নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আনন্দ-পঠন

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই

মেহেদী হাসান মঞ্জুর

লিখতে গিয়েই নিজেকে খুঁজে পাই।

মেহেদী হাসান মঞ্জুর › বিস্তারিত পোস্টঃ

পিট সিগারের সাক্ষাৎকারঃ কিভাবে আমি গান গাওয়া থেকে বিরত থাকতে পারি?

১৪ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৪০



সারাহ ভ্যান গেল্ডার পিট সিগারের এই সাক্ষাৎকারটি গ্রহণ করেন ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে। পিট সিগার কথা বলেছেন তার সঙ্গীত জীবন নিয়ে এবং মিলিয়ন মিলিয়ন ছোট ছোট পরিবর্তনের শক্তির উপর।

সাক্ষাৎকারটি ২০০৮ সালের পহেলা ফেব্রুয়ারী ইয়েস! ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়।

অনুবাদঃ মেহেদী হাসান



পিট সিগার, বেকনে তার বাড়িতে। আলোকচিত্রঃ মাইকেল বাউম্যান।



পিট সিগার ২৮ জানুয়ারী নিউ ইয়র্ক-প্রেসবাইটেরিয়ান হাসপাতালে ৯৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তার স্ত্রী, তশী সিগার, মারা যান গত জুলাইয়ে। পিট সারা বিশ্ব জুড়ে পরিচিত ছিল গণ মানুষের জন্য তার সঙ্গীত পরিবেশনা, এবং তাদের প্রতি তার ভালবাসা, বিশেষ করে শ্রম আন্দোলন, যুদ্ধ বিরোধী লড়াই, গণ অধিকার আন্দোলন এবং হাডসন নদীকে পরিচ্ছন্ন রাখার জন্য।

নিউ ইয়র্ক প্রদেশের হাডসন ভ্যালে, যেখানে সে তার জীবনের অধিকাংশ সময় কাটিয়েছে, সেখানে আঞ্চলিক অনুষ্ঠানগুলোতে ব্যাঞ্জো হাতে অঘোষিতভাবে উদয় হওয়ার জন্য সে খ্যাত ছিল। এবং তশীকে সাথে নিয়ে সে গড়ে তুলেছিল বাৎসরিক ক্লিয়ারওয়াটার স্লুপ* ফ্যাস্টিভ্যাল, বিখ্যাত পাল তোলা জাহাজের নামে যা দিয়ে সে হাডসন নদীতে ঘুরে বেড়াত, জনসাধারণকে তাদের পবিত্র নদীটির যত্ন নেওয়ার এবং সুরক্ষিত রাখার ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে। পিট বিশ্বাস করত যে পরিবর্তন আসবে, বিশালাকারে, মহৎ ঘোষণার মধ্য দিয়ে নয়, বরঞ্চ আমাদের প্রত্যেকের তৈরী করা সম্ভাবনার মধ্য দিয়ে। ২০০৭ সালে যখন আমি তার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করি তখন সে বলেছিলঃ “আগামী একশ বছর যদি পৃথিবীটা টিকে থাকে, তাহলে তা বর্তে যাবে দশ মিলিয়ন ছোট ছোট কাজের বিনিময়ে”।

এবং যখন আমি তাকে জিজ্ঞেস করি অনেক বছর ধরে খ্যাতিমান থাকার ব্যাপারটাকে সে কিভাবে উপভোগ করে, তখন সে আমাকে গালমন্দ করে এমনকি ব্যাপারটা জিজ্ঞেস করার জন্য। “খ্যাতি হচ্ছে একটা ফাঁদ এবং মোহ বৈ কিছু নয়,” সে জানায়।

________________________________________



নিউ ইয়র্কের হাডসন ভ্যালেতে আমার বেড়ে উঠাকালীন সময় হতেই পিট সিগার আমার জীবন জুড়ে ছিল। আমার পরিবার ছিল এমন কিছু পরিবারে মধ্যে একটা যারা হাডসন নদীর তীরে ছোট একটা জরাজীর্ণ পার্কে তার সঙ্গীত পরিবেশনা দেখতে যেত, তার পালতোলা জাহাজ, ক্লিয়ারওয়াটার বাঁধা থাকত পাশেই। দূষিত, অবহেলিত স্রোতস্বিনীর জন্য তার ভালবাসার গান এই মহৎ নদীটির সাথে জনমানুষের সংযোগের আকুলতাকে চাগিয়ে দিত।

