![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবার মত গল্প কবিতা দিয়েই লেখালেখির শুরু, মুলত লোক সাহিত্যের বিষয়ক লেখা লিখে আমাদের লোকসাহিত্যের জন্য করতে চেয়েছি। বেশকিছু লেখা রয়েছে এই বিষয়ে। তবে সবচে বেশী প্রসার ঘটেছে ই কমার্স বিষয়ক লেখাগুলো। তবে দেশ সমাজ ও রাস্ট্র নিয়ে ইতিবাচক ও গঠনমূলক কিছু লিখতে চাই।
বিস্মৃত সঙ্গীত শিল্পী কে, মল্লিক
জাহাঙ্গীর আলম শোভন
তিনিই প্রথম বাঙালি মুসলমান যার গান গ্রামোফোন রেকর্ডে ধারণ করা হয়। তিনি রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রথম মুসলিম গায়ক। ‘‘ফুলবাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে দোল’’ এটিই কে, মল্লিকের গাওয়া প্রথম নজরুল গীতি। এই কালজয়ী কিংবদন্তী প্রতিভা সঙ্গীতে বাঙালি মুসলমানদের পথ প্রদর্শক। ‘‘আমি মুসলমান একথা জানতে পেরে তিনি প্রথম আত্মীয়তার সুরেই আমাকে বললেন, কি গান রেকর্ড করবে গাও দেখি একবার’’্ একথা মরমী শিল্পী আব্বাাস উদ্দীনের। কে মল্লিককে নিয়ে এ লেখাটি বাংলাগানের সমৃদ্ধ ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দেবে।
বাঙালি মুসলমান সমাজে বিশেষ করে মধ্যবিত্তে গান-বাজনা করাকে যে কি ভয়ানক পাপ মনে কর হতো তার স্বাক্ষী ইতিহাস এবং বাস্তব দ্রষ্টারা। বিগত শতকের দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ শতকে কে, মল্লিক বাংলা গানের ক্ষেত্রে এক নতুন পদযাত্রা শুরু করে দিয়েছিলেন। সুরের যাদু, স্বীয় প্রতিভা, সেকালের উপযোগী গান সব কিছু মিলিয়ে সঙ্গীতের ক্ষেত্রে বাঙালি মুসলমানদের পথ প্রদর্শক এ গুণী শিল্পী আজ বিস্মৃত প্রায়। স্বল্পজনের শ্রুতিতে এবং পরবর্তী প্রজন্মের শিল্পীদের স্মৃতিতে তিনি বেঁচে ছিলেন। বর্তমানে তার অধিকাংশ রেকর্ড বিলুপ্ত। নেই কোনো উদ্যোগ স্মৃতিচিহ্ন রক্ষার। বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কতৃক আবুল আহসান চৌধুরীর সম্পাদনায় তারই ভূমিকা সম্বলিত কে মল্লিকের জীবনীর উপর একটি বই প্রকাশ করে । বিস্মৃত সুরশিল্পী কে. মল্লিক অপ্রকাশিত আত্মকথ্ াশীর্ষক বইটি প্রকাশকাল অক্টোবর-২০০১, বইটিতে কে মল্লিকের দূর্লভ কিছু ছবিও রয়েছে । এতে কে. মল্লিকের নিজের রচিত জীবনী স্থান পেয়েছে। এর পূর্বে কবি কথাশিল্পী গোলাম কুদ্দুস কে. মল্লিকের জীবনী অবলম্বনে রচনা করেন সুরের আগুন্ নামে একটি উপন্যাস। মূলত কে, মল্লিক আত্মজীবনী লেখেন গোলাম কুদ্দুসের অনুরোধেই। গোলাম কুদ্দুসের ভাষায় ‘‘মনে হয় পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি সময়ে এই খাতাটির রচয়িতা কে মল্লিক সাহেব আমাকে দিয়েছিলেন’’।