নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

ঐ ঈশ্বর ডেকে বলেছিলো আমায় মুক্ত হও... সেই থেকে আমি মানুষ.....

ঐ ঈশ্বর ডেকে বলেছিলো আমায়, মুক্তি চাও... সেই থেকে আমি মানুষ...

মেঘ বিহারী

অসাধারণ সৌর আলোর ভিড়ে, বেঁচে থাকা... অতি সাধারন কেউ

মেঘ বিহারী › বিস্তারিত পোস্টঃ

কেমন গণতন্ত্র চাই, সভা সমাবেশহীন না অগ্নিদগ্ধ !!!

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৫ বিকাল ৫:০৮

বিশ্বের বহুল উচ্চারিত শব্দগুলোর অন্যতম গণতন্ত্র। এর পরও কেউ হলফ করে বলতে পারবে না গণতন্ত্রের সুনির্দিষ্ট কোনো রূপের কথা। দেশে দেশে রূপ-আকৃতিতে রয়েছে এর ভিন্নতা। রাষ্ট্রপতি শাসিত গণতন্ত্র, সংসদীয় গণতন্ত্র, পশ্চিমা গণতন্ত্র, এশিয়ান গণতন্ত্র, উদার গণতন্ত্র, নিয়ন্ত্রিত গণতন্ত্র, পূর্ণ গণতন্ত্র, ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্র- নানা রূপ গণতন্ত্রের। পৃথিবীর কোথাও কি অনুকরণযোগ্য গণতন্ত্রের কোনো রূপ আছে? উত্তর অবশ্যই 'না'-বোধক। গণতন্ত্রের তাত্ত্বিক জ্ঞানসমৃদ্ধ ও পশ্চিমা লেখকদের দর্শন দ্বারা প্রভাবিত আমাদের সিভিল ও টক সোসাইটির অনেকেই ইউরোপ-আমেরিকার গণতন্ত্রের উদাহরণ দিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তোলেন। টক শোতে, সেমিনারে, পত্রিকার কলামে আমেরিকান-ইউরোপিয়ান গণতন্ত্রের সঙ্গে বাংলাদেশের গণতন্ত্রের তুলনা করে বিতর্কের ঝড় তোলেন। সরকার পরিচালনার সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনসাধারণের অংশগ্রহণ যদি গণতন্ত্রের নিয়ামক-সূচক হয়, তাহলে এমন কোনো দেশ কি আছে যেখানে গণতন্ত্র চর্চা হয়? দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মিত্রশক্তির জয় যখন সময়ের ব্যাপার মাত্র, সে সময়ে হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে সামরিক, নৈতিক ও আইনগতভাবে বিতর্কিত আণবিক বোমা বিস্ফোরণে নিরস্ত্র-নিরপরাধ দুই লাখ মানুষ হত্যায় আমেরিকার জনসাধারণের অংশগ্রহণ ছিল কি? যুদ্ধ মানে শান্তি- এ মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে ইরাক, আফগানিস্তানসহ বিশ্বের নানা প্রান্তে যুদ্ধের বিভীষিকা ছড়িয়ে দেওয়া, সাবেক সোভিয়েত রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য লাদেনের নেতৃত্বে আল-কায়েদা সৃষ্টি ও কোনো আইনি প্রক্রিয়া ছাড়াই বিশ্বের নানা প্রান্তে ঠাণ্ডা মাথায় খুন ও ড্রোন হামলা বিষয়ে জনসাধারণের অংশগ্রহণ ছিল বা আছে কি? আরব বসন্তের নাম করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি করে জঙ্গি উত্থানকে উসকে দেওয়া আর হত্যা-খুন-অরাজকতাকে নৈমিত্তিক বিষয়ে পরিণত করা, আবু গারাইব ও গুয়ানতানামো কারাগারে বন্দিদের ওপর মানবমর্যাদা হানিকর নৃশংস নির্যাতনের সিদ্ধান্তের বিষয়ে জনসাধারণের অংশগ্রহণ ছিল কি? গণতন্ত্র-মানবাধিকারের দোহাই দিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নির্বাচিত ব্যক্তিদের অপসারণ, হত্যা কিংবা অনির্বাচিত শাসকদের ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে পশ্চিমা মদদের পেছনে জনসাধারণের অংশগ্রহণ ছিল কি? সম্পদসমৃদ্ধ দেশগুলোকে উপনিবেশে পরিণত করে সেখান থেকে সম্পদ লুণ্ঠন করে ও লুণ্ঠিত পুঁজি বিনিয়োগের জন্য বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল, বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ও বহুজাতিক কম্পানির মাধ্যমে বৈষম্য ও শোষণমূলক বৈশ্বিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে জনসাধারণের অংশগ্রহণ ছিল কি? জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী পশ্চিমা দেশগুলো যে পরিমাণ সাহায্য দেয় তার ১৪ গুণ বেশি প্রতিদিন তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলো থেকে হাতিয়ে নেয়। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে পশ্চিমা জনসাধারণের অংশগ্রহণ রয়েছে কি? নানা মারণাস্ত্র তৈরি করে তা তৃতীয় বিশ্বের সরকার ও বিরোধী-বিদ্রোহী গ্রুপকে ক্রয় করতে প্ররোচিত-বাধ্য করার ক্ষেত্রে জনসাধারণের অংশগ্রহণ আছে কি? অমর্ত্য সেনের গবেষণা অনুযায়ী, আর্থসামাজিক অধিকারবঞ্চিত নিউ জার্সির নিউ হার্লেমের কালো আমেরিকানদের গড় আয়ু বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ুর চেয়েও কম। আরেক পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি ১০ জনে একজন আমেরিকানকে ফুড স্ট্যাম্পের (খাদ্য ভিক্ষা) মাধ্যমে ন্যায্যমূল্যের দোকান থেকে খাদ্য সংগ্রহ করতে হয়। পশ্চিমা দেশের লাখ লাখ মানুষকে ক্ষুধার্ত রেখে, বাসস্থান ও চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত রেখে যুদ্ধের পেছনে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে আমেরিকার জনসাধারণের অংশগ্রহণ আছে কি? অন্য ধর্মের প্রাণপুরুষ সম্পর্কে ব্যঙ্গাত্মক কার্টুন প্রচার, সিনেমা তৈরিকে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হিসেবে স্বীকৃতি ও সুরক্ষা প্রদানে জনসাধারণের অংশগ্রহণ আছে কি? মানবতা-মানবাধিকার-মানবসভ্যতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ এসব সিদ্ধান্ত গ্রহণে জনসাধারণের অংশগ্রহণ না থাকলে পশ্চিমা গণতন্ত্রকে একনায়কতন্ত্র বা গোষ্ঠীতন্ত্র নির্বাচনে জনগণের অবাধ স্বাধীনতা প্রয়োগের বেশি বলা যাবে কি? আর যদি এসব সিদ্ধান্তে জনগণের অংশগ্রহণ থেকে থাকে, তাহলে এ ধরনের গণতন্ত্র আমাদের জন্য মডেল হতে পারে কি? পশ্চিমা গণতন্ত্রের নেশায় বুঁদ হয়ে থাকা আমাদের বুদ্ধিজীবী, সিভিল ও টক সোসাইটির অনেক সদস্য এ কথা অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছেন যে গণতন্ত্রের একটি রূপ হলো, রাজনীতি অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে আর অন্য রূপ হলো, অর্থনীতি রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। পশ্চিমা গণতন্ত্রে রাজনীতি অর্থনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। অন্যদিকে এশিয়ান গণতন্ত্রে অর্থনীতি রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। যেখানে অর্থনীতি রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে সেখানে ব্যক্তির চেয়ে সামষ্টিক কল্যাণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও পশ্চিমা গণতন্ত্রীদের দৃষ্টিতে তা কর্তৃত্ববাদী সরকার। তাই পশ্চিমা গণতন্ত্রের মানদণ্ডে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, চীন, কম্বোডিয়াসহ অনেক এশিয়ান দেশের সরকার গণতান্ত্রিক নয়।