পরবর্তীতে, আমি তাকে গান গাইতে দেখেছি ভিয়েতনাম যুদ্ধ বিরোধী মিছিলে, এবং তখন আমি জানতাম যে সেখানে বড়রা আছে যারা কল্যাণ এবং ন্যায় বিচারের প্রতি আমার উদ্দীপনাকে ধারণ করে।

এমন কিছু ধারনার কথা জানিয়ে, সাম্প্রতিক সময়ে, পিট সিগার ইয়েস! ম্যাগাজিনে পোস্ট কার্ড পাঠাচ্ছেন যেগুলোর উপর ভিত্তি করে আমরা প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারি, এবং সে কিছু টাকা-পয়সা পাঠিয়ে বলেছে এগুলো যেন খরচ করা হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত প্রত্যেকটি বিদেশী দূতাবাসে ইয়েস! ম্যাগাজিনের একটা করে কপি পাঠানো বাবদ।

অবশেষে, ডিসেম্বর মাসে, তার সাথে ব্যক্তিগতভাবে কথা বলার একটা সুযোগ পেয়ে যাই। আমরা তার বাড়িতে মিলিত হই যা সে নিজেই গড়ে তুলেছে ঢাল-মধ্যবর্তী একটা উঁচু এলাকার উপর যেখান থেকে তার প্রিয় হাডসন নদীটি দেখা যায়। সে আমাদের পরিচয় করিয়ে দেয় তার স্ত্রী তশী সিগারের সাথে, মেতে উঠে গল্পগুজবে, গান শোনায়, এবং ছাদের উপর রাখা সোলার প্যানেলের মাধ্যমে চালিত তার বৈদ্যুতিক পিকাপ ট্রাকটি আমাদের দেখায়।

নিচে আমাদের আলোচনার অংশবিশেষ তুলে ধরা হলঃ

সারাহঃ কখন আপনি প্রথম অনুধাবন করতে পারলেন যে সঙ্গীত, বিশেষ করে গণ মানুষের সঙ্গীত, আপনার জীবনকে পরিচালিত করবে?

পিট সিগারঃ আমি জানতাম না যে এটা আমার জীবনকে পরিচালিত করবে। আট বৎসর বয়সে আমার মা আমাকে একটা ইউকুলেলি* উপহার দিয়েছিল এবং আমি তখনকার দিনের জনপ্রিয় সুরগুলো ভাঁজতাম।[গান গাইতে শুরু করে]

সে জর্জিয়া হতে আগত একজন আবেগপ্রবণ লোক মাত্র....

অন্য যে গানগুলো আমার পরিবার গাইতে পছন্দ করত সেগুলো হচ্ছে (Round)রাউন্ড*।

আনন্দ ও সংযম এবং বিশ্বাস....

মনে হয় আমার নানা মাকে এটা শিখিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন নিউ ইংল্যান্ডের একজন রক্ষণশীল। আমার বাবার পরিবার ছিল নিউ ইংল্যান্ডের প্রগতিশীল পরিবার- বেশ আগে থেকেই একত্ববাদে বিশ্বাসী এবং দাসপ্রথা বিলোপের পক্ষপাতী। তবে আমার নানা এসেছিলেন (Tories)টরিস থেকে।

সারাহঃ কিভাবে আপনি পপ সঙ্গীত থেকে লোক সঙ্গীতের দিকে এগিয়ে গেলেন?

