নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনন্দ-পঠন

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই

মেহেদী হাসান মঞ্জুর

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই।

মেহেদী হাসান মঞ্জুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

অনন্য পুলক লাভ

০২ রা জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৩:১৭







অনেক কষ্টে; ধাক্কা দিতে দিতে, খেতে খেতে, চাপ দিয়ে, চাপে পড়ে, পায়ের পাতায় পারা খেয়ে, আরো জোরে পারা মেরে, প্রচন্ড ভিড়ের মধ্যে নিজেকে সেঁধিয়ে দিয়ে সামনের দিকে এগুনোর চেষ্টা করছি-যদি একটু দম ফেলার জায়গা পাওয়া যায়! অবশেষে বাসের ভেতরের রডটি দুহাতে শক্ত করে চেপে ধরে, দেহের ভারসম্যকে টেনেটুনে জড়ো করে দাঁড়াবার অবসর পেলাম। মানুষের ঘামে ভিজে যাওয়া বাতাস, বুক ভরে টেনে নিয়ে বেঁচে থাকার স্বাদ অনুভব করি।



বাসটি ঘষটে ঘষটে এগিয়ে চলছে; যতটুকু না চলে, তার চেয়ে বেশী সময় থেমেই থাকে। মাঝে মাঝে এমন মনে হয় যে, ফুটপাত দিয়ে ধুকে-ধুকে, কেশে-কেশে, হোঁচট খেতে-খেতে চলা মানুষগুলো বাদে আর সমস্ত কিছু যেন; আলিফ-লায়লার জগতের মত প্রস্তরে পরিণত হয়েছে।



বাসের মধ্যে, আমার মত অনেকেই নিরুপায় হয়ে দাঁড়িয়ে, আর কিছু মানুষ বসে আছে অসহায়ের মত। এদের অধিকাংশ আমার মত নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং কেউ কেউ নিম্নবিত্ত। শহুরে মধ্যবিত্তরা এখন আর এইসব মুড়ির টিনে যাতায়াত করেনা। ওরা এখন প্রত্যেকেই একেকটি করে প্রাইভেট কারের গর্বিত মালিক। শুধুমাত্র নিম্ন-মধ্যবিত্ত এবং নিম্নবিত্তরাই এখন এই সব মুড়ির টিনের মুড়ি এবং চাপ খাওয়া চিড়া।





আমি যেখানে দাঁড়িয়ে আছি, তার ডান পাশের সিটটাতে জানালার কাছে বসে রসিয়ে রসিয়ে পান চিবুচ্ছে একজন বেশ্যার দালাল। বিড়ি খেতে খেতে প্রচন্ড রকমে কালো হয়ে যাওয়া ফোলা-ফোলা এবড়ো থেবড়ো ঠোঁটের দুই কোন বেয়ে লাল লাল রস গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ছে। সে মহাখালীর মোড়ে আবাসিক হোটেলগুলোর সামনে নেমে পড়বে, যদি কিছু পয়সা পকেটে এসে পড়ে এই আশায়। আহা—সে যখন ব্যাবসাটা শুরু করেছিল কি জমজমাটই না ছিল! বড় লোকের জোয়ান ছেলেরা পকেট ভর্তি কড়কড়ে সুগন্ধী নোট নিয়ে দলে দলে প্রাইভেটকার হাঁকিয়ে সন্ধাবেলা হতেই জমা হতে থাকত। কত রাত যে ওরা মনের ভুলে বা কাঁচা মাংশের তীব্র ঝাঁঝালো গন্ধে বিভোর হয়ে একশো টাকা, পাঁচশ টাকার নোট ছুড়ে দিয়েছে; তা কি আর বলতে! সেই সোনার সময় যদি আজকে পর্যন্ত দীর্ঘায়ত হত তাহলে কি তাকে এই লক্কর-ঝক্কর বাসে চড়ে যাতায়াত কতে হয়! সে কি দশাসই একটা জাপানী টয়োটা প্রাইভেট কার কিনে ফেলতে পারত না! যত সমস্যার মূলে এই ডিস এন্টেনা আর ইন্টারনেট। এগুলোর মাধ্যমেই প্রাশ্চাত্য সংস্কৃতির ঢেউ এসে ঢুকে পড়ছে শহুরে মেয়েদের বুকের ভেতর। অই ফাজিল মেয়েরা এখন আর তার প্রেমিকদের মাথা ঠান্ডা করার জন্য বাইরে আসতে দেয়না, তাপানুকূল সুগন্ধি কক্ষে শুয়েই তাদের উষ্ণ রক্তের তাপ-চাপ দেয়া নেয়া করে। তাই বড়লোকের ছেলেরা এখন আর এদিকটা ভুলেও মাড়ায়না। এখন শুধু হতভাগা রিক্সাওয়ালাদের কড়া-পড়া পায়ের ধ্বনি শুনতে পাওয়া যায় কেবল। আর ওদের লুঙ্গির কোছা থেকে ঘামের বিশ্রী দুর্গন্ধে ভরা পাঁচ-দশ টাকার নোট গুলোও তেমন পকেটে ঢোকানো যায়না। এখনতো তাও কিছুটা ভাল আছে সে-একবারতো না খেতে পেরে প্রায় মারাই যাচ্ছিল। দুর্দিনেই মানুষের বুদ্ধি খোলে-হাহ-হা-- ঐ সময় সে যদি না বুদ্ধি করে তার ছোট, সুন্দর, কচি, পুতুলের মত বউটিকে চালাকি করে লাইনে না নামাত, তাহলে আজকে আর দেখতে হতনা! সোনা-বর্ণা বউটিকে লাইনে নামাতে কত যে হিটলারী-বুদ্ধি, চাণক্য-চালাকী, ম্যাকিয়াভেলী-ধূর্ততা খাটাতে হয়েছে তা একমাত্র পরোয়ারদেগার আল্লাহ-পাকই ভালো জানে। এখন তো কাঁচা কঞ্চির মত বউয়ের টাকায়ই সংসার চলে। পান আর বিড়ির টাকাটাই এখন শুধু ওকে জোগাড় করতে হয়।



