নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনন্দ-পঠন

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই

মেহেদী হাসান মঞ্জুর

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই।

মেহেদী হাসান মঞ্জুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমাদের গ্রামের একটি কিশোরী মেয়ে যৌন নির্যাতনের(গনধর্ষনের) শিকার হয়েছে। (দ্বিতীয় পর্ব)

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ সকাল ১১:৫২

আমাদের গ্রামের মূলখন্ড থেকে কিছুটা দূরে দক্ষিন দিকের নদীর পাড়ে বাড়িঘর তুলে গ্রামের সবচেয়ে গরীব মানুষগুলো বসবাস করে। পূর্বে তারা সকলেই গ্রামের মূলখন্ডের ভেতরেই বাস করত। গ্রামের জনসংখ্যা ধীরে ধীরে বাড়তে থাকলে ঐ মূলখন্ডের মধ্যে সকলের বাস করা অসম্ভব হয়ে উঠে। আর শিক্ষার ব্যায়ভার কুলিয়ে উঠতে না পারার কারনে, বা অর্থ উপার্জনের তাগিদে তাদেরকে নানা ধরনের শারিরীক শ্রমের কাজকর্মে জড়িত হতে হয় বলে গরীবরা সাধারনত শিক্ষাগ্রহনের অধিকার থেকে বঞ্চিত। শিক্ষাগ্রহন না করার ফলে অজ্ঞানতা, অসচেতনতা, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও কুসংস্কার প্রবনতা তাদেরকে আরো বেশী করে চেপে ধরে। ফলে তাদের ছেলে-মেয়েদের খুব অল্প বয়সে বিয়ে হয়ে যায়, জন্মনিয়ন্ত্রন সম্পর্কে সচেতনতা না থাকার কারনে তাদের পরিবারের সন্তানের জন্ম হয় বেশী। আর অনেকবেশী বেশী সন্তান-সন্ততি জন্মগ্রহন করাটা তাদের কাছে অনেকটা আশীর্বাদের মতই কারন এই সন্তান-সন্ততিরা কিছুটা বড় হলেই বিভিন্ন শারিরীক শ্রমে নিয়োজিত হয়ে অর্থ উপার্জন শুরু করে দিবে। এই গরীব পরিবারগুলোতে অনেকবেশী সন্তান-সন্ততি জন্মগ্রহন করার ফলে গ্রামের মূলখন্ডের ভেতরে তাদের ছোট ভিটাটা অনেক লোকের বসবাসের জন্য অপর্যাপ্ত হয়ে উঠে। তখন তারা তাদের ভিটাটিকে পাশের ধনী পরিবারের কাছে বিক্রি করে দিয়ে রাস্তার ধারে চরাক্ষেতে বাড়ি তৈরী করে বসবাস করতে শুরু করে-বেশ কিছু পরিবার এখানে এসে বসবাস শুরু করার ফলে এখন এটাকে একটা মহল্লা বলা যায়। যৌননির্যাতনের শিকার হওয়া মেয়েটির পরিবারটিও গ্রামের মূলখন্ডের বাইরে নদীর পাড়ের মহল্লায় বসবাস করতে থাকা পরিবারগুলোর একটি। আমাদের গ্রামের মূলখন্ডে বসবাস করা মানুষজনেরা বলে থাকে- নানা ধরনের খারাপ কাজ, বিভিন্ন অসামাজিক কর্মকান্ড ও সকল ধরনের নষ্টামী সব ঐ নদীর পাড়ের মহল্লাতে ঘটে থাকে। তাদের কথা পুরোপুরি সত্য- একবিন্দুও বাড়িয়ে বলা নয়। তবে এই সত্যের পিছনে আরেকটা সত্য আছে, তা হল- গ্রামের মূলখন্ডের মানুষরাই ঐ মহল্লায় গিয়ে জুয়া খেলে, নেশা করে, কোন একটি মেয়ে বেড়ে উঠতে শুরু করলে- পরিপূর্ণ যৌবনে পদার্পন করার আগেই- তার উপর হামলে পড়ে। রাতের বেলায় গ্রামের মূলখন্ডের লোকজন নদীর পাড়ের মহল্লায় অবস্থিত একটি চায়ের স্টল ও মনোহারী দোকানকে কেন্দ্র করে এখানে এসে জড়ো হয়ে নানা তৎপরতায় আনাগোনা শুরু করে। নদীর পাড়ের মহল্লায় আনাগোনা করা লোকজনদের মধ্যে কেউ কেউ মহল্লার কারো ঘরে বসে জুয়া