বাংলাদেশের দিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক। পশ্চিমা গণতন্ত্রের অনুকরণে বাংলাদেশের বর্তমান সংকট উত্তরণের উপায় হিসেবে এক শ্রেণির বুদ্ধিজীবী মধ্যবর্তী নির্বাচনকে প্রাধান্য দিচ্ছেন। তাঁদের যুক্তির অন্যতম ভিত্তি হচ্ছে বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৫ শতাংশ বা এর চেয়ে কিছু বেশি ভোট পড়েছে। তাই বিএনপির অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে আবার নির্বাচন হলেই সব সমস্যার সমাধান হবে। দলকানা কিংবা পশ্চিমা গণতন্ত্রে নেশাগ্রস্ত এ পরামর্শদাতাদের বেশির ভাগই বাংলাদেশের গণতন্ত্রের সমস্যা উপলব্ধি করতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি, বাংলাদেশের বড় দুটি দলের একটি যদি নির্বাচন বর্জনের ডাক দেয় এবং নির্বাচন প্রতিরোধে ভয়ানক সন্ত্রাস-তাণ্ডব থেকে বিরত থাকে, তাহলে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী অপর দল অন্ততপক্ষে ৫০ শতাংশ ভোট পাবে। কেননা বড় দুটি দলের ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ সমর্থক ভোটার রয়েছেন আর বাকি ১০ শতাংশ ভোটার ভোট দেবেন, যাঁরা নির্বাচনকে একটি বিনোদন বা মজার ঘটনা বলে মনে করেন। কাজেই ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ৫ শতাংশ ভোট পড়েছে, এটি বাংলাদেশের গণতন্ত্রের মূল সমস্যা নয়। তদুপরি গত দুই দশকেরও বেশি সময়ে সব দলের অংশগ্রহণে যে চারটি নির্বাচন হয়েছে, তাতে গণতন্ত্রচর্চায় কোনো অগ্রগতি হয়েছে কি? যদি অগ্রগতি হয়ে থাকে, তাহলে বড় দুটি দল কেন একে অপরকে রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করার পরিবর্তে গ্রেনেড মেরে, পুলিশি শক্তি ব্যবহার করে, সভা-সমাবেশে বাধা দিয়ে, মিথ্যা মামলা দিয়ে নিশ্চিহ্ন করতে চায়? রাজনৈতিক সভা-সমাবেশে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে কেন যুদ্ধ কৌশল 'হিট অ্যান্ড রান' বা চোরাগোপ্তা হামলা করে আগুনে পুড়িয়ে জীবন, সম্পদ ও রাষ্ট্রবিনাশী কর্মকাণ্ড বেছে নেয়? গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের নামে সর্বনাশা জঙ্গিবাদের কাঁধে সওয়ার হয়? ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে অর্ধেক আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনকে যাঁরা অবৈধ উল্লেখ করে এটিকে গণতন্ত্রের বড় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করতে চান তাঁরা কি জানেন, সদ্য সমাপ্ত যুক্তরাষ্ট্র কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ তথা প্রতিনিধি পরিষদের মোট আসনের ২৫ শতাংশ আসনে সংসদ সদস্যরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। ৪৩৫ আসনের মধ্যে ১০৯টিতেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জয়ী হয়েছেন প্রার্থীরা। যুক্তরাষ্ট্রের এ নির্বাচন কি অবৈধ? ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে অবৈধ আখ্যা দিয়ে যাঁরা মধ্যবর্তী নির্বাচনকেই সমাধান মনে করেন তাঁরা কি ভেবে দেখেছেন যদি নির্বাচন হয়ও আর সে নির্বাচনে তাঁদের আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোট জয় লাভ করে, তারপর কী হবে? নির্বাচনের পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসা আরো ভয়ংকর রূপ নিয়ে কি আবির্ভূত হবে না? কেউ কেউ বঙ্গবন্ধুর সমালোচনা করলেও তারেক জিয়ার মতো ভয়ংকর ক্রোধ আর প্রতিহিংসা নিয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে মিথ্যা ও অবমাননাকর মন্তব্য করেনি কেউ আজও। নির্বাচনে জয়লাভের পর এ মিথ্যা, ক্রোধ আর প্রতিহিংসা উবে যাবে কি? বিএনপি ও তার জোটের নেতাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার আর আওয়ামী লীগ ও তাদের জোটের বিরুদ্ধে হাজারো মামলা দায়ের কি শুরু হবে না? জামায়াতে ইসলামী মনে করে, আওয়ামী লীগ অন্যায়ভাবে তাদের নেতাদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ও শাস্তি প্রদান করছে। ক্ষমতায় গেলে তারা বিষয়টি এমনি ছেড়ে দেবে কি? জোট বন্ধু জামায়াতের চাপে আইনের কূটকৌশল প্রয়োগ করে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচার বন্ধ ও সাজাপ্রাপ্তদের মুক্তির ব্যবস্থা ছাড়া বিএনপি ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারবে কি? আর এমনটি হলে আওয়ামী লীগ এ ইস্যুকে কেন্দ্র করে কি রাস্তায় নেমে আসবে না? আবারও কি অরাজকতা সৃষ্টি হবে না? আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে গেলে লাগাতার সংসদ বর্জন করবে না তার গ্যারান্টি আছে কি? এর পরও বলবেন মধ্যবর্তী নির্বাচনেই সমাধান?

