নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনন্দ-পঠন

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই

মেহেদী হাসান মঞ্জুর

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই।

মেহেদী হাসান মঞ্জুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

সারা বিশ্বে সেরা দশে বাংলাদেশের স্পাইরাল গ্যালাক্সী

২০ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:০৮



অর্থনৈতিক দিক থেকে আউটসোর্সিং বাংলাদেশে একটি বিশাল সম্ভাবনার নাম। আমাদের দেশের বর্তমান প্রজন্মের আইটিতে প্রশিক্ষিত তরুণেরা এই ক্ষেত্রে ইতিমধ্যেই বেশ সাফল্য অর্জন করেছে। এতে করে নিজেরা যেমন অর্থনৈতিকভাবে সাবলম্বী হয়েছে তেমনিভাবে বৈদেশিক মুদ্রা উপার্জন করার মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে করে তুলছে সমৃদ্ধ। বর্তমান বিশ্বে অনেকগুলো আউটসোর্সিং মার্কেট প্লেস ওয়েবসাইট আছে যেগুলোর মাধ্যমের আবেদন করে, বিশেষভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট, কানাডা ও ইউরোপের নানা দেশ থেকে বিভিন্ন ধরনের আউটসোর্সিং এর কাজ পাওয়া যায়। এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বড়, জনপ্রিয় এবং অনেক ধরনের কাজের সমাহার হচ্ছে ফ্রীল্যান্সার ডট কম নামক ওয়েবসাইটটি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও ইউরোপের লোকজন এই কাজগুলো তাদের নিজেদের দেশের তরুণদের দ্বারা করাতে চাইলে অনেক বেশী পারিশ্রমিক গুনতে হয়। কিন্তু উন্নয়নশীল বিশ্বের দেশগুলো বিশেষ করে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ভারত, বাংলাদেশ, শ্রীলংকা, পাকিস্তান ও ফিলিপাইন ইত্যাদি দেশের তরুণদের দিয়ে কম পারিশ্রমিকেই কাজগুলো করিয়ে নেয়া সম্ভব ফলে তাদেরকে এদিকেই বেশী করে ঝুঁকতে দেখা যায়। পুরো বিশ্বে আউটসোর্সিং এ দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশী এগিয়ে আছে আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারত। তবে বাংলাদেশের তরুণেরা এই ক্ষেত্রে উত্তরোত্তর আরো বেশী করে সফলতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। তারই একটি নজির আমি এখানে উপস্থাপন করতে যাচ্ছি।

রাজধানী ঢাকার খিলক্ষেতের নিকুঞ্জতে অবস্থিত একটি আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানের নাম হচ্ছে স্পাইরাল গ্যালাক্সী। একঝাঁক উদ্যমশীল তরুণ এখানে ফ্রীল্যান্সার হিসেবে কাজ করে ফ্রীল্যান্সার ডট কম ওয়েবসাইটের মাধ্যমে। এই প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং ডিরেক্টর হচ্ছেন কামরুল হাসান রঞ্জু। সে মফস্বলের একটি কলেজ থেকে এইচ এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর ভারতের ব্যাঙ্গালোর থেকে কম্পিউটার সাইন্সে ব্যাচেলর ডিগ্রী লাভ করে দেশে ফিরে অনেকদিন চাকরীর আশায় বৃথা সময় নষ্ট করার পর স্বাধীনভাবে কিছু একটা দাঁড় করানোর চেষ্টায় নিজের মনযোগকে সম্পূর্ণভাবে নিয়োজিত করে। ভারতের ব্যাঙ্গালোর থেকেই আউট সোর্সিং সমন্ধে প্রাথমিক ধারনা সে লাভ করেছিল। ২০১০ সালে ঢাকাতে আরো তিনজন বন্ধুকে সাথে করে তিনটি মাত্র কম্পিউটার ও একটি ব্রডব্র্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগকে সম্বল করে স্পাইরাল গ্যালাক্সী নামক প্রতিষ্ঠানটির যাত্রা শুরু করে। এই তিনজন বন্ধুর নাম হচ্ছে কামরুল ইসলাম, সোহাগ খান এবং মনিরুজ্জামান রতন। এই তিনজন এখন প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক ব্যাবস্থাপনার দায়িত্বে নিয়োজিত আছে। বর্তমানে ত্রিশটি কম্পিউটার এবং চারটি ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট সংযোগের মাধ্যমে এখানে আউটসোর্সিং এর কাজ চলে এবং এখানে আরো কাজ করে পঁচিশটি তরুণ, এই প্রতিষ্ঠানটির কল্যানে এরাও বেকারত্বের অভিশাপ থেকে পেয়েছে মুক্তি। ২০১০ থেকে ২০১৩ এই সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যেই স্পাইরাল গ্যালাক্সী নামক এই আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠানটি পুরো বিশ্বের মধ্যে ফ্রীল্যান্সার ডট কম ওয়েবসাইটে( বিশ্বের সর্ব বৃহৎ আউটসোর্সিং মার্কেট প্লেস- যেখানে লক্ষ লক্ষ দক্ষ ফ্রীল্যান্সার ও হাজার হাজার ফ্রীল্যান্সার প্রতিষ্ঠান কাজ করে) সেরা দশে স্থান করে নেয়। অভিনন্দন এই কঠোর পরিশ্রমী, অধ্যবাসায়ী ও উদ্যমশীম তরুনদের। অভিনন্দন জানিয়েছে ফ্রীল্যান্সার ডট কম নামক ওয়েবসাইটটিও।



