পুরনো। এই নিয়ে বিতর্কেরও ইতি নেই। বরং এটাই মনে হয় যে, মানুষ যত আধুনিকতার ছোঁয়া গ্রহণ করছে এ সম্পর্কীত জ্ঞান ততই বিলোপ সাধিত হচ্ছে।

স্বল্প জ্ঞানী ও পরিমিত জ্ঞানের অধিকারী মানুষ খুব অল্পতেই সিদ্ধান্তে পৌছে যায়। বিচার বিবেক ও ক্রমবর্ধমান-ক্রমহ্রাসমান জ্ঞানে সবকিছুর সত্যাসত্য স্পষ্টরূপে সত্যায়ন করা সর্বক্ষেত্রে সম্ভব হয়না। আবার সত্য নিরূপনের মাপকাঠি একমাত্র বিচার-বিবেকও নয়। বিচার-বুদ্ধি ও বিবেক দ্বারা যা এখন সত্য বলে প্রমাণিত তা কিছুকাল পরে ভুলও হতে পারে একমাত্র আসমানি জ্ঞান তথা ইলমে ওহি ব্যতিত। কেননা আসমানী জ্ঞান বা ইলমে ওহীর সত্যায়নকারী স্বয়ং মহান আল্লাহ এবং তার জ্ঞানের নূর প্রকাশিত হয়ে থাকে নবী-রাসূলগণের মধ্যদিয়ে। এই বিশ্বাসই ঈমান ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য পরিমাপ করে দেয়।
মহান আল্লাহ সৃষ্টির সেরা জীব মানুষকে অন্যান্য প্রাণীর মতোই 5টি ইদ্রিয় দান করেছেন যা দ্বারা মানুষ তার প্রতিদিনের কার্যাবলি সম্পাদন করে থাকেন। আর কি রয়েছে যেটি মানুষ ও হিংস্র প্রাণী তথা পশুজগতের মধ্যেকার পার্থক্য নিরুপন করেছে। নিশ্চয় সেটা হলো বিবেক বা জ্ঞান যেটির ব্যবহারে মানুষ তার অবস্থান দুনীয়ার অভ্যন্তরে এবং অদৃশ্য জগতে (পরকালের জীবনে) নিজের অবস্থান শীর্ষে তুলে ‍ধরতে সক্ষম হন।

পশুর মাঝে আছে পশু প্রবৃত্তি, ফেরেশতাদের মাঝে আছে সুপ্রবৃত্তি, মানুষের মাঝে আছে কুপ্রবৃত্তি বা পশুপ্রবৃত্তি এবং সুপ্রবৃত্তি। পশুর মাঝে সুপ্রবৃত্তি না থাকায় তার কাছ থেকে সব সময় পশুত্বসুলভ আচরণ প্রকাশ পেয়ে থাকে। ফেরেশতাদের মাঝে কুপ্রবৃত্তি না থাকায় তারা সর্বদা আল্লাহর তাসবিহ-তাহলিল পাঠে মশগুল থাকে। পশুর মাঝে সুপ্রবৃত্তি না থাকায় তার দ্বারা যেমন জৈবিক চাহিদা মেটানো ব্যতিত আর কোন কর্ম্ম সম্পাদিত হয়না তেমনি ফেরেশতাদের মাঝে কুপ্রবৃত্তি না থাকায় তাদের দ্বারা কোন কুৎসিত কর্মকান্ড প্রকাশ পায়না বরং তারা সর্বদা আল্লাহর তাসবিহ তাহলিল পাঠে মগ্ন থাকে। পক্ষান্তরে মানুষের মাঝে রয়েছে সু ও কুপ্রবৃত্তি। যে মানুষটা তার রিপুকে দমন করে সুপ্রবৃত্তির অনুশীলন করেন তিনি সৃষ্টির সেরা এবং ফেরেশতাদের চেয়ে তার মর্তবা উর্ধে্ব। বিপরীতে যে মানুষটা তার রিপুকে দমন করতে সক্ষম নয় এবং মানব সমাজে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে বেড়ায় তিনি মানুষের মতো সকল অঙ্গপতঙ্গের অধিকারী হওয়া স্বত্বেও মানুষ নয় বরং পশুর চেয়েও অধম বা খারাপ।