্ ভূমিকায় আবুল আহসান চৌধুরী লিখেন ‘‘সামান্য লেখাপড়ার পুঁজি নিয়ে কলম ধরেছিলেন কে. মল্লিক’’ নিজের জীবনের কথা বলতে। অনেক ক্ষেত্রেই বাক্য গঠন শুদ্ধ হয়নি, বানান সম্পর্কে সচেতন ছিলেন না, ক্রিয়াপদের অভিন্নতা রক্ষিত হয়নি। বিরাম চিহ্নের ব্যবহারেও লক্ষ করা যায়- অসতর্কতা, মূলকে অবিকল রাখার প্রয়োজনে আমরা যার কোনেরুপ সংশোধন করিনি। কিন্তু বিস্মিত হতে হয় এই ভেবে যে, নিছক চিঠিপত্র ভিন্ন লেখালেখির অভ্যাস কখনো না থাকলেও বেশ গুছিয়ে ঘটনা পরম্পরা নিজের জীবনের কথা বলেছেন কে মল্লিক মশাই। এক ধরনের সারল্য ও আন্তরিকতার স্বাদ মেলে তার এই লেখায় আমার অন্তত তাই মনে হয়েছে।
কে, মল্লিকের জীবন এবং তার উত্থান গৈল্পিক। তা যে কোনো গল্প-উপন্যাসের রসদ যোগাতে পারে। কিন্তু একটা কথা সত্য যে তার জীবনের সব দিক কোথায়ও বেরিয়ে আসেনি। গোলাম কুদ্দুস সাহেব যদিও ব্যক্তিগত আলাপ চারিতায় অনেক কিছু জেনে নিয়েছেন যা শিল্পী আত্মকথনে লেখেননি। জাদুঘর প্রকাশিত গ্রন্থ পাঠ কওে পাঠকের অনেক কিছু জানার তাড়া তৈরি হলেও তা পূরণ হবার নয়। সম্পাদকের ভূমিকার সূরের আগুন উপন্যাসের প্রকাশের স্থান তারিখ কিছুই লেখা হয়নি। এমনি অনেক তথ্য গলদ রয়েছে। অবশ্য যা কিছু সন্নিবেশিত হয়েছে তা সহজ সাধ্য নয়। সেগুলো আবুল হাসান চৌধুরী ও গোলাম কুদ্দুস উদ্যোগ না নিলে হারিয়েই যেতো। তাছাড়া কে, মল্লিকের মৃত্যুর ৪২ বছর পর এখন তথ্যপত্রাদি পাওয়াও দুষ্কর। তবুও যে নতুন প্রজন্মের সামনে এতটুকু এসেছে তাতেও সন্তুষ্ট চিত্ত হওয়া উচিত।
বিশ শতকের শুরুর দিক থেকে এদেশে গ্রামোফোন কোম্পানী গানের রেকর্ড বের করা শুরু করে। কে মল্লিক সেই প্রথম যুগের একজন সফল ও জনপ্রিয় শিল্পী। তিনি হিন্দু ভক্তিগীতি, ইসলামী গান-গজল, কাব্যগীতি ইত্যাদি গেয়ে উভয় সম্প্রদায়ের ভক্তি ভাজন হন।
মুন্সী মহাম্মদ কাসেম ওরফে মানু মিয়া পরবর্তীতে কে, মল্লিক জন্মেছিলেন বর্ধমানের কালনা মহকুমার কুসুম গ্রামে ১২ জ্যৈষ্ঠ ১২৯৫ সেই হিসেবে ১৮৮৮ সালই হবার কথা। মুন্সী ইসমাইল ও সানজী বিবির আট পুত্র ও তিন কন্যার মাঝে চতুর্থ কে, মল্লিক। মুন্সী মহম্মদ কাসেমের পূর্ব পুরুষ কুসুম গ্রামের জমিদার ছিলেন।