আমার পিছনের দিকের বাম-পাশের সিটে বসে বসে ঝিমুচ্ছে একজন সিনেমা হলের টিকেট ব্ল্যাকার। ঝিমুনির মধ্যেও সে তার ডান কানটিকে অতি সচেতনতায় খাড়া করে রেখেছে, কখন ইঞ্জিনওয়ালা গরুর গাড়িটি আনন্দ-ছন্দ সিনেমা হলের সামনে এসে দাঁড়ায় সেই অপেক্ষায়। বেশ্যার দালালের মত তার ব্যাবসাটিও একসময় জট্টিল জমজমাট ছিল। কিন্তু কোন ব্যাটা যে খেয়ে দেয়ে কোন কাজ না পেয়ে এই সিডি- ডিভিডি আবিষ্কার করল! নচ্ছার ব্যাটাকে বাগে পেলে ওর সাদা চামড়া ব্ল্যাক করে ফেলা যেত। লোকজন এখন ঘরে বসে, বউ-বাচ্চা নিয়ে সিডি-ডিভিডি চালিয়ে হলিউড আর টালিউডের সিনেমা দেখে। সাদা সার্ট, খাকি প্যান্ট পরা কত স্কুল-কলেজের ছেলেরা যে নীল ছবি দেখতে এসে ওর কাছে টিকেটের জন্য ধর্ণা দিত তা কি আর বলে শেষ করা যাবে! আর এখন এই মডার্ন যুগে ওরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে কম্পিউটারের সামনে বসে চুইংগাম চিবোয় আর পর্ণগ্রাফী দেখে। সিনেমা হলের সামনে পথচারী ছাড়া আর তেমন কোন লোকই দেখতে পাওয়া যায়না আজকাল। দর্শক নেই তো টিকেট ব্ল্যাক করবে কার কাছে! আগে থাকা হত ফ্ল্যাট বাড়ি ভাড়া করে, আর এখন থাকতে হয় বস্তির ছালার ঘরে। এই টিকেট কালো করার ব্যাবসা বাদ দিয়ে শীঘ্রই অন্য কিছু কালো করা শুরু করতে হবে বলে মনে হচ্ছে। কত লোক টাকা কালো করতে করতে নিজেরা দুধের মত সাদা হয়ে গেল! আহা—আর কেন! টিকেট কালো করা আর নয়।