প্রবৃত্তির অনুসরণ না করে যে ব্যক্তি তার বিবেক ও জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে কল্যান সাধনে ব্রতী হন তিনি মানুষ, তিনিই আসমানবাসীদের দোয়া প্রাপ্ত। এখন বিবেক বুদ্ধি সম্পন্ন হয়েও কোন বনি আদম স্রেফ এই যুক্তিতে যদি নিজের ত্রুটি এড়িয়ে যান যে, যা হয়েছে তা তকদিরে লেখা ছিল কিংবা আল্লাহ পূর্ব হতে জ্ঞাত ছিলেন সেহেতু তিনি আমাকে মন্দ কাজে অংশগ্রহণ করিয়েছেন (নাউজুবিল্লাহ) ইত্যাদি। এহেন প্রশ্নকারী নিজের ও পশুর সাথে পার্থক্য রাখলেন কি? মোটেও না। স্বাধীন বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের ক্রিয়াকলাপের দায় আল্লাহ নির্ধারিত বলে আল্লাহকে দায়ী করা যায় না বরং এই ধরণের অজুহাত তৈরী করা পঙ্কিলতায় ডুবে থাকার ও মন্দ কাজ হতে বিরত না হওয়ার ঠুনকো অজুহাত বৈ নয়। এই ধরণের বিশ্বাস মানুষকে পাপের অতল গহ্বরে ডুবে যেতে উৎসাহ প্রদান করে, প্রেরণা দান করে ও উন্মত্ততায় মগ্ন রাখে। যেমনি খৃস্টানরা মনে করে ঈসা (আ) যেহেতু সমস্ত মানুষের পাপ নিজে গ্রহণ করে মানবজাতিকে নিষ্পাপ করে দিয়ে গেছেন সেহেতু কেয়ামত পর্যন্ত কোন মানুষের কোন পাপ থাকবে না। তাদের এই বিশ্বাসের দরুণ যাবতীয় অশ্লিলতা ও বেহায়াপনা এবং মুসলিম নিধন আজ পৃথিবীবাসীদের সম্মুখে চাক্ষুষমান।

তথাকথিত জ্ঞানীদের ভুল নিরসন : মানুষের দ্বারা যে সকল কাজ সম্পাদিত হয়, তার কর্তা কি মানুষ না আল্লাহ- প্রশ্নটি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে তেমন জটিলতা দেখা যায় না। কম শিক্ষিত বা কম জ্ঞানী লোকদের মুখে এটুকুই শুনা যায় যে, “কপালে (তকদিরে) যা আছে তা হবে, আল্লাহর হুকুম ব্যতিত গাছের একটি পাতাও ঝরে না” ইত্যাদি। সাধারণ মানুষের এই ধরণের বিশ্বাস পাক্কা ঈমানেরই লক্ষণ কিন্তু শিক্ষিত বা আধুনিকতার দাবীদার এক শ্রেনীর মানুষ বিষয়টিকে নিয়ে ধুম্রজাল সৃষ্টি করে, বিতর্ক তৈরী করে ও বিভ্রান্তি ছড়ায়। যেন ঈমানহারা হওয়ার একটি জোর প্রতিযোগিতা চলছে প্রতিনিয়ত-প্রত্যেকক্ষেত্রে।
জৈনক জাহম বিন সাফওয়ান কর্তৃক প্রবর্তিত জাবারিয়া মতবাদের মূল কথা হলো, কর্ম ও ইচ্ছায় বান্দার কোন স্বাধীনতা নেই, বান্দার ভাল এবং মন্দ যাবতীয় কাজ আল্লাহর সৃষ্টি, আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী বাধ্য হয়ে সে সবকিছু করে, এতে বান্দার কোন এখতিয়ার নেই, আল্লাহ তায়ালা নিজের ইচ্ছানুযায়ী বান্দাকে কর্মে নিয়োগ করেন, পাপ-পুণ্য, ন্যায়-অন্যায়, ভাল-মন্দ যাবতীয় কাজই মানুষ বাধ্য হয়ে করে থাকে, সুতরাং সে ভাল কাজের পুরুষ্কার ও মন্দ কাজের জন্য শাস্তি পাইবে না। জাবারিয়া মতবাদে বিশ্বাস 2টি দলের একটি দল বিশ্বাস করে যে, মানুষের কর্মের স্বাধীনতা নাই এবং কর্ম ক্ষমতাও নাই। অবশিষ্ট দলের ধারণা মানুষের কর্মের স্বাধীনতা নাই ঠিকই তবে কর্ম ক্ষমতা আছে এবং সে কর্ম ক্ষমতা কার্যকরী নয়।