গানের প্রতি আগ্রহ কাসেমের ছোটবেলা থেকেই ছিলো। উত্তরাধিকার সূত্রে জমিদারী প্রাপ্তি ঘটেছিলো তার চাচাতো ভাই ইব্রাহিমের ভাগ্যে। কে, মল্লিক লিখেন ‘‘ইব্রাহিম সাহেব আমাকে গান বাজনা শিখাইবার জন্য একটি শিতারের মাস্টার রাখা হইল। আমার কণ্ঠ ছোটবেলা হতে খুব মধুর ছিলো। গান-বাজনা আমার খুব ভালো লাগিত।’’
ইব্রাহিমের সাথে ইসমাইল সাহেবের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিলো। ১৩০৬ সালে ইব্রাহিম সাহেব পরলোকগমন করেন। এতে একদিকে গানের চর্চায় ব্যাঘাত ঘটলো অন্য দিকে অর্থ সাহায্য প্রাপ্তি বন্ধ হলো। এদিকে ইব্রাহিম সাহেবের ভগ্নীপুত্রকে তবলা শিখানোর জন্য জনৈক সতীশ চক্রবর্তী আসতেন তাকে ধরে মায়ের বাক্স হতে ৮ টাকা চুরি করে কলকাতায় পাড়ি জমালেন কে মল্লিক। এখানে এসে কাপড়ের দোকানে কাজ নিলেন। মাইনে দৈনিক সাড়ে তিন আনা। তারপর চামড়ার যাচন দারী করতেন, বেতন কম বলে জুতা পরতেন না। পেট ভরে খেতে পেতেন না। পরে একই কাজে কানপুরের আনোয়ারগঞ্জে গেলে সেখানে জনৈক সঙ্গীত চর্চাকারী হাকিম আবদুল হাইয়ের শরণাপন্ন হন এবং গান শেখা ফের শুরু করেন। ভাগ্য ফেরাবার জন্য ফকির-দরবেশের কাছে পর্যন্ত গিয়েছেন। পরে সেখান থেকে ফের কলকাতায় গমন করেন। কলকাতায় এসে একদিন শুভাাকাঙ্খীদের গান শোনাচ্ছেন দোকানে বসে। কে মল্লিকের গান শুনে রাস্তায় পথিক জড়ো হয়ে জ্যাম পড়েছিলো। এমনকি সেখানে পুলিশ পর্যন্ত হাজির। তৎকালীন গ্রামোফোন কোম্পানী বেকার ম্যানেজার স্বয়ং গানশূনে তাকে রেকর্ড ও গান দেয়ার জন্য অনুরোধ করলেন। এবং মটর (মোটর গাড়ী) পাঠাইয়া তাকে নিয়ে গেলেন গান রেকর্ড হলো। সে যুগে গাড়ী পাঠিয়ে নিয়ে ডেকে পাঠানো যা তা ব্যাপার ছিলনা। কে মল্লিক লেখেন- ‘‘একজন ক্লার্ক আসিয়া বলিলেন, সাহেব আপনাকে ১২ খানি গানে ৩০০ শত টাকা দিলেন আপনি সন্তোষ আছেন তো। আমি তো অবাক হইয়া বলিলাম আপনি শুনতে ভুল করেন নাইতো। বলিল, না মশায়। এ্যাঁ ত্রিশ ৩০ টাকা চোখে দেখি নাই ৩০০ টাকা পাইব! নাম সহি করিয়া ৩০০ টাকা হাতে পাইলাম।’’ তখন তিনি কে, মল্লিক হননাই। তাই নাম কে, মল্লিক করে রেকর্ড বের হয়েছে তার অধিকর্তা গোঁরাচাঁদ মল্লিকের পরামর্শে। কাসেম নামটা কে, অক্ষরে লুকায়িত থাকলো হিন্দু-মুসলমান উভয়ের কাছে রেকর্ড বিক্রি হওয়ার জন্য আর মাঝখান দিয়ে গোরাঁচাঁদ বাবু নিজের টাইটেলটা লাগিয়ে দিলেন।