পিট সিগারঃ আমার ষোল বৎসর বয়সে আমি নিউ ইয়র্ক আসি। স্কুল জ্যাজ ব্যান্ড হতে আমি ব্যাচেলর ডিগ্রী লাভ করি তারের ব্যাঞ্জোর উপর, এবং এটা ছিল এক ধরনের বিরক্তিকর ব্যাপার- শুধু কর্ডস, কর্ডস এবং কর্ডস। এরপর আমার বাবা আমাকে নর্থ ক্যারোলিনার এশভিলেতে একটা পাহাড়ী সঙ্গীত এবং নৃত্যানুষ্ঠানে নিয়ে যায় এবং সেখানে আমি দেখতে পাই অপেক্ষাকৃত অশিক্ষিত লোকজন কোন ধরনের পূর্ব প্রস্তুতি ছাড়াই অসাধারণ সঙ্গীত বাজাতে উস্তাদ।

ব্যাঞ্জো হাতে দোলনা চেয়ারে হেলান দিয়ে বসা মিসেস সামান্থা বাউমগার্নার*কে আমি কখনই ভুলব না- আহ, সে তার ব্যাঞ্জোর মাথায় উজ্জ্বল রঙের প্রজাপতি এবং ফুল একে রেখেছিল, এবং সে গাইতেছিল মজাদার, করুনরসাত্মক, বিদ্রোহাত্মক গান।

সারাহঃ পরবর্তী সময়ে আপনি ওডি গাথ্রির সাথে বেশ কিছু জায়গা ঘুরে বেড়িয়েছেন, তাই নয় কি?

পিট সিগারঃ সে আমাকে শিখিয়েছিল কিভাবে বিনা ভাড়ায় চলাচল করতে হয় এবং ট্রেনের মালগাড়িতে চড়ে ভ্রমন করার কৌশল। তুমি কখনই মালগাড়িতে উঠতে পারবে না যখন এটা ষ্টেশনে দাঁড়ানো আছে- রেলপথের ষন্ডারা তোমায় লাত্থি মেরে ফেলে দেবে। তোমাকে যেতে হবে স্টেশনের বাইরে প্রায় ১০০গজ বা সম্ভবত ২০০গজ দূরে যেখানে ট্রেনটি গতি বাড়াতে শুরু করেছে এবং তুমি এটার সাথে সাথে দৌড়ে যেতে পারছ। একটা খালি বগিতে তোমার ব্যাঞ্জোটিকে ছুড়ে দেবে এবং এরপর ভেতরে তোমার নিজেকে ছুড়ে দেওয়ার পালা। তারপর থেকে তুমি তোমার নেমে পড়ার আগ পর্যন্ত সম্ভবত ২০০ মাইল অথবা ৩০০ মাইল চলতে পারবে।

তারপর হয়ত আমি পেছনের দরজাগুলোতে কড়াঘাত করে বলব, “একবেলা খাবারের জন্য সামান্য কিছু কাজ করতে পারি?” অথবা আমি একটা সেলুনে গিয়ে কয়েক কোয়ার্টারের বিনিময়ে গান গাইতে শুরু করব। ছয় মাসে আমি দেশটিকে এমনভাবে দেখেছি অন্যথায় কখনই এভাবে দেখা সম্ভব হত না। শ্রমিকরা কিভাবে কাজ করছে তা জানার ব্যাপারে আমি বিশেষ কৌতূহলী হয়ে উঠেছিলাম। আমি গিয়েছিলাম মনটানা প্রদেশের বাটেতে, তখনকার দিনে যেটা ছিল একটা তামা খনির শহর, এবং একহাজার ফিট নীচে নেমেছিলাম যেখানে ছিল প্রচন্ড গরম এবং তারা ঘেমে নেয়ে উঠছিল, পাতালে বসে, অবিশ্রান্তভাবে কাজ করে যাচ্ছিল।

