নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনন্দ-পঠন

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই

মেহেদী হাসান মঞ্জুর

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই।

মেহেদী হাসান মঞ্জুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ব্যর্থ অভ্যুত্থান বিষয়ে হুগো শ্যাভেজ

১৩ ই জুন, ২০১৪ রাত ১২:৪৭



সাক্ষাৎকারটি গ্রহন করেছেন মার্টা হার্নেস্কার





মার্টা হার্নেস্কারঃ আজ যেখানে বসে এই সাক্ষাৎকারটি নিচ্ছি ঠিক এই জায়গায়টিতেই আপনি ১১এপ্রিলের অভ্যুথান চলাকালীন সময়ে আটক ছিলেন, ঐ কঠিন সময়ের সবচেয়ে তিক্ততাময় স্মৃতিগুলোর কথা বলবেন কি?



হুগো শ্যাভেজঃ আমরা প্রাথমিকভাবে ভেবে রেখেছিলাম মারাকায় চলে যাওয়া সহ আমাদের কাছে আরো বেশ কিছু বিকল্পব্যাবস্থা আছে, তবে চলে যাওয়ার জন্য প্রয়োজন হতে পারে ভেবে যে ট্যাঙ্কগুলোকে আসতে বলেছিলাম— পূর্বেই সেগুলোকে টিউনা দুর্গে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছিল[অভ্যুত্থান সমর্থনকারী জেনারেলদের চাপের মুখে]। যা আমাদেরকে মারাকায় চলে যাওয়াকে অসম্ভব করে তুলেছিল। আমার কিছু লোকজনের সাথে শলা-পরামর্শ করে অবশেষে আমি নিজেকে ওদের হাতে তুলে দেওয়ার [অভ্যুথান পক্ষের জেনারেলদের] দাবী মেনে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেই।



আমি গিয়োরডানি এবং নাভাররোকে বিদায় জানানোর সময় জড়িয়ে ধরে বলি, “কলা-কৌশলগত সকল দিক বন্ধ হয়ে গিয়েছে”। তারা চুপ করে ছিল। তখন আমার মনে হয়েছিল, আমি মারা যেতে যাচ্ছি। এই অলক্ষুণে অনুভূতি আমার মনকে কিছুক্ষণের জন্য পুরোপুরি আচ্ছন্ন করে রাখে। প্রাসাদের ভেতরে আমার সাথে যারা ছিল তাদের সকলকেই আমি একে একে বিদায় জানাই।

জেনারেল[ম্যানুয়েল এন্টেনিও] রসেন্ডো, [ইসমাঈল] হার্টাডো এবং আমার পছন্দের আরো কিছু সংখ্যকদের সাথে টিউনা দুর্গে যাই। একজন বন্দী হিসেবে সেখানে আমি যাই নি। সামরিক বাহিনীর জেনারেলের নির্দেশে ভবনটির ভেতরে প্রবেশ করার সাথে সাথে আমি অভ্যুত্থানকারী জেনারেলদের বন্দীতে পরিণত হই।

আমার টিউনা দুর্গে থাকাকালীন সময়ে একজন কর্মকর্তার ধার দেওয়া টেলিভিশনে দেখতে পাই যে তারা আমার পদত্যাগের কথা ঘোষণা করছে, তাদের ষড়যন্ত্র, তাদের মিথ্যা বলার ব্যাপারটি আমি ধরে ফেলি। তখন আমার মনে হতে থাকে, তারা আমাকে মেরে ফেলতে যাচ্ছে; আমাকে সত্য বলা থেকে বিরত রাখতে এটাই একমাত্র রাস্তা। ঠিক সেই মুহুর্তে, একজন কর্মকর্তা আমাকে একটি টেলিফোন ব্যাবহার করতে দিলে আমার স্ত্রীকে ফোন করে জানাই, “এখান থেকে পালিয়ে যাও, ওরা আমাকে মেরে ফেলবে”। ফোনে আমার কন্যাদেরকে পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতে করতে হঠাৎ একজনকে পেয়ে যাই, আমার মেয়ে মারিয়া, এবং তাকে বলি, “মারিয়া এখান থেকে চলে যাও এবং আর সবাইকে চলে যেতে বল কারন তারা আমাকে মেরে ফেলতে যাচ্ছে।”



মা হাঃ আমি নিজেও অবশ্য ভেবেছিলাম, তারা আপনাকে মেরে ফেলতে যাচ্ছে। আমি এখনও বুঝে উঠতে পারিনা তারা কেন সেটা করল না।



হু শ্যাঃ তারা আমাকে মেরে ফেলার জন্য আদেশ দিয়ে ফেলেছিল, কিন্তু যা ঘটেছিল তা হল ষড়যন্ত্রকারী জেনারেলদের সত্যিকারের কোন নেতা ছিল না এবং তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন, বিশেষকরে তরুণ কর্মকর্তা আমাকে দেখাশোনা করার দায়িত্ব যাদের উপর ছিল, তারাই মূলত আদেশটিকে আটকে দেয়।

