নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনন্দ-পঠন

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই

মেহেদী হাসান মঞ্জুর

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই।

মেহেদী হাসান মঞ্জুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

খেলাধুলায় নারী

১৭ ই মে, ২০১৪ সকাল ১১:৩৮





খেলাধুলা না করলে একজন মানুষ শিশুকাল থেকেই শারিরীক-মানসিকভাবে ঠিকমত বেড়ে উঠতে পারে না। অথচ পুরুষতান্ত্রিক সমাজ সবসময় নারী শিশুকে খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করতে বাঁধা প্রদান বা অনুৎসাহিত করে থাকে। পুরুষতন্ত্রিক সমাজের মনোভাবটা যেন অনেকটা এরকম- নিয়মিত খেলাধুলা করে যাতে একজন নারী শারীরিক ভাবে শক্ত-সমর্থ ও শক্তিশালী এবং মানসিকভাবে ক্রীড়া সুলভ হয়ে উঠতে না পারে। পরবর্তী জীবনে একজন পুরুষ যাতে নারীর উপর নানা রকম শারীরিক-মানসিক অত্যাচার, শোষণ, নির্যাতন চালাতে পারে এবং নারী যাতে করে পুরুষের দ্বারা ধর্ষিত হওয়ার জন্য উপযুক্ত হয়ে উঠে। তাদেরকে খেলাধুলার(পুতুল খেলা) নামে যা খেলতে বলা হয় তা নিশ্চিতভাবেই খেলাধুলা নয়- পরবর্তী জীবনে একঘেয়ে গার্হস্থ্য শ্রমে যাতে সে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করতে পারে সেজন্য আগে থেকেই তাকে একধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া।



তবে, খেলাধুলায় নারীর একধরনের অংশগ্রহণ লক্ষ্য করা যায়, যদিও এক্ষেত্রে তাদের ভূমিকাটা খেলোয়ারের নয়, পুরুষ খেলোয়ারদের উৎসাহদাতার। আমাদের জাতীয় কবি অবশ্য পুরুষদের নানা কাজে নারীদের এই উৎসাহদানের ব্যাপারটাকে অনেক বড় করে দেখিয়েছেন, এরমাধ্যমেই তারা নাকি মানবজীবনে ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে! আজকের স্যাটেলাইটের যুগে যখন কোন ফুটবল ম্যাচ বা ক্রিকেট ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করা হয় তখন খেলাধুলায় নারীদের ভূমিকার ব্যাপারটি আরেকধাপ বেড়ে যায়। ঘরে বসে টেলিভিশনের পর্দায় যেসমস্ত পুরুষ খেলা দেখছে তাদের মনোরঞ্জনের দায়িত্বটিও আবেদনময়ী নারী দর্শকদের নিতে হয়। যার ফলে দেখা যায় স্টেডিয়াম মাঠে একজন খেলোয়ার দুর্দান্ত একটা পারদর্শিতা দেখানোর সাথে সাথে পুরুষ দর্শককে আরো বেশী মনোরঞ্জন দানের জন্য ক্যামেরা চলে যায় স্টেডিয়াম বেঞ্চে রংমেখে সেজেগুজে বসে থাকা কোন অতীব সুন্দরী নারীর উল্লাস মুখর মুখের উপরে এবং পুরুষের কীর্তিগাথায় নারীর উৎসাহদানের ভূমিকাকে তাৎপর্যময় করে তুলতে, খেলোয়ারটির তীব্র আবেদনময়ী বউ বা প্রেমিকার মুখের উপর।



খেলোয়ারদের দুর্দান্ত পারদর্শিতার সাথে সাথে সুন্দরী নারী বা ঐ খেলোয়ারের আবেদনময়ী জীবনসঙ্গীর মুখটিকে খুঁজে বের করা ক্যামেরাম্যানের(শব্দ ব্যবহারেই বলে দেওয়া হচ্ছে এরা পুরুষ) জন্য বেশ কষ্টকর একটা কাজ; ফলে তাকে কষ্টকর কাজের হাত থেকে রেহাই দেওয়ার জন্য ইদানীংকালে সুন্দরী নারীদেরকে ভাড়া করার প্রচলন শুরু হয়েছে। বাহারি সাজে সজ্জিত, শরীরের বিভিন্ন স্পর্শকাতর অংশ বের করে রাখা এই তরুণীরা বিভিন্ন ধরনের কাপড়ের ফুল হাতে নিয়ে খেলা চলাকালীন পুরো সময় জুড়ে নৃত্যরত অবস্থায় থাকে। টেলিভিশন স্ক্রীনের সামনে বসে প্রায়সময়ই কোন না কোনভাবে এদেরকে দেখতে পায় পুরুষদর্শক। এবং যে মুহুর্তে খেলাটি তীব্র-প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ বা জমজমাট হয়ে উঠে তখন বার বার করে ক্যামেরা চলে যেতে থাকে এই নৃত্যরত মেয়েদের ক্লোজ শটে; এসময় এই তরুণীদেরকেও নাচের মাত্রাও বাড়িয়ে দিতে হয়। এই ভাড়া করা তরুণীদের নিয়ে আসার ফলে ক্যামেরাম্যানের কাজটাও যেমন সহজ হয় ঠিক তেমনি ভাবে স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখতে থাকা পুরুষদর্শকদেরও বাড়তি মনোরঞ্জনের সুযোগ তৈরী করা যায়। যে মনোরঞ্জন এতদিন ধরে টেলিভিশনের পর্দায় বসে খেলা দেখা পুরুষরা শুধু পেত। কর্তৃপক্ষের কাছে নিশ্চয়- টেলিভিশনে খেলা দেখা দর্শকরা মনোরঞ্জন পাবে আর যারা টাকা খরচ করে স্টেডিয়ামে বসে খেলা দেখছে তারা নারীর শারীরিক সৌন্দর্য দেখার সুযোগ পাবে না- এই ব্যাপারটা বৈষম্যমূলক মনে হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল আচরনে টিকেট কেটে আসা দর্শকরা নিশ্চয় খুশি হয়েছেন এবং কর্তৃপক্ষের টিকেটের দাম বাড়িয়ে দেওয়াকে মনে হয়েছে যথাযোগ্য।