তাদের একটা ভাল সঙ্ঘ ছিল, তবুও, আমি দরজায় টোকা দিয়ে বললাম, আমি কিছু সমবেত সঙ্গীত জানি, শুনবেন আপনারা?” এবং তাদের পাঁচ ডলারের সবটা আমাকে দিয়ে দিল, তখনকার দিনে তা ছিল অনেক টাকা, কয়লা শ্রমিকদের কিছু গান পরিবেশন করার জন্য যা আমি পূর্ব(East) হতে শিখেছিলাম।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, আমরা ছোট একটা সংগঠনের যাত্রা শুরু করলাম যেটাকে আমরা ডাকতাম পিপল’স সংস নামে। এটা ছিল খুবই ক্ষুদ্র একটা সংগঠন; আমাদের প্রকাশনার কাটতি ছিল প্রায় ২,০০০, এবং ১৯৪৯ সালে আমরা পুরোপুরি ভেঙ্গে গেলাম। স্নায়ুযুদ্ধ ছিল আমাদের জন্য এক ভয়ানক ব্যাপার। শাসক শ্রেণি খুব ভালোভাবেই জানত কিভাবে শ্রমজিবী শ্রেণির আন্দোলনকে গুড়িয়ে দিতে হয়। যখন এখান থেকে বেকনে চলে যাই প্রায় একই সময়ে আমি কমিউনিস্ট আন্দোলন থেকে ছিটকে পড়ি। এমন একজন হওয়ার ব্যাপারে আমি কখনই উৎসাহী ছিলাম না যাকে কোন একটা কিছুর সদস্য হওয়ার জন্য চুপ করে থাকতে হয়। অন্যদিকে কমিউনিস্ট দেশগুলোতে কি ঘটে চলেছে সেগুলো জানার ব্যাপারে আমি তখনও কৌতূহলী ছিলাম। আমি তিন তিনবার সোভিয়েত ইউনিয়ন গিয়েছি, ১৯৬৪ সালে, ১৯৬৭ সালে, মনে হয় পুনরায় আবার ১৯৮১ সালে। শ্রমজীবীদের আন্দোলনের চেয়ে বরঞ্চ আমি গণ অধিকার আন্দোলনগুলোতে গান গাওয়ায় মনযোগী হয়ে উঠেছিলাম কারন মূলত এটাই আমার জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছিলঃ ডঃ মার্টিন লুথার কিং এর কার্যপ্রণালী, শক্তি এবং সহিংসতার ব্যবহার ব্যতীত, পক্ষান্তরে কমিউনিস্টরা বলত, বিশালাকারের বিপ্লব বাদে এই বিশ্বকে পরিবর্তন করা যাবে না। আমার মনে হয়, এটা ছিল খুব বড় একটা ভুল।



সারাহ ভ্যান গেল্ডারের সাথে পিট সিগার। আলোকচিত্রঃ মাইকেল বাউম্যান।

সারাহঃ ডঃ মার্টিন লুথার কিং যা যা করেছিলেন তা কি আপনি নিজের চোখে দেখেছেন?

পিট সিগারঃ সেলমা থেকে মন্টগোমারী পর্যন্ত অভিযাত্রায় আমি এবং তশি তিনদিনের জন্য উপস্থিত ছিলাম। এবং আমি গান গাইতাম সেলমা ও মন্টগোমারীতে সময় সময় এবং কখনও বার্মিংহামে, কখনওবা মিসিসিপিতে।

মাত্র কয়েকবছরের মধ্যে আমি বুঝে ফেলি যে কি রকম প্রকৃত অসাধারণ চিন্তাশীল ব্যক্তি ছিলেন মার্টিন লুথার কিং। সে জোর দিয়ে আসছিল, প্রথমদিক থেকেই, সহিংসতা ব্যতীত পরিবহন বাস বর্জন আন্দোলনে জিতে যাওয়ার ব্যাপারে। মধ্যবিত্ত আফ্রিকান-আমেরিকানদের কেউ কেউ বলত যে, “ডঃ মার্টিন লুথার কিং আপোষ করছেন। যেখানে অনেক মানুষ আহত বা নিহত হতে যাচ্ছে”। এরা হচ্ছে চিকিৎসক এবং আইনজীবীর দল যারা তাদের ব্যবসা কে ক্ষতিগ্রস্ত হতে দিতে চায়নি। এবং তরুণরা হয়ত বলত, “তারা আমাদের উপর বোমা ফেলছে। তাহলে আমরা কেন তাদের উপর বোমা ফেলব না?” এবং মার্টিন যদি আলোচনার জন্য তাদের সকলকে একত্রে ডাকত এবং একে অপরের কথা শুনত, এবং এটা করতে গিয়ে হয়ত একটা পুরো দিন অথবা কোন সময় দুই দিন অথবা এমনকি তিনদিনও লেগে যেতে পারত। শেষমেশ তারা হয়ত বলত যে, “আচ্ছা, এটা আমরা বলব এবং এটা আমরা করব। কারন আমরা জানি আমাদেরকে একত্রে কাজ করে যেতে হবে নইলে আমরা জিততে পারব না”।