এমনকি সেখানে একজন পরিচারকও ছিল, যারা কফি পরিবেশন করে তাদের মধ্যকার একজন, যে লোকটি দুজন কর্মকর্তার মধ্যকার আলোচনা হঠাৎ শুনে ফেলে। সে অ্যাডমিরাল মলিনাকে শুনতে পায়, যাকে মনে হচ্ছিল আমাকে মেরে ফেলার আদেশ দিতে কারমোনাকে চাপ দিচ্ছে। সেই তরুণ পরিচারকটি আমাকে বলে যে, সে স্পষ্টভাবে শুনেছে [পেড্রো] কারমোনা যখন বলে, “আচ্ছা ঠিক আছে, তাকে ফেলে দাও”। এবং আসলেই তারা সেই রাত্রেই আমাকে একটি হেলিকপ্টারে উঠিয়ে টুরিয়ামো* পর্যন্ত নিয়ে আসে- একটি নির্জন স্থান, পরিপার্শ্বিকের তুলনায় জায়গাটা একটু ভীতিপ্রদ- নিজেই নিজেকে বললাম, “সময় চলে এসেছে”, এবং আমি ক্রুশবিদ্ধ যিশুর মূর্তিটিকে হাতে নিয়ে প্রার্থনার বাণী আওড়াতে শুরু করলাম। আত্মমর্যাদার সাথে মৃত্যুবরণ মরার জন্য আমি প্রস্তুত হয়েছিলাম। নিজেকে বললাম, “তোমার সময় শেষ হয়ে এসেছে, তবে তুমি মারা যাচ্ছ জনগনের প্রতি তোমার বিশ্বস্ততার কারনে।”

আমার আটক থাকাকালীন সময়ে আমার চারপাশে থাকা সৈনিক এবং কর্মচারীর মত সকল নিচু পদমর্যাদার মানুষজন আমার থাকার ঘর, বাথরুম পরিষ্কার করার কাজে সাহায্য করতে তাদের নিজ নিজ পথে এগিয়ে এসেছিল। সেখানে সত্যকার অর্থেই খুব ছোট আকারের একটি বিছানা ছিল তবে তারা খুঁজে পেতে ভালো একটি বিছানা এবং একটা চেয়ার এনে দেয়। তারা আমাকে সোডা অথবা কফি খেতে দিত। তারা আসলেই তাদের নিজ নিজ পথে এগিয়ে এসেছিল।

যখন তারা আমাকে সংক্ষিপ্ত প্রাতঃভ্রমণ সারতে বাইরে নিয়ে আসে, তখন তারা আমার জন্য একটি টি-সার্ট এবং বাইরে পড়ার উপযোগী কয়েক জোড়া চটি জুতা এনে দেয়। আমার প্রয়োজন হতে পারে এমন সামান্য জিনিসপত্রের ব্যাপারেও আমাকে সাহায্য করার জন্য তারা প্রস্তুত হয়ে থাকত।

সেখানে অবশ্য দুইজন নারী সামরিক প্রসিকিউটরও ছিল। তো এই নারীরা প্রথমে নিজে থেকেই আমার রুমে চলে আসে, তবে তারা এসে পৌঁছানোর কিছুক্ষণ পরেই তাদেরকে বাইরে চলে যেতে বলা হয়, কয়েক মিনিট পর তারা অভ্যুত্থানকারী একজন কলোনেলকে সাথে নিয়ে ফিরে আসে যে একজন আইনজীবী এবং তারা বসে পড়ে। সুতরাং আমি বুঝে ফেলি নারীদেরকে তারা বাইরে চলে যেতে বলেছিল কারন ঐ কর্মকর্তাটি এখানে আসতে চায়।

আমরা কয়েক মিনিট কথাবার্তা বলি এবং তারা আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি কেমন বোধ করছি। আমি তাদেরকে বললাম, প্রথম যে জিনিসটাকে আমি তাদের কাছে জানিয়ে রাখতে চাই তা হল, আমি পদত্যাগ করার কথা কখনো উচ্চারণ করিনি, এমনকি ভেবে পর্যন্ত দেখিনি। মিডিয়ার মাধ্যমে যে প্রোপাগান্ডা চালানো হচ্ছে সেটাকে মিথ্যা বলে জানিয়ে দেই।

নারীরা ছোট একটা পৃষ্ঠাতে আমার স্বাস্থ্য সমন্ধীয় কিছু জিনিস হাতে লেখে ফেলল এবং আমি সেখানে সই করে দিলাম। আমি দেখলাম যে পদত্যাগ না করার বিষয়ে আমি যা কিছু বলেছি তা তারা লেখেনি, তবে আমি জানতাম যে তারা অনেক চাপের মধ্যে আছে, এবং আমি তাদের জন্য বিষয়টাকে আরো ভয়ানক করে তুলতে চাইনি, ফলে আমি শুধু বললাম, “আচ্ছা, ধন্যবাদ”।

চলে যাওয়ার সময় তাদের চেহারায় আমার প্রতি সহানুভূতি ফুটে উঠল। তুমি জানো তারা কি করেছিল আমার জন্য? তাদের সই করা হয়ে গেলে এবং কলোনেল দেখে দেওয়ার পর, তাদের মধ্যকার একজন পৃষ্ঠার একেবারে শেষে ছোট ছোট অক্ষরে লেখল যে, “সে ঘোষণা করেছে যে প্রেসিডেন্টের পদ থেকে সে সরে দাঁড়ায়নি”। তারপর তারা এটার একটা প্রতিলিপি ফ্যাক্সের মাধ্যমে এটর্নি জেনারেলের কাছে পাঠিয়ে দেয় এবং এর ফলেই ইসাইয়াস রড্রিগেজ বিকালে অনুষ্ঠিত সেই সাক্ষাৎকারে বলে, “আমরা সামরিক এটর্নির কাছ থেকে তথ্য পেয়েছি যে, প্রেসিডেন্ট পদত্যাগ করেনি।”