পরের ইতিহাস আরো উপভোগ্য রেকর্ড বাজারে বের হলে, প্যাথিফোন কোং, হিজ মাস্টার ভয়েজ (এইচএমভি)সহ বিভিন্ন গ্রামোফোন কোম্পানী কে মল্লিকের গান বের করে। এক লাফে তার গান প্রতি সম্মানী দাঁড়ালো ২৫ টাকা। তখন অন্যান্য শিল্পীরা পেত ৭/৮ টাকা করে। পরে এইচএমভিতে চুক্তিভিত্তিক গান দিয়ে গান প্রতি ৫০/৬০ টাকা পারিশ্রমিক পান। তখন তাঁর মাসিক আয় ছিলো পাঁচ থেকে সাতশ টাকা। তখনও চামড়ার যাচনদারী তিনি ছাড়েননি।
কে মল্লিকের প্রথম গান ছিলো হরি দিবানিশি ডাকি তাই্। তিনি শ্যামসঙ্গীত, ভক্তিগীতি, কীর্তন, ভজন গাইতেন প্রথম পর্যায়ে। পরের রবীন্দ্রনাথ, রজনীকান্ত, অতুলপ্রসাদের গানও রেকর্ড করেন। কে, মল্লিকের কণ্ঠে তিনটি রবীন্দ্র সঙ্গীতের হদিস মেলে। ‘‘আমার মাথা নত করে দাও, হ্ েআমি নিশিদিন তোমায় ভালোবাসি, নিশীথ শয়নে ভেবে রাখি মনে।্ অতুল প্রসাদের ‘‘বধূ এমন বাদলে তুমি কোথা’’ গানটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়। বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের গানই তিনি বেশি গেয়েছেন। নজরুলের রেকর্ড গানের আদি শিল্পীদের মাঝে তিনি একজন। বাগিচায় বুলবুলি তুই ফুল শাখাতে দিসনে দোল এটিই কে, মল্লিকের গাওয়া প্রথম নজরুল গীতি। নজরুলের গানের মাঝে প্রাপ্ত তথ্য মতে ৫০টি কে, মল্লিক নামে ৩৫টি মহম্মদ কাসেম নামে ৪টি মানু মিয়া নমে এবং পাঁচটি গান শংকর মিত্র নামে বের হয়। এর মধ্যে বেশির ভাগ রেকর্ডই এইচএমভ্রি। এ ছাড়া নজরুলের ১৩টি গানে কে মল্লিক সুরারোপ করেন। বিভিন্ন তথ্য সূত্র হতে এ পরিসংখ্যান আবুল আহসান চৌধুরী সংগ্রহ করেছেন। এ জন্য তিনি বিশেষ ধন্যবাদহ্য।
এই কালজয়ী কিংবদন্তী প্রতিভা বাঙালি মুসলমান শিল্পীদের পথ প্রদর্শক। বাংলা ছাড়াও তিনি উর্দু ও হিন্দি গান করেন। তার গানের মধ্যে বেশির ভাগ ছিলো ইসলামী। তখনকার যুগে রেকর্ড সংখ্যার দিক থেকেও কেউ তাকে অতিক্রম করতে পারেনি। তার প্রতি রেকর্ড প্রায় ৩০/৪০ হাজার কপি বিক্রি হতো যা তখনকার দিনে এক অবিশ^াস্য ব্যাপার। তিনি রেডিও ও থিয়েটারে গান করেন। সঙ্গীত শিক্ষা দেন। প্রখ্যাত গায়িকা কমলা বারিক তার হাত ধরে উঠে আসেন। সবচেয়ে বড় কথা তিনিই প্রথম বাঙালি মুসলমান যার গান গ্রামোফোন রেকর্ডে ধারণ করা হয়। তিনি রবীন্দ্র সঙ্গীতের প্রথম মুসলিম গায়ক।
এই যুগন্ধর গায়কের যথাযথ মূল্যায়ন হয়নি। এমনকি গ্রামোফোন কোম্পানীগুলো যার বদৌলতে হাজার হাজার টাকা ব্যবসা করেছিলো তারা শেষ পর্যন্ত তার ব্যাপারে সঠিক কোনো পদক্ষেপ নেননি। মৃত্যুর অব্যাবহিত পরেও কে মল্লিককে নিয়ে কোনো যথাযথ উদ্যোগ দেখা যায় না। অথচ এই সুর শিল্পী। বাংলায় সুরের মাতম শুরু করেছেন। প্রশস্ত করেছেন মুসলিম সংস্কৃতির পরবর্তী ধারা। আব্বাস উদ্দিন তার স্মৃতি কথায় লেখেন-