সুস্থ বিবেক চিন্তার খোরাক যোগায়। আজকাল জাবারিয়া মতবাদের অনুসারীদের মতো কেউ কেউ এই ধরণের বিশ্বাস মনে ধারণ-লালন করে থাকেন। বিবেক বলে যে, মানুষ যদি মন্দভাল সকল ক্রিয়াকলাপ আল্লাহর ইচ্ছায় করে থাকে তাহলে পবিত্র কুরআনোর অসংখ্য স্থানে ভালমন্দ কাজের ফলাফল কি হবে তার ঘোষণা করা হয়েছে। তাহলে একই সাথে মন্দ কাজে আল্লাহর ইচ্ছা অপর দিকে মন্দ কাজে শাস্তির বিধান স্ববিরোধী কিনা? (নাউজুবিল্লাহ)। আচ্ছা, মহান আল্লাহ কি এমন হতে পারেন ? কখনোই না। এমন বিশ্বাস কোন অবিশ্বাসীও করতে সাহস করবে না। মন্দভাল কাজের জন্য যদি আযাব-আরামের ব্যবস্থা নাই থাকবে তাহলে কুরআনো জান্নাত-জাহান্নামের বিবরণ কি মিথ্যা (নাউজুবিল্লাহ)? তাকদির সম্পর্কীত সঠিক জ্ঞানের অভাব মানুষকে আল্লাহর সিফাতের সাথে মুখোমুখি করে নিজের স্বত্বাকে আগুণের খড়ি বানাচ্ছে তাতে কোন সন্দেহ নাই। তাই এ বিষয়ে স্পষ্ট জ্ঞান লাভ করা আবশ্য কর্তব্য। তা না হলে আকিদার অশুদ্ধতা নেক কাজে কোন ফলাফল প্রদর্শন করবে না।

কাদরিয়া মতবাদের বিশ্বাস :

অপরদিকে কাদরিয়া সম্প্রদায় এবং তাদের উত্তরসূরী মুতাজিলাগণ জাবারিয়া মতবাদের সম্পূর্ণ বিপরীতে বিশ্বাস স্থাপন পূর্বক ঈমান লালন করে যে, মানুষের যাবতীয় কাজের কর্তা মানুষ নিজেই, আল্লাহ তায়ালা মানুষকে ইচ্ছাশক্তি এবং কর্মশক্তি দান করেছেন, কোন কিছু করা বা না করার ব্যাপারে মানুষ সম্পূর্ণ স্বাধীন, মানুষ নিজের ইচ্ছাশক্তিতে ভালমন্দ যাবতীয় কাজ করে থাকে বিধায় মানুষ তার কৃতকর্মের জন্য দায়ী, ভাল কাজের জন্য ‍পুরুস্কার আর মন্দ কাজের জন্য তিরস্কৃত হবে। মানুষ নিজেই তার ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করে থাকে।