স্পাইরাল গ্যালাক্সী প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর কামরুল হাসান রঞ্জুর কাছে প্রেরিত একটি সংক্ষিপ্ত ইমেইল বার্তায় ফ্রীল্যান্সার ডট কম ওয়েবসাইটটি জানায়- congratulation! It looks all your hard work over the past year has earned you a place among the top 10 freelancer in the world. Keep up the great work and share this victory with all your friends.



তাদের এই সাফল্য অর্জনে অনেক বন্ধুর পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। অনেকটা বলা যায় প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর কামরুল হাসান রঞ্জু ও তার তিনবন্ধুর অসীম ধৈর্য, কঠোর পরিশ্রম, সামনের এগিয়ে চলার স্বপ্ন, সকল বাধা-বিঘ্নকে মোকাবেলা করার সাহস, স্বাধীনভাবে কিছু একটা করে দেখানোর অদম্য প্রতিজ্ঞা, পুরো শূন্য অবস্থা থেকে তাদেরকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি শুরু করার প্রথমদিকে তাদের পকেট ছিল শূন্য, হাত ছিল খালি- বুকে ছিল স্বপ্ন, সাহস আর প্রতিজ্ঞা। চাকরীর আশায় হন্যে হয়ে ঘুরতে ঘুরতে অবশেষে তারা সিদ্ধান্ত নিল- আর নয়, এবার নিজেরা কিছু করে দেখানোর সময়। বিভিন্ন জায়গা থেকে কিছু টাকা-পয়সা ধার-কর্জ করে নিয়ে এসে নিকুঞ্জতে একটি বাসা ভাড়া করে সম্পূর্ণ সহায় সম্বলহীন অবস্থায় আউটসোর্সিং এর দুর্গম রাস্তায় তাদের এই পথ চলার শুরু। তারা শুধু এইটুকু জানত যে কোনভাবেই ব্যার্থ হওয়া যাবে না- কারন ব্যার্থ হওয়ার সকল রাস্তা ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। রাস্তা শুধু একটাই, যেকোন ভাবে সফল হতে হবে- এজন্যে যত কঠোর পরিশ্রম করা দরকার, যত বাধা-বিঘ্ন মোকাবেলা করা দরকার সকল কিছুর জন্য তারা প্রস্তুত আছে। শুরু হল তাদের মিশন- শুরুতেই বলা হয়েছে তাদের ছিল তিনটি ডেস্কটপ ও একটি ব্রডব্র্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ। বিশ্বের সর্ববৃহৎ আউটসোর্সিং মার্কেট প্লেস ফ্রীল্যান্সার ডট কম ওয়েবসাইটটির মাধ্যমে তারা কাজ শুরু করে। প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর কামরুল হাসান রঞ্জুর প্রথম কাজ ছিল এই ওয়েবসাইটটির নিয়ম-কানুন মনযোগ দিয়ে পড়া এবং ওয়েবসাটিটির মাধ্যমে যে কাজগুলো পাওয়া যায় সেগুলোর ধরন ও পারিশ্রমিক পাঠানোর পদ্ধতি সমন্ধে সার্বিক ধারনা অর্জন করা। তারপর স্পাইরাল গ্যালক্সী নিক দিয়ে একটি একাউন্ট তৈরী করে বিভিন্ন ধরনের কাজের জন্য আবেদন করা শুরু হয়। প্রথমদিকে কারো কাছ থেকে তেমন সারা না পেলেও তারা থেমে যায় নি- অব্যাহতভাবে তারা নানা রকমের কাজের জন্য আবেদন করে যেতে থাকে- কয়েকমাস এরকমভাবে চলার পর সামান্য একটু সফলতার মুখ দেখা যায়। এতদিনে তাদের ঋণের বোঝা হয়ে গেছে অনেক ভারী - সামান্য বেতনের হলেও কোন একটা চাকরী-বাকরীতে ঢুকে পড়ার জন্য বাবা-মা থেকে আসছে একের পর এক চাপ। মাঝে মাঝে তাদেরকে থাকতে হচ্ছে না খেয়েও।