আমার সেদিন রেকর্ড হবে। আলাপ হলো কে মল্লিকের সাথে। আমি মুসলমান একথা জানতে পেরে তিনি প্রথম আত্মীয়তার সুরেই আমাকে বললেন, কি গান রেকর্ড করবে গাও দেখি একবারটি আমার গান শুনে তিনি বললেন, চমৎকার গলা! কিন্তু ..... বিমল বাবু আজও এর রেকর্ড হতে পারে নাকি? আমি ভড়কে গেলাম। কি ব্যাপার? বলে বিমলদা এগিয়ে এলেন।
কে মল্লিক মশায় বললেন, একে নতুন আটিস্ট মশাই, তাতে আবার মুসলমান। দেখুন না গানের উ”ারণ, আজ থাক। সারাদিনে আমি ওর উ”ারণগুলো ঠিক করে দিই। কাল রেকর্ড করবেন প্রাণে এতক্ষণে জোর এলো। বিমলদা বলে উঠলেন হবে না- জাতের টানত।
এ কথার অর্থ আমি বুঝলাম না, জিজ্ঞাসু নয়নে কে, মল্লিক মশায়ের মুখের দিকে তাকালাম। তিনি হেসে বললেন, উনি ঠিকই বলেছেন, আমিও তো মুসলমান। আকাশ থেকে ফেরেশতা নেমে এসে হলফ করে বললেও বিশ^াস করতাম না। কেমন করে করি? ঊললাম কিন্তু ছেলেবেলা থেকে তো শুনে আসছি আপনার গান, ঐ শুধু আর কবে দেখা দিবি মা ওমা অন্তে যেন চরণ পাই-এই সব গান। তিনি হেসে বললেন তাতে কি হয়েছে। গান গান, তাতে হরিই কি শ্যামাই বা কি।
এই মহৎ ও বৃহৎ শিল্পী শেষ জীবন তিনি বর্ধমানের কুসুম গ্রামেই কাটান। বিভিন্ন জলসায় গান করে এবং অবসরে আড্ডা দিয়ে। কে মল্লিকের ছিলো শূরা ও আফিমের নেশা। ফল যা হওয়ার তাই হলো। শেষ দিকে লিভার এ্যাবসেস হয়েছিলো। মাস তিনেক ভুগে ২৫ আশি^ন ১৩৬৮তে পরলোক গমন করেন নিজ গ্রামেই। কে মল্লিক বিয়ে করেন বর্ধমানেরই কাটোয়া মহকুমার কেতুগ্রাম থানার বামুন্দি গ্রামের আবদুস সুলতানের কন্যা জারিয়াতুল হাফসা খাতুনকে। কে, মল্লিক দম্পতি ছিলেন নি:সন্তান। একমাত্র পালক পুত্র তাজ মুহম্মদ তার উত্তরাধিকারীদের নিয়ে কে মল্লিকের সহায়-সম্পত্তিতে আছেন। কিন্তু সেখানে ২টি ফটোগ্রাফ ছাড়া আর কোনো স্মৃতি নেই। স্ত্রী হাফসা খাতুনের মৃত্যু হয় কে মল্লিকের মৃত্যুর প্রায় বিশ বছর পরে। বিশাল বাড়িটির পাশে চির নিন্দন্দায় শায়িত আছেন এ বাংলাগানের এপ্রবাদপুরুষ।
কাজী নজষ্পলের সাথে ব্যক্তিগত সখ্যতার বিবরণ পাওয়া যায় তার আত্মজীবনীতে। কে মল্লিকের জীবনী প্রথমে শুরু এইভাবে।
এলাহি ভরসা
কে মল্লিকের জীবনী
কুসুম গ্রামে জমিদার মুন্সী বংশে ১২৯৫ সালের ১২ জ্যেষ্ঠ তারিখে আমার জন্ম হয়। আমার চাচতো ভাই মুন্সী মহাম্মদ ইবন্দাহিম সাহেব খুব বড় জমিদার ছিলেন। তার সন্তানাদি না থাকায় তিনি আমাদের উপর খুব ¯েœহ করিতেন। আমার পিতা মুন্সী ইসমাইল সাহেব।
