নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনন্দ-পঠন

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই

মেহেদী হাসান মঞ্জুর

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই।

মেহেদী হাসান মঞ্জুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

প্রবাসভূমে বাংলাদেশী শ্রমিক

০৫ ই জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪৫



বাংলাদেশের বর্তমান অর্থনীতির প্রধান ভিত্তি প্রবাসী শ্রমিকদের পাঠানো রেমিটেন্স । এরা পরিবার পরিজন, আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব ছেড়ে বিদেশ বিভূইয়ে গিয়ে কঠোর পরিশ্রম করে শত অপমান , লাঞ্ছনা – বঞ্চনা, অত্যাচার , নির্যাতন, নিগ্রহ সহ্য করে বিদেশী মুদ্রাপাঠিয়ে দেশের অর্থনীতিকে বাঁচিয়ে রেখেছে অথচ আমরা তাদের প্রতি কোন ধরনের দায়িত্ববোধই অনুভব করিনা । এবং তারা প্রবাসে গমন করার সময় আদমব্যপারী এবং এজেন্সীগুলোর হাতে যে নাকানি চুবানি খায় এবং হয়রানির শিকার হয়, কোন এক রহস্যময় কারনে আমাদের সরকার এবং রাষ্ট্র ব্যবস্থা তার প্রতি এক নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। শ্রমিক হিসেবে তারা প্রবাসে যাবে , এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর থেকেই তাদের উপর নির্যাতনের শুরু । কুহকিনী আশার ছলনায় পড়ে তারা ধীরে ধীরে নির্যাতনের স্টীমরোলারের চাপে পিষ্ট হতে থাকে । পরিবার-পরিজনদের নিকট বিদায় নিয়ে চলে যাবার পর তারা এয়ারপোর্টে বা এজেন্সির সামনে ঘন্টার পর ঘন্টা বসে থেকে বাড়িতে ফিরে আসে । প্রায় প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই এরকম ঘটনা চার-পাঁচবার করে ঘটে থাকে । অনেকে আবার এয়ারপোর্টের ভেতর দুই তিনদিন অর্ধাহারে অনাহারে বসে থাকার পর তাদের কাঙ্খিত ফ্লাইটটি পায় ।







সরকারী হিসাব মতে প্রত্যেকজন শ্রমিকের বিমান ভাড়া , ওয়ার্কপারমিট, এবং হেলথ ইনসুরেন্স বাবদ এক লাখ টাকার মত খরচ হয় । অথচ আদম ব্যপারী ও এজেন্সী গুলো তাদের নিকট থেকে ৪-৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে ; আমলা , এম.পি. ও মন্ত্রীদের বরাদ্দকমিশন শোধ করে বাকী টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগ বাটোয়ার করে নেয় । এবং শ্রমিকদের সাবধান করে দেয়া হয় যে , যদি জনশক্তি অধিদপ্তর টাকার ব্যপারে কোন প্রশ্ন করে , তাহলে তারা যেন উত্তর করে তাদের নিকট থেকে মাত্র ১ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে, এটা না বললে তাদের সমস্যায় পড়তে হবে, তারা বিদেশগমন করতে পারবেনা । এরকম নিগ্রহ , বঞ্চনা অতিক্রম করে তারা যখন প্রবাস জীবনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয় তখন তারা মনে করে যে , সোনার দেশে যাচ্ছে যেখান থেকে তারা সোনা কুড়িয়ে আনবে । কিন্তু আরও যে কত লাঞ্ছনা , আরও কত নিগ্রহ তাদের জন্য চাতক পাখীর মত অপেক্ষা করে আছে সেটা তারা ঘূর্নাক্ষরেও টের পায়না । এবং তাদেরকে আদম ব্যপারীরা , ভাল-ভাল কাজ এবং মোটা বেতনের কথা বলে প্রলোভিত করে আশা দেখিয়ে নিয়ে যাওয়ার পর তারা অধিকাংশ সময়ে দেখতে পায় তাদের দেয়া হয়েছে মরূভূমিতে মাজরার (মেষচড়ানো) বা কনস্ট্রাকশনের কাজ এবং বেতন যে পরিমান মোটা হওয়ার কথা ছিল সেই পরিমানেই সরু।





