নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনন্দ-পঠন

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই

মেহেদী হাসান মঞ্জুর

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই।

মেহেদী হাসান মঞ্জুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

মুমূর্ষু গণজাগরণ মঞ্চ ও তার নতজানু ভাব

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ রাত ৩:০২









গণজাগরণ মঞ্চ নেতৃত্বকে তেমন একটা আওয়ামীলীগের নানামুখী অপতৎপরতার বিরুদ্ধে বুক ফুলিয়ে দাঁড়াতে দেখা যায় নি। এমনকি যে সকল ঘটনার জন্য শুধুমাত্র আওয়ামীলীগ সরকারকে দায়ী করা যায় না, যার জন্য দায়ী সমাজ বা রাষ্ট্রে বহুকাল ধরে চলে আসা বা টিকে থাকা নানাবিধ ব্যাপার, তেমন ঘটনার বিরুদ্ধেও তাকে তেমন একটা সোচ্চার হতে দেখা যায় নি। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবী উত্থাপনকালীন সময়েও এর নেতারা নিজেরা সবসময় যেমন জুজুর ভয়ে অস্থির হয়ে থাকত, অন্যদেরকেও তেমনি সেই ভয় দেখাত। সেই ভয় কোত্থেকে আসত, আমরা সকলেই তা জানি। এমন করে বলা যাবেনা, বললে নাকি আদালত অবমাননা হবে, বিরুদ্ধ পক্ষ নাকি এতে সুযোগ পেয়ে যাবে! যেমন তারেক জিয়া নির্দোশ প্রমাণিত হয়েছে এখন তাকে চোর বললে নাকি আদালত অবমাননা হবে। ব্যাপারটা বড়ই হাস্যকর! আমরা জানি একটি আন্দোলন নিজেকে শক্তিশালী করা ও বহুদিন টিকিয়ে রাখার মানসে নানা দিকে ছড়িয়ে যায়, নানা বিষয়ে আরো বেশী করে প্রতিবাদ মুখর হয়। আর গণজাগরণ মঞ্চ একটি বিষয় নিয়েই নিজেকে সবসময় আগাগোড়া মুড়ে রেখেছে। অন্যান্য অনেক কারনের মত এই কারনেও জনগনও ধীরে ধীরে বিচ্যুত হয়েছে এই মঞ্চের আশেপাশ থাকে। নেতৃত্বের ভূমিকা নেয়া কিছু মানুষ ও তাদের সাঙ্গোপাঙ্গরাই শুধুমাত্র অবশিষ্ট থেকেছে। এবং এরা পরবর্তী সময়ে যুদ্ধাপরাধীদের সঠিক বিচারের দাবীতেও তেমন কোন জোরালো ভূমিকা পালন করতে পারেনি। শুধু মাত্র মিডিয়ার কল্যানে একেকজন হুট করে অনেক বড় ধরনের নেতায় পর্যবসিত হওয়ায় খ্যাতির জোয়ারে ভেসে বেড়িয়েছে। কেউ কেউ ছাত্রদল, ছাত্রলীগের ভুঁইফোড় নেতাদের মত সবসময় চাটুকার পরিবেষ্টিত হয়, শাহবাগে অলস দিন কাটিয়েছে। অনেকেই আবার টেলিভিশনের টকশোতে নিজের মুখটি দেখাতে পেরে মানব জনম সার্থক করেছে।

আরেকটা ব্যাপার খেয়াল করা গেছে, এই মঞ্চের আন্দোলন অনেকটা শুরু থেকেই ছিল বিলাসবহুল, দামী দামী পোস্টার, ব্যানারে ছেয়ে যেত শাহবাগ চত্বর। প্রশ্ন জাগে একটা আন্দোলন কিভাবে বিলাস-বহুল হতে পারে? আমরা নিঃসন্দেহে জানি, আন্দোলনকারীদের সব সময় যেতে হয় চরম দমন-পীড়নের মধ্য দিয়ে। সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্র সবসময় তার ভেতরের যেকোন ধরনের আন্দোলনকে কঠোর হাতে দমন করে, নিজের ভেতরে কোন ধরনের আন্দোলন সে রাখতে চায়না, যতক্ষণ পর্যন্ত না তা নিজের পকেটে ঢুকানো যায়। এই গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলন জঙ্গী রূপ ধরা তো দূরের কথা, অনেকটা বলা চলে, দীর্ঘ দিন সরকারের কোলের মধ্যে থেকে সংগঠিত হয়েছে। সাধারন মানুষের মুখে মুখে ছড়িয়ে গিয়েছিল যে, এটা একটা সরকারী আন্দোলন। যার ফলে আন্দোলনের ভূমিকা নিয়ে জনমনে সন্দেহ দানা বেঁধে উঠেছে। প্রথম দিকে যে সমস্ত মানুষ এই আন্দোলনকে পুরোপুরি নিজের মনে করত, রাস্তা, ঘাটে পরিবহন বাসগুলোতে জামাতপন্থী কারো কাছ থেকে আন্দোলনের ব্যাপারে বিরূপ মন্তব্য শুনলে বাস সুদ্ধ সকলে মিলে হামলে পড়ত, কোথায় গেল সেই মানুষগুলো!