সারাহঃ শ্রম আন্দোলন এবং গণ অধিকার আন্দোলনের পাশাপাশি যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনেও আপনি সক্রিয় ছিলেন।

পিট সিগারঃ জনগণের মাঝে এখনও সংগ্রাম চলছে, কোন ধরনের কার্যক্রম ফলপ্রসূ হতে পারে এই ব্যাপারে যারা পুরোপুরি নিশ্চিত না। পল হাওকেন*এর সাথে আমি একমত হতে চাই যে অনেকগুলো ছোট ছোট পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে। আমার মনে পড়ে টমি স্যান্ডস এর কথা, একজন আইরিশ সঙ্গীতজ্ঞ, যে উত্তর এবং দক্ষিণের গায়কদের একত্রিত করে পুরো সন্ধ্যা জুড়ে গান গাইত। সেখানে এমন লোকজন থাকত যারা একে অপরকে খুন করতে পারত- প্রোটেস্ট্যান্ট এবং ক্যাথলিক- এবং সন্ধ্যা শেষে তারা একে অপরের সাথে পরীক্ষামূলকভাবে আলাপ-আলোচনা শুরু করে দিত।

সারাহঃ আপনি যখন গেয়ে উঠেন, “ব্রিং দেম হোম” তখন আপনি বলেন “আমেরিকা সমন্ধে অন্যতম মহৎ একটা ব্যাপার হচ্ছে আমরা আমাদের মনের কথা খুলে বলতে পারি”। এবং আপনি এটা বলেছিলেন এমন একটা সময়ে যখন আপনি অনেক বছর ধরে কালো তালিকাভূক্ত ছিলেন। এ সমন্ধে বলবেন কি একজন দেশপ্রেমিক হওয়া বলতে আপনার কাছে কি বুঝায়?

পিট সিগারঃ আচ্ছা, তশি এবং আমি উভয়ে খুব গভীরভাবে গর্বিত ছিলাম এজন্য যে আমরা ভিয়েতনাম যুদ্ধবিরোধী আন্দোলনের অংশ হতে পেরেছিলাম। এবং আমি মনে করি, এটা হচ্ছে আমেরিকান জনগণের বিশাল বিজয়গুলোর অন্যতম। যাহোক, অন্য একটা গল্প তোমার শুনতে হয়ত ভালো লাগবে। আলবেনীতে, রুথ পেহলাম নামের একজন নারী, প্রায় ২০ বা ২৫ বছর আগে, অনুধাবন করতে পারল যে সে শিশুদের জন্য গান বাঁধতে পছন্দ করে এবং তার পাড়া-প্রতিবেশীদের বাচ্চারা তার গান শুনতে ভালবাসে।

এক স্যুটকেস যন্ত্রপাতি এবং ছোট একটা ভ্যান কেনার মত পর্যাপ্ত টাকা সে জমিয়ে ফেলে। সোমবারে যেত এক পার্শ্ববর্তী এলাকায় এবং বুধবারে অন্য একটা এলাকায় এবং এভাবে সপ্তাহে ছয়দিন চলত।

এবং মিউজিক মোবাইলের কাছে যাওয়াটা আলবেনীতে একটা জনপ্রিয় বিষয়ে পরিণত হল।

এবং সে ছিল একজন ভালো মানের গীতিকারঃ

কঠিন সময় এগিয়ে আসার কালে আমরা সাহসের জন্য তাকাই জনগণের দিকে ।

কঠিন সময় এগিয়ে আসার কালে আমরা গান গাই, চিৎকার করি, শুরু করি ব্যাপারটাকে বুঝে নিতে।

জনগণের সাহস, জনগণের সাহস, জনগণের সাহস দিয়ে আমরা পারি এটাকে প্রতিরোধ করতে!

দ্বিতীয় পংক্তিঃ

কঠিন সময় এগিয়ে আসার কালে আমরা তাকিয়ে থাকি জনগণের হাসির দিকে....

এবং লোকজন এতে যোগ করেঃ

আমরা তাকাই জনগণের প্রচন্ড তাড়নার দিকে!....