তারপর আমি সহযোগিতা পেয়েছিলাম সেই সৈনিকটির কাছ থেকে যে আমাকে প্রার্থনা করার জন্য একটি পাথর দিয়েছিল। সে তার নিজস্বভাবে একজন দেশপ্রেমিক ছিল। এবং সেই ল্যাফটেন্যান্ট যে টুরিয়ামোতে এসে আমাকে বলেছিলঃ “চিন্তিত হবেন না, আপনি এখনও আমাদের রাষ্ট্রপতি, একদম দুঃশ্চিন্তা করবেন না কারন আমরা আজকে রাত্রেই উচ্চ শ্রেণীর কর্মকর্তাদের গ্রেফতার করতে যাচ্ছি এবং আপনাকে এখান থেকে বের করে নিয়ে যাবো”। আরো একটি ছেলে ছিল যে আমাকে যেখানে বন্দী করে রাখা হয়েছিল সেখানে একবার এসেছিল এবং ছেড়া কাগজের মধ্যে লেখে রাখা আমার কিছু বক্তব্য নিয়ে গিয়ে তার স্ত্রীকে দিয়েছিল যে সেগুলোর অনেকগুলো প্রতিলিপি তৈরী করে এবং সেগুলোকে বিতরণ করে লোকজনের কাছে ছড়িয়ে দেয় যে আমি পদত্যাগ করিনি।

এই ধরনের সহযোগিতা একটার পর একটা আসছিল। আমি সেই লোকগুলোকে, সেই দিনগুলোকে কখনোই ভুলবো না।

অর্চিড দ্বীপে এখানে আসাটা আজকে আমাকে দুটি জিনিস মনে করিয়ে দেয়ঃ একটি ভাল এবং একটি খারাপ। ভালো স্মৃতিটি হচ্ছে, সেমানা সান্টা(পবিত্র সপ্তাহ) চলাকালীন সময়ে এখানে মারিয়া ইসাবেল(পরবর্তী সময়ে শ্যাভেজের স্ত্রী)ও আমার কন্যা রোজা ইনেস এবং আমার ছেলে রাউলের সাথে সাঁতার কাটা। মুক্তি পাওয়ার পর এখানে এসে অনেক ভালো সময় কাটিয়েছিলাম। খারাপ স্মৃতিটি হচ্ছে সেই রাত্রি যখন আমাকে একজন বন্দী হিসেবে এখানে নিয়ে আসা হয়।