আমার থেকে দুই হাত সামনে একটি ভাঙ্গাচোরা নড়বড়ে সিটে, অনেক কষ্টে পা দুটো সিটের উপরে তুলে, মাথার দু-পাশে হাত দুটো জড়ো করে সামনের দিকে উবু হয়ে বসে আছে একজন প্রাক্তন মন্ত্রীর সাবেক পিএস। তার জিহ্বার খানিকটা অংশ নিচের দিকে ঝুলে রয়েছে, লালায় টসটস করছে; দু এক ফোটা ঝরেও পরছে মাঝে মাঝে। মন্ত্রী মহোদয়ের সামনে চরম প্রভুভক্ত কুকুরের মত বসে থাকতে থাকতে এমন অবস্থা হয়েছে যে, কোনভাবেই আর স্বাভাবিক মানুষের মত বসে থাকতে পারেনা। প্রভু ভক্তিতে সে কুকুর প্রজাতিকে পুরোপুরি হারিয়ে দিতে পারে। ভিড় ঠেলেঠুলে এসে যেই কন্ট্রাক্টর তার কাছে ভাড়ার টাকা চেয়েছে, অমনি সে তড়াক করে ছোট একটি লাফ দিয়ে বলে উঠে; ইয়েস স্যার। মন্ত্রী মহোদয়কে ইয়েস স্যার বলতে বলতে তার জিহ্বার গতি-প্রক্রিয়া এমন একটি স্থায়ী রূপ লাভ করেছে যে, ইয়েস স্যার ছাড়া অন্য কোন কথা মুখ দিয়ে সরতে চায় না। মাথা চুলকাতে-চুলকাতেঃ ইস- কি ভুলটাই না হয়ে গেল! তারপর শক্ত চোয়ালের কন্ডাক্টরের মুখের দিকে তাকিয়ে সে কিছুটা বিরক্ত হয়। অনেক ধৈর্যে পকেট হাতড়ে দুই টাকার কয়েকটা নোট বের করে কন্ডাক্টরের হাতে ধরিয়ে দেয়। হায়রে-কপাল এখন আমাকে দুই টাকার নোট বের করতেও পকেট হাতড়াতে হয়! অথচ স্যার যখন মন্ত্রী ছিল তখন স্যারের আঙ্গুল গলে কত পয়সা যে ঝরঝরিয়ে পড়ত; ভাবলেই ইয়েস স্যার, ইয়েস স্যার ধ্বনি উঠে গলা দিয়ে। কিন্তু অই বুক উঁচা মডেল আর পেটমোটা চিত্র নায়িকাদের পাল্লায় পড়ে সব শেষ হয়ে গেলো! তখন কি আর বোঝা গিয়েছিল যে, স্যার গরাদে ঢুকবেন! একমাসের আঙ্গুল গলানো টাকা জমালে কি আজকে আর কন্ডাক্টরকে মনের ভুলে ইয়েস স্যার বলতে হয়!



একেবারে পেছনের সীটের ডান-পাশে, ভাঙ্গা গালের প্রচন্ড ভয় পাওয়া মুখ নিয়ে বসে আছে সরকারী অফিসের মাছি তাড়ানো কেরানীটি। এমন ভাবে বসে আছে যে, দেখে মনে হয় নিবিষ্ট মনে লেজার খাতার দিকে তাকিয়ে আছে। তার নিচের ফ্যাঁকড়া ঠোঁট দুটি ইঞ্চি-দুয়েক ঝুলে রয়েছে; আর তার ঘষা কাঁচের চশমাটি কোনমতে নাকের ডগাটি চেপে ধরে পড়ে যাওয়া থেকে রেহাই পাচ্ছে। মাটির দিকে তাকিয়ে হাঁটতে-হাঁটতে আর চেয়ারে কুঁজো হয়ে বসে থেকে ঘাড় এবং পিঠ এমন ভাবে বেকে গিয়েছে যে, বুক টান করে সামনের দিকে তাকাতে গেলেই টাল খেয়ে পড়ে যাওয়ার মত অবস্থা হয়। ঘুষের টাকা গুনতে গুনতে তর্জনী ও বুড়ো আঙ্গুলে মোটা কালো কড়া পড়ে গিয়েছে। কেরানীর গোনাই সার, প্রায় সমস্ত টাকাটাই ভুড়ি মোটা কর্মকর্তাদের মাঝখানে ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যায়। সংসারের বিশাল তিমির মত হা –করা মুখে ঘুষের কিঞ্চিত ভাগ আর বেতনের সামান্য কটি টাকা হাওয়াই মিঠাইয়ের মত মিলিয়ে যায়। এভাবেই পোনা –মাছের মত কাতরায়ে-কাতরায়ে চলে যাচ্ছিল দিন-মাস-বছর। কিন্তু কিছুদিন পূর্বে পাড়ার বখাটে ছেলেরা, স্কুল থেকে ফেরার পথে ক্লাশ নাইনে পড়া মেঝো মেয়েটিকে ধরে নিয়ে যায়। তারপর রাতভর উপর্যুপরি গণধর্ষণ করে কাক ডাকা ভোরে রাস্তার পাশে ফেলে রেখে যায় ঠোকরানো লাশ। থানায় এজাহার করতে যাওয়ার কথা মাথায় উদয় হয়েছিল কিন্তু একবার বখাটেগুলো বাসায় এসে, “থানায় গেলে তোমার ছোট মেয়েটিরও একই অবস্থা হবে, ভালো করে বুঝে দেখো তারপর সিদ্ধান্ত নাও কি করবে” বলে যাবার পর থেকে শোক করার মত অবস্থাও আর নেই! ভয়ে বুকটা সবসময় ঢিপ ঢিপ করতে থাকে । হার্টটা যে কখন ফেল হয়ে যায়--