এটার কারনে আলবেনী আগে যেমন ছিল এখন তার থেকে ভিন্ন একটা শহর। কয়েক বৎসর আগে, আলবেনীর মেয়র এক বিশাল সমাবেশের আয়োজন করে, এবং সেখানে শত শত মানুষ তার সাথে একত্রে গান গায়।

ওহহ, আমি এখনও আমাদের আঞ্চলিক দলটি সমন্ধে তোমাকে কিছু বলিনি! এটাকে ডাকা হত বেকন স্লুপ ক্লাব নামে। যখন দ্যা ক্লিয়ারওয়াটার এখানে প্রথম থামে, আমরা ছোট একটা উৎসবের আয়োজন করেছিলাম। তাতে একহাজার মানুষ, অধিকাংশই তরুণ, যোগ দিয়েছিল। তশি পাথরের সাবান তৈরী করেছিল। তুমি কি পাথরের সাবানের গল্পটি জান? আমি ইতিপূর্বে কখনও এটা শুনিনি, তবে আমি এটা একটা আঞ্চলিক পত্রিকায় দেখেছিলাম, এবং তশি একটা বড় লোহার পাত্র হতে একহাজার মানুষকে খাইয়েছিল।

একজন নারী একটা মুরগী নিয়ে এসে বলে, “আমি এটাকে আমার পরিবারের সবাইকে খাওয়াতে যাচ্ছি, তবে তারা সবাই এখানে উপস্থিত।” আরেক পাত্র রোস্ট করা গরুর মাংশ আসে- “আমার পরিবারের সবাই এখানে আছে, তোমরা সম্ভবত আগের মতই নেবে!”

এবং তারপর, যখন উৎসব শেষ হয়ে গেল, সকলে বলে উঠল, “এখন আমাকে আমার পরিবার, আমার গীর্জা, আমার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, আমার প্রবীণদের সংগঠনের কাছে ফিরে যেতে হবে,” যাহোক ব্যাপারটা এরকমই ছিল।





ব্যাঞ্জো হাতে পিট সিগার। আলোকচিত্রঃ মাইকেল বাউম্যান।

এবং পরের বৎসর যখন ক্লীয়ারওয়াটার পুনরায় যাত্রা শুরু করে, আমাদেরকে খুব তাড়াহুড়া করে উৎসব শুরু করতে হয়েছিল। সে সময় একজন তরুণ বলে উঠে, কেন আমাদের এখানে একটা স্লুপ ক্লাব নেই, যখন আমাদের এমন লোকজন আছে যারা জানে কিভাবে একটা উৎসবের আয়োজন করতে হয়।

আমি আর্তনাদ করে উঠলাম। আরেকটি সংগঠন, সভার কার্যবিবরনী, নির্বাচন। আমি একটা মিটিং ডাকলাম তবে মাত্র ৩ জন লোক উপস্থিত ছিল।

তশি বলল, “মিটিং না বলে এটাকে বরং তাৎক্ষণিক নৈশভোজ বলো।” তারপর এসে উপস্থিত হল ৩০ জন লোক। ৩৬ বছর ধরে আমরা মাসের প্রথম শুক্রবারে মিটিং করে আসছি। যখন আমাদের ছুটির দিনের সঙ্গীতানুষ্ঠান হয়, প্রায় ২০০ জন লোককে চাপাচাপি করে থাকতে হয়, এবং আমরা বাস্তবিকপক্ষে হয়ে উঠেছিলাম প্রাতিষ্ঠানিকতার অংশ। এটা বেশ মজার একটা ব্যাপার।

দ্যা ক্লিয়ারওয়াটার নদী পরিষ্কার শুরু করার আগে, জমি-জিরাত ছিল খুবই সস্তা, যখন আমরা এটা কিনি এই জায়গাটির দাম ছিল মাত্র ১০০ ডলার একর। এখন আমার এক প্রতিবেশী এক একর বিক্রি করার চেষ্টা করছে ১০০,০০০ ডলারে। হাডসন ভ্যালেতে এরকমটাই ঘটে চলেছে। রিয়েল এস্টেটের লোকজন বলে, “আমরা লং আইল্যান্ড ভরে ফেলেছি। নিউ জার্সিকে ভরে ফেলেছি। এখন হাডসন ভ্যালেকে ভরে ফেলব।”

সারাহঃ [হাসতে হাসতে] সুতরাং আপনি কখনও ভাবেন নি যে আপনি রিয়েল এস্টেট ব্যবসাকে সাহায্য করে চলেছেন যখন আপনি হাডসন নদী পরিষ্কার করছেন?