সামান্য একটু সফলতায় তারা উল্লসিত হয়ে উঠে যেন জমাট বাঁধা হতাশার অন্ধকারের ভেতর দেখতে পেয়েছে ক্ষীণ একটি আশার আলো। এই সামান্য একটু আলোর রেখা ধরে তারা আরো সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে। প্রথমে তারা যে কাজটি পায় তাতে পারিশ্রমিক খুব কম- কাজটি হচ্ছে ইমেইল আইডি তৈরী করে দেয়া। পঞ্চাশটি ইমেইল আইডি তৈরী করে দিলে পাওয়া যাবে মাত্র এক ডলার। পরিশ্রমের তুলনায় পারিশ্রমিক খুবই যৎসামান্য। কিন্তু এই সামান্য পারিশ্রমিকের এই প্রানান্তকর কাজটি তাদের সামনের দিকের যাত্রাকে অব্যাহত রাখতে সাহায্য করে। কামরুল হাসান রঞ্জু স্পাইরাল গ্যালাক্সী নিক দিয়ে নতুন নতুন কাজের জন্য আবেদন করে যেতে থাকে আর বাকী তিনজন তৈরী করতে থাকে ইমেইল আইডিগুলো। এভাবে চলতে চলতে একদিন তারা পেয়ে যায় বেশী পারিশ্রমিকের কাজের সুযোগ। কাজটি হচ্ছে ক্রেইগলিষ্ট নামক একটি আন্তর্জাতিক বিজ্ঞাপনদাতা ওয়েবসাইটে বিভিন্ন ধরনের গাড়ির বিজ্ঞাপন পোষ্ট করা এবং ওয়েবসাইটের জায়গা খালি করার উদ্দেশে তাদেরই পোষ্ট করা পুরাতন বিজ্ঞাপনগুলোকে ডিলিট করে ফেলা। তাদের কার্যক্রমে খুশি হয়ে কাজ প্রদানকারী লোকটি আরো কাজ দিতে থাকে। ফলে দরকার পড়ে আরো কম্পিউটারের এবং কাজ করার জন্য আরো লোকবলের। প্রাপ্য পারিশ্রমিকের টাকা দিয়ে তারা ধীরে ধীরে কিনতে শুরু করে নতুন নতুন ডেস্কটপ কম্পিউটার এবং গ্রামের শিক্ষিত বেকার তরুনদের নিয়ে আসতে থাকে ঢাকায়। ব্রডব্র্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগটি সার্ভিস দিয়ে কুলিয়ে উঠতে না পাড়ার ফলে তাদের নিতে হয় তখন দেশে নতুন আসা ওয়াইম্যাক্স ইন্টারনেট সংযোগের আনলিমিটেড প্যাকেজ।