আমার সামনেই; পড়ে যেতে যেতে ডান হাতের শক্ত মুঠিতে বাসের রডটি চেপে ধরে এই ভিড়ের মধ্যেও বাম বগলে কাঠের কালো ডাটের ভাঙ্গা ছাতাটি চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে ভাঙ্গাচোড়া স্কুলের থার্ড মাষ্টার। যদিও পাঁচ বছর পূর্বেই মাষ্টারীর চাকরী শেষ হয়ে গিয়েছে তারপরও নিজেকে এখনও মাষ্টার ভাবতে সুখী-সুখী লাগে। দাগ রেখে যাওয়ার কি মধুর দিন গুলোই না ছিল তখন! কচি ছেলেগুলোর শরীরে নিজের হাতে তৈরী করা লালচে দাগগুলো দেখার প্রচন্ড ইচ্ছে হত তার, মন চাইত পরম সোহাগে হাত বুলোতে। দাগগুলো নিশ্চয়ই খানিকটা ফুলে-ফুলে উঠতো । অন্যান্যদের মত বর্বরোচিত ভাবে সে দাগ ফেলতো না। ঐ সময় সে বালকগুলোর সাথে মিষ্টি-মিষ্টি সুরেলা গলায় মৃদু মৃদু আলাপচারিতা করতঃ আজকে কি দিয়ে ভাত খেয়েছিসরে? তোর সার্টটা তো খুব সুন্দর হে, বাড়ি যেন কোন গ্রামে? তোর বাড়ীর পাশে কি পুকুর আছে? তোরা কয় ভাই–বোন, তোর ছোট ভাই কোন ক্লাশে পড়ে? দাগ তৈরীর উদ্দেশ্যে সে, সাপের শরীরের মত চক্কর-চক্কর বেতটি কিছুক্ষণ তাদের কচি-কোমল শরীরে চেপে ধরে রাখতো। এতে করে দাগটা অনেক ভালো করে বসে যেত, অন্যান্য জায়গা থেকে রক্ত এসে সরু লম্বা দাগটিকে গাঢ় লালচে করে তুলত। এক অনির্বচনীয় সুখে তার মন-প্রাণ ভরে উঠত, তার সমস্ত শরীরে ভর করতো অদ্ভুত মাদক উল্লাস, শিহরণে কেঁপে কেঁপে উঠত তার বুড়ো বুক। একটি ছেলের গায়ে দাগ বসিয়ে সবচেয়ে বেশী সুখ পেত সে। কি যে সুন্দর ছিল ছেলেটি! একটুও নড়াচড়া করতনা, বিশাল-বিশাল কালো ড্যাব-ড্যাবে চোখ মেলে সুদূর পানে তাকিয়ে থাকত শুধু। এক অদ্ভুত নীল বেদনায় তার চোখ মুখ ভরে যেত। ক্লাশে কোনদিনই পড়া শিখে আসতনা ছেলেটি, ফলে ওর গায়ে প্রত্যেক দিন রসিয়ে রসিয়ে দাগ ফেলা যেত। আহা – ঐ দিনগুলোতে যদি এক মুহূর্তের জন্যও ফিরে যাওয়া যেত!





বাসটি প্রায় আনন্দ-ছন্দ সিনেমা হলের কাছাকাছি চলে এসেছে। এর মধ্যে অনেকে উঠেছে, নেমেছে কয়েকজনমাত্র, আমি ওখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছি। হঠাৎ একটি প্রচন্ড হায়- হায় চিৎকার --- আমার- মোবাইল--- ফোন -----গেল, গেলরে------- গেল---; ধর----ধর--ধর, আমার –ভাই—সৌদি-- থিক্যা-- পাঠাইছে; ভিডিও মোবাইল—ছবি তোলন যায়, গান হোনন যায়, নাচ ------দেহন যায়, আর কত –কিছু-------করন যায়, পাঁচশ--- রিয়াল---- দিয়া—কিন্যা—পাঠাইছে! ঐ-যে – বিচ্ছুটা-- যাইত্যাছে, দৌড়াইয়া—--যাইত্যাছে। ধরেন—ভাই—ধরেন-- বিচ্ছুডারে, আমার—সর্বস্ব—নিয়া-- যাইত্যাছে।