পিট সিগারঃ বেকনে আমি একজন রাজনীতিবিদের কাছে অভিযোগ করেছিলাম, “আমরা খুব দ্রুত বেড়ে উঠছি, প্রতি ২০ বছরে আমরা দ্বিগুন হয়ে যাচ্ছি। চিরদিনের জন্য নিশ্চয়ই আমরা এরকম করতে পারি না”। সে বলল, “পিট! আপনি যদি বেড়ে না উঠেন তাহলে মারা যাবেন।” এবং আমার তখন জানা ছিল না কি বলার আছে, একমাত্র রাত্রি একটার সময় বিছানায় উঠে বসার সময় বাদে, “এটা যদি সত্য হয় যে তুমি যদি না বেড়ে উঠ তাহলে মারা যাবে, তাহলে তো এটা অনুসরিত হয় না যে যত দ্রুত আমরা বেড়ে উঠব তত শীঘ্রই আমরা মারা যাব?” এর মানে এটা বুঝায় না যে আমরা জানি কিভাবে সমস্যাটিকে সমাধান করতে হয়। তবে কোন সমস্যা সমাধানে প্রথম পদক্ষেপ হচ্ছে এটা অনুধাবন করতে পারা যে সমাধান করার মত একটা সমস্যা এখানে আছে।

সারাহঃ আপনার একটা বিখ্যাত গান হচ্ছে “টার্ন! টার্ন! টার্ন! (টু এভরিথিং দেয়ার ইজ এ সীজন)”। আমরা কেমন সময়ের মধ্যে আছি বলে আপনি মনে করেন?

পিট সিগারঃ আমরা একটা সঙ্কটাপন্ন সময়ের মধ্যে আছি। আমি আমাদেরকে কোন সুযোগ দেব না- এরকমটি, তুমি কখনই বলতে পার না। এই পৃথিবীর কোথাও কোন বিচ্ছিন্ন দ্বীপে হয়ত একটা ছোট উপজাতি আছে, তবে আমি দেখছি মানব প্রজাতি একে অপরকে পৃথিবীর উপর থেকে মুছে ফেলার চেষ্টায় রত। আমরা এমন অস্ত্রশস্ত্র আবিষ্কার করেছি- শুধুমাত্র পারমানবিক অস্ত্র নয়, রাসায়নিক অস্ত্র এবং সকল ধরনের অস্ত্রশস্ত্র।

আমি বেশ কয়েক বছর যাবৎ বলে আসছি, এই জলবায়ু পরিবর্তন সম্ভবত সমগ্র মানব জাতির জন্য জেগে উঠার ডাক। ধনীদেশগুলোতে মাল্টি ট্রিলিয়ন বিপর্যয় এবং গরীব দেশগুলোতে মানবিক বিপর্যয় ঘটতে যাচ্ছে। বাংলাদেশ তার ৪৫ মিলিয়ন লোককে কোথায় রাখবে? এবং কলকাতা ও অন্যান্য শহরের কি হবে? এমন একটা বিপর্যয় ঘটতে যাচ্ছে কোন মানুষ পূর্বে যা কখনও দেখেনি- এবং আমার মনে হয় বুশের মত লোকজন এবং তেল শিল্পের মানুষজন এখনও বেঁচে আছে কেমন মারাত্মক ভুল তারা সংগঠিত করছে তা দেখার জন্য।

সারাহঃ শিশুদের দিয়ে গান গাওয়ানো, লোকজন দিয়ে কারনেজি হলে সমবেত সঙ্গীত গাওয়ানো, লোকজনকে তাদের নদীর প্রেমে ফেলা এবং এটার যত্ন করানো, এগুলোতে আপনার মূল কৌশলটি কি? কেন মানুষজন এগুলোতে সম্পৃক্ত হতে পছন্দ করে এ সমন্ধে এমন কিছু কি আছে যা আমরা শিখতে পারি।