একবার সন্ধ্যার সময় আমি অনুধাবন করতে শুরু করি যে দেশে কিছু একটা ঘটে চলেছে, বিপ্লবের পক্ষে কিছু একটা। আমাকে দেখাশোনা করা সৈনিকদের আচার-আচরণের মধ্যে দিয়ে আমি এটা বুঝতে পারি। তারা একটি পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল; চারপাশের পরিবেশে-পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমি এটা অনুভব করতে শুরু করি। হেলিকপ্টারে চড়ে একজন এডমিরাল এই দ্বীপে এসে পৌঁছায় এবং আমি যে রুমে থাকি সেখানে প্রবেশ করে- সে তার জুতা-মোজা খুলে ফেলে, সর্টস এবং টি-সার্ট পড়ে, এবং লোকটিকে সাথে নিয়ে দ্বীপে দৌড়াদৌড়ি করে আসার পর মাছ খেয়ে- সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে, “মিস্টার প্রেসিডেন্ট আমি এখানে একটি বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে এখানে এসেছি”। এটা ছিল আরেকটি লক্ষণ কারন এখানে বন্দী হিসেবে নিয়ে আসার পর এই প্রথম আমাকে প্রেসিডেন্ট বলে সম্বোধন করা হল। তারপর অভ্যুত্থানকারীরা আমার কাছে একটি বিশেষ প্রতিনিধি দল পাঠায়ঃ সামরিক আদালতের একজন জেনারেল, অভ্যুত্থানকারীদের মধ্য থেকে একজন কলোনেল এবং প্রধান ধর্মযাজক। আমি আমার ছোট্ট রুমের মধ্যে বসেছিলাম এবং এই প্রতিনিধি দলটি আমাকে দিয়ে কি করিয়ে নিতে চায় সে সমন্ধে নানা ধরনের ছবি আমার মনের পর্দায় ভেসে উঠছিল। আমি অন্য কিছু ভেবে সময় কাটানোর চেয়ে বরঞ্চ দেশে কি ঘটে চলেছে তা গভীর পর্যবেক্ষনের সাথে উপলদ্ধি করার চেষ্টা করতে থাকি। এই দ্বীপে আমাকে নিয়ে আসতে তাদেরকে অনুমতি দিয়েছিলাম এই জন্য যে আমি আগে থেকেই এই দ্বীপটাকে চিনি- আমি জানতাম যে, এটা যে একটা দ্বীপ হওয়া সত্ত্বেও, নানা ধরনের তথ্য-উপাত্ত পাওয়ার সুযোগ আমার থাকবে। আমি এমনকি এটাও ভেবে রেখেছিলাম যে পরিস্থিতির যদি কোন ধরনের পরিবর্তন না ঘটতে থাকে তাহলে তারা আমাকে দেশ থেকে নিরাপদে অন্য কোথাও পাড়ি জমানোর প্রস্তাব নিয়ে আসছে এবং সম্ভবত আমি তা গ্রহন করে নেব, পদত্যাগ না করে, পরিকল্পনাটি হচ্ছে অন্য কোন বন্ধুত্বপূর্ন দেশে চলে যাওয়া এবং সেখান থেকে আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ সংগঠিত করা। প্রধান ধর্মযাজকের সাথে আমি প্রথমে কথা বলে নিতে চাই এবং তাকে বলি যে তারা আমাকে এখানে জোর করে নিয়ে এসেছে, এরপর আমরা আরো কয়েকটা ব্যাপার নিয়ে কথা বলি। অন্য কিছুর চেয়ে আমি বরঞ্চ তাকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, এটা কিভাবে সম্ভব যে ক্যাথলিক গীর্জা এমন একটা অভ্যুত্থানকে অনুমোদন দিল যা ঈশ্বরের আইনের বিরুদ্ধে যায়। আমরা খানিকক্ষণ কথা বলি। তারপর আমরা অন্য সকলের সাথে আলোচনায় বসি। তারা আমাকে দিয়ে সই করিয়ে নেওয়ার জন্য আমার সামনে একটি পদত্যাগ পত্র মেলে ধরে এবং তারা আমাকে জানায় যে এখানে সই করে দেওয়ার সাথে সাথেই আপনাকে দেশ থেকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হাত দেয়া হবে। দুই রাত পূর্বে তারা আমাকে বলেছিল যে, আমি যদি সই করে দেই তাহলে এটা কোন ব্যাপার হবে না, যাহোক একই ব্যাপার। যখন আমি এটা দেখলাম তখন আমি নিজেকেই বলি, “তারা এখন সমস্যার মধ্যে আছে। গুরুত্বপূর্ণ কিছু ঘটবে যদি তারা এখানে আসে এবং আমার নির্দেশে কোন পরিকল্পনা হাতে নেয়।

আমি তাদেরকে বললাম যে, আমি এখানে সই করতে পারব না, কারন তারা জানত যে, কিছু ধারাবাহিক শর্তের অধীনে আমি পদত্যাগ করতে রাজী আছি এবং আমি শর্তগুলো পুনরুল্লেখ করি যেগুলোকে আমি প্রাসাদে পেশ করেছিলাম। আমি জানতাম যে তারা নিজেদেরকে আমার কাছে সমর্পন করতে পারবে না। আমি তাদেরকে বলি যে, প্রথম শর্তটি হচ্ছে দেশের এবং সরকারে থাকা সকল মানুষের নিরাপত্তা বিধানঃ “তোমরা এই শর্তটিকে লঙ্ঘন করেছ, তোমরা মানুষজনকে আটক করেছ, তাদের উপর নির্যাতন চালিয়েছ, কে জানে এখনও হয়তো এসবই ঘটে চলেছে”, তবে আমি যখন টিউনা দুর্গে আটক ছিলাম, আমি দেখেছি তারা তারেককে(তারেক উইলিয়ামস, বর্তমানে আনজোয়া প্রদেশের গভর্নর) বন্দী করেছে, এবং আরো একজন প্রতিনিধিকে, তাদেরকে বাড়ি থেকে টেনে বের করে গ্রেফতার করা হয়েছে।

দ্বিতীয় শর্তটি হচ্ছেঃ তারা সংবিধানের উপর শ্রদ্ধা রাখবে, এর ফলে, আমি যদি পদত্যাগ করি তাহলে তা অবশ্যই হতে হবে জাতীয় পরিষদের সামনে, এবং যতদিন পর্যন্ত না নতুন নির্বাচন আহ্বান করা হয় ততদিন পর্যন্ত ভাইস প্রেসিডেন্ট ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এবং তোমরা সংবিধান স্থগিত করেছ, জাতীয় পরিষদ, সুপ্রীম কোর্ট এবং এরকম আরো আনেক কিছুকে বিলুপ্ত করে দিয়েছ। সুতরাং আমরা আসলে এখানে কোন ব্যাপারে কথা বলছি?



মা হাঃ আপনি তাহলে সবকিছুই জানতেন?