খেলতে বসে যায়, আর কেউ বসে যায় নেশা-দ্রব্য গ্রহণ করতে। তবে মূলখন্ডের ভেতরে এখনও টিকে থাকা কোন গরীব মানুষের ঘরেও অবশ্য জুয়া খেলার আসর বসে। আর কেউ কেউ আসে শুধু মাত্র এই মহল্লার উঠতি মেয়েদেরকে শারিরীকভাবে পাওয়ার আশায়, তাদের আর কোন ভিন্ন উদ্দেশ্য নেই। তবে এদের প্রত্যকেই টাকা-পয়সা, সুন্দর সুন্দর জামা-কাপড়, ভালো ভালো খাবার ও বিয়ে করে ঘরে নিয়ে আসার লোভ ও নানা ধরনের ভয়-ভীতি দেখিয়ে বেড়ে উঠতে থাকা এই কিশোরী মেয়েদের শারিরীক ভাবে পেতে চায়। তাদেরকে শারিরীক ভাবে পাওয়া হয়ে গেলে গরীবের যুবতী মেয়েদের প্রতি ধনী মানুষদের চিরাচিরত আচরণ অনুযায়ী তার হাতে কিছু টাকা গুজে দিয়ে, ভয়-ভীতি দেখিয়ে কাউকে কোন কিছু বলতে কড়াভাবে নিষেধ করে দেয়। ঐ মহল্লার যে সমস্ত মেয়ে এই ধরনের পরিস্থিতির শিকার হয় তারা সকলে নিতান্ত গরীব, দু-বেলা দু-মুঠো খাবার জোটেনা, তাদের বড় বোনের ব্যাবহার করা পুরনো জরাজীর্ন জামা-কাপড় পড়ে থাকে। গরীব পরিবারের কিশোরী মেয়েগুলো সুন্দর সুন্দর জামা-কাপড়, ভালো ভালো খাবার-দাবার ও ধনী বাড়ির বউ হয়ে একটু ভালো থাকা, ভালোভাবে চলা ইত্যাদির লোভ সামলাতে ব্যার্থ হয়। অল্প বয়সের অপরিপক্ক বুদ্ধির ফলে-এগুলো পাওয়ার আশা যে তার একধরনের আষাঢ়ে কল্পনা ও ঐ ধরনের লোকজনের প্রেমপূর্ন কথা-বার্তা যে চরম মাত্রার ভন্ডামী তা তারা সবসময় বুঝে উঠতে সমর্থ হয় না। যদিও তারা নিজের চোখে এর পূর্বে অনেক মেয়েকে এরকম প্রতারণার শিকার হতে দেখেছে বা তাদের মহল্লার লোকজনের কাছ থেকে এ ধরনের ঘটনার বিবরণ শুনেছে। লোভে পড়ে, ভন্ডামীর শিকার হয়ে তারা নিজেদের দেহটিকে নির্বোধের মত সমর্পন করে বসে। দিনের পর দিন শারিরীকভাবে ভোগের পর তাদেরকে যখন রসহীন আখের ছোবড়ার মত ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয় তখন আরো অন্যান্য লোকের কাছে শরীর সমর্পন করাটাকেই একটা ব্যাবসা হিসেবে নেওয়া ছাড়া তাদের আর কোন গতন্ত্যর থাকে না। দেখতে ভালো এবং শরীরের গড়ন সুন্দর এরকম দু-একজন কেবল কিছুদিনের জন্য এই ব্যাবসায় পসার জমাতে পারে। কারন নতুন নতুন অনেক মেয়ে ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে, দেহে যৌবনের রেখা ফুটে উঠতে শুরু করেছে এবং তারা তখনও কুমারী। লোকজনের নজর চলে যায়- বেড়ে উঠতে থাকা কিশোরী কুমারী মেয়েদের দিকে- যাদের বয়স হয়তো কেবল তের পেরিয়ে চৌদ্দয় পড়েছে। গ্রামের ভেতরে পসার কমে গেলে দেহ ব্যাবসায় জড়িত হয়ে যাওয়া মেয়েরা পাশের গ্রামের মানুষদের আহ্বান করে। গ্রামের মাতাব্বর শ্রেণীর লোকেরাও মহল্লাটিতে আসে তবে তা গভীর রাত্রে- তারা কাউকে তেমন কিছুর লোভ দেখায় না; বরঞ্চ আটক রাখা, ঘর-বাড়ি ভেঙ্গে দেওয়া ও পুলিশে খবর দেওয়া সহ ইত্যাদি নানা ধরনের হুমকি প্রদান করে ইতমধ্যেই দেহব্যাবসায় জড়িত হয়ে যাওয়া সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েদের সাথে টাকা দেওয়া ব্যাতীত শারিরীকভাবে মিলিত হয় এবং জুয়ার আসর থেকে টাকা-পয়সা(বখরা) নিয়ে চলে যায়।