বাংলাদেশের বেশীরভাগ প্রবাসী শ্রমিক থাকে মধ্যপ্রাচ্যের পাকভূমি সৌদি আরবে । সেখানে প্রবাসী শ্রমিকদের উপর তার মুসলমান ভায়েরা যে অত্যাচার ও নির্যাতন চালায় তার চিত্র এখানে কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করব । একজন শ্রমিক যখন দেশ ত্যাগ করে তখন তাদের পাসপোর্টে ভিসা লাগানো থাকেনা , তাদের হাতে থাকে সবুজ রংয়ের পাসপোর্টটি এবং কোম্পানির সাথে তাদের করা চুক্তি পত্রটি । তাদের পাসপোর্টে ভিসা লাগানো হয় ঐ দেশের এয়ারপোর্টে অবস্থিত ভিসা অফিসে । কোম্পানীর লোকজন এসে তাদের পাসপোর্টে ভিসা লাগিয়ে তাদেরকে সেখান থেকে নিয়ে যায় । অনেক সময় কোম্পানীর লোক আসতে দেরী হওয়ার ফলে শ্রমিকদের ঐ এয়ারপোর্টে দুই তিন দিন পর্যন্ত বসে থাকতে হয় । এরকম অবস্থা আমি নিজে আবুধাবি বিমানবন্দরে দেখেছি । আর মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে যে সমস্ত বাঙ্গালী মেয়েদের গৃহ পরিচারিকার কাজে পাঠানো হয় তাদেরকে অনেক সময়ই ব্যবহার করা হয় রক্ষিতা বা বার গার্ল হিসেবে।





যাই হোক কোম্পানীর লোকজন এসে প্রথমেই শ্রমিকদের নিয়ে যায় থাকার জায়গায় , যেখানে প্রাথমিক ভাবে তাদেরকে তিন রুমের একটি ফ্ল্যাটে ১০০-১৫০ জনকে একসাথে গাদাগাদি করে রাখা হয় ; তারপর ডিউটি শুরু হলে তুলনামূলক ভালজায়গায় তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয় সেখানে ১রুমে ৭-৮ জন শ্রমিককে থাকতে দেওয়া হয় এবং রুমগুলো থাকে ছাড়পোকায় ভর্তি । ডিউটি থেকে ফিরে তারা ছার পোকার কামড়ের যন্ত্রনায় ঠিকমতো ঘুমোতে পারেনা । ডিউটির নির্ধারিত সময়ে যখন তারা কোম্পানীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে গলির রাস্তা ধরে হাটতে থাকে তখন সৌদির যুবক ছেলেরা খাচি খাচি ডিম নিয়ে বারান্দায় বা জানালার পাশে বসে অপেক্ষা করতে থাকে , বাঙ্গালী দেখামাত্র তাদের উদ্দেশ্য করে অনবরত ডিম ছুরতে থাকে । পোশাক পাল্টানোর জন্য শ্রমিকদের আবার ছুটে যেতে হয় তার বাসায় ফলে এতে তার কাজে যেতে দেরী হয়ে যায় এবং ম্যানেজারের নিকট খেতে হয় ধমক । আরেক দল যুবক যারা রাস্তার ধারে বসে থাকে পাথর হাতে নিয়ে , বাঙ্গালী শ্রমিক দেখামাত্রই শুরু হয়ে যায় পাথর বৃষ্টি। আরেক দল আছে যারা খালি হাতেই বসে থাকে তারা বাঙ্গালী দেখামাত্রই তাদের পাকড়াও করে থাপ্পর , কিল, ঘুষি,লাথি বৃষ্টি শুরু করে দেয় । পাকভূমি সৌদিআরবে রহমতের বৃষ্টি কম হলেও বৃষ্টির কোন অভাব নেই; ডিমবৃষ্টি,,পাথর বৃষ্টি, কিল থাপ্পরের বৃষ্টি যা অবিরত ধারায় পড়তে থাকে বাঙ্গালী শ্রমিকদের উপর । এমনকি সৌদি আরবের শিশুরাও কম যায়না , তারা বাঙ্গালী দেখামাত্রই পাথর ছোড়ার চেষ্টা করে , এবং এসময়ে তাল সামলাতে না পেরে নিজেরাই উল্টে পড়ে যায় কিন্তু তাতেও চেষ্টার কোন ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়না । কারন তারা তাদের বাবা -মা এবং বড়দের নিকট বাঙ্গালী শ্রমিকদের সমন্ধে যে গল্প বা যেসব কথাবার্তা শোনে তাতে বাঙ্গালী শ্রমিকদের কীটপতঙ্গ ছাড়া অন্যকিছুই মনে করতেপারেনা ; শিশুরা কীটপতঙ্গ দেখলে তো ঢিল ছুড়বেই এটাই স্বাভাবিক । আবার বাঙ্গালী শ্রমিক যখন বড় রাস্তার ফুটপাত ধরে হাটতে থাকে বা সাইকেল চালাতে থাকে তখন প্রাইভেটকার আস্তে আস্তে বাঙ্গালীদের নিকটে এসে , গাড়ীর দরজাদিয়ে প্রচন্ড জোরে ধাক্কামেরে ফেলে দিয়ে দ্রুতগতিতে চলে যায় । লোকটি আহত অবস্থায় ফুটপাতের উপর মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। যেন বাংলাদেশ উপুড় হয়ে পড়ে রয়েছে সৌদি আরবের ফুটপাতে।