হু শ্যাঃ আমি জানতাম কারন আমি যখন টিউনা দুর্গে ছিলাম, পূর্বে যেমন তোমাকে বলেছি, একজন কর্মকর্তা একটি টেলিভিশন সেট ধার দিয়েছিল, ফলে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সারাদিন বসে বসে খবর দেখি। তারপর তারা সেই রাত্রেই আমাকে অন্য একটা জায়গায় নিয়ে যাওয়ার পর আমি আর কিছুই জানতে পারি নি। আমি দেখেছিলাম যে তারা বেশ কিছু মানুষকে বন্দী হিসেবে ধরে এনেছেঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, টাচেরিয়া প্রদেশের গভর্নর; আমি দেখি কারমোনার নিজেই শপথ পাঠ করা, এবং তার জারি করা অধ্যাদেশগুলো।[ সে তার জারি করা অধ্যাদেশের শরণ নেয় যেখানে কারমোনা নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে এবং সরকার ব্যাবস্থার সকল শাখাঃ সুপ্রীম কোর্ট, এটর্নি জেনারেল, ন্যায়পাল, জাতীয় হিসাব নিয়ন্ত্রক, জাতীয় নির্বাচন পরিষদ, এবং চালু থাকা কার্যনির্বাহী পরিষদ কে বিলুপ্ত করে দিয়েছে।]

তৃতীয় শর্তটি ছিলঃ দেশের জনগনের সামনে সরাসরি কথা বলতে দিতে হবে। তোমরা কি আসলেই মনে কর, আমি এভাবে চলে যাব? দেশের জনগনের কাছে কিছু না বলেই?

চতুর্থ শর্তটি হচ্ছেঃ আমার সরকারের সকল সহযোগীদেরকে আমার সাথে আসার অনুমতি দিতে হবে, সেই সমস্ত লোকজন যারা বছরের পর বছর ধরে আমার সাথে ছিল। তারা এটাকে মেনে নিত না যদিও পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে এটাই আমার একমাত্র সমর্থন।

এবং আর্চবিশপ বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে, শ্যাভেজ, তোমাকে এই দেশটি সমন্ধে ভাবতে হবে”, এই পঙক্তিটি তোমার জানা আছে নিশ্চয়—“আমি এই দেশের কথা ভাবছি।” আমরা তর্কবিতর্ক শুরু করে দিলাম এবং সেই পুরো মুহূর্ত জুড়ে আমি শুধু সময় ক্ষেপণ করছিলাম। আমি সেই সমস্ত সার্জেন্টদের দিকে তাকালাম যারা তাদের রাইফেল এবং হালকা ক্ষেপনাস্ত্র নিয়ে এখানে ছিল, তারা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা বলছিল এবং মাঝে মাঝে আমার দিকে তাকাচ্ছিল; পুরো পরিবেশের মধ্যে একধরনের টান টান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। এবং আমাকে এখানে নিয়ে যে নিয়ে এসেছে সেই এডমিরাল, বাহিরে দাঁড়িয়ে ফোনের পর ফোন করে যাচ্ছিল। আমার কাছে মনে হচ্ছিল, কিছু একটা ঘটে চলেছে, আমার পদত্যাগের ব্যাপারে মিথ্যা বলার চেয়ে বড় কিছু।

সুতরাং আমি কথা বলে এবং তর্ক-বিতর্ক করে সময় ক্ষেপণ করার দিকে মন দিলাম। তখন আমি দ্বিতীয় দৃশ্যপটকে সামনে নিয়ে আসলাম, আমি তাদেরকে বললাম, “শোন, আমি পদত্যাগ পত্রে সই করছি না। তোমরা সংবিধান লঙ্ঘন করেছ,” এবং আমি তাদেরকে সংবিধানের পকেট সংস্করণটি দেখালাম। “প্রেসিডেন্টের পুরোপুরি অনুপুস্থিতি- এটাই কি তোমরা চাও? এ ধরনের অনুপুস্থিতির একমাত্র পথ হচ্ছে হত্যা করা। এটাই চাও তোমরা? পদত্যাগ করা নির্ভর করছে আমার উপর, আর হত্যা করা নির্ভর করছে তোমাদের উপর। অথবা চাও একটি মেডিক্যাল টিম আমাকে হুকুম দানে অক্ষম ঘোষণা করতে এবং এটাকে সুপ্রীম কোর্ট এবং জাতীয় পরিষদের দ্বারা অনুমোদন করিয়ে নিতে? আমাদের এখন অবশ্য ঐ জিনিসগুলো আর অবশিষ্ট নেই। আমি আশ্চর্য হয়ে ভাবি, তোমরা তা করার জন্য কিছু চিকিৎসক কি খুঁজে বের করতে পারবে? যা হোক, এটা আসলে তোমাদের কাজ সারার জন্য উপযুক্ত নয়, তাই নয় কি? সুতরাং তোমাদের হাতে আছে কেবল একটি বিকল্প, আমি বলবো সেটাকে সহজতর করে নিতে, একটি সাংবিধানিক বিকল্প ব্যাবস্থাঃ দায়িত্ব থেকে সরিয়ে নেয়া।” তারপর আমি একটি বিশ্লেষণ সংক্রান্ত ফাঁদ পাতি। আমি জানতাম যে তারা আইন সংক্রান্ত ব্যাপারে তেমন কিছু জানে না, তবে এখানে একজন কলোনেল আছে যে একজন আইনজীবী এবং বেশ ভালো মানের আইনজীবী। সুতরাং আমি নিজেকেই বলি যে, “সে একজন আইনজীবী এবং আমি তা নই, তবে সংবিধান সমন্ধে তার ভালো জানাশোনা নেই যেটা আমার আছে।”