গ্রামের যুবকদল প্রচণ্ডমাত্রায় ক্ষিপ্ত হয়ে নদীর পাড়ের মহল্লার দিকে এগিয়ে যাওয়ার সময় পথের ধারে দেখা হওয়া বিভিন্ন লোকজনের নিকট থেকে মেয়েটির উপর করা যৌননির্যাতন সম্পর্কিত আরো নানা ধরনের তথ্য পায়। তারা শোনে যে, ঘটনাটি ঘটেছে গ্রাম থেকে বিশ মাইল দূরে জেলা সদরে এবং একজন নয় বেশ কয়েকজন মিলে মেয়েটির উপর ভয়াবহ মাত্রায় নির্যাতন চালিয়েছে। নির্যাতনের সময় আশে-পাশের লোকজন টের পেয়ে এগিয়ে এলে নির্যাতকরা ভয় পেয়ে মেয়েটিকে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এগিয়ে আসা লোকজন অচেতন মেয়েটিকে হাসপাতালে এনে ভর্তি করিয়ে দেয়। বেশ কয়েকজন মানুষের কাছে নির্মমভাবে নির্যাতিত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরও মেয়েটির প্রতি তাদের কোন সহানুভূতি জন্ম নিতে দেখা যায় না। তাদের ধারনা হয়ঃ মেয়েটি নিশ্চয় জেলা সদরে গিয়েছিল তার দেহকে ভাড়া ভাড়া খাটাতে, যারা তাকে ভাড়া করেছে তারা আরো বেশ কয়েকজনের কাছ থেকে একটি পতিতা ভাড়া করে নিয়ে আসার কথা বলে টাকা তুলেছে। এত মানুষ আসবে তা হয়তো মেয়েটা আগে থেকে বুঝতে পারেনি। মেয়েটি প্রথমে কয়েকজনকে নেওয়ার পর বাকীলোকগুলোকে আর স্বেচ্ছায় নিতে পারেনি। বাকীরাও যেহেতু টাকা দিয়েছে, তাহলে তারা আবার বঞ্চিত হবে কেন! বাকীরা তখন বাধ্য হয়েই মেয়েটার উপর উপর্যুপরি নির্যাতন চালায়। যুবক ছেলেরা সামনের দিকে চলতে চলতে কোলাহল করে উঠে, ঠিকই তো আছে, এমনই তো হওয়ার কথা। টাকা দেওয়ার পর আমরাই কি ছেড়ে দিতাম নাকি! আমাদের গ্রামের মান-সন্মান সব ধুলোয় মিশিয়ে দিয়ে অন্য জায়গায় ভাড়া খাটতে গিয়েছে, এতবড় সাহস মেয়েটার! মেয়েটার উপযুক্ত শিক্ষাই হয়েছে, কে বলেছিল এত দূরে ভাড়া খাটতে যেতে- এখন বুঝুক মজা! আর মেয়েটার বাপও নিশ্চয় খুব খারাপ- সেই নিশ্চয় মেয়েটাকে টাকার লোভে ভাড়া খাটতে পাঠিয়েছিল। মানুষ কি পরিমাণ খারাপ হলে নিজের মেয়েকে কয়েকটা টাকার লোভে ভাড়া খাটতে পাঠায়! চল সবাই, লোকটিকেও উচিত শিক্ষা দিতে হবে। এই ঘটনাটি ঘটার কারনে পুরো জেলায় গ্রামের কুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়বে, লোকজন বলাবলি করবে অমুক গ্রামের একটি মেয়ে ভাড়া খাটতে গিয়ে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এতে করে তাদের গ্রামের মানসন্মান আর তিল পরিমানও বাকী থাকবে না। গ্রামের মান-ইজ্জ্বত একেবারে ধুলোয় মিশে যাচ্ছে- এরকমটা ভেবে তারা আরো ক্রোধান্বিত হয়ে উঠে, নির্যাতিতা মেয়েটির বাড়িঘর ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেয়ার লক্ষ্যে নদীর পাড়ের মহল্লার দিকে তাদের চলার বেগ যায় আরো বেড়ে।