বাঙ্গালী শ্রমিকদের উপর নির্যাতনের কাহিনী বলতে গিয়ে হৃদয়ভারাক্রান্ত হয় কিন্তু নির্যাতনের শেষ হয়না । বাঙ্গালী শ্রমিকদের বিভিন্নধরনের কাজ করতে হয় পরিবার পরিজনের নিকটে টাকা পাঠানোর জন্য । তাদের কেউ কেউ মাঝে মাঝে ডাস্টবিন থেকে বিভিন্ন ধরনের বোতল- ক্যান কুড়িয়ে সেগুলোকে কেজি দরে বিক্রি করে । যখন তারা মাথা নিচ দিকে দিয়ে বোতল , ক্যান ইত্যাদি খুঁজতে থাকে তখন সৌদি যুবকরা এসে শ্রমিকটির দুই পা উচু করে ডাস্টবিনে ফেলে চলে যায় । এই নিয়ে যদি পুলিশের নিকট বিচার চাওয়া হয় তখন পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হল ওরা মাসুম বাচ্চা ।





আরও কত ধরনের নির্যাতন যে তাদের উপর চালানো হয় তার কোন ইয়ত্তা নেই । বাঙ্গালী শ্রমিকরা প্রায়ই তাদের নিজ নিজ ডিউটি পালন শেষ করে বিকেল বেলায় বাড়তি কাজের আশায় কোন মার্কেটের সামনে জড়ো হয় ভাড়া খাটার জন্য । অনেক সময় দেখা যায় অল্প বয়সী শ্রমিকদের কাজের কথা বলে তাদেরকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয় কোন রুমে বা মরুভূমিতে । তারপর তাদের উপর বর্বোরিত ভাবে যৌন নির্যাতন চালিয়ে ছেড়ে দেয়া হয় । এই দেশকেই আমরা বলি পাক দেশ , এ দেশের মানুষকে বলি পবিত্র মানুষ !



কোন কোন বাঙ্গালী শ্রমিকদেরকে আবার লাগানো হয় মরুভূমিতে মেষ চড়ানোর কাজে । মরুভূমির অনেক ভেতরে শুধুমাত্র তাবু খাটিয়ে প্রচন্ড গরমের মধ্যে তাদেরকে বাস করতে হয় মাসের পর মাস বছরের পর বছর । তাদেরকে খাবার হিসেবে দেয়া হয় কয়েকটি বড় বড় শুকনো রুটি ও কিছু খেজুড় । মেষদের জন্য রাখা পানিই তাদেরকে পান করতে হয় বোতলে ভরে নিয়ে । ঐ হাবিয়া দোজখের মত প্রচন্ড গরমের মধ্যে বসবাস করার ফলে তাদের নাক দিয়ে রক্ত ঝরে ।