তারপর আমি তাকে বললাম, “আমি আমার কার্যালয় পরিত্যাগ করতে পারি, এই হচ্ছে সংবিধান, আমরা কি এটা পড়ে দেখতে পারি? “প্রেসিডেন্টের পুরো অনুপুস্থিতি, এটা একটা বিষয় এবং আরেকটি বিষয় হচ্ছে কার্যালয় পরিত্যাগ করা। ” তবে সংবিধান এখানে বলেছে যে, জাতীয় পরিষদকে কার্যালয় পরিত্যাগ করার ব্যাপারটি স্বীকৃতি দিতে হবে, এবং আমি সংবিধানের এই অংশটা পড়ে শোনালাম না। তারপর আমি বলি যে, আমি এমন একটা দলিলি দস্তখত করতে রাজী আছি যেখানে বলা হয়েছে, আমি কার্যালয় পরিত্যাগ করেছি, তার মানে এই নয় যে আমি পদত্যাগ করেছি।” কলোনেল জিজ্ঞেস করল, “কিন্তু এর মধ্যে পার্থক্যটা কোথায়?” এবং তারপর টেলিফোনে কথা বলতে বাইরে চলে গেল, ফিরে আসল সংবিধানের একটি ধার করা প্রতিলিপি হাতে নিয়ে এবং তখনই কেবল সে বুঝতে পারল আমি কি করছি। “কিন্তু শ্যাভেজ এই জিনিসটাই হচ্ছে একটা সমস্যাঃ জাতীয় পরিষদ।” “এটা আপনার সমস্যা, তবে একমাত্র এই পথেই আমি এই প্রজ্ঞাপনে সই করতে রাজী আছি এবং আমাকে ফোন ব্যাবহার করতে দিতে হবে কারন আমি যদি মেক্সিকো অথবা কিউবাতে যেতে চাই তাহলে সেই সমস্ত দেশে প্রেসিডেন্টদের সাথে আমার কথা বলার প্রয়োজন আছে। নির্দেশনা ব্যাতিরেকে কোন প্লেনে চড়ে আমি এখান থেকে চলে যাচ্ছি না এবং পাশা-পাশি আমার স্ত্রী এবং বাচ্চাদের সাথে কথা বলতে হবে এবং ছোট-খাট কিছু জিনিস বন্দোবস্ত করার আছে।

সুতরাং এরপর আমি একটি দলিলের খসরা করতে শুরু করলাম, যেখানে বলা হচ্ছে,” আমি, হুগো শ্যাভেজ ফ্রীয়াস, জাতীয় পরিচয় পত্র নাম্বার অমুক---”অবশ্যই, আমি এটা লেখেছিলাম আমার পরিকল্পনা অনুযায়ীঃ “ঘটনার প্রবলতার সামনে, আমি স্বীকার করে নিচ্ছি, আমি অফিস থেকে বিতাড়িত হয়েছি এবং সুতরাং আমি এটা পরিত্যাগ করেছি।” এরকম কিছু একটা। এবং এই লোকটি টোপটি গিলল এবং আমাকে উদ্দেশ্য করে বলল যে, “আচ্ছা ঠিক আছে, যা কিছু সই করা হয়েছে আমি তা তাদের কাছে পৌঁছে দেব।”

সুতরাং তারা দলিলটি টাইপ করতে শুরু করে দিল। যে কর্মকর্তাটি লেখছিল সে ছিল, আমি যাদেরকে প্রভাবিত করে ফেলেছিলাম তাদের মধ্যকার একজন- আমি তাদের প্রত্যেকের সাথে একজন একজন করে কথা বলেছিলাম, তাদের অধিকাংশই ছিল সজ্জন ব্যাক্তি- সুতরাং সে খুব ধীরে ধীরে টাইপ করছিল। সে কিছু একটি ভুল করে ফেলেছিল এবং আবার নতুন করে শুরু করতে হল, আমি তখনও সময় ক্ষেপণ করে চলছিলাম। কলোনেল তাকে তাড়াতাড়ি কাজটি শেষ করে ফেলতে তাড়া দিল। পুনরায়, আমি লক্ষ্য করলাম যে, কলোনেল বিচলিত হয়ে উঠেছে। পুরো এলাকাটি ছিল সৈনিক দিয়ে ভর্তি এবং আমি দেখতে পাই যে তাদের মধ্যে কেউ কেউ প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নিচ্ছে, এগিয়ে আসা যুদ্ধের জন্য সতর্কতা স্বরূপ। সুতরাং আমি বাইরে দাঁড়িয়ে থাকা কলোনেলকে ডেকে এনে জিজ্ঞেস করলাম, “এখানে বড় হুমকিটা কি? এই ছেলেগুলো কেন এভাবে পকেট লাঞ্চারগুলো বের করে আনছে এবং এবং প্রতিরক্ষামূলক অবস্থান নিচ্ছে।” লোকটি বিচলিতভাবে বলল, “না না, মিস্টার প্রেসিডেন্ট, তেমন কিছুই না, আপনি তো জানেন আপনার জীবনের নিরাপত্তা আমাদেরকে দিতে হবে।”