আশার কথা হল, আজকের যুগে মেয়েরাও নানা ধরনের খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করছে। এতদিন ধরে পুরুষালী খেলা বলে পরিচিত ফুটবল-ক্রিকেটের মত খেলায়ও তারা দক্ষতা দেখাচ্ছে। আজকের যুগে নারীদের ক্রিকেট-ফুটবল খেলারও বিশ্বকাপের আসর বসে, নানা ধরনের আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। যদিও তাদের খেলাচলাকালীন সময়ে স্টেডিয়ামে দর্শকের উপস্থিতি এবং ঐ খেলা সম্প্রচারকারী টেলিভিশন চ্যানেলে দর্শকের চোখ থাকে খুবই কম বা থাকেনা বললেই চলে; ফলে চ্যানেলগুলোও নারীদের খেলা সম্প্রচার করার দিকে বিমনা থাকে। বিশ্বকাপ চলাকালীন সময়ে হয়ত কিছু ক্রীড়া চ্যানেল বাধ্য হয় খেলাগুলো সম্প্রচার করতে। নারীদের বিশ্বকাপ বা টুর্নামেন্ট চলাকালীন সময়ে -পুরুষ বিশ্বকাপ চলাকালীন যেমন আলোচনার ঝড় উঠে বা বাসা-বাড়িতে সমর্থিত ক্রীড়া দলের পতাকা উত্তোলিত হয়- আলোচনার ঝড় উঠা বা পতাকা উত্তোলন তো দূরের কথা ব্যাপারটি যেন সবসময় আমাদের মাথার উপর দিয়ে যায়। নারীদের খেলার টুর্নামেন্ট সংঘটিত হওয়ার ঘটনা আমাদের কাছে সামান্য একটি খবরও হয়ে উঠতে দেখা যায় না। প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক্স মিডিয়াগুলোও যেন এক্ষেত্রে নীরব ভূমিকা পালন করে। নারীদের ও পুরুষদের খেলার তুলনামূলক একটি ব্যাপার এখানে উপস্থাপন করা যায় তা হল, কোন একটি দেশের পুরুষ খেলোয়াররা অন্য একটি দেশের পুরুষ খেলোয়ারদের সাথে একটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে হেরে গেলে পরাজিত পুরুষ দলের দেশের তীব্র দেশ প্রেমিক সমর্থকরা পরাজয়ের বেদনায় বারবার মুর্ছা যাতে থাকেন। এবং বলা হতে থাকে, হায় হায়! আমাদের দেশ অমুক দেশের সাথে সামান্য ব্যাবধানে হেরে গেল! যদি এমন হয় ঐদিনই বা তার একদিন পরে বা আগে ঐ একই দেশের নারী দল একইধরনের খেলায় অপর দেশটির নারী দলকে হারিয়ে দিল; তখন কাউকে বিজয়ের উল্লাসে উল্লসিত হতে দেখা যায় না। এবং মনের ভুলেও এমনটি কখনও বলা হয় না আমাদের দেশ অমুক দেশকে নির্মমভাবে পরাজিত করেছে। নারী যথাসাধ্য শ্রম দিয়ে গৌরব অর্জন করলেও সেই গৌরব দেশের হয় না, তার দেশবাসী তাদের কীর্তিকে দেশের কীর্তি বলে মনে করেনা। ঠিক তেমনি ভাবে নারীর পরাজয়েও পরাজিত হয় না কোন দেশ বা সমাজ। নারীর জয় বা পরাজয়ে পুরুষতান্ত্রিক সমাজের কিছুই যায়-আসে না। দেশ বা সমাজের বৈধ অধিবাসী যেন তারা নয়!