পীট সিগারঃ আচ্ছা, অনেক কাল ধরে আমার বিশ্বাস যে তোমার নিজস্ব শহরে কোন একটা কিছু করতে শেখাটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার। শুধুমাত্র আমিই এরকম ভাবিনা। মার্গারেট মীড* বলেছিল, মানুষের একটা ছোট দল পৃথিবীটাকে পরিবর্তন করে ফেলতে পারে এ ব্যাপারে কখনও সন্দেহ পোষণ করোনা, বাস্তবিক এটাই একমাত্র ব্যাপার যা এখনও টিকে আছে।” এবং মহান জীব বিজ্ঞানী রেনে ডুবস* বলেছিল, “চিন্তা কর বৈশ্বিকভাবে কাজ কর আঞ্চলিকভাবে।” এবং ই এফ স্কুম্যাচার* বলেছিল, ছোট জিনিস সুন্দর।” এবং এখন পল হাওকেন। এই সব লোকজন একই কথা বলছে।

আগামী একশ বছর যদি পৃথিবীটা টিকে থাকে, তাহলে এটা টিকে থাকবে দশ মিলিয়ন ছোট ছোট কাজের বিনিময়ে। ক্ষমতাসীনরা চাইলে যেকোন বড় জিনিসকে ভেঙ্গে ফেলতে পারে। তারা পারে এটাকে দূষিত করে ফেলতে অথবা ভিতর থেকে এটাকে পরিবর্তন করে ফেলতে, অথবা বাহির থেকে এটাকে আক্রমণ করতে। তবে তারা দশ মিলিয়ন ছোট ছোট কাজের কি ক্ষতি করতে পারে? তারা এগুলোর দুইটি ভাঙ্গে, তো সাথে সাথে তাদের মত তিনের অধিক সংখ্যক জেগে উঠে!

________________________________________

সারাহ ভ্যান গেল্ডার পিট সিগারের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন, ইয়েস! ম্যাগাজিনের ২০০৮ সালের বসন্তকালীন জলবায়ু সমস্যার সমাধান ভিত্তিক সংখ্যার জন্য। সারাহ, ইয়েস! ম্যাগাজিনের নির্বাহী সম্পাদকের পদে দায়িত্বরত।





ইউকুলেলি*- একটা ছোট গীটার সদৃশ্য সঙ্গীত যন্ত্র।

রাউন্ড*- একধরনের সাঙ্গীতিক কম্পোজিশন যেখানে দুই অথবা ততোধিক কন্ঠস্বর যথাযথভাবে একই সুর গায়, তবে প্রত্যেকটি কন্ঠস্বর আলাদা আলাদা সময়ে শুরু করে যাতে করে সুরটির নানা অংশ আলাদা আলাদা কন্ঠস্বরের সাথে মিলে যেতে পারে এবং তথাপিও একত্রে একটা সাঙ্গীতিক ঐকতানে মিলিত হয়।

স্লুপ*(Sloop)- এক মাস্তুলের ছোট পাল তোলা জাহাজ।

সামান্থা বাউমগার্নার*- একজন খ্যাতিমান মার্কিন লোকসঙ্গীত শিল্পী।

পল হাওকেন*- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন পরিবেশবাদী, উদ্যোক্তা এবং লেখক।

মার্গারেট মীড*- মার্কিন সাংস্কৃতিক নৃতত্ত্ববিদ।

রেনে ডুবস*- ফরাসী বংশোদ্ভূত মার্কিন অণুজীববিজ্ঞানী, রোগবিজ্ঞানী, পরিবেশবাদী, মানবতাবাদী।

ই এফ স্কুম্যাচার*- আন্তর্জাতিকভাবে প্রভাবশালী অর্থনৈতিক চিন্তাবিদ, পরিসংখ্যানবিদ, এবং ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ১৪ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৪:২৪

জুলিয়ান সিদ্দিকী বলেছেন: ভালো হয়েছে। ধন্যবাদ।

২| ১৫ ই জুন, ২০১৪ বিকাল ৩:৫০

মেহেদী হাসান মঞ্জুর বলেছেন: ধন্যবাদ, জুলিয়ান সিদ্দিকী।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.