এখন প্রশ্ন আসতে পারে , এত অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে কেন বাঙ্গালী শ্রমিকরা প্রবাসভূমে পড়ে থাকে ? কারন অধিকাংশ শ্রমিককেই প্রবাসে আসার সময় তার জীবনের শেষ সম্বল টুকু বিক্রী করে আসতে হয়েছে । ফলে দেশে ফেরত আসার সকল পথ তাদের জন্য বন্ধ থাকে । সুতরাং সকল ধরনের অত্যাচার, নির্যাতন , নিগ্রহ সহ্য করে ঐ বর্বরদের দেশের তাদেরকে পড়ে থাকতে হয় । এর পরেও দেখা যায় যখন তখন তাদেরকে বিনা দোষে বিনা নোটিশে দেশে ফরত পাঠানো হয় । সবকিছু হারিয়ে তারা উদ্ভ্রান্ত পথিকের মত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে থাকে ।





এত অত্যাচার নির্যাতন করে ও তারা ক্ষান্ত হয়না , বর্বরতার চরম পারকাষ্ঠা দেখানোর জন্য ওরা আশ্রয় নেয় শারিয়া আইনের । এই শারিয়া আইনে বিচারের রায় একতরফাভাবে ঘোষনা করা হয় এবং দন্ড প্রাপ্ত আসামীদের উন্মুক্ত প্রান্তরে লোক সম্মুখে বলির পাঠার মত জবাই করে হত্যা করা হয় । কিছুদিন পূর্বে আটজন বাঙ্গালী শ্রমিককে ডাকাতি এবং একজন মিশরীয় নাগরিককে খুন করার ঘটনায় দোষী সাব্যস্ত করে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে । এখানে শুধু আটজন বাঙ্গালীকেই নয়, মানসিকভাবে খুন করা হয়ে আমাদের ষোল কোটি বাঙ্গালীকেও । জবাই করা হয়েছে আমাদের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে- বিশ্বের সকল মানবিকতা এবং সভ্যতাকে । বাঙ্গালী শ্রমিকদের ডাকাতি এবং একজন মিশরীয় নাগরিকে খুন করার ঘটনা যদি আমরা স্বীকার করেও নেই তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে তারা ঐ ঘটনা কেন ঘটাতে গেল ? তারা প্রবাসে গিয়েছে কঠোর পরিশ্রম করে অর্থ উপার্জন করতে , চুরি , ডাকাতি কিংবা মানুষ খুন করতে যায়নি । কঠোর পরিশ্রম করার পর তারা যখন তাদের পারিশ্রমিক পায়না , যখন দেশের পরিবার পরিজনকে থাকতে হয় অর্ধাহারে , তাদের থাকতে হয় অনাহারে তখন তারা তো পেটের দায়ে একান্ত বাধ্য হয়ে চুরি ডাকাতি করতে যাবেই । এবং ধরা পড়ার হাত থেকে নিজেদেরকে বাচানোর জন্য কাউকে আঘাত করতেও পারে তাতে লোকটির মৃত্যু হতে পারে । এই অপরাধ সংঘটনের পেছনে মূল দায় যাদের তারা হল ঐ সমস্ত কোম্পানির মালিক যারা শ্রমিকদের বেতন ভ্রাতা টিকমতো পরিশোধ করেনা । জানতে চাই তাদের কি শাস্তি হল বা কি শাস্তি হবে ? তাদের কোন ধরনের শাস্তি হবেনা কারন তারা সৌদি আরবের নাগরিক এবং তারা অপরাধ সংঘঠিত করেছে বাঙ্গালী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে । ঐ নরপশুরা বাঙ্গালী শ্রমিকদের তো কীটপতঙ্গ মনে করে । কীটপতঙ্গের প্রতি কৃত অপরাধের জন্য কি পাকভূমি সৌদি আরবের মহান দু-পেয়ে জন্তুদের কি কোন ধরনের শাস্তি দেয়া যায় ? ওরা যখন বাঙ্গালী শ্রমিকদেরকে উন্মুক্ত প্রান্তরে যখন জবাই করে তখন কি ওদের লোমশ রক্ত লোলুপ মুখ দেখে কি তাদের মাংশাসী হিংস্র পশু থেকে পৃথক করা যায় ? সভ্যতার সকল দান গ্রহন করে আজও ওরা অসভ্য ; আধুনিক যুগে বাস করেও ওরা মধ্য যুগীয় বর্বর । পৃথিবী থেকে ওদের ছুড়ে ফেলতে হবে এমন এক গ্রহে যেখানে মানুষ বসবাস করতে পারেনা,, পারে শুধু জন্তু জানোয়ার বসবাস করতে। ওটাই হবে ওদের সঠিক আবাসস্থল।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.