আশায়েরাগণ চরমপন্থি এদুইটি মতবাদের মধ্যবর্তী মত গ্রহণ করেন। তাদের বক্তব্যানুযায়ী মানুষ তার যাবতীয় কাজের অর্জনকারী আর আল্লাহ উহার খালেক বা সৃষ্টিকর্তা। আল্লাহ মানুষকে স্বল্প পরিমাণে জ্ঞান ও ইচ্ছাশক্তি এবং স্বাধীনতা দিয়েছেন যাতে মানুষ তার স্বাধীন শক্তি প্রয়োগ করে ভাল বা মন্দ কাজে নিয়োজিত হয়। সর্বশক্তিমান আল্লাহর কুদরতে ঐ কাজের পরিসমাপ্তি ঘটে। একজন কৃষক নিজের ইচ্ছায় জমিতে বীজ বপন করে ও জমি কর্ষণ করে ফসল উৎপাদনের যাবতীয় ব্যবস্থা করে। এটা কৃষকের কাসেব বা অর্জনকারী আল্লাহর কুদরতে ঐ বীজ অঙ্কুরিত হয়, শক্তপোক্ত গাছে পরিণত হয়, ধারাবাহিকভাবে ফুল-ফল হয়। বীজ অঙ্কুরিত করে চারা তৈরি করা তা বড় করা ও তাতে ফুল-ফল সৃজণ করার ক্ষমতাতো কৃষকের নাই। এটা আল্লাহরই এখতিয়ার এবং আল্লাহরই খালক। এই অর্জনের জন্য মানুষই দায়ী হবে।

শিক্ষনীয় একটি গল্প যা তাকদিরের ধারণাকে পরিস্কার করে দিবে :

একবার জাবারিয়া ও কাদরিয়া সম্প্রদায়ের কিছু সংখ্যক লোক একজন বুজুর্গের নিকট উপস্থিত হয়ে প্রশ্ন করলেন যে, মানুষের কর্মে তার স্বাধীনতা আছে কি নাই ? বুজুর্গ তাদের একজনকে বললেন, “ তুমি তোমার পা বাঁকা করে উপরে উঠাও এবং দ্বিতীয় পা-এর উপর ভর করে দাঁড়াও।” – লোকটি তাই করলেন। এরপর বুজুর্গ বললেন, “ আচ্ছা এবার যে পা-টি উপরে উঠিয়ে রেখেছো সেটা ঐ অবস্থায় রেখে যে পা-টিতে ভর করে দাড়িয়ে আছো অর্থাৎ দ্বিতীয় পা-টিও উপরে উঠিয়ে দাঁড়াও দেখি।” লোকটি তা করতে সক্ষম হয়নি। বুজুর্গ তখন বললেন, এভাবেই মানুষ তার কর্মের এক অংশে স্বাধীন এবং অপর অংশে স্বাধীন নয়। যে অংশে সে স্বাধীন তাই কাসব আর যে অংশ স্বাধীন নয় তা খালক। সুতরাং কাসব হলো মানুষের কাজ আর খালক হলো আল্লাহর কাজ।
এই মুহুর্তে মনে করি, তাকদিরের প্রতি বিশ্বাসের ধরণ কিরুপ হবে তা পরিস্কার করতে সক্ষম হয়েছি।

তকদিরের প্রকার :

তকদির 2 প্রকার।
এক. তকদিরে মুবরাম । এটি নির্ধারিত, কোন দিন পরিবর্তন হয় না।
দুই. তকদিরে মুয়াল্লাক। দোয়া ও নেক আমল দ্বারা পরিবর্তন হয়।

দোয়া দ্বারা তকদির পরিবর্তন হবার অর্থ হলো বান্দার দোয়ার মাধ্যমে কিছু বিষয়ে পরিবর্তন হবে (এ কথাও তকদিরে লেখা আছে)। বান্দা যদি বেশী বেশী দোয়া না করে তবে তকদিরের পরিবর্তন আশা করা যায় না। রাসূল (স) বলেন, “ নেক আমল দ্বারাই বয়স বৃদ্ধি পায় আর দোয়া দ্বারা ভাগ্য পরিবর্তন হয়। আর ব্যক্তি তার গুণাহের কারণে তার জন্য নির্ধারিত রিযিক থেকে মাহরুম বা বঞ্চিত হয়। ” – (ইবনে মাজা, 12/28 ও মিশকাত, 419)
দোয়া কবুলের একমাত্র মালিক হলেন আল্লাহ। বেশী বেশী তাই দোয়া করা উচিত। বেশী বেশী নেক আমল করা প্রয়োজন যেন বেশী হায়াত পাওয়া যায় আর ভাল কাজও বেশী করে করা যায়।
আল্লাহ কবুল করুন আমাদের সবাইকে।




মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৯ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:০৫

নতুন বলেছেন: দুই. তকদিরে মুয়াল্লাক। দোয়া ও নেক আমল দ্বারা পরিবর্তন হয়।


দোয়া এবং নেক আমল দিয়ে পরিবত`ন হয় বা হয়েছে এমন কোন জিনিসে উদাহরন দিতে পারবেন?