এরমধ্যে আরেকটি সমস্যা- যেটি সবচেয়ে প্রকট হয়ে দেখা দেয় তাহল লোডশেডিং সমস্যা। দেখা যায় দিন-রাত্রির ২৪ ঘন্টার মধ্যে ১২ ঘন্টাই লোড শেডিং এ কাটাতে হয়। যার ফলে প্রতিদিনের কাজ ঠিকমত ডেলভারী দিতে সমস্যা হতে থাকে। অথচ কাজ প্রদানকারী লোকটির আছে এই চারজন তরুণের কর্মদক্ষতার উপর বিশাল আস্থা। কামরুল হাসান রঞ্জু বিষয়টি নিয়ে কাজ প্রদানকারী লোকটির সাথে কথা বললে সে জেনারেটর কেনার জন্য অগ্রিম টাকা পাঠায় এবং সেই টাকা দিয়ে একটি জেনারেটর কিনলে লোডশেডিং সমস্যার আপাত সমাধান হয়। এরপর তাদেরকে আর পিছনের দিকে ফিরে তাকাতে হয়নি, সামনের দিকে পথ চলায় তারা আরো একজনের কাছ থেকে পেয়ে যায় ক্রেইগলিষ্ট নামক বিজ্ঞাপনদাতা ওয়েবসাইটে আরো অনেক গাড়ির বিজ্ঞাপন পোষ্ট করার কাজ কারন তারা ইতিমধ্যেই এই বিশেষ কাজে অনেক বেশী দক্ষতা অর্জন করে ফেলেছে। তবে মাঝখানে আরেকটা সমস্যা যেটা ঘনীভূত হয়ে উঠেছিল তাহল আবাসন সমস্যা। গাড়ির বিজ্ঞাপনগুলো পোষ্ট করতে হয় বাংলাদেশ সময় রাত্রে এবং একই সাথে পোষ্ট করতে হয় হাজার হাজার বিজ্ঞাপন। ফলে যে বিল্ডিং এ প্রতিষ্ঠানটির অফিস প্লেস, প্রত্যেককেই বাস করতে হবে সেই একই বিল্ডিং। অথচ ঐ বিল্ডিং এর প্রত্যেকটি ইউনিট আগে থেকেই অন্যদের কাছে ভাড়া দেওয়া। ফলে মাঝখানে কিছুটা সময় সকলকে একটি মাত্র ইউনিটে বেশ কষ্টে গাদাগাদি করে থাকতে হয়েছে। কিছুদিন পর একটি ইউনিট খালি হলে সাথে সাথেই সেই ইউনিটটিকে তারা নিয়ে নেয়। পুরোপুরি না হলে আবাসন সমস্যার কিছুটা সমাধান হয়। কয়েকমাস এভাবে চলার পর আরেকটি ইউনিট খালি হলে তারা সেই ইউনিটকেও নিয়ে নেয়। ইতিমধ্যে নতুন পাওয়া কাজের চাপ সামলাতে আরো কিছু বেকার শিক্ষিত তরুণকে গ্রাম থেকে নিয়ে আসা হয়েছে। একটি ইউনিটকে পুরোপুরি অফিস প্লেস করে বাকী দুইটা ইউনিটে মোটামুটি ভালোভাবেই তাদের থাকার ব্যাবস্থা হয়। তারপর নেয়া হয় আরেকটি ইউনিট। এখনও তারা পূর্ণ উদ্যমে কাজ করে যাচ্চে। এরই মধ্যে তারা পেয়ে যায় ফ্রীল্যান্সার ডট কম থেকে পাঠানো পুরো বিশ্বে সেরা দশে স্থান লাভ করে নেওয়ার সেই অভিনন্দন বার্তাটি। এই প্রথম বাংলাদেশের কোন আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান এরকম একটি মর্যাদায় ভূষিত হল। আমরা সকলে তাদেরকে অভিনন্দন জানাইঃ

অভিনন্দন! পুরো বিশ্বে সেরা দশে স্থান লাভ করে নেয়া আউটসোর্সিং প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশের স্পাইরাল গ্যালক্সী। অভিনন্দন!

Click This Link

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.