চিৎকার শুনে বেশ্যার দালাল, টিকেট ব্ল্যাকার, সরকারি অফিসের কেরানী, প্রাক্তন মন্ত্রীর প্রাক্তন পি এস, ভাঙ্গাচোড়া স্কুলের থার্ড মাস্টার; বুক উঁচু করে দাঁড়িয়ে যায়। তাদের শরীরের সমস্ত রক্ত বলক পাড়তে শুরু করে, পেশী গুলো সালমান খানের পেশীর মত ফুলে উঠে লাফাতে থাকে অবিরত। সাহসের আতিশয্যে তাদের হৃদপিন্ড ফুলে বেরিয়ে আসতে চায়। রক্ত-মাংশ-মেদ-হাড়-মজ্জা ছেনে দেহের সমস্ত পুষ্টি-অপুষ্টি-বর্জ্য ঘেঁটে তৈরী হওয়া সবটুকু ঘন আঠালো তরল পদার্থ তাদের অন্ডকোষে জমা হতে থাকে ধীরে ধীরে। এত তরল জমে উঠে যে থলি ফেটে বেরিয়ে আসতে চায়, ছিলকে পড়ে পথ-ঘাট-প্রান্তর-নদী-নালা-খাল-বিল ভাসিয়ে দিতে চায়। অসহ্যেরও একটা সীমা আছে তারও বাইরে চলে যায় তারা; না ---না---আর পারছেনা!



দু-হাতে অন্ডকোষটি প্রচন্ড জোরে চেপে ধরে, বাস থেকে নেমে দৌড় শুরু করে তারা। বিচ্ছুটাকে প্রথমে দেখা যায় না, এদিক-ওদিক তাকাতে থাকে ভীষণ অস্থিরতায়। হ্যা---হ্যা---অইত, হাফপ্যান্ট পড়া খালি গা; হাঁপাতে-হাঁপাতে, দৌড়াচ্ছে প্রচন্ড গতিতে। বিচ্ছুটা গলির ভেতরে ঢুকে যেতে চায়, কিন্তু চোখের সামনে জুতসই কোন গলি সে খুঁজে পাইয় না। ওরা কি বিচ্ছুটাকে পারবে ধরতে? হ্যাঁ অবশ্যই পারবে, তারা আজকে উসাইন বোল্টের চেয়েও দ্রুত গতিতে দৌড়াতে পারছে, তাদের পায়ে যেন বিদ্যুৎ খেলে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে তারা আজকে উড়তেও পারবে । প্রায় কাছাকাছি চলে এসেছে, এইতো----এইতো-ধর----ধর----হ্যা—হ্যা----আহা!----আহা!------আহা!------আর—যাবে—কোথায়—বাপধন-- আর ---পালানোর—রাস্তা—নেই!



বরিষে দেখো –শান্তিরো--- পানি!----কি শান্তি! –কি মজা!—কি পুলক! এমন পুলক তারা আগে কোন দিন লাভ করেনি! তাদের আন্ডারওয়্যার পুরোপুরি ভিজে যায়, ঘন থিকথিকে তরল পড়তে থাকে তাদের পা বেয়ে, কালো পিচের রাস্তা ঘনতরলে ভরে উঠে, অনন্য পুলক লাভ করতে থাকে তারা। আর এই অনন্য পুলক লাভ করতে, হাজার হাজার মানব-জন্তু জমা হতে থাকে চারপাশে। তারা প্রত্যেকেই মধুর পুলক লাভ করে জট্টিল সুখি বোধ করে নিজেকে। পাঁচটি-দশটি-পনেরটি-বিশটি করে পুলক লাভ করে প্রত্যেকে। কেউ কেউ নাকি পঞ্চাশটি করে পুলক লাভ করেছে বলেও শোনা যায়।



রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় গাঢ় লাল ছোট খাট একটি মাংশ পিন্ডকে। ওই মাংশ পিন্ডটির আর কোন দিন ক্ষুধা লাগবেনা, ক্ষুধার যন্ত্রণায় আর কোন দিন কাতরাতে হবেনা ওটিকে। শান্তি –নির্বাণ ---নির্বাণ—শান্তি, শান্তি সমাহিত, সমাহিত শান্তি। ওমঃ শান্তি; ওমঃশান্তি, সকলেরই শান্তি লাভ হোক, সকলেরই পরম নির্বাণ লাভ হোক, আমেন!!!!!!!!!!!



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.