২| ২৯ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:১৫

রাজীব নুর বলেছেন: কোরবানী দেওয়া ভালো না কোরবানীর টাকা দিয়ে অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করা বেশি ভালো?

৩০ শে জুন, ২০২০ সকাল ৯:৫৭

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: Click This Link

৩| ২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ৮:৪৯

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: তকদির আর মানুষের ক্রিয়াকলাপের স্বাধীনতার যে সম্পর্ক এটা বোঝার জন্য অনেক অন্তর্দৃষ্টি ও প্রজ্ঞার প্রয়োজন। আল্লাহ আমাদের সেই জ্ঞান দান করুন।

৪| ২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:০৩

সুপারডুপার বলেছেন: হা হা হা গায়েবীয়ভাবে অনেক বার পঠিত। মনে হয় জ্বীন ফেরেশতারাও ইদানিং আপনার ব্লগ পড়ে।

৫| ২৯ শে জুন, ২০২০ রাত ৯:৪৭

জগতারন বলেছেন:
নতুন বলেছেন: দুই. তকদিরে মুয়াল্লাক। দোয়া ও নেক আমল দ্বারা পরিবর্তন হয়।
দোয়া এবং নেক আমল দিয়ে পরিবত`ন হয় বা হয়েছে এমন কোন জিনিসে উদাহরন দিতে পারবেন?


দোয়া ও নেক আমল দিয়া পরিবর্তন আমার হইয়াছে।
আমিই তার প্রমান।
এই সমস্ত ঘাউরা প্রশ্নের উত্তরে এত বিস্তারিত লিখার ধৈর্য এখন আমার নাই।
বিশ্বাস করিলে করেন না করিলে আপনার মতে থাকেন গিয়া।
কাহারও বিশ্বাসে আঘাত করিতে দেওয়ার ক্ষমতা কেহ অন্য কাহাকেও দেয় নাই।

৬| ৩০ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:৩৪

নতুন বলেছেন: জগতারন বলেছেন:
নতুন বলেছেন: দুই. তকদিরে মুয়াল্লাক। দোয়া ও নেক আমল দ্বারা পরিবর্তন হয়।
দোয়া এবং নেক আমল দিয়ে পরিবত`ন হয় বা হয়েছে এমন কোন জিনিসে উদাহরন দিতে পারবেন?

দোয়া ও নেক আমল দিয়া পরিবর্তন আমার হইয়াছে।
আমিই তার প্রমান।
এই সমস্ত ঘাউরা প্রশ্নের উত্তরে এত বিস্তারিত লিখার ধৈর্য এখন আমার নাই।
বিশ্বাস করিলে করেন না করিলে আপনার মতে থাকেন গিয়া।
কাহারও বিশ্বাসে আঘাত করিতে দেওয়ার ক্ষমতা কেহ অন্য কাহাকেও দেয় নাই।


@ জগতারন প্রশ্ন ঘাউরা কিভাবে হয় ভাই? আর ধৈয` না থাকলে ব্লগে আসলেন কেন? সবাই হক মাউলা বললেই মাইনা নেবে না। লাইক আর সেয়ার দেবেনা।

আপনার জন্য আরেকটা প্রশ্ন:- চৌধুরি সাহেব মনে মনে কলা খাইছে, বলেন তো কয়টা খাইছে??

৭| ৩০ শে জুন, ২০২০ সকাল ১১:৫৪

রাজীব নুর বলেছেন: আমার একটা বিষয় নিয়ে আপনি পোষ্ট দিয়েছেন। এজন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.