আমি যখন রুমে একা ছিলাম তখন আমার নিরাপত্তা বাহিনীর প্রধান আমার কাছে এসে ফিসফিস করে বললঃ “মিস্টার প্রেসিডেন্ট, আমি কোন কিছুতেই সই করিনি” এবং সাথে সাথে চলে গেল। আমি বসে বসে ভাবছিলাম, কি ঘটে চলেছে। আরো কিছুক্ষন সময় ক্ষেপণ করতে এবং নতুন কোন কৌশল খুঁজে বের করতে বাথরুমে গেলাম। তখন আমি কোন ধরনের সই না করার সিদ্ধান্ত নেই। বের হয়ে এসে আমি বললামঃ “শোন, ল্যাফটেন্যান্ট, আর লেখো না, এবং প্রধান ধর্মযাজক এবং অন্যদের উদ্দেশ্য করে বললাম, আমি নিশ্চিতভাবেই কোন কিছুতে সই করছি না, তবে এখানে আসার জন্য আপনাদেরকে ধন্যবাদ।” তারপর তাদের সাথে আমি মজা করতে শুরু করি। “আপনারা যদি আজকের রাত্রিটি আমার এই বিলাসবহুল কারাগারে থেকে যেতে চান তাহলে তাহলে কালকে সকালে চলে যেতে পারবেন। আমি এটা সমন্ধে ভেবে দেখেছি, আমি নিশ্চিতভাবে এখান থেকে যাচ্ছি না, আমার পরিবার-পরিজন এখানে, আমার রাজনৈতিক দল এখানে এবং আমার জনগন এখানে—আমি জানি না এখানে কি ঘটে চলেছে কারন আপনারা আমাকে কোন কোন কিছু জানতে অথবা এমনকি কাউকে একটা ফোনও করতে দিচ্ছেন না, আমাকে আপনারা অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।”

এটা আমার কাছে খুবই অদ্ভূত লাগল যে, আমি তাদেরকে যা বললাম তা তারা প্রতিরোধ করার চেষ্টা পর্যন্ত করল না বরঞ্চ এর পরিবর্তে তাড়াতাড়ি সম্মত হয়ে বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে শ্যাভেজ, আপনি ঠিকই বলেছেন, আমরা চলে যাচ্ছি”, এবং দ্রুত বের হয়ে গেল। তারা যখন পাঁচ মিনিটের মাথায় আবার ফিরে আসল তখন তাদেরকে অনেক বেশী বিচলিত দেখাচ্ছিল। যাজকের মুখের রঙ ওপাশে রাখা চেয়ারটি মত সাদা হয়ে গেছে। এডমিরাল আমার কাছে এসে বলল, “মিস্টার প্রেসিডেন্ট, পরিস্থিতি পালটে গেছে, এক ইউনিটি প্যারাট্রুপার আসছে, তারা এই কিছুক্ষনের মধ্যেই পৌঁছে যাবে।” সে জানত না যে একটি মেরিন ফ্রিগ্রেট এবং আরো কিছু দ্রুতগামী নৌকাও আসছে। সুতরাং আমি তাদের কাছে জানতে চাইলাম তারা কেন আসছে। “তারা আসছে আপনাকে উদ্ধার করতে। “তাহলে এই বিষয়ে কি করবেন বলে ভেবছেন।” “না, তেমন কিছুই না, আপনার জীবনকে নিরাপত্তা দিতেই আমরা এখানে আছি, কিছুই হবে না, আমি প্যারাট্রুপার ইউনিটের জেনারেল বাডুয়েল এর সাথে কথা বলেছি এবং আমি রেডিওতে তাদেরকে বলতে বলেছি যে এখানে কোন প্রতিরোধ ব্যাবস্থা নেই, আমরা এখান থেকে একটি গুলিও ছুড়বো না।” এটা একটু বেশী শোনালো, এবং আমি জিজ্ঞেস করলাম, “তাহলে আপনারা এখনও রয়ে গেছেন কেন?” “কারন যে বিমানটি আমাদেরকে এখানে নিয়ে এসেছে তা ইতিমধ্যে চলে গিয়েছে।” আমি কল্পনা করলাম যে, বিমানটি রেডিওর মাধ্যমে শুনতে পেয়েছে আক্রমনকারী হেলিকপ্টার আসছে এবং এর ফলে তারা এখান থেকে খুব দ্রুত সরে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয়। আমি ঠিক সেই মুহুর্তে হেসে ফেলি, তবে আমি তাদেরকে আমার হেলিকপ্টারে চড়ে এখান থেকে চলে যাওয়ার প্রস্তাব করি। এডমিরালটি পুনরায় আমার কাছে এসে বলে যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর কাছ থেকে আপনার একটি ফোন কল আছে। “আমি সেই এডমিরালের সাথে কথা বলতে চাই না- একজন অভ্যুথানকারী সেজেছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী।” “না না, এটা আপনার প্রতিরক্ষা মন্ত্রী, ডক্টর র‍্যাঙ্গেল।” ব্যাপারটা আমাকে ভীষনভাবে উত্তেজিত করে তুলল এবং আমি টেলিফোনের কাছে গেলাম। জোসে ভিসেন্টে র‍্যাঙ্গেল এর কন্ঠ শোনামাত্রই মনে হল যেন রাতের মধ্যপ্রহরে সূর্য উদিত হয়েছে। তার কন্ঠে যেন আগুন জ্বলছিল, “যাহোক, আমরা আপনার জন্য অপেক্ষা করছি। এখানে এলে এসে পৌঁছুলে আপনাকে সবকিছু খুলে বলা হবে”।“ কিন্তু আপনি এখন কোথায়?” আমি জিজ্ঞেস করলাম। “এখানে প্রতিরক্ষা মন্ত্রনালয়ে, আমরা প্রাসাদটি পুনর্দখল করে নিয়েছি, এবং কারমোনাকে আটক করা হয়েছে। প্যারাট্রুপাররা আপনার কাছে যাওয়ার জন্য রওনা হয়ে গেছে, তারা যেকোন মুহূর্তে পৌঁছে যাবে, এবং আমরা এখানে আপনার আগমনের প্রতীক্ষায় বসে আছি, জনগন আপনার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।” “মানুষজনকে কি হত্যা করা হয়েছে?” “হ্যাঁ, সামান্য কয়েকজন তবে আপনি এখানে এলে সবকিছু খুলে বলা হবে।” “ওপাশে আপনার সাথে আর কে আছে?” “জেনারেল লোপেজ হিডালগো।”” তার সাথে আমাকে একটু কথা বলতে দিন।” আমি খুব সংক্ষেপেই তার সাথে কথা সেরে নেই। “হ্যাঁ, কমপাড্রে, কেমন চলছে সবকিছু? অনেক মানুষকে কি খুন করা হয়েছে?” “না, মিস্টার প্রেসিডেন্ট, দুঃশ্চিন্তা করবেন না। সামান্য কিছু মানুষ খুন হয়েছে, তবে জনগন এখন রাস্তায়, আমরা সেনাবাহিনীকে এবং বাদবাকী সবগুলো রাষ্ট্রীয় শক্তিকে নিয়ন্ত্রনে নিয়ে এসেছি।” “আচ্ছা, শীঘ্রই দেখা হচ্ছে।”