নদীর পাড়ের মহল্লার মেয়েদের প্রতি তাদের রাগের আরো একটা কারন আছে তা হল, গ্রামের মাতাব্বর শ্রেণীর লোকের মত তারাও চায় টাকা ছাড়াই নানা ধরনের হুমকি দিয়ে দেহ ব্যাবসার সাথে নিজেদেরকে জড়িত করে ফেলা মেয়েদের সাথে মিলিত হতে। তবে তাদের হুমকিতে কেউ খুব একটা বেশী ভয় না পাওয়ার কারনে তারা এই সুযোগটি থেকে বরাবরই বঞ্চিত হয়। আরেকটি কারন হচ্ছে উঠতি মেয়েদের নানা কিছুর লোভ দেখিয়ে প্রেমের ফাঁদে ফেলে তাদেরকে শারিরীকভাবে পেতেও তারা সফল হয় না। কারন বেকার ছেলেদের সাথে প্রেম করতে এই মহল্লার কোন মেয়েরই তেমন কোন আগ্রহ দেখা যায় না। তারা যখন বুঝতে পারে উপার্জনক্ষম বা ধনী ঘরের কোন ছেলে এই মহল্লার উঠতি কোন মেয়ের সাথে প্রেম করছে, বা দেহব্যাবসায় জড়িত হয়ে যাওয়া কোন মেয়ের সাথে মিলিত হচ্ছে তখন তারা প্রচন্ড রাগে ভেতরে ভেতরে গজগজ করতে থাকে। এই ছেলেগুলো যদি পাশের গ্রামের হয় তাহলে এদের উপর তাদের রাগ প্রচন্ডরকম বেড়ে উঠে। জুটিদেরকে হাতে নাতে ধরার জন্য নানা ধরনের পরিকল্পনা করে এবং চুপিসারে তাদের কাজ চালিয়ে যায়। (চলবে)

বিঃ দ্রঃ এই লেখাটিতে আমি বিভিন্নজনের নানা ধরনের বক্তব্যকে আমার নিজের ভাষায় গুছিয়ে বলার চেষ্টা করেছি। কারন তাদের আঞ্চলিক ভাষায় বলা কথাগুলো অনেকেই ঠিকমত বুঝে উঠতে পারবেন না। আরেকটি বিষয় হল, তাদের বক্তব্যগুলোতে যৌন উদ্দীপনামূলক স্ল্যাং এর প্রচন্ড রকম ছড়াছড়ি। কোনমতেই স্ল্যাং গুলোকে আমি এই লেখায় ব্যাবহার করতে চাই নি।

মন্তব্য ৩ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (৩) মন্তব্য লিখুন

১| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪১

মেহেদী হাসান মঞ্জুর বলেছেন: এখানে এই লেখার প্রথম পর্বটি পাওয়া যাবে।

২| ০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১২:৪২

শেরজা তপন বলেছেন: পড়লাম- ভাল লিখছেন

০৮ ই নভেম্বর, ২০১৩ দুপুর ১:৪১

মেহেদী হাসান মঞ্জুর বলেছেন: ধন্যবাদ-শেরজা তপন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.