কে, মল্লিকের জীবনীর উদ্ধৃত্তাংশের ক্ষেত্রে আমিও বানান অক্ষত রেখেছি যা মল্লিক নিজে লিখেছেন। নিজ হস্তে লেখা কে মল্লিকের জীবনীর শেষ অংশ এরকম
আমি যেমন কালেক্টরিতে গেলাম অমনি আমায় আফাজউদ্দিন সাহেব বলিলেন- যান সাইড দেখুন, তারপর দিন রাজা দিগ¤œর মিত্রির কাছারি ঝামাপুকুরে যাইয়া, বাজারের গেটের পাশে একটা কামরা দৈনিক ১ টাকা ভাড়ায় লইয়া ১৯৪০ সালের ১৮ ডিসেম্বর হইতে আফিমের দোকান হইল। আজ ২২ বছর দোকান চলিতেছে। এখন আমার বয়স ৭৩ বছর চলিতেছে।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার ঘাটতি থাকায় কে, মল্লিকের লেখায় ি কার ী কার এর সঠিক ব্যবহার হয়নি স, শ, ষ এর ও সঠিক ব্যবহার সবক্ষেত্রে পরিলক্ষিত হয় না। তথাপি নিজের জীবনের সর্পিল দিন-রাতকে এক আবেগী ভাষায় বর্ণনা করেছেন এ অপরাজেয় শিল্পী। বাঙালি মুসলমানদের গৌরব, তথাপি বাংলা গানের ধ্রুপদী মাত্র। ভারত মনীষা হাজার বছরের গর্বিত বাঙালি কে, মল্লিকের স্মৃতি রক্ষায় সরকারি উদ্যোগ প্রয়োজন। প্রয়োজন ব্যাপক গবেষণা ও তথ্য তল্লাশী। ভারত, তথা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেয়ার আছে। তার স্মৃতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ প্রয়োজন। কাউকে না কাউকে এগিয়ে আসতে হবে তাঁর গান জীবন ও কর্মসম্পর্কে সঠিক ও পরিপূর্ণ তথ্য সংগ্রহের কাজে। বাংলাদেশের সংস্কৃতিমনা ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ও উদ্যোগ নিতে হবে সবিস্তারে তুলে ধরার কে, মল্লিককে। আমাদের সরকারি পদক্ষেপেও কে মল্লিকের কর্মের প্রচার ও প্রসার করা প্রয়োজন। তার স্মৃতি রক্ষায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত।
পরিশেষে এই কিংবদন্তী শিল্পীর প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। সত্যি কথা হলো এ পরিসরে কে, মল্লিকের বিস্তারিত পাঠ সম্ভব নয়। বিদগ্ধ পাঠকের আগ্রহ, নতুন প্রজন্মের দিকে লক্ষ্য করে গবেষকদের এগিয়ে আসা উচিৎ। একজন শিল্পীর দৈহিক বিবর্তন তার মৃত্যুকে ত্বরানি^ত করতে পারে না। কে, মল্লিক বেঁচে থাকুক বাংলা গানের ক্রম ঝর্ণাধারায়এ।
সূত্র: বাংলাদেশ জাতীয় জাদুঘর কতৃক আবুল আহসান চৌধুরীর সম্পাদিত
বিস্মৃত সুরশিল্পী কে. মল্লিক অপ্রকাশিত আত্মকথ্।
লেখক: লোকসাহিত্য কর্মী
©somewhere in net ltd.