মধ্যবর্তী নির্বাচনে সমাধান হোক বা না হোক সংকট ঘনীভূত হচ্ছে, এ কথা অনস্বীকার্য। সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ভয়ানক নাশকতার আশঙ্কা করছে। সমস্যা সংকটে রূপ নিতে চলেছে। বিরোধী দলকে সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়া অগণতান্ত্রিক ও নিন্দনীয়। কিন্তু সভা-সমাবেশ করতে না দেওয়ার কারণে আগুনে পুড়িয়ে নিরীহ মানুষ হত্যা, শত শত কোটি টাকার সম্পদ ধ্বংস কেবল অগণতান্ত্রিক নয়, এটি সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। বিএনপিকে অনুধাবন করতে হবে রাস্তায় বের হওয়া সাধারণ মানুষেরা আওয়ামী লীগের সভা-সমাবেশবিরোধী অবস্থানকে সমর্থন করতে রাস্তায় বের হয়নি, নিতান্তই পেটের তাগিদে কিংবা জীবনযুদ্ধের অত্যাবশ্যক কোনো প্রয়োজন মেটাতে জীবন হাতে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছে। আমরা এ অবস্থা থেকে উত্তরণ চাই। সভা-সমাবেশহীন কিংবা অগ্নিদগ্ধ গণতন্ত্র কোনোটাই চাই না। গণতান্ত্রিক বাংলাদেশের বিরামহীন অগ্রযাত্রায় আমরা শরিক হতে চাই। সম্ভাবনার বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে অবদান রাখতে চাই।



লেখক : মো. জাকির হোসেন

অধ্যাপক, আইন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়



collected from : Kalerkantho newspaper

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.