সহজ বুদ্ধিতে একটা ব্যাপার মাথায় আসে তাহল, কোন একটা বিষয়কে কেন্দ্র করে কোন একটি আন্দোলন-সত্যিকারে- দানা বেঁধে উঠলে তা কখনই ঐ সুনির্দিষ্ট বিষয়ে আবদ্ধ হয়ে থাকেনা, তা ছড়িয়ে পড়ে, ছড়িয়ে পড়তে হয়, তা না হলে তা স্তিমিত হয়ে আসে বা থমকে দাঁড়ায়, ধীরে ধীরে চরে গিয়ে ঠেকে। গণজাগরণ মঞ্চের অবস্থাটি হয়েছে অনেকটা সেরকম। নানা রকম বিলাসবহুল আয়োজন দিয়েও তার প্রথম দিককার শতভাগের একভাগও টিকিয়ে রাখা যায় নি। আমরা সাধারন মানুষরা ভেবেছিলাম, লক্ষ জনতার স্বতস্ফূর্ত জাগরনের এই আন্দোলন কথা বলবে রানা প্লাজায় শ্রমিক হত্যার বিরুদ্ধে, তাজরিনে শ্রমিক পুড়িয়ে মারার বিরুদ্ধে হয়ে উঠবে দুর্বার, জ্বলে উঠবে সন্দরবন ধ্বংশ করে রামপাল কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের বিরুদ্ধে, পদ্মা সেতুকে কেন্দ্র করে এই সরকারের নানামুখী দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলা শুরু করবে, প্রকাশ্য জনসম্মুখে বিশ্বজিৎ হত্যার প্রতিবাদের গর্জন উঠবে শাহবাগ থেকে। গণজাগরণ মঞ্চ কি করল, সাভারে বিধ্বস্ত রানা প্লাজার সামনে একটি স্বেচ্ছাসেবী বুথ বসিয়ে নিজেদের দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট করে ফেলল। সাম্প্রতিক বিশালাকারে ঘটে যাওয়া সাম্প্রদায়িক দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে সে কথা বলেছে, নির্যাতিতদের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে এই ব্যাপারে সরকারে ব্যার্থতার বিরুদ্ধে তেমন কোন উচ্চারণ তার ছিল না। অথচ যেরকম জাগরনের মধ্য দিয়ে এই আন্দোলনের শুরু হয়েছিল, তেমন একটি মঞ্চের কাছে আরো বেশী কিছু দাবী করা যায়। মাঝখানে যুদ্ধাপরাধীদের নেতা গোলাম আজমের যাবজ্জীবন কারাদন্ড যা আসলে তাকে তার বাকী জীবনটুকু বিলাসের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দেওয়া সুযোগ করে দেয়, সে রায়ের বিরুদ্ধেও সমুদ্রের মত গর্জন করে উঠল না গণজাগরণ মঞ্চ। ব্যাপারটা বড়ই আফশোসের!

এখনও যে ঢিমেতালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের ব্যাপারটি এগিয়ে যাচ্ছে, এবং স্পষ্টই বোঝা যায়, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্য সম্পন্ন করাই বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার একমাত্র উদ্দেশ্য নয়। এটাকে জনগনের সামনে মুলা হিসেবে ঝুলিয়ে রেখে তার ক্ষমতায় যাওয়ার রাস্তা পরিষ্কার করাও যে অনেক বড় একটা উদ্দেশ্য। অথচ আমরা জনগন কি চাই, খুব দ্রুত এই বিচার কার্য সম্পন্ন করে ফেলা হোক। মুক্তিযুদ্ধের অনেক বছর পর, আওয়ামীলীগ এই বিচার প্রক্রিয়া শুরু করেছে, এই জন্য যে আন্তরিক ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য, তাই বলে সে এই ব্যাপারটা নিয়ে নানা ভাবে খেলা করবে তা কখনও মেনে নেয়া যায় না। মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী সংগঠনের কাছে এটা জনগনের খুবই সহজ-স্বাভাবিক একটি দাবী। যথাশীঘ্র সম্ভব তাকে এই দাবী মিটিয়ে ফেলতে হবে। গণজাগরণ মঞ্চকে টিকে থাকতে হলে, আরো জোরালো কন্ঠে রাস্তায় নামতে হবে এবং আন্দোলনের দিক ও পরিসর বাড়াতে হবে। নইলে, সরকার তার কোল থেকে একবার নামিয়ে দিলেই বা ইচ্ছাকৃত ভাবে একবার পায়ে মাড়িয়ে গেলেই তার-মুমূর্ষু অবস্থায় আছে- মৃত্যু ঘটবে। যত বিলাসেই সাজুক না কেন, জনগনের কাছে কোন আবেদনই আর থাকবে না।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ সকাল ৮:৪২

আবতহী বলেছেন: সেচ্ছাচারিতা না থাকলে আন্দোলন আর ও গতিশীল হতে পারত।

১৩ ই এপ্রিল, ২০১৪ দুপুর ১২:১০

মেহেদী হাসান মঞ্জুর বলেছেন: হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.