তারপর আমি মারাকায়* প্যারাট্রুপারদের জেনারেল ইন চার্জ কে ডাকলাম, যেটা ছিল প্রতিরোধের বাড়তি অংশ হিসেবে টিকে ছিল। আমি কথা বললাম বাডুয়েল এর সাথে, এবং গারসিয়া মনটোয়ার সাথে যে কমান্ডের মূল জায়গায় ছিল। তারা আমাকে কিছু জিনিস খুলে বলল, কিন্তু সময় ছিল খুব কম কারন হেলিকপ্টার ইতিমধ্যে নামতে শুরু করেছে। তেমন কোন সমস্যা হয়নি, এবং কিছু আইনজীবী এবং চিকিৎসক এসেছে কিছু জিজ্ঞাসাবাদ করতে ও শারিরীক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে কারন এরকম কিছু গুজব শোন গিয়েছিল যে কারাগারে থাকা সময়কালীন আমার উপর নির্যাতন চালানো হয়েছে, এবং মানুষজন এ বিষয়ে দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে উঠেছিল।

যা হোক, আমার মনে হয় সকাল বেলার এই সময়টাতেই তারা উপস্থিত হয়েছিল(সে তার ঘড়ির দিকে তাকায় এবং রাত আড়াইটার মত বাজে) কারন আমি ভোর চারটার কাছাকাছি সময়ে প্রাসাদে গিয়ে পৌঁছেছিলাম। সুতরাং এজন্যেই আমি তোমাকে বলেছি যে সারাজীবনের জন্য জায়গাটির কথা আমার মনে থাকবে।

যখন ১১ এপ্রিল ব্যর্থ অভ্যুত্থানের কথা আমার মনের পর্দায় ভেসে উঠে, তখন আমার মনে হয় সেই উদ্ধৃতির কথা, আমি পূর্বে উল্লেখ করেছিলামঃ যারা শান্তিপূর্ন বিপ্লবকে অসম্ভব করে তোলে তারা অপরিহার্যভাবে সংগঠিত করে হিংসাত্বক বিপ্লবকে। আমরা সাংবিধানিকভাবে বিপ্লব সংগঠিত করাটাকে বেছে নিয়েছিলাম, বিতর্কহীন বৈধতার সাংবিধানিক প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে। যদি এপ্রিলের ১১ অথবা ১২ তারিখের কিছু কিছু বিষয়ের উপর ভিত্তি করে গনতান্ত্রিক এবং শান্তিপূর্ন বিপ্লব সম্ভবনার উপর সন্দেহ পোষণ করতাম, তাহলে এপ্রিলের ১৩ এবং ১৪ তারিখে কি ঘটত যখন আমার প্রত্যাবর্তনের দাবীতে হাজার হাজার নারী-পুরুষ রাস্তায় নেমে এসেছিল, মিরাফ্লোর এবং কিছু আর্মি ব্যারাক ঘিরে রেখেছিল- এগুলো শক্তিশালীভাবে এই ধরনের বিপ্লবের প্রতি আমার আস্থা পুনঃস্থাপন করে। অবশ্যই লড়াই অনেক দীর্ঘ এবং কঠোর- আমরা কথা বলছি কোন কিছুকে সম্ভব করে তোলার আর্ট সমন্ধে যা অনেকের কাছে অসম্ভব বলে মনে হয়।



টুরিয়ামো*- ভেনেজুয়েলার আরাগুয়া প্রদেশের একটি শহর।

মারাকায়*-ভেনেজুয়েলার আরাগুয়া প্রদেশের রাজধানী।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.