ফুটবল, ক্রিকেট বাদে আরো কিছু খেলা আছে যেখানে নারীদের অংশগ্রহণ বেশ স্বতস্ফূর্ত যেমনঃ লন টেনিস, টেবিল টেনিস, ব্যাডমিন্টন, ভলিবল, হ্যান্ডবল ইত্যাদি। এই খেলাগুলোর মধ্যে মেয়েদের লন টেনিস টুর্নামেন্টকে মাঝে মাঝে খবর হতে দেখা যায়। লন টেনিস খেলায় নারীর শারীরিক(পোশাকটা বেশ খাটো এবং আঁটসাঁট হওয়ার কারনে শরীরের কিছু অংশ অনাবৃত থাকে ও শরীরের ভাঁজগুলো স্পষ্ট চোখে পড়ে) সৌন্দর্যটা বেশ ভালোভাবে উপভোগ করা যায় বিধায় এই খেলায় নারীর বেশ কদর দেখা যায়। একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা হয়ত স্পষ্ট হয়ে উঠবেঃ আনা কুর্নিকোভা নামে রাশিয়ান এক নারী লন টেনিস খেলোয়ার ছিল, খেলাধুলা থেকে অবসর নিয়ে সে এখন পুরোপুরি সৌন্দর্য দেখানোর কাজ মডেলিং এ আত্মনিয়োগ করেছে। আনা কুর্নিকোভা লন টেনিস খেলায় খুব বেশী দক্ষতা দেখাতে না পারলেও বিশ্বজোড়া তার সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়েছে শুধুমাত্র তার ভয়ানক রকম শারিরীক সৌন্দর্যের কারনে। তার মত এত ভয়ানক জনপ্রিয়তা অন্য কোন নারী টেনিস খেলোয়ারের ভাগ্যে খুব কমই জুটেছে। আনা কুর্নিকোভা সমন্ধে আরো একটি ব্যাপার কথিত আছে, পুরুষ দর্শকরা নাকি আনা কুর্নিকোভার খেলা দেখতে আসত, শরীরের ঘাম মোছা একটি রুমালও যদি কুর্নিকোভা কখনও দর্শকের দিকে ছুড়ে দেয় তাহলে সেই ঘামে ভেজা রুমালটিকে কুড়িয়ে পাবার আশায় বা হাত দিয়ে খানিকটা স্পর্শ করার ভয়ানক তাড়নায়। এরকম ব্যপার আমাদের পার্শবর্তী দেশ ভারতে লন টেনিস খেলোয়ার সানিয়া মির্জা সমন্ধেও কিছুটা খাটে; কারন ঐ দেশেরই শচীন টেন্ডুলকার ক্রিকেটে সার্বিকভাবে বিশ্বের এক নম্বর খেলোয়ার হওয়া সত্ত্বেও সানিয়া মির্জা লন টেনিসে বিশ্ব প্রেক্ষাপটে তেমন একটা পারদর্শিতা না দেখাতে পারলেও শারিরীক সৌন্দর্যের কারনে দেশের অভ্যন্তরে পুরুষ দর্শকদের কাছে জনপ্রিয়তায় শচীনকে বারবারই ছাড়িয়ে যেত। এই লন টেনিস খেলায় কোন নারী খেলোয়ার যত পারদর্শী হোক না কেন তার বহিরাবয়ব যদি পুরুষকে আকর্ষণ করার মত যথেষ্ট সুন্দর বা সুঠাম না হয় তাহলে সে বিশ্বজোড়া জনপ্রিয়তা বা সুখ্যাতি খুব বেশী অর্জন করতে পারেনা। যে কয়জন লন টেনিস খেলোয়ারকে আমরা একনামে চিনি তাদের প্রত্যেকে খেলায় দক্ষ হওয়ার পাশাপাশি যথেষ্ট পরিমানে পুরুষের যৌন আকর্ষক। পত্রিকার মাধ্যমে আমরা যখন লন টেনিস লেখার কোন নারীর জয়ের সংবাদ পাই তখন লেখা থাকে অমুক রুশ বা মার্কিন অথবা ফরাসী সুন্দরী এবারের গ্রান্ডস্লাম জিতে নিয়েছে। নারী খেলোয়ারটি সুন্দরী হলেও খেলায় জয়ের ব্যাপারে তার শারীরিক সৌন্দর্যের কোন ভূমিকা না থাকায় তার জয়ের খবরে যৌক্তিকভাবে এই বিশেষণটি নিয়ে আসার কোন দরকার পড়েনা, দরকার পড়ে পুরুষের যৌনানুভূতিতে সুড়সুড়ি দিয়ে খবরের কাগজের কাটতি বাড়ানোর জন্য। কোন পুরুষ খেলোয়ার বিশেষ রকম পারদর্শিতা দেখালে বা রেকর্ড সৃষ্টি করলে তার শারীরিক সৌন্দর্যবাচক বিশেষণ দিয়ে খবর করার নজির খুব কমই দেখা যায়। কখনই বলা হয় না, আর্জেন্টিয়ান বা পর্তুগীজ অমুক হ্যান্ডসাম এবার ফিফা বর্ষসেরা